শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন! কেন বাঙ্গালীরা বিরোধীতা করে?

আবু উবাইদা : পার্বত্য চট্টগ্রাম ইস্যুটি বর্তমানে একটি জাতীয় ইস্যুতে পরিনত হয়েছে। কারন সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন সংশোধন আইন পাশ করেছে। যার ফলে পাহাড়ের বাঙ্গালীরা তাদের অস্তিত্ব্য নিয়ে সংকটে পরেছে। কিন্তু কেন? এতে বাঙ্গালীদের সমস্যা কোথায়? একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি মানুষের নিজ রাষ্ট্রে যে কোন প্রান্তে ভূমি ক্রয় সহ বসবাসের অধিকার রয়েছে। তাই পাহাড়ে বাঙ্গালীরা বসবাস করে রাষ্ট্রের কোন আইন লংঘন করেনি।
সরকার তার রাষ্ট্রো রক্ষার তাগিদেই ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রের ভূমিতে বাঙ্গালীদের বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাতে যদি রাষ্ট্রের অন্য কোন নাগরিকের সমস্যা হয় তবে রাষ্ট্রোই তার সংবিধান অনুযায়ী তা সমাধান করবে। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে একটি অঞ্চলকে রাষ্ট্রো হতে ভিন্ন ভেবে মৌলিক আইন উহ্য করে ভিন্ন আইন প্রনয়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। . তারপরেও যুক্তির খাতিরে আমি এই আইন মেনে নিলাম। কিন্তু, একটি সমস্যা সুষ্ঠভাবে সমাধান করতে গেলে যে উভয় পক্ষের উপস্থিতি আবশ্যক তা এই আইনে বিবেচনা করা হয়নি। 

লক্ষ্য করুন, এই কমিশনের সদস্য কাদের রাখা হয়েছে - . (ক) বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যিনি উহার চেয়ারম্যানও হইবেন; (খ) আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান বা তাঁহার প্রতিনিধি হিসাবে তত্কর্তৃক মনোনীত উক্ত পরিষদের একজন সদস্য; (গ) সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পদাধিকারবলে; (ঘ) সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ বা তাহার প্রতিনিধি হিসেবে তৎকর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি পদাধিকারবলে; (ঙ) চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার বা তত্কর্তৃক মনোনীত একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার৷ . এখানে দেখা যাচ্ছে কমিশনের সদস্য ৭ জন যারমধ্যে ৫ জনই উপজাতি। বাকি ২ জন বাঙ্গালী হলেও তারা কিন্তু পাহাড়ের কেউ নন। অর্থাৎ এখানে যদি পার্বত্য বাঙ্গালীদের আসামী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবে তারপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার মতো কেউ নেই এবং আইনে রাখা হয়নি।

 তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন উপজাতি হতে যাদেরকে কমিশনের সদস্য করা হয়েছে তারা কিন্তু কেউ নির্বাচিত/সকলের মনোনীত প্রতিনিধি নন। তারা প্রত্যেকেই একটি পক্ষ অর্থাৎ উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অনির্বাচিত প্রতিনিধি। যার মধ্যে অবৈধ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শন্তু লারমা এবং তিন সার্কেল চিফ বরাবরই সাম্প্রদায়িক এবং কমিশনে আবেদনকারী উপজাতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। এখন আপনার বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলুন এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন নাকি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ উৎপত্তি কমিশন? এরকম এক পেশে কমিশন সৃষ্টি করে সরকার কিভাবে পাহাড়ের ভূমি সমস্যার সমাধান করবে? কমিশনের সদস্য ৭ জন যার মধ্যে ৫ জনই উপজাতি। বাকি ২ জন বাঙ্গালী হলেও তারা কিন্তু পাহাড়ের কেউ নন। অর্থাৎ এখানে যদি পার্বত্য বাঙ্গালীদের আসামী হিসেবে বিবেচনা করা হয় তবে তারপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার মতো কেউ নেই এবং আইনে রাখা হয়নি।

 তাছাড়া আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করুন উপজাতি হতে যাদেরকে কমিশনের সদস্য করা হয়েছে তারা কিন্তু কেউ নির্বাচিত/সকলের মনোনীত প্রতিনিধি নন। তারা প্রত্যেকেই একটি পক্ষ অর্থাৎ উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অনির্বাচিত প্রতিনিধি। যার মধ্যে অবৈধ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শন্তু লারমা এবং তিন সার্কেল চিফ বরাবরই সাম্প্রদায়িক এবং কমিশনে আবেদনকারী উপজাতীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। 

এবার দেখুন কমিশনের কার্যাবলী কি? কমিশনের কার্য পদ্ধতিঃ (ক) পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করা; (খ) আবেদনে উল্লিখিত ভূমিতে আবেদনকারী, বা ক্ষেত্রমত সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষের, স্বত্ব বা অন্যবিধ অধিকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নির্ধারণ এবং প্রয়োজনবোধে দখল পুনবর্হাল; (গ) পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে কোন ভূমি বন্দোবন্ত প্রদান করা হইয়া থাকিলে উহা বাতিলকরণ এবং উক্ত বন্দোবস্তজনিত কারণে কোন বৈধ মালিক ভূমি হইতে বেদখল হইয়া থাকিলে তাহার দখল পুনর্বহাল: 

এবার আসুন বাস্তবতায়। উপরের তিনটি ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন দিয়ে যদি পার্বত্য ভূমি সমস্যার সমাধান করা হয় তবে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান কোথায়? আমি পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার বাসিন্দা। আমার কাছে জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দা সনদ রয়েছে। নেই চাকমা রাজার প্রদত্ত সার্টিফিকেট। এখন যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইনে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চান তবে আমার জেলা প্রশাসক কর্তৃক প্রদত্ত স্থায়ী বাসিন্দা সনদের মূল্য কোথায় গিয়ে দাড়াবে? অর্থাৎ প্রচলিত আইনের কাছে সরকারের কোন মূল্য থাকছে না। তাছাড়া, চাকমা রাজা (রাজাকার পুত্র), সে তো আর আমাদের বাঙ্গালী রাজা নন। চাকমারা তাকে নম নম করলেও ৭১ এর চেতনা আকড়ে আমি কেন রাজাকার পুত্রের সনদ নিয়ে বাংলাদেশ নামক মানচিত্রে বসবাস করবো? এটা কি বীর শ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের রক্তের সাথে বেইমানী নয়? থাক না হয় এসব কথা। মূল কথা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইনের কাছে পার্বত্য ভূমি তুলে দিলে এখানে আঞ্চলিক সংগঠনের একপেশে কতিপয় উপজাতীয় মতলববাজরা পাহাড়ের রাজত্ব্য অর্জন করবে। তাতে বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব খর্ব হবে। সৃষ্টি হবে দেশের ভিতরে আরেকটি দেশ।

 এদিকে, সরকার যদি আজীবন ভারত প্রত্যাগত উপজাতীয় সরনার্থী পূনর্বাসন করেন তবে তা শেষ হবে না। বরংচ ভারতের উগ্র উপজাতীয় সম্প্রদায়ের অনুপ্রবেশ পাহাড়ে ঘটবে। এতে বাংলাদেশের সঠিক নাগরিকরা হবে ভূমিহারা। . আবার লক্ষ্য করুন, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন বহির্ভূতভাবে কোন ভূমি বন্দোবস্ত করা হলে তা এই আইনে অবৈধ। অর্থাৎ সরকারের সমতলের ন্যায় সংবিধান অনুযায়ী ভূমি বন্দোবস্ত করার ক্ষমতা এই আইনে নেই। এমনকি অতীতে যদি সরকার ভূমি বন্দোবস্ত দিয়েও থাকে তাহলে তা অবৈধ। তাহলে এই আইনে দাড়ালো সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৭৯ সালে যে সকল বাঙ্গালী পাহাড়ে নিয়ে বসতি স্থাপন করিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই অবৈধ। মোটকথা এই আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির মালিক করা হয়েছে অবৈধ আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শন্তু লারমা এবং তিন উপজাতীয় রাজাদেরকে।

 এছাড়া, পার্বত্য চট্টগ্রামের শাষন ভার চলে যাচ্ছে জেএসএস নেতাদের হাতে। এদিকে এই আইনে কমিশনের চেয়ারম্যান /কোন সদস্য সরোজমিনে কোন তদন্ত করতে পারবে না। অর্থাৎ এর মানে হলো শন্তু লারমারা যে রিপোর্ট দিবে কমিশনের চেয়ারম্যান চোখ বুঝে তাতে সমর্থন দিতে আইন অনুযায়ী বাধ্য। . এবার বলুন ক্ষমতাহীন বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি কিভাবে রক্ষা করবে? এই আইন সম্পুর্নভাবে বাংলাদেশ সংবিধান পরিপন্থি এবং অগণতান্ত্রিক। তাই পার্বত্য বাঙ্গালীরা নিজের ভূমি রক্ষা করতেই শুধু নয় মহান মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়ে কেনা পার্বত্য ভূমিকে রক্ষা করতে, দেশের সংবিধান রক্ষা করতে যৌক্তিক ইস্যুতে এই কমিশনের বিরোধীতা করছে। যা কিনা এই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া সমগ্র রাষ্ট্রের নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব্য ও কর্তব্য।
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]