পশ্চিমাদের আগ্রহ: এর মধ্যে অনেক সময় বয়ে গেল, অনেক জল গড়িয়ে গেল মাইনী নদীর উপর দিয়ে। সন্তু লারমার শান্তি বাহিনী' 'পূর্ণ-স্বায়ত্তশাসন'-এর দাবী থেকে পিছু হটল। সরকার আলোচনা চালিয়ে যেতে লাগল। অবশেষে ১৯৯৭ সালে সরকার ও শান্তি বাহিনীর একটি সমঝোতায় উপনীত হতে সক্ষম হয়। জানিয়ে রাখি, এই অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থানের দরুন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। তাই এই অঞ্চলের প্রতি পশ্চিমাদের একটি আগ্রহ ছিলই। আরেকটি ব্যাপার এখানে উল্লেখযোগ্য। পরখ করলে দেখা যাবে যে, আয়তনের দিক দিয়ে আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ (মুসলিমও বটে) সুদান থেকে দঃ সুদান এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ ইন্দোনেশিয়া থেকে পূঃ তিমুরকে 'খ্রিস্টানাইজেশনের' মাধ্যমে আলাদা করার প্রক্রিয়াও তখনই শুরু হয়। এই দুইটি দেশই একসময় মুসলিম
উপদ্রুত ছিল এবং পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ মদদে একই প্রক্রিয়া অর্থাৎ 'খ্রিস্টানাইজেশন'এর মাধ্যমে স্বাধীন হয়। একই প্রক্রিয়া আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ ভারতের মেজোরাম সহ অনান্য রাজ্য নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনে পশ্চিমাদের আগ্রহ আছে বলে কূটনৈতিক মহলে কানাঘুষা আছে। আহমদ ছফা প্রতিবেশী ভারতের পার্বত্য চট্টগ্রাম সংস্লিষ্ট পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি অস্থির রাজ্যসমূহের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার মিল খুঁজেছেন। সেসব এলাকায় নৃতাত্ত্বিক ও ভূ-প্রাকৃতিক মিল তো আছেই, তা ছাড়াও সেখানে কেন্দ্রের প্রতি বিদ্রোহ, খ্রিস্টান মিশনারিদের তৎপরতা এবং বিদেশী শক্তির উস্কানি ও গোপন সহায়তাকে সামনে এনেছেন (আহনদ ছফা ১৯৯৮; ১৫)। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টানের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। এদের সিংহভাগই মিশনারিদের টাকার প্রলোভনে ধর্মান্তরিত হয়েছে বলে প্রমাণিত। এই বিপুল পরিমান টাকার যোগানদাতা কারা? অবশ্যই পশ্চিমারা। আনঅফিসিয়াল সূত্র নিশ্চিত করেছে, এর সাথে জড়িত ইউএনডিপি সহ বেশ কয়েকটি এনজিও, যারা এসব এলাকায় কাজ করছে। ওদিককার সীমানার দীর্ঘ এলাকা (নাড়াইছড়ি,সাজেক,আঁধারমানিক,লেম্বুছড়ি- মোট প্রায় ৩৫৬ কিঃমি) সম্পূর্ণ অরক্ষিত,সেখানে এমনকি সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারও নামে না (হূমায়ুন আজাদ ১৯৯৭ : ১৩। সেই সুযোগ নিয়েছে এনজিও গুলো। সেখানকার সিংহভাগ উপজাতি এখন খ্রিস্টান! তবে বর্তমানে সেখানে বিজিবি’র ক্যাম্প আছে। পশ্চিমারা সহজেই জানে, ভারতের গায়ে আঁচড় কাটা সহজ নয়। যেই ভারত সামান্য এক জেলে মৃত্যুর ঘটনায় ইতালির মত দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করতে দ্বিধা বোধ করে না,তাদের টিকিটি ছোয়া কোনও সহজ কম্ম নয়! এবং সে কারনেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের ঘন ঘন আসা যাওইয়ার ঘটনায় আমাদের আতংকিত হবার যথেষ্ঠ কারন রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে হয়তো আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে পশ্চিমাদের। যার প্রথম দিককার ধাপ হয়ত, ‘শান্তি চুক্তি’ সম্পাদনে পশ্চিমা দেশ সমূহের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ এবং সংশ্লিষ্ঠতা। সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত হয়তো পাওয়া যাবে না,তবে মানুষের ‘মস্তিস্কজাত ইন্সথিঙ্কট’ নামে একটি ব্যাপার আছে, যেটি দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে সাহায্য করে। আমাকে যারা এই মুহূর্তে ‘ষড়যন্ত্রবাদী’ ভাবছেন,তাদের বলি,পশ্চিমারা ইসরায়েল নামের একটি বিষফোঁড়া মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশসমূহের উপর ছড়ি ঘুরাতে সৃষ্টি করেছিল এবং তাদের উদ্দেশ্য যে শতভাগ সফল এ নিয়ে কারও দ্বিমত নেই। একে বলে বাফার কান্ট্রি। দঃ সুদানকে পৃথক করা হয়েছে সেখানকার তেল এবং ঐ অঞ্চলে পশ্চিমাদের প্রভাব সৃষ্টির জন্য। ঠিক একই কারনে আলাদা করা হয়েছে পূঃ তিমুরকে। ঐ অঞ্চলেও পশ্চিমাদের একটি তাবেদার রাষ্ট্র প্রয়োজন ছিল। ভেবে দেখুন,ক্রমেই মাথাচড়া দিয়ে উঠা চীনের উপর ছড়ি ঘুরাতে দঃ এশিয়ায়ও এরকম একটি তাবেদার রাষ্ট্র পশ্চিমাদের খুব প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগলিক অবস্থান,সংঘাতপূর্ণ অবস্থা তাঁদের জন্য আরও লোভনীয় ‘প্যাকেজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা থাকলে ক্ষতি নেই,ইসরায়েলের চেয়ে তিন পার্বত্য জেলার মোট আয়তন কম নয়। পশ্চিমাদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যথেষ্ঠ। আহমদ ছফা এ নিয়ে তাঁর বই ‘শান্তিচুক্তি ও নির্বাচিত প্রবন্ধ’-এ বিস্তারিত লিখেছেন। সেখানে তিনি ‘নিউ এশিয়া’ নামক ইসরায়েলের মত তবে খৃস্টান রাষ্ট্র গঠন করে পশ্চিমা শক্তি এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য নিজেদের দিকে আনার চেষ্টা করছে বলে দাবী করেছেন। এসব হেলাফেলার বিষয় নয়। এখনও যদি আমাকে ‘ষড়যন্ত্রবাদী’ মনে হয়,তাহলে আরেকটি অফটফিক বিষয় বলি। বেশ ক’ বছর আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান জেনারেল এক সাক্ষাৎকারে দাবী করেছিলেন,আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাঁচটি দেশ, যথাক্রমে- লিবিয়া,মিশর,সিরিয়া,ইরান,ইরাকের ক্ষমতার পালাবদল ঘটানো হবে। আমরা আজ তাঁর কথার সত্যতা খুঁজে পাই। সুতরাং,পশ্চিমাদের দূরদর্শিতাকে খাটো করে দেখা বোকামি হবে। কাউকে ভয় দেখানো এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। এই লেখার উদ্দেশ্য সকলকে সচেতন করা।
অসম ‘শান্তি চুক্তি’ চাপিয়ে দিতে পশ্চিমাদের মোটেই অসুবিধে হয়নি। কারন,তখন মসনদে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,যিনি এই চুক্তি করে নোবেল শান্তি পুরস্কার বাগানোর স্বপ্নে বিভোর। তবে বিধিবাম! নোবেল ওনার ভাগ্যে জোটেনি। পরে অবশ্য শান্তনা পুরস্কার হিসেবে ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার পান তিনি।
চুক্তির অসারতার কারণঃ হ্যাঁ,চুক্তির ফলে আপাত একটি শান্তির আশা করেছিল সবাই। কিন্তু আক্ষরিক অর্থেই এই চুক্তি ছিল অসম। কারন এই চুক্তিতে সেখানে বসবাসকারী বিপুল পরিমান বাঙালি,যাদের অধিকাংশ বহু আগ থেকেই সেখানে বাস করে আসছিলেন,তাঁদের স্বার্থ চরম ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ভাবা উচিত ছিল,সেখানকার বাঙালিরাও ভৌগোলিক কারনে উপজাতিদের সমপরিমান বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। উপজাতিদের মধ্যে চাকমাদের শিক্ষার হার ৮৫% এরও বেশি, কিন্তু সেখানের বাঙালিদের মধ্যে এই হার ৪০%-৫০%। বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% কোটা নিয়ে প্রতিবছর ৫০০’র মত উপজাতি ছাত্র-ছাত্রী বুয়েট তথা সকল প্রকৌশল বিশ্ব-বিদ্যালয় সহ দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ব-বিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। অথচ, তিন পার্বত্য জেলার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেও সেখানের বাঙালি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪০-৫০ জন। এর ফলে কি বিভাজন তৈরী হচ্ছে না? বিসিএস সহ সকল সরকারী চাকুরীতে ৫% কোটায় সুযোগ পাচ্ছে উপজাতিরা। কোটার কারণে উপজাতিদের মধ্যে বিসিএস ক্যাডারদের সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে, অথচ স্থানীয়ভাবেও বাঙালিদের জন্য এমন কোনও সরকারী প্রণোদনা নেই। আজ পর্যন্ত সেখানকার কোনও বাঙালি বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছে কিনা, তা গবেষণা-সাপেক্ষ! অথচ, ইতিমধ্যেই আর্মিতে মেজর জেনারেল পদমর্যাদার (বর্তমানে মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত), পুলিশ ক্যডারে আইজিপি পদেও একজন উপজাতির নাম প্রস্তাবিত হয়েছিল, পরে তাকে সচিব বানানো হয়েছে। আর কয়েক ব্যাচ পর, এরকম উদাহরণ ভুরি-ভুরি হয়ে যাবে। তিন পার্বত্য জেলার সকল চাকুরীর ক্ষেত্রে স্ব স্ব জেলার জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদকে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে শান্তি চুক্তিতে, যেই পরিষদ দুটির চেয়ারম্যান হবেন একজন উপজাতি এবং আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা স্বয়ং নিজে। উপজাতিদের নামে এসব সুবিধা মূলত ভোগ করছে চাকমারা। এত কিছুর পরও তাঁরা সংবিধানের ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী’দের আওতায় সরকারী সুবিধা পেয়ে দিনে তিনবেলা সরকারকে চোখ রাঙাচ্ছে। অথচ, বাঙালিদের জন্য ১% কোটা রাখার ইচ্ছা কারও হয় না। সত্যিকারের পিছিয়ে পড়া উপজাতিদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা কারও হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামে পশ্চিমা এনজিওর সংখ্যা অনেক। সেখানেও চাকুরীর সুবিধা রয়েছে অনেক। কিন্তু, জেনে অবাক হবেন এসব এনজিওর এ দেশীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ৯০%-ই উপজাতি। এই সব এনজিওর একজন ড্রাইভারের বেতন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের চেয়েও বেশি। এসব অসাংবিধানিক বৈষম্য নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ব বিদ্যালয় মঞ্জুরি বিভাগের সাবেক সদস্য, বিশিষ্ঠ রাজনীতি বিশ্লেষক ডঃ তারেক শামসুর রহমানের কয়েকটি প্রবন্ধ আছে। প্রথম ও দ্বিতীয়টি পড়া যেতে পারে। সুতরাং বিভিন্ন সরকারি সুবিধাদি সম-অধিকারের ভিত্তিতে তাঁদেরও প্রাপ্য। নতুবা একই এলাকায় বসবাসকারী দুইটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিভাজন তৈরী হতে পারে,যার ফল শুভ হয় না। উপজাতি হিসেবে সামান্য বেশি সুবিধা তাঁরা দাবী করতেই পারেন,তবে সেটা যাতে বড় ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত ছিল। কিন্তু তেমনটা করা হয়নি চুক্তিতে।
শান্তি চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে অনেকেই আছেন। কিন্তু, কেউই শান্তির অপরিহার্যতা অস্বীকার করছেন না; মতভেদ হল শান্তি অর্জনের প্রক্রিয়া নিয়ে। কোন প্রক্রিয়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ ও নির্ভুল হতে পারে না। তবে এ ক্ষেত্রে তাত্বিকরা বলছেনঃ Conflict resolution demands participation of all the parties in reaching the outcome (D.R.Z.A Nazneen 1996 : 34). অর্থাৎ সংঘাত নিরসনে কাঙ্ক্ষিত ফল পেতে হলে বিবদমান সকল পক্ষকেই অংশ নিতে হবে। কিন্তু এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি; বাঙালিরা বঞ্চিত বোধ করছেন। বিরোধী দলকেও সম্পৃক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ধরা হয় ভূমি সমস্যাকে। সেই লক্ষ্যে শান্তি চুক্তিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে ভূমি কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কোনও চেয়ারম্যানের সাথে পাহাড়ি নেতৃবৃন্দের মিল হয়নি! পাহাড়িদের চাপের মুখে সরকার ভূমি মন্ত্রণালয়ের আপত্তি স্বত্তেও ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করেছে। যার ফলে ভূমি বিষয়ক বিবদমান যে কোনও মামলার রায় দেয়ার ক্ষেত্রে দায়রা আদালতের কর্মপরিধি ক্ষুণ্ণ করে, চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খাটো করে কমিশনের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের উপর দেয়া হয়েছে। আর কমিশনে পাহাড়িরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, বাঙালি প্রতিনিধিত্বই নেই! পাহাড়িরা তাঁদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবেন এটাই স্বাভাবিক। তাই পাহাড়িদের পক্ষে রায় গেলে বাঙালি অন্য কোথাও আপিলও করতে পারবেন না! এসব কারণে বাঙালিরা নিজেদের ভূমি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। বিস্তারিত জানতে সৈয়দ ইবনে রহমতের এই লেখাটি পড়া যেতে পারে।
এছাড়া পার্বত্য জনগোষ্ঠী নিজেদের জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের ‘একচ্ছত্রবাদ’এর বিরুদ্ধে ব্যাবহার করেছেন এবং তাঁদের জন্য সেটা কোনও সমাধান নয়। কারণ তাঁরা নিজেরা একচ্ছত্র সম্প্রদায় নয় বরং তাঁদের আছে ১৩ টি বিচিত্র জাতিগোষ্ঠী। তাঁদের মধ্যে নির্দিষ্ট কোনও কোনও গোষ্ঠীর একচ্ছত্র হয়ে উঠার সম্ভাবনা আছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের তুলনায় চাকমা কিংবা মারমাদের আধিপত্য ও সুযোগ সুবিধা ভোগ সেটাই প্রমাণ করে। আমেনা মোহসিন এই দিকটির প্রতি আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাটি জাতীয়তার সমস্যা। রাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদের বিপরীতে উদ্ভব হয়েছে উপরাষ্ট্রীয় জাতীয়তাবাদের (Sub-state nationalism) (Amena Mohsin 1997).
বাঙালি এলিটদের কবল থেকে নিজেদের দাবীর জন্য পাহাড়িরা আন্দোলনে গিয়েছিলেন, পূর্বে যেমন গিয়েছিলেন পাকিস্তানি ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে। আবার এখন পার্বত্য এলিটরা চাচ্ছে বাঙালিদের কাছ থেকে নিজেদের শাসন ক্ষমতা নিতে। পার্বত্য সৌন্দর্যকে বাঙালিদের জন্য নিষিদ্ধ করতে। এটা নিছক ক্ষমতা দখলের স্বার্থতাড়িত লড়াই। এখানে অবহেলিত, নির্যাতিত পার্বত্য মানবমণ্ডলীর উদ্ধারের, অগ্রসরতার প্রশ্ন অনুপস্থিত। কোন মানবিক সমাধান এক্ষেত্রে আসতে পারে না- কেবল শাসকের বদল হতে পারে মাত্র।
জাতিগত পশ্চাৎপদতাকে পুঁজি করে যারা বিদ্রোহ করেছেন কিংবা স্বায়ত্বশাসন চাচ্ছেন তাঁরা কারা? আধুনিক, শিক্ষিত, সমাজ পরিবর্তনে আকাঙ্খী উপজাতিরা। কিন্তু তারাই আবার কি করে মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্র-নির্ভর শাসন ব্যাবস্থা দাবী করেন? চাঁদাকে প্রয়োগ করেন অস্ত্র হিসেবে? এ প্রশ্নটি ছিল হুমায়ুন আজাদের।
উপসংহারঃ সংখ্যালঘুদের অধিকারকে মূল্যায়ন করতে হবে, তাদেরকে বিদ্রোহে যেতে বাধ্য করা যাবে না। তাঁদের আত্ন-উপলব্ধিকে পুঁজি করে কেউ যাতে রাজনীতি করতে না পারে সেই দিকে নজর রাখতে হবে। সকল সম্প্রদায়ের দিকে নজর দিতে হবে, কেউ যাতে বঞ্চিত বোধ না করে। বৃহত্তর বাঙালিদের সাথে পাহাড়িদের জাতিসত্তার পার্থক্যর সুযোগ রাজনৈতিকভাবে পাশ্ববর্তীরা যেমন নিতে পারে, তেমনি নিতে পারে তৃতীয় কোনও পক্ষ। আফ্রিকার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেছিল। তাঁদের কাছে ত্রাণকর্তার মত এসেছিল পাদ্রীরা; তাঁদের জীবন উন্নত করা হল, তাঁরা আধুনিক হলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের নিজস্ব ধর্ম-সংস্কৃতি, জমি অধিকার হারালেন। ধর্মে তাঁদের খৃস্টান বানানো হল, সবকিছু দখলে নীল উপনিবেশিক প্রভুরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে ও গারো সমাজ সহ বাংলাদেশের কোথাও কোথাও এমনটা ঘটেছে। উপজাতিরা নিজস্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে উজ্জীবিত হবেন , এই প্রত্যাশা রইলো। সরকারকেও এই জনপদের দিকে আরও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, সুবিধাবাদীদের চক্রান্ত সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাসভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতিএবং সন্তু লারমা ও প্রসীত খীশাদের জেএসএস ও ইউপিডিএফ'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ওবর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিকঅধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]