বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭

আমাদের বাঁচতে দিন : রোহিঙ্গা পরিবারের আত্মকাহিনী।

মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি? এইতো মা, ওপারে (বাংলাদেশে)! ওরা কি মারবে না মা? না মা, ওরা তোমার ভাই! আমাদের শরীরে আগুন দেবে না তো? না রে মা! ওরা তোর বাবার মতো। তোকে আদর করবে। আর খেলতে যখন ইচ্ছে হবে তোর, ঘুরতে নিয়ে যাবে ঐ দূর মাঠে। গতরাত থেকে এত ঝড়-ঝাপটা গিয়েছে যে কিছুই মনে ছিল না বাচ্চাটির। হঠাৎ তার বাবার কথা মনে হল যেন।  মা গো! বাবা কোথায় আমার? দু'দিন ধরে দেখি না কেন বাবাকে?অশ্রু জমে ওঠে মায়ের চোখে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। কপালে এঁকে দেয় আলতো চুমু – "তোর বাবা নতুন বাড়ি ঠিক করতে গেছে মা।" মা ঠিক জানে, মেয়ের বাবা আর ফিরবে না কখনো। দু'দিন আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে। তাঁর শেষ কথা ছিল - 'বাঁচতে চাইলে আমার মেয়েকে নিয়ে পালাও।'
৭টি নৌকা এগিয়ে চলেছে সন্তর্পণে। নাফ নদীর বুক চিরে। ঐ তো বাংলাদেশ! হঠাৎ কিসের যেন শোরগোল। বিজিবি ঘিরে ধরেছে নৌকা। ঢুকতে দেয়া যাবে না এদের। "পুশব্যাক" করাতে হবে। উপরের নির্দেশ। এদিকে অভুক্ত, অসহায় নৌকার যাত্রীরা উৎকন্ঠিত। ফিরিয়ে দেবে না তো? ইতিমধ্যে নৌকার বুকে গুঞ্জন শোরগোলের রুপ নিয়েছে। "আমাদের বাঁচতে দিন।" "আপনারা তাড়িয়ে দিলে আল্লাহর দুনিয়ায় আমাদের কোন স্থান থাকবে না হয়তো।"

এক বৃদ্ধাকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেল। এগিয়ে এলেন সেই মা। শুকিয়ে যাওয়া চোখে টলমল করছে অশ্রু "আমরা ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু দয়া করা আমার বাচ্চাটিকে নিয়ে যান। ওকে বাঁচতে দিন।" বিনিময়ে নির্মম, কঠোর চাহনি ফিরে পেলেন মা। কোলে তার সেঁটে যাওয়া ভীরু সন্তান। নৌকা চললো ফের আরাকানের দিকে। "মা গো! আমরা কোথায় যাচ্ছি?" মা নীরব। "ওরা কি আমার ভাই নয়? তুমি না বললে ওরা আমার বাবার মতো!"

মায়ের চোখে নিথর দৃষ্টি। চোয়াল শক্ত করে বললেন, "তোর ভাইয়েরা মরে গেছে। পৃথিবীর কোথাও তোর ভাই নেই।" "বাবার নতুন বাড়ির কি হবে মা?" "আমরা সেই বাড়িতেই যাচ্ছি মা। তোর বাবার কাছে!" টপটপ করে ঝরে পড়ছে অশ্রুমালা। মায়ের এ অশ্রু শুকাবার নয় ।