(শুরুতেই বলে রাখি এই লেখাতে সবাইকে দায়ী করা হয়নি, শুধুমাত্র সিংহভাগ ক্ষেত্রের সত্যটুকু বলার চেষ্টা করেছি মাত্র। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্বশীলতার কারণে বাঙালি ছেলেদের প্রতি পাহাড়ি মেয়েদের ঝোঁক।
আর একেবারেই সংক্ষিপ্ত আকারে লেখাটি। বলা চলে সূচনাংশ) আমার পরিচিত অনেক অনেক পাহাড়ি মেয়ে ভালবেসে বাঙালী ছেলের সাথে ঘর বেঁধেছেন এবং তারা সুখেই আছেন। কেবল মাত্র এমন একটি সংসার ভাঙ্গতে দেখেছি। তবে সেখানে বাঙালী ছেলেটির কোন দোষ ছিলনা, দোষ পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের। অন্যদিকে অনেক গুলো পাহাড়ি মেয়েকে দেখেছি পাহাড়ি ছেলের সাথে সম্পর্কের টানে ঘর ছেড়ে এসে পরে লাশ হয়ে ফিরে যেতে। ‘ভালোবাসা মানে না কোনো বাধা, মানে না ধর্ম, বর্ণ বা জাতের ভেদাভেদ।
লাইলী-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রজকিনি-চন্ডিদাসের প্রেমের কাহিনী সর্বজনবিদিত। এরই পথ ধরে শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে প্রিয় মানুষের সঙ্গে সংসার জীবনে আবদ্ধ হয়েছে বহু মানব সন্তান। কিছুটা নেতিবাচক চোখে দেখলেও সমকালীন বিশ্ব প্রেমের সম্পর্কের ব্যাপারে অতটা খড়গহস্ত হয়নি, ভালোবাসার কারণে যতটা নিপীড়নের শিকার পাহাড়ি মেয়েরা। জানা গেছে, স্ত্রীর প্রতি শতভাগ দায়িত্বশীলতার কারণে বাঙালি ছেলেদের প্রতি পাহাড়ি মেয়েদের ঝোঁকের কথা পার্বত্য এলাকায় এখন একরকম পরিচিত বিষয়। সুযোগ পেলেই বাঙালি ছেলেদের প্রেমে হাবুডুবু খায় পাহাড়ি মেয়েরা। নিজের সমাজ, সংস্কৃতি এবং পৈতৃক ধর্ম বিসর্জন দিয়ে প্রিয়তমের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় কথিত আঞ্চলিক সংগঠন এবং সন্ত্রাসীরা।
এসব পাহাড়ি নারীদের চাওয়া এবং পাওয়ার মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় পার্বত্য অঞ্চলের সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নেতারা। নিজেদের জাত রক্ষার নামে পাহাড়ি এবং বাঙালি উভয় পরিবারের ওপর চালায় অবর্ণনীয় নির্যাতন, কখনো কখনো বিবাহিত তরুণীকে অপহরণ করে নিয়ে দল বেঁধে ধর্ষণ করে এবং মিথ্যা জবানবন্দি গ্রহণ করে। এমনকি হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করে। এসব বাধা উপেক্ষা করে পাহাড়ি তরুণীরা বাঙালি ছেলেদের বিয়ে করেই চলেছে। শত বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে দিন দিন পাহাড়ি নারী এবং বাঙালি পুরুষের মাঝে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, আজ থেকে ১২ বছর আগে বাঙালি তরুণ জামাল উদ্দিনের প্রেমে পড়ে মারমা তরুণী মিনিরওজা মারমা, অবশেষে ভালোবেসে ইসলাম ধর্ম অনুসারে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। সঙ্গে সঙ্গে তার উপজাতীয় নাম পরিবর্তন করে আয়েশা সিদ্দিকা রাখা হয়। বর্তমানে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। সুখে-শান্তিতেই ছিল তাদের বৈবাহিক জীবন ও সংসার। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগ (১২ বছর) পরও তাদের এই বিয়ে এবং ভালোবাসাকে মেনে নিতে পারেনি কথিত আঞ্চলিক সংগঠনের সন্ত্রাসীরা।
গত ৮ নভেম্বর স্থানীয় গিলাছড়ি বাজার থেকে আয়েশা সিদ্দিকাকে তুলে নেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। তাকে নিয়ে একদিন, এক রাত আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। চোখ ও গলায় শিকল বেঁধে রেখে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। কেন ভিন্ন ধর্মের ছেলেকে বিয়ে করেছে? কেন বাঙালি পুরুষকে বিয়ে করেছে? এসব প্রশ্নে জর্জরিত করা হয় এই নারীকে।
গলায় ধারালো ছুরি ধরে আয়েশার কাছ থেকে মিথ্যা বিবৃতি রেকর্ড করে স্বীকারোক্তি নিয়েছে সন্ত্রাসীরা। রেকর্ড করার সময় স্বামী-শ্বশুর তাকে নির্যাতন করে এমন কথা বলতে বাধ্য করা হয় বলেও জানান তিনি। আর এসব কথা রেকর্ড করেছে সন্ত্রাসীরা। অবশেষে নিরাপত্তা বাহিনীর চাপে সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু ভয়ে এ বিষয়ে থানায় কোনো মামলা করার সাহস পায়নি ওই পরিবার। সন্ত্রাসীরা তাতেও ক্ষান্ত হয়নি, তার শ্বশুরের আনারস বাগানের প্রায় ৮২ হাজার আনারস কেটে নষ্ট করে। তবুও সুন্দর সংসার করার আশা নিয়ে বাঙালি ছেলেদের ভালোবাসে পাহাড়ি নারীরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পাহাড়ি নারীরা রাত-দিন পরিশ্রম করে সংসারের ঘানি টানে। আর পুরুষরা ঘুরে বেড়ায়, মাতাল হয়ে পড়ে থাকে, ঘরে বসে হুক্কা টানে। ঘরে-বাইরে সব কাজ করে সংসার সামলায় উপজাতি নারীরা। পুরুষরা শুধুই আরাম আয়েশ করে। কেউবা সতিনের সঙ্গে নিজের সোনার সংসার ভাগ করতে বাধ্য হয়। তারপরও স্বামীর নানারকম নির্যাতনও সহ্য করতে হয় নারীদের।
অন্যদিকে বাঙালি ছেলেদের সঙ্গে বিয়ের পর সংসারের সব কাজ করে পুরুষরা, নারীরা শুধু সংসার গোছানোর সহজ কাজগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারে। সেই সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতিতে পরিচ্ছন্ন জীবনে উন্নত ভালোবাসা পেয়ে সুখী সংসার করে তারা। এসব খবর উপজাতি নারীদের কাছে ছড়িয়ে পড়ায় পাহাড়ের উপজাতি সব তরুণীর মনে মনে পছন্দের পুরুষ হয়ে উঠে বাঙালি তরুণরা। তাই ভালোবেসে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় তারা।
কিন্তু পাহাড়ি কথিত আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ছেলেদের মেয়েরা পছন্দ না করার কারণে সন্ত্রাসীরা ফুঁসে ওঠে। ভালোবাসা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়ে নারীদের ধর্ষণের জন্য ভিলেনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তারা। পুলিশ প্রশাসন কঠোর হয়েও তাদের দমন করতে পারছে না।
সূত্র জানায়, এর আগে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে ভালোবেসে এক বাঙালি ছেলেকে বিয়ের অপরাধে খাগড়াছড়ির গুইমারার এক মারমা তরুণী ও তার পরিবারকে নির্যাতন ভোগ করার পরও মোটা অংকের চাঁদা গুণতে হয়েছে। তাকে একটি কক্ষে বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।
২০১৫ সালের শুরুর দিকে ভালোবেসে চাকমা মেয়েকে বিয়ে করাই কাল হয় একটি প্রথম সারির জাতীয় দৈনিকের স্টাফ ফটোগ্রাফারের (আলোকচিত্রী)।
অপরদিকে ভালোবাসার মানুষকে ভুলে যেতে চাকমা নারীর (সাংবাদিকের স্ত্রীর) ওপর চলে নির্মম পাশবিকতা, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হারা মানায়। ওই নারীকে তোলা হয় নিলামে, যা প্রচার ও প্রকাশ করা হয়েছে গণমাধ্যমে। কিন্তু তাকে রক্ষা করা যায়নি।
সবচেয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করা ঘটনা ঘটে গত বছরের এপ্রিলে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায়। উপজেলার এক ত্রিপুরা মেয়ে ভালোবেসে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিল চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আহমদ কবীরের ছেলে আবদুল হান্নানের (২৪) সঙ্গে। ভালোবাসার টানে একদিন প্রেমিক হান্নানের হাত ধরে শহরের যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে ত্রিপুরা মেয়ে ও বাঙালি হান্নানকে অপহরণ করে পিসিপির কর্মীরা।
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]