বরাবর
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিষয় : “পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬”সংশোধনের দাবি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপিড়ীত বঞ্চিত মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আমরা জানি পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে আপনি অত্যন্ত আন্তরিক। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চিন্তা, চেতনাকে ধারণ করে এ অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে আপনি যেসব যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছেন তার জন্য পার্বত্যবাসী আপনার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। আপনার ঐকান্তিক চেষ্টা ও আন্তরকিতার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিনের অশান্ত পরিবেশ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর সম্পাদিত হয়েছিলো ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি। যার মূল লক্ষ্য ছিলো পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
পার্বত্য চুক্তির শর্ত মোতাবেক পার্বত্য ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য একটি ল্যান্ড কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রনয়ন করা হয়। যা সর্বশেষ ২০১৬ সালে সংশোধন করে “পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬”হিসেবে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
হে জননেত্রী,
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার সাথে জানাচ্ছি যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৬ নামে যে কমিশন গঠন করা হয়েছে সেখানে পার্বত্য বাঙ্গালীদের কোন প্রতিনিধি নেই। আপনি জানেন কমিশনের ৯ জন সদস্যের মধ্যে তিনজন সার্কেল চীফ ও তিনজন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং একজন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সবাই উপজাতি। বাকি দুইজন তথা কমিশনের মাননীয় চেয়ারম্যান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও সদস্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। এতে পরিষ্কার যে কমিশনে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি নেই। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত বাঙ্গালীরা এ আইন ও কমিশনের মাধ্যমে তাদের ভূমির অধিকার হারাবে বলে উৎকণ্ঠিত। কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহিত হবার আইন থাকায় এ কমিশন থেকে একপেশে যে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আসার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের একপেশে সিদ্ধান্তের ফলে পার্বত্য বাঙ্গালীরা ভূমিহীন হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। এছাড়া কমিশন আইনের ১৬ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে যে, “ধারা-৬ (১) এ বর্ণিত কোন বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদনের ওপর কমিশন প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ানি আদালতের ডিক্রী বলিয়া গণ্য হইবে, তবে উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালত বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষের নিকট আপীল বা রিভিশন দায়ের বা উহার বৈধতা বা যথার্থতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না”। এ ধারার মাধ্যমে বাঙ্গালী ও উপজাতি সবাই তাদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে বলে আমরা মনে করি। এছাড়াও, ৬(১)(ক) ধারা মোতাবেক ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন, রীতি ও পদ্ধতি মূলতঃ হেডম্যন, কারবারী ও সার্কেল চীফদের ব্যক্তিগত মতামত ও সিদ্ধান্তকে বুঝানো হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে হেডম্যান, কারবারী ও সার্কেল চীফ সবাই উপজাতি ফলে তারা উপজাতিদেরই স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে বলে সহজেই অনুমেয়। তাই এটি নিশ্চিত যে, সংশোধিত আইনের ৬(১)(ক) ধারাটি অপব্যবহার করে বাঙ্গালীদেরকে নিজেদের বসতভিটা, জায়গা জমি হতে বঞ্চিত ও উচ্ছেদ করার সুযোগ পাবে। যেসব ক্ষেত্রে দেশে আইনের অস্তিত্ব রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে প্রচলিত রীতি ও প্রথার প্রয়োগ থাকতে পারে না। এটা মূলতঃ পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে “জুম্মল্যান্ড” নামক একটি স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার মূখ্য উদ্দেশ্য বলে প্রতীয়মান। পাশাপাশি, ধারা ৬(১)(খ) ধারাটি বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭, ৩১ ও ৪২ এর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ভূমি কমিশন আইনে উক্ত ধারা সংযোজন এবং অধ্যাদেশ ২০১৬-তে তার সংশোধনের মাধ্যমে ভূমিতে স্থানীয় বাঙ্গালীদের অর্জিত দলিলসমূহের আইনি ও বৈধ মূল্য সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করা হয়েছে এবং হীন উদ্দেশ্যে স্থানীয় বাঙ্গালীদের ভূমিতে অর্জিত দলিলসমূহ বাতিলের গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। ৬(১)(গ) ধারাটি সংশোধোনের ফলে জলে ভাসা জমি (ফ্রিজল্যান্ড) বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদ ভেসে ওঠা জমিসহ অন্যান্য জমির উপর একতরফাভাবে উপজাতীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত জমিতে কোন বাঙ্গালী বন্দোবস্ত পেয়ে থাকলেও তা থেকে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে উচ্ছেদ করতেই আইনে এই সংশোধনী আনা হয়েছে। অথচ, বন্দোবস্ত, লিজ, কবুলিয়ত ইত্যাদি আইনী পরিভাষায় কেবলমাত্র খাস জমি বন্টনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং খাস জমির মালিক হচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে নাগরিক বা সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ বেআইনী। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩০ ভাগ ভূমিতে এখানে বসবাসরত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর বসতভিটার পাশাপাশি রিজার্ভ ফরেস্ট, সরকারী শিল্প কারখানা, সেনানিবাস, বিজিবি, পুলিশ ব্যারাক, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, ভূমি অফিস, আদালতসহ সকল প্রকার সরকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি বন্দোবস্তও অবৈধ বলে প্রমাণিত হবে। এ অবস্থায় পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করে উক্ত কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে পাহাড়ের বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধির উপস্থিতি ও সমান মতামত নিশ্চিত না করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যার প্রকৃত সমাধান হবে না। বরং বৃহত্তর জনগোষ্ঠী বাঙ্গালীরা ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পাহাড়ের পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে। এতে পার্বত্য চুক্তির যে কাঙ্খিত লক্ষ্য “শান্তি প্রতিষ্ঠা” তা চরমভাবে ব্যহত হবে।
হে মানবতার মা,
আমাদের বিশ্বাস আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের সমান অধিকার রক্ষায় আন্তরিক। আপনি পাহাড়ে বসবাসকারী সকল মানুষকে সমান চোখে দেখেন। তাই আপনার প্রতি আমাদের আকুল আবেদন পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠী তথা বাঙ্গালীদের ভূমি ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের অখন্ডতা রক্ষার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে সকল জনগোষ্টির মাঝে গ্রহণযোগ্য একটি ভূমি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেবেন। একই সাথে আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত কমিশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আপনার প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিনীত নিবেদক
পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল বাংগালী জনগোষ্ঠীর পক্ষে
ইঞ্জিনিয়ার আল কাছ আল মামুন
আহবায়ক
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ