বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা (বন্দোবস্ত ও জরিপ) প্রসঙ্গে : পর্ব - ১০


দু’একটি গণমাধ্যম ছাড়া দেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম বাঙালীদেরকে পার্বত্যাঞ্চলের আপদ বলেই ভাবে। বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগ অংশই বিদেশ সফর, ‘সুশীল’ খাতায় নাম তোলার প্রয়োজনে ও টুয়েসডে, থার্সডে পার্টিতে নিমন্ত্রণ হারানোর ভয়ে বাঙালির পক্ষে কথা বলতে নারাজ। বাংলাদেশের খুব বিখ্যাত একজন রাজনীতিক ও কলামিস্ট আমাকে একবার বলেছিলেন, একটি জাতীয় সেমিনারে পার্বত্য বাঙালিদের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে বাসায় ফেরার সাথে সাথে একটি প্রভাবশালী পাশ্চাত্য দেশের দূতাবাস থেকে তার কাছে ফোন করে জানতে চাওয়া হয় তিনি বাঙালিদের পক্ষে ঐ সেমিনারে কোনো কথা বলেছিলেন কিনা? বাঙালিদের বিরুদ্ধে লিখলে সাংবাদিকদের বিদেশ সফরসহ নানা সুবিধা মেলে সেখানে, পক্ষে লিখলে ততোটাই অবহেলা ও ঝুঁকির শিকার হতে হয়। সেখানে দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তাদের প্রমোশন ও বিদেশে পোস্টিং মেলে না বাঙালি ঘেঁষা হলে। এক কথায় যে রাষ্ট্রের স্বার্থে বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থান সেই রাষ্ট্র তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

পার্বত্য বাঙালিরা শুধু রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন নয়, এখনো নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সেনাবাহিনীর অবস্থানের জন্য। অনেকে প্রকাশ্যে স্বীকার করতে না চাইলেও এ কথা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ও সেনাবাহিনী একে অন্যের সম্পূরক ও পরিপূরক। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী না থাকলে যেমন বাঙালির অবস্থান অনিশ্চিত, ঠিক তেমনি বাঙালি না থাকলে সেনাবাহিনীর অবস্থান কষ্টসাধ্য। বাঙালিরা সেখানে সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত একটি ডিফেন্স লাইন তৈরি করেছে- যার গুরুত্ব অপরিসীম। বিগত জোট সরকারের আমলে বাঙালী নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়া উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালে প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হিসেবে কিছু বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, বিশেষ করে প্রধান সড়কের বিশেষ বিশেষ স্থানে বসতির অনুমতি দেয়া হয়। এতে করে পার্বত্য অধিবাসী, সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী ও পর্যটকদের উপর অতর্কিত হামলা (এমবুশ), অপহরণ অনেকাংশে হ্রাস পায়।

দু’জনগোষ্ঠীর মাঝে বৈষম্য জিইয়ে রেখে শান্তি প্রক্রিয়া সম্ভব নয়

পার্বত্যাঞ্চলে সরকারি, আধাসরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে শতকরা ৮০ ভাগ চাকরির সুবিধা ভোগ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজাতিরা। বাকি ২০ ভাগ বাঙ্গালীদের জন্য। বাঙ্গালী পরিচয়ই যেন এখানকার সবচেয়ে বড় অভিশাপ। বার্ষিক বরাদ্দকৃত প্রায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের মধ্যে ২০ হাজার মেট্রিক টন বিশেষভাবে বরাদ্দ করা হয় উপজাতিদের জন্য। অবশিষ্ট অংশ বন্টন করা হয় শরণার্থী, গুচ্ছগ্রাম ও উপজাতি অধূষ্যিত অঞ্চলের বিভিন্ন উন্নয়নে। এক্ষেত্রে বাঙ্গালিদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা ৯০ ভাগ উপজাতিদের জন্য ব্যয় করা হয়। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের এ দুটি গুরূত্বপূর্ণ সরকারি দফতরের প্রধান কর্তারা উপজাতীয়। সে কারণেও দুটি সরকারি দফতর থেকে বাঙ্গালিরা কোনোরকম সুবিধাই পাচ্ছে না। সংবাদপত্র তথা মিডিয়া এবং দেশের বুদ্ধিজীবি শ্রেণী সবাই পাহাড়ীদের অধিকারের কথা তুলে ধরে। কিন্তু ৬,৫০,০০০ এরও বেশি পুনর্বাসিত বাঙ্গালীদের দু:খ ও কষ্টের কথা কেউ তুলে ধরে না। পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত কতিপয় এনজিও’র কর্মপরিধিও ভ্রান্তিমূলক। যা পার্বত্য শান্তি প্রক্রিয়ার সাথে সাংঘর্ষিক। দেশের সংবিধান, মানবাধিকার ও যুক্তির খাতিরেই বলতে হবে পার্বত্য এলাকায় উপজাতি-বাঙ্গালীদের সহাবস্থান ও সমঅধিকার প্রয়োজন। পার্বত্য বাঙ্গালী-উপজাতীদের সমঅধিকারের ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গ্যারান্টি নিশ্চিত করতে হবে।

সংবিধানের সমস্যা সমাধানের মূলমন্ত্র খুঁজতে হবে

সংবিধানের ১নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশ এককেন্দ্রীক রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃত। তাতে আঞ্চলিক শাসন ব্যবস্থার কোন সুযোগ রাখা হয়নি। সংবিধানের ১৯(১) অনুসারে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। অনুচ্ছেদ ২৭ অনুসারে রাষ্টের সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান অধিকার লাভকারী। অনুচ্ছেদ ২৮(১) অনুসারে কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষের ভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করিবে না। অনুচ্ছেদ ২৯(১) উল্লেখ আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার থাকিবে’।


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]