সন্তু লারমার বাধায় পাহাড়ে ভূমি জরিপ অনিশ্চিত: তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি জরিপ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার বাধার কারণে। তিনি ভূমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যা নিরসন করতে হবে; এরপর তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি জরিপ কাজ চালাতে হবে। সন্তু লারমার এ চিঠি পাওয়ার পর তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে ডাকা আন্তঃমন্ত্রণালর সভায় হতাশা নেমে আসে। সন্তু লারমার সভায় উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। পরে সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি জরিপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দীর্ঘ ২২ বছর পর ভূমি মন্ত্রণালয় তিন পার্বত্য জেলায় ভূমি জরিপের উদ্যোগ নেয়। জরিপ কার্যক্রম সংক্রান্ত কর্মসূচি ঘোষণার কথা থাকলেও ভূমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিরোধ স্থায়ীভাবে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এ জরিপ কাজ হাতে নেয়া হয় বলে ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, ভূমির মালিকানা, প্রশাসনিক কাঠামো, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় সার্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য দ্রুত ভূমি জরিপ শুরু করার সিদ্ধান্ত আরও আগেই নেয়া হয়েছিল। সে সময় বলা হয়েছিল, জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করা গেলে ভূমির সঠিক বর্ণনা, ভূমি চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও সম্পত্তির নিরাপত্তা দেয়া যাবে
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আশির দশকে দুই জরিপ কর্মচারী অপহরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়েই এবার জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ জরিপ কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের আর্থিক ও প্রশাসনিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় গতকাল ভূমি, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, অর্থ, আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ আন্তঃ মন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করা হয়েছিল।
জনসংহতি সমিতি নেতারা বলেছেন, শান্তিচুক্তিতে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের পরই আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শক্রমে ভূমি জরিপ চালানোর কথা রয়েছে। এটি না করেই পাহাড়ে জরিপ চালানো হলে তা চুক্তির পরিপন্থী হবে। আর এটি কোনোভাবেই পার্বত্যবাসী মেনে নেবে না। তারা সরকারকে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ সংশোধন এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করে কমিশন কর্তৃক পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে জরিপ চালানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।
সূত্র জানায়, দেশের মোট ভূমির এক-দশমাংশ পার্বত্য এলাকায়। এখানে এখন পর্যন্ত কোনো জরিপ না হওয়ায় মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান ও দাগ নম্বর নেই। জমির চৌহদ্দি ও পরিমাণ দিয়ে মালিকানা ঠিক করায় প্রতিদিনই জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একই কারণে সেখানে বাড়ছে বাঙালি-পাহাড়ি অস্থিরতা।
জানা গেছে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত ১৩টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে পাহাড়ে। পাহাড়ি-বাঙালি সশস্ত্র সংঘাতে বাঙালিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি পাহাড়িরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক পাহাডী-বাঙ্গালী নিহত হয়েছে, এবং ঘরবাড়ি পুড়েছে। লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) রেগুলেশন জারি করা হয়। এ আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী একই বছর পার্বত্য চট্টগ্রামশাসন বিধিমালা জারি হয়। এ বিধিমালার ৩৪ বিধি অনুযায়ী পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন এবং ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পার্বত্য তিন জেলার জন্য প্রযোজ্য না হওয়ায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে কখনই ভূমি জরিপ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে জরিপ কাজ চালানোর জন্য ১৯৮৫ সালে ‘ভূমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রা ম) অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। এ আইনে সেখানে জরিপের বিধান রাখা হয়েছে। এর আলোকেই ১৯৮৬ সালে প্রথম জরিপ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো পার্বত্য এলাকায়ই জরিপের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া মৌজায় জরিপ চলাকালে দু’জন কর্মচারী অপহৃত হন। ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েও তাদের উদ্ধার করা যায়নি। পরিস্থিতি মূূল্যায়ন করে ১৯৮৮ সালের ১২ অক্টোবর পার্বত্য এলাকার ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নের কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার।
অপহরণ আতঙ্কে আটকে আছে ভূমি জরিপ:
শান্তিচুক্তির পরেও পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসেনি। বরং শান্তিবাহিনীর অপহরণ আতঙ্কে আটকে আছে তিন পার্বত্য জেলার জরিপ কাজ। একই কারণে এই তিনটি জেলার গহীন অরণ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজও বন্ধ রয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে ভারত। ভারত এসব সীমান্ত এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন থেকে শুরু করে ভারী যানবাহন যাতায়াতের জন্য কংক্রিটের রিংরোড পর্যন্ত বানিয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ শান্তি চুক্তির সূত্র ধরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র ক্যাম্প পর্যন্ত গুটিয়ে নিয়েছে। এতে করে এই অঞ্চলের অধিকাংশ দুর্গম সীমান্তই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এসব সীমান্তের মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ-মেঘালয়, বাংলাদেশ-মিজোরাম, বাংলাদেশ-আসাম ও বাংলাদেশ-ত্রিপুরা, বাংলাদেশ- মায়ানমার অংশ। সরকার অনেক ছাড় দিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকার দায়িত্বে এসে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি জরিপের উদ্যোগ নিলেও পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা চিঠি দিয়ে জরিপ বন্ধ রাখার হুমকি দেন। ওই চিঠির পর সরকার জরিপ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। আর তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তির বিশেষ শর্ত লংঘন করে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী চূড়ান্ত করে সংসদে বিল পাশ করা হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ায় নতুন করে সমস্যার জš§ দিয়েছে। পাহাড় আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে।
তবে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার বক্তব্যের সাথে একমত নন ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা। মন্ত্রী বলেছেন, শান্তি চুক্তির আলোকে জাতীয় সংসদে বিল আনা হয়েছে এবং তা পাশ হয়েছে। তাই পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, জরিপ শুরু হলে পাহাড়ে যে সমস্যা রয়েছে তা থাকবে না। ভারতের সাথেও অমীমাংসিত সীমান্ত এলাকার জরিপ কাজ একইসাথে সম্পন্ন করতে পারবো।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]