বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি, ভূমি ব্যবস্থাপনা (বন্দোবস্ত ও জরিপ) প্রসঙ্গে : পর্ব - ৫


ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন এবং আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা নিয়ে পৃথক ভূখণ্ড গঠনের নীলনকশা বাস্তবায়নে নেমেছে আঞ্চলিক পরিষদ। মূলত অভিবাসী হয়ে সুদূর প্রসারী লক্ষ নিয়ে তারা আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এটা প্রতিষ্ঠা পেলে পার্বত্য তিন জেলায় সরকার কর্তৃত্ব হারাবে। তাদের নিজস্ব আইনের শাসন চলবে সেখানে। ইচ্ছা করলেও অন্য কেউ জায়গা কিনতে পারবে না। একই সঙ্গে সরকারের অধীনে থাকা কাপ্তাই জলবিদুৎ প্রকল্প, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমিও তাদের অধীনে চলে যাবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড থেকে পার্বত্য তিন জেলা নিয়ে আলাদা ‘এস্টেট’ গঠনের নেপথ্যে রয়েছেন রাজাকার ত্রিদিব রায়ের পুত্র রাজা দেবাশীষ রায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিদিব রায় সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টির প্রতিটি আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। কিন্তু এই ত্রিদিব রায়ের প্রভাবে ওই এলাকার ১টি আসনে হেরে যায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষ অবস্থায় তিনি পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং আমৃত্যু সেখানে মন্ত্রীত্ব নিয়ে অবস্থান করেছিলেন। এই কুখ্যাত রাজাকার মৃত্যুর পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নেননি। কুখ্যাত এই রাজাকারের ছেলে রাজা দেবাশীষ রায় নেপথ্যে থেকে পার্বত্য তিন জেলাকে বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড থেকে আলাদা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন।

ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের জন্য পরিষদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবি তোলা হয়েছে বিল আকারে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হলো মূল আইনের ৬(১)(ক) ধারার শর্তাংশ বিলুপ্তির প্রস্তাবটি। এই ধারা শর্তাংশে রয়েছে "তবে শর্ত থাকে যে প্রযোজ্য আইনে অধিগ্রহণকৃত ভূমি এবং সংরক্ষিত বানাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ এলাকা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্পকারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এই উপ-ধারা প্রযোজ্য হবে না।" তাদের এ সকল দাবি পূরণ হলে তিন পার্বত্য এলাকায় সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ভূমি কমিশনের মাধ্যমে পুরো কাপ্তাই লেক তাদের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। হস্তান্তর করতে হবে রিজার্ভ ফরেস্ট। আদিবাসীর অধিকার চাচ্ছে পাহাড়ী গোষ্ঠীগুলো। কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোন আদিবাসী এলাকায় সেনা চলাচল করা যাবে না। এলাকার কোন জমি সরকার ব্যবহার করতে পারবে না। অনুমোদন ছাড়া আদিবাসী এলাকায় প্রবেশও নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া আদিবাসী হলে অপরাধ করলেও তাদের রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে কোন বিচার বা গ্রেফতার করা যাবে না। তারা তাদের নিজস্ব আইনে অপরাধীদের বিচার করবে। 

সরকারের ভূমি ও পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ নিজেদের আদিবাসীতে পরিণত করতে দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তদ্ধির চালিয়ে আসছেন। বিভিন্ন সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের পেছনে রয়েছেন তাঁদের নেতা চাকমা সার্কেল চীফ রাজা দেবাশীষ রায়। তাঁরা জানান, আদিবাসীর মর্যাদা আদায়ের পাশাপাশি ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করতে পারলে তাঁরা তাঁদের টার্গেট পূরণ করে ফেলবেন। আইন সংশোধন করতে সচিবালয়ে ভূমিমন্ত্রীর সঙ্গে পরিষদের বেশ কয়েক নেতা বৈঠক করেছেন। বৈঠকের সুপারিশ বিবেচনা করতে শীঘ্রই সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবে মন্ত্রণালয়। 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেয়া পাহাড়ের ১৪ হাজার শরণার্থীর ভূমির জটিলতা নিরসনে ভূমি কমিশন আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন করা হয়। এ শরণার্থী বিষয় ছাড়াও বাঙালীদের বন্দোবস্ত দেয়া জমি ছাড়াও অন্যান্য বন্দোবস্ত দেয়া জমিও কমিশনের আওতায় আনতে চাচ্ছেন পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। এখন যাঁরা নিজেদের আদিবাসী দাবি করছেন তাঁরা সবসময়ই উপজাতি তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবেই পরিচিত হয়ে আসছেন। 

ওদিকে তিন পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি জরিপ কার্যক্রম ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে সরকারের ডাকে এখনও সাড়া দেননি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা সহ পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। আলোচনার জন্য ঢাকায় ডাকা বৈঠকে তাঁরা যোগ দেননি। পরবর্তীতে ভূমিমন্ত্রী মোঃ রেজাউল করিম হীরা, ভূমি প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনার জন্য পাহাড়ে যান। সেখানেও আলোচনা সফল হয়নি। এর আগে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ভূমি মন্ত্রণালয়ে ডাকা দু'টো বৈঠকই পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ বয়কট করেন। ভূমি মন্ত্রণালয় ওই বৈঠক ডেকেছিল ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি ও জরিপের বিষয়ে আলোচনার জন্য। ওই বৈঠক বয়কট করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার নেতৃত্বে পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে তাঁদের সম্মতিতে আরেকটি বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হলেও ওই বৈঠকেও যোগ দেননি সন্তু লারমা কিংবা তাঁর কোন প্রতিনিধি। 

পার্বত্য জেলায় কর্মরত সরকারী কর্মকর্তারা জানান, শান্তিচুক্তি অনুযায়ী সমস্যার সমাধানের জন্য ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান তিন পার্বত্য জেলায় একের পর এক বৈঠক করে চলছেন। এসব বৈঠকে শুধুই সরকারী কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। জেলা পরিষদ বা অন্যান্য পাহাড়ী সংগঠনের কোন নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নিচ্ছেন না। 

সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর ও বাস্তবায়ন এবং উপজাতীয় শরনার্থী ও অভ্যন্তরীণ উপজাতীয় উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের পর চুক্তি অনুযায়ী গঠিতব্য আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে যথা শীঘ্রই পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ কাজ শুরু করতে হবে বলে শান্তি চুক্তিতে বলা আছে। জায়গা-জমি বিষয়ক বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে একটি কমিশন (ল্যান্ড কমিশন) গঠিত হবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ২০০১ সালের ১২ জুলাই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য ভূমি নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ প্রণয়ন করে। জনসংহতি সমিতিসহ সকল পাহাড়ী নেতা এ আইনকে শান্তি চুক্তির সঙ্গে বিরোধী বলে অভিযোগ তুলে প্রত্যাখ্যান করে আসছে। তবে চুক্তিবিরোধী ইউনাইটেড পিপল ড্যামোক্রেটিক ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ বলেছে, ভূমি বিরোধ নিষ্পন্ন করার আগে প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দিতে হবে। 

পার্বত্য এলাকায় কর্মরত সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পার্বত্য এলাকা থেকে বেশকিছু শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। পরবর্তীতে তারা দেশে ফেরার পর সরকার তাদের পুনর্বাসন করে। পাহাড়ী নেতৃবৃন্দ সেটাকে ইস্যু করে জটিলতা সৃষ্টি করে চলছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এখনও শরণার্থীদের পুনর্বাসন করা হয়নি। কাপ্তাই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ফলে তাদের কিছু লোক এখনও উদ্বাস্তু। পুনর্বাসন হয়নি বলে তাদের দাবি। এ অজুহাতে তারা ভূমি জরিপের কোন বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন না। উদ্বাস্তু থাকলে তাদের তালিকা পাঠাতে বার বার অনুরোধ করেও সরকারী কর্মকর্তারা এ ধরনের কোন তালিকা পাননি বলে জানান। 

ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে পার্বত্য জেলাগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি জমির ব্যবহার বাড়ছে। এসব এলাকার জমির চৌহদ্দি ও পরিমাণ দিয়ে জমির মালিকানা ঠিক করা হয়। মৌজা ম্যাপ, খতিয়ান নম্বর ও দাগ নম্বর না থাকায় জমির সীমানা বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে এ এলাকার জনগণের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। এ কারণে ভূমির মালিকানা, প্রশাসনিক কাঠামো, সম্পদের নিয়ন্ত্রণ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বাহিনীর অবস্থান এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সার্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ভূমি জরিপ একান্ত প্রয়োজন। 

পার্বত্য এলাকায় ভূমি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভূমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ ১৯৮৪ (১৯৮৫ সালের ২ নম্বর আইন) জারি করা হয়। ওই আইনের ৩ নম্বর ধারায় প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি জরিপ করার বিধান রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে ১৯৮৬ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ৪০৪ বর্গমাইল এলাকায় কিস্তোয়ার জরিপ শুরু হয়। জরিপ কাজ চলার সময় রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া মৌজায় কর্তব্যরত দু'জন জরিপ কর্মচারী অপহৃত হয়। পরবর্তীতে তাদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর ১৯৮৮ সালের ২২ অক্টোবর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ভূমি জরিপ ও রেকর্ড প্রণয়ন কাজ স্থগিত করা হয়।



পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]