বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা (বন্দোবস্ত ও জরিপ) প্রসঙ্গে : পর্ব - ২

আগের পর্ব : পর্ব - ১

ভূমি জরিপ বন্ধ যে কারণে : সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের সাথে আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরার সীমান্ত রয়েছে ১ হাজার ২৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে আসামের সাথে ২০২ কিলোমিটার, মেঘালয়ের সাথে ৪৪৩ কিলোমিটার, মিজোরামের সাথে ৩১৮ কিলোমিটার এবং ত্রিপুরার সাথে ৮৫ কিলোমিটার। কাগজে-কলমে আসামের সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১১০২ থেকে ১১০৭ এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৩ কিলোমিটার ছাড়া বাকি সীমান্ত চিহ্নিতকরণের কাজ সম্পন্ন বলে দেখানো হয়েছে। মেঘালয়ের সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ১০৭১ থেকে ১৩৩৮ পর্যন্ত পুরো সীমান্তই চিহ্নিত দেখানো হয়েছে। মিজোরামের সাথে অনিস্পন্ন দেখানো হয়েছে ৮ কিলোমিটার সীমান্ত। আর ত্রিপুরার সাথে ৩৬ কিলোমিটার সীমান্ত চিহ্নিতকরণের কাজ অনিষ্পন্ন রয়েছে বলে দেখানো হয়। তিনটি জেলার গহীন অরণ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিতকরণ কাজও বন্ধ রয়েছে। যার সুফল ভোগ করছে ভারত। ভারত এসব সীমান্ত এলাকায় সেনাক্যাম্প স্থাপন থেকে শুরু করে ভারী যানবাহন যাতায়াতের জন্য কংক্রিটের রিংরোড পর্যন্ত বানিয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ শান্তি চুক্তির সূত্র ধরে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির ক্যাম্প পর্যন্ত গুটিয়ে নিয়েছে। এতে করে এই অঞ্চলের অধিকাংশ দুর্গম সীমান্তই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। সরকার অনেক ছাড় দিয়ে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ভূমি জরিপ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার বাধার কারণেই। জনসংহতি সমিতি নেতারা বলেছেন, শান্তিচুক্তিতে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের পরই আঞ্চলিক পরিষদের পরামর্শক্রমে ভূমি জরিপ চালানোর কথা রয়েছে। এটি না করেই পাহাড়ে জরিপ চালানো হলে তা চুক্তির পরিপন্থী হবে। আর এটি কোনোভাবেই পার্বত্যবাসী মেনে নেবে না। তারা সরকারকে শান্তিচুক্তি অনুযায়ী প্রথমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০০১ সংশোধন এবং পার্বত্য ভূমি কমিশনকে কার্যকর করে কমিশন কর্তৃক পার্বত্যাঞ্চলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে জরিপ চালানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। 

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আশির দশকে দুই জরিপ কর্মকর্তাকে অপহরণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়েই জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্ত সন্তু লারমার বাধার কারণে সব পন্ড হয়ে যায়। অথচ দেশের মোট ভূমির এক-দশমাংশ পার্বত্য এলাকায়। এখানে কোনো জরিপ না হওয়ায় মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান ও দাগ নম্বর নেই। এই এলাকায় জমির চৌহদ্দি ও পরিমাণ দিয়ে মালিকানা ঠিক করায় প্রতিদিনই জমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একই কারণে সেখানে বাড়ছে বাঙালি-পাহাড়ি অস্থিরতা।

জানা গেছে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে পাহাড়ে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। ঘরবাড়ি পুড়েছে এক হাজারেরও বেশি। লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যনুযায়ী, ১৯০০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম (রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) রেগুলেশন জারি করা হয়। এ আইনের ১৮ ধারা অনুযায়ী একই বছর পার্বত্য চট্টগ্রামশাসন বিধিমালা জারি হয়। এ বিধিমালার ৩৪ বিধি অনুযায়ী পার্বত্য জেলাগুলোতে ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হচ্ছে। ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন এবং ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পার্বত্য তিন জেলার জন্য প্রযোজ্য না হওয়ায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে কখনই ভূমি জরিপ হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে জরিপ কাজ চালানোর জন্য ১৯৮৫ সালে ‘ভূমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ’ জারি করা হয়। এ আইনে সেখানে জরিপের বিধান রাখা হয়েছে। এর আলোকেই ১৯৮৬ সালে প্রথম জরিপ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো পার্বত্য এলাকায়ই জরিপের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু রাঙামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া মৌজায় জরিপ চলাকালে দু’জন কর্মকর্তাকে অপহরণ করা হয়। ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়েও তাদের উদ্ধার করা যায়নি। পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে ১৯৮৮ সালের ১২ অক্টোবর পার্বত্য এলাকার ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়নের কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। 

শান্তিবাহিনী গঠন :
১৯৭৩ সালে শান্তি বাহিনী সশস্ত্র সংগ্রামের ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের আগ পর্যন্ত ২৫টি বছর পার্বত্য চট্টগ্রামএলাকা ছিল পাহাড়ী এবং অপাহাড়ী উভয় স¤প্রদায়ের কাছেই আতঙ্কের জনপদ। শান্তিবাহিনীর এই সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে সেনা ও বিদ্রোহী মিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে। অসংখ্য ঘরবাড়ী ভস্মীভূত হয়েছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছে। লক্ষাধিক উপজাতি ভারতে আশ্রয় নেয়। যে পাহাড়ী জনপদকে ঘিরে এই অস্থিরতা তার দক্ষিণ পূর্বাংশের সীমান্তে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামের অবস্থান এবং পূবে রয়েছে মায়ানমার। এই তিনটি পার্বত্য জেলার ভূমির পরিমাণ দেশের মোট জমির এক দশমাংশ। অর্থাৎ ১৩ হাজার ১৯১ স্কোয়ার কিলোমিটার। এই ভূমিকে কেন্দ্র করেই পাহাড়ী বাঙ্গালীদের ওপর শান্তিবাহিনী ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে-পাহাড়ীদের ওপরও অনেক জুলুম নির্যাতন হয়েছে। সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি স্বক্ষর হয়। এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে সন্তু লারমা। খাগড়াছড়ি জেলার দিঘীনালা থানার বাট্টি (ছদ্মনাম) নামক স্থানে শান্তিবাহিনী ও জনসংহতি সমিতির সদর দফতর স্থাপিত হয়। সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে ছয়টি সামরিক সেক্টররূপে চিহ্নিত করা হয়। প্রতিটি সেক্টর ৪টি জোনে এবং প্রতিটি জোনকে কয়েকটি সাব-জোনে বিভক্ত করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি চারু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে একটি পাহাড়ী প্রতিনিধি দল বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করেন। কিন্ত তাদের দাবি-দাওয়া তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পাশ কাটিয়ে যান। 

এর এক মাস পর ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণেতাদের কাছে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসনের দাবিসহ মোট চার দফা দাবি পেশ করেন। এসব দাবির মধ্যে ছিল-পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন এবং নিজস্ব আইন পরিষদ গঠন, সংবিধানে ১৯০০ সালের রেগুলেশনের অনুরূপ সংবিধির অন্তর্ভুক্তি, উপজাতীয় রাজাদের দফতর সংরক্ষণ, ১৯০০ সালের রেগুলেশন সংশোধনের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধিনিষেধ এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীদের বসতি স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ। তৎকালীন সংবিধান প্রণেতারা এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করলে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষ থেকেই তারা জুম্ম জাতীয়তাবাদ ও জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়। পাহাড়ীদের স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করা হয়। এই সমিতির আদর্শ ও উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল-মানবতাবাদ, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং চাকমা, মারমা (মগ), ত্রিপুরা, বম, মুরং, পাঙ্খো, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্ননিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা। সমিতির সহযোগী সংগঠন ছিল-শান্তিবাহিনী সামরিক শাখা, মিলিশিয়া শাখা, গ্রাম পঞ্চায়েত, যুব সমিতি ও মহিলা সমিতি। ১৯৭৩ সালে শান্তি বাহিনী গঠিত হলেও তারা শুরুতেই সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়নি। সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার মত সদস্য সংগ্রহ অভিযানেই কেটে যায় তাদের তিনটি বছর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর মানবেন্দ্র লারমা গোপনে ভারতে চলে যান। ১৯৭৬ সালের একটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি যানে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে তাদের গেরিলা আক্রমণের সূচনা ঘটায়। শান্তিবাহিনী যে কোন গেরিলা সংগঠনের মত তারাও একটি পূর্ণাঙ্গ রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলে। এ জন্য শান্তিবাহিনীকে ভারত আর্থিক সহায়তা, অস্ত্র সহায়তা, রাজনৈতিক সহায়তা, উপজাতীয়দের আ্র্রয়, খাবার যোগান ও সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়।

ভারত বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে - ভারতের জনপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক ‘টাইমস অব আসাম’। 

স্মরণাতীতকাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ভারত বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে ১৯৭৩ সাল থেকেই পার্বত্য অঞ্চলকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যেই ভারত মানবেন্দ নারায়ণ লারমাকে প্ররোচিত করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ এবং এর সামরিক শাখা ‘শান্তি বাহিনীর জন্ম দেয়।

পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে ভারত শান্তি বাহিনীকে অর্থ সহায়তা দিয়েছে। তাদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। এর কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। ভারতের সাংবাদিক অশোকা রায়না তার ‘ইনসাইড ‘র’ ডুটে: দ্য স্টরি অব ইন্ডিয়াস সেক্রেট সার্ভিস‘নামের বইটির ৮৬-৮৭ পৃষ্ঠায় এ সংক্রান্ত বেশ কিছু দলিলপত্র (ডকুমেন্টস) তুলে ধরেছেন। ১৯৮১ সালে বিকাশ পাবলিশার্স নামে নয়া দিল্লির একটি প্রকাশনা সংস্থা বইটি প্রকাশ করে।

বইতে অশোকা রায়না বলেন, ‘র’ চাকমা গেরিলাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসলে চাকমারা ‘র’ এর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন তারা মিজো বিদ্রোহীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে ভারতের কাছে তথ্য পাচারের প্রস্তাব দেয়। বিনিময়ে তারা রাজনৈতিক আশ্রয় চায়। ভারত সরকার তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়।

অশোক বিশ্বাস নিউ ন্যাশনে প্রকাশিত একটি লেখায় বলেন, ‘‘বাংলাদেশে বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চালানোর উদ্দেশ্যে ‘র’ চাকমা উপজাতি এবং শান্তি বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে (নিউ ন্যাশন: ৩১ আগস্ট, ১৯৯৪)।’’

এখানে ভারতীয় সাংবাদিক বিবিসির করেসপন্ডেন্ট সুবির ভৌমিকের একটি উদ্ধৃতি তুলে দেয়া জরুরি। সুবির ভৌমিক ঢাকাভিত্তিক পাক্ষিক ম্যাগাজিন ‘প্রোবকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (বর্ষ ১, সংখ্যা ৪, সেপ্টেম্বর ১-১৫, ২০০১) বলেন, ‘‘আপনি আমার বই ‘আরম (১৯৭৫-১৯৯০) দেখুন। সেখানে ‘র’ সমর্থিত শান্তি বাহিনী নিয়ে একটি লেখা আছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭৬ সালের পর শান্তি বাহিনী যখন আন্ডারগাউন্ডে চলে গেল, তখন শান্তি বাহিনীর সদস্যরা প্রশিক্ষণের জন্য ভারতে গিয়েছিল। মনে রাখবেন, ভারতে সাধারণ কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নেয়া হয়নি। সেখানে নেয়া হয়েছিল নেতৃত্বস্থানীয়দের। তার মাধ্যমে ম ভারত মানবেন্দ নারায়ণ লারমাকে ৫০ হাজার গেরিলা প্রশিক্ষণ দিয়ে অস্ত্র অস্ত্র সজ্জিত করার প্রস্তুতির কথা জানিয়ে দিয়েছিল।

আর এ লক্ষ্যেই ভারত তখন ত্রিপুরা, মিজোরাম ও দেহরাদুনের নিকটবর্তী চক্রাতা এলাকায় ক্যাম্প খুলে দেয়। ১৯৯৪ সালে শান্তি বাহিনীর ক্যাডার ত্রিবিদ চাকমা ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীরা ভারতীয় অংশে ২৫টি ক্যাম্প খুলেছে। এর মধ্যে তিনি ৯টি ক্যাম্পের নাম উল্লেখ করেন। সেগুলো হচ্ছে, সাবরাম, শিলচর, বয়ালপাড়া, কদমতলী, দায়েক, বড়চারী, রালমা, ত্রিমাঘা এবং রতননগর। তিনি আরো জানান, দেহরাদুনে বিশ্বস্ত কিছু লোককে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে।

১৯৯৮ সালের ৩ জুলাই ঢাকার ইংরেজি সাপ্তাহিক ‘ফ্রাইডে’ জানায়, জিয়াউর রহমান সরকারের সঙ্গে মানবেন্দ নারায়ণ লারমা সমঝোতা বিষয়টি ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সামরিক শাখা শান্তি বাহিনীকে ভারত তখন চাপের মুখে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অধীনে কাজ করতে বাধ্য করেছিল।

পরবর্তীতে এটাও প্রকাশ হয় যে, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ঐক্যে ফাঁটল ধরে। এক পর্যায়ে ১৯৮৩ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রিতিকুমার গ্রুপের সদস্যরা মানবেন্দ নারায়ণ লারমাকে তার ৮ জন সহযোদ্ধাসহ গুলি করে হত্যা করে। তখন ভারত সরকার প্রিত্রিকুমার চাকমার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি তথাকথিত শান্তি চুক্তি হওয়ার পরও তাকে ভারতে আশ্রয় দিয়েছে ভারত সরকার।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের চেয়ারম্যান সামিরন দেওয়ান ‘শান্তি বাহিনীকে প্রশ্রয়, অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রদানে ভারত দায়ী’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে শান্তি বাহিনী কাজ করে না। বরং তারা ভারতের ভূ-রাজনৈতিক নীল-নকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে (দৈনিক ইনকিলাব: ১২ নভেম্বর, ১৯৮৯)। সূত্র: সিএইচটি নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২ মার্চ ২০১৪।



পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]