আগের পর্ব : পর্ব - ১
স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সমূহের ভূমিকা: পাকিস্তানি সামরিক শাসনের কবলে পাহাড়িদের ক্ষোভ প্রকাশিত হতে পারেনি। তা-ই পাহাড়িদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কথা বাঙালিদের নজরে আসে স্বাধীনতার পর। এর আগে বাঙালি নিজেই ছিল নির্যাতনের শিকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানের ‘বাঙালি হবার পরামর্শ’ তাঁদের মধ্যে একটি ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং সেটা তাঁদের মধ্যে আত্ন-সচেতনতা জন্মায়। হারুন-অর-রশিদের মতে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর সদিচ্ছা দেখে জনসংহতির টিকেটে নির্বাচিত হওয়া সংসদ সদস্য চেই খোয়াই রোজা সহ ‘বাকশাল’-এ যোগ দেন এমএন লারমা এবং তাকে বাকশালের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা
হয়। তিন পার্বত্য জেলায় আওয়ামীলিগের সেক্রেটারি পদে তিনজন সিনিয়র উপজাতীয় নেতাকে বসানো হয়। ১৯৭৫ সালের জুনে নব সৃষ্ট বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলার গভর্নর পদে যথাক্রমে মং শু প্রু চৌধুরী এবং মাং প্রু সেইন চৌধুরীকে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে করণীয় ঠিক করতে তৎকালীন সচিব আবুল আহসানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ‘৭৫ এ বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর এসবের অবসান ঘটে।’ যদিও প্রবন্ধকার কিছুটা আওয়ামী ঘেঁষা মনোভাব এখানে দেখিয়েছেন,তবুও তাঁর ব্যাখা একেবারেই ফেলে দেওয়ার মত নয়।
জিয়াউর রহমানের সময়কালে তাঁর পার্বত্য নীতিকে অনেক সময় রাজনৈতিকভাবে বিবেচনা করা হয়। সমালোচকদের মতে, তাঁর আমলে বিপুল সংখ্যাক বাঙালি বসতি সেখানে স্থাপন ও নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত সক্রিয়তার ফলে সমস্যাটি জটিল হয়ে পড়ে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের নীতির অন্য রকম ব্যাখ্যাও আছে। জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক শাসন জারি রাখতে হয় অনেক দিন। দেশের ভেতর তো বটেই সেনা ছাউনিগুলোতে সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। তাছাড়া সীমান্তের ওপার থেকে চোরাগুপ্তা হামলা তাঁর সরকারকে সারাক্ষন ব্যতিব্যস্ত রাখে। সশস্ত্র পাহাড়িরা সীমান্তের ওপার থেকে দলবেঁধে এসে নাশকতা ঘটাতে থাকে। সামরিক এক জেনারেল পুরো বিষয়টি সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেন। ভারতীয় সাহায্যপুষ্ট পাহাড়ি গেরিলারা যদি এভাবে হামলা করতে থাকে, তবে এমন সময়ও আসা বিচিত্র নয়, যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ক্ষমতার শুরু থেকে উদ্বিগ্ন ও উৎসাহী জিয়া পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তার জন্য মূলত দু' রকম পন্থায় অগ্রসর হলেন। প্রথমত, পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ের সর্বত্র সেনা ছাউনি বানালেন। দ্বিতীয়ত, সমতলের দরিদ্র, নদীভাঙনের কবলে পড়া কিংবা ভূমিহীন বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অভিবাসনের ব্যাবস্থা করলেন। রাশিয়ার কিংবদন্তিতূল্য পিটার দ্য গ্রেট দুর্বল সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রন নিশ্চিত করার জন্য অভিবাসনের ব্যাবস্থা করতেন। জিয়াউর রহমানকে এমনি এমনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি। তাঁর জানতে বাকি ছিল না যে, ভারতের তৎকালীন সরকার তাঁর অনুকূল নয়। তাকে এবং তাঁর সরকারকে চাপে ফেলতে ভারত সর্বস্ব দিয়ে তখন শান্তি বাহিনীকে সাহায্য করছিল। তাকে শারীরিকভাবে হত্যা করার একটি ভারতীয় ষড়যন্ত্রের কথাও পরবর্তী সরকার ফাঁস করে দিয়েছিল- (আহমদ ছফা ১৯৯৮; ২০)। তাঁর আমলে শান্তি বাহিনী ভারতীয় সমর্থনে বিপুল বিক্রমে উপস্থিত হয়- (হুমায়ুন আজাদ ১৯৯৭)। স্বভাবতই, জিয়াউর রহমান দেশের অখন্ডতার জন্য উদ্বিগ্ন ছিলেন, যেটি তাকে এমন কঠোর পথ বেছে নিতে প্ররোচিত করেছিল।
‘৭২-‘৮১। ততদিনে শান্তি বাহিনী সংগঠিত হয়েছে,সাথে আছে ভারতীয় মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা। অরণ্যে অবস্থান নিয়ে সশস্ত্র পথেই তাঁরা ব্যাস্ত, আলোচনার ব্যাপারটি ছিল তাঁদের গুরুত্ব ও আস্থার বাইরে। তাই,জিয়াকেও ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি’ বা পাল্টা সামরিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে হয়েছিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে জিয়ার নীতি ছিল সামরিক-অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগের এক বিচিত্র মিশ্রন। কিন্তু এর ফলে আশু-সমাধান আসেনি। কারন পরবর্তী সরকারগুলো এই নীতি আর অনুসরন করেনি। জিয়ার কঠোর নীতি এক দিকে হয়তো অমানবিক,তবে সেটি ছিল সামগ্রীক জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে।
সুনীতি বিকাশ চাকমার মতে,জিয়া পার্বত্য ইস্যুটিকে রাজনৈতিক সমস্যার পরিবর্তে অর্থনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে উপজাতীয়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যেমন,তিনি ১৯৭৬ সালে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম ‘জিওসি’কে প্রধান করে রাঙ্গামাটিতে গঠন করেন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড’। এই বোর্ড স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা,ছাত্রাবাস নির্মাণ,রাস্তাঘাট তৈরি,স্বাস্থ্যকেন্দ্র,উপাসনালয় নির্মাণ,পানীয় জলের ব্যাবস্থা নিশ্চিতকরন, বিদ্যুতায়ন,টেলিযোগাযোগ,রাবার চাষ,হরটিকালচার চাষ সহ বহু পদক্ষেপ নেন-(সুনীতি কুমার চাকমা ১৯৯১; ১১৫)। তিনি চেষ্ঠা করেছিলেন,পাহাড়িদেরকে উন্নয়ন কাঠামোর মধ্যে নিয়ে এনে বিদ্রোহ থেকে সরানোর। কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠিই এতে সম্পৃক্ত বোধ করেনি। কারন, তাঁরা সমস্যাটিকে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখত। এছাড়া পরিস্থিতিকে পাহাড়িদের এক তরফা নিয়ন্ত্রণ থেকে ভারসাম্য নিয়ে আসতে সেখানে বাঙালি প্রতিস্থাপন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাহাড়ি ছাত্রদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান কোটা সংরক্ষণ, ট্রাইবাল কালচারাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা,উপজাতীয়দের মধ্য (বিনিতা রায়, সুবিমল দেওয়ান, অং শু প্রু চৌধুরী) থেকে মন্ত্রী/উপদেষ্ঠা নিয়োগ, রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়ায় তাঁর ছেলে দেবাশীষ রায়কে চাকমাদের রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত করা ইত্যাদি ব্যাবস্থা গ্রহন করেন- (হারুন-অর-রশীদ ১৯৯৮)।
এরশাদের সময় সরকার পাহাড়িদের প্রতি এক ধরনের দ্বৈত নীতির আশ্রয় নেয়। তবে সেই সরকারও সমস্যাটিকে অর্থনৈতিক সমস্যার দৃষ্টিতে দেখে। এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দ করে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। সেই সময় ইউএনডিপি, এডিবি এবং ইউনিসেফের সহায়তায় ৪৫৬ কোটি টাকার শতাধিক প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া একটি বিশেষ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় সরকার ২৬৩ কোটি টাকা ব্যয় করে। তবে,এসব কিছুও পাহাড়িদের ব্যাপকভাবে টানতে না পারায় তাঁদেরকে সন্তুষ্ঠ করা যায়নি। তবে এ সময় সরকার শিক্ষা খাতে বেশ খানিকটা অগ্রগতির সূচনা করে।
পাকিস্তান আমল থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯৪৭ ১৯৯১ মন্তব্য
কলেজ ০১ ০৯ তিনটি সরকারি
মাধ্যমিক বিদ্যালয় ০১ ৬২
নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছিল না ৩৩
প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০ ৯৩৮
উপজাতীয় ছাত্রাবাস ছিল না ০৯
রেসিডেন্সিয়াল বিদ্যালয় ছিল না ০২
শিক্ষার হার ২-৩% ২০% চাকমা ৫০ %
সূত্রঃ (Khaled Belal 1992)
এর পরও যখন উত্তেজনা কমছিল না, তখন সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৮২ সালের ১৩ জুন শান্তি বাহিনীর উদ্দেশ্যে এরশাদের সাধারন ক্ষমা ঘোষনার মধ্যে দিয়ে এই উদ্যোগ শুরু হয়। এই ক্ষমার মেয়াদকাল ১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এরই মধ্যে শান্তি বাহিনীর মধ্যে কোন্দল (শন্তু গ্রুপ ও প্রীতি গ্রুপ) শুরু হয়। তা এতই বিস্তৃতি লাভ করে যে, শান্তি বাহিনীকে বিদ্রোহ বাদ দিয়ে কোন্দল নিয়েই ব্যাস্ত থাকতে হয়। এ সকল কারনে এরশাদ ক্ষমার মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বন্দ্বে ক্লান্ত বিদ্রোহীদের আত্ন-সমর্পণের দিকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। এ উদ্যোগ সফলও হয়েছিল। এর ফলে প্রীতি গ্রুপের প্রায় ২৫০০ সদস্যকে আত্ন-সমর্পণের মাধ্যমে নিরস্ত্র করা সম্ভব হয়েছিল। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে চুক্তি করে সশস্ত্র পন্থা ত্যাগ করে। এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এরশাদ এবার শন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তি বাহিনীর মূল অংশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। শান্তি বাহিনীর মূল সংগঠন জনসংহতি সমিতির সাথে যোগাযোগ ও বৈঠকের লক্ষ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অবঃ) একে খোন্দকারের নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করা হয়। প্রথম বারের মত জনসংহতি সমিতিকে আলোচনার টেবিলে আনা সম্ভব হয় ১৯৮৫ সালের ২১ অক্টোবর। বৈঠকের স্থান সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত জনপদ পূজাগাংয়ে। এরপর ১৯৮৮ পর্যন্ত মোট ৬ টি বৈঠক হয়। জনসংহতি সমিতিকে গহীন অরণ্য ছেড়ে খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউস পর্যন্ত আনা সম্ভব হয়। এসব আলোচনায় শান্তি বাহিনী তথা জনসংহতির পক্ষে মেজর রিপ, নীতিশ দেওয়ান, সুধা সিন্ধু খীসা, স্নেহ বিকাশ চাকমা, প্রমূখ অংশ নেয়। উল্লেখ্য, আলোচনার পাশাপাশি শান্তি বাহিনী সহিংস হত্যাকান্ড তখনও অব্যাহত রাখে।
এরশাদের সাথে ১৯৮৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি থানার পূজাগাং কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আলোচনায় শান্তি বাহিনী পাঁচ দফা দাবী উত্থাপন করে। এই পাঁচ দফা দাবী হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদের চুড়ান্ত ইঙ্গিত। যা মানলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে উঠে এক চমৎকার ‘জুমল্যান্ড’, যা হবে গোটা দেশবাসীর জন্য নিষিদ্ধ এক দেশ; বাংলাদেশের ভেতরে থেকেও আরেকটি দেশ-(হুমায়ুন আজাদ ১৯৯৭; ৩৫)। পৃথীবির আর কোনও দেশে এই ধরনের কোনও নমুনা আছে কিনা আমার জানা নেই। যারা বলেন, ‘পাহাড়িরা চায় না আলাদা হতে, যদি চাইতো তাহলে অনেক আগেই আলাদা হয়ে যেত’, তাঁদের জন্য এই পাঁচ দফা দাবী একটা চপেটাঘাত। সত্যিকার অর্থে তাঁরা চাইতো বিচ্ছিন্ন হতে, একটি ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তখনকার সামরিক সরকার সমূহের সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃঢ়তার কারনেই সেটা আর সম্ভব হয়নি। যাই হোক, তাঁদের সেই পাঁচ দফা দাবীর দিকে একটু ফেরা যাক।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিজস্ব আইন পরিষদ সম্বলিত প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনসহ প্রাদেশিক মর্যাদা প্রদান করা। দেশরক্ষা, বৈদেশিক মুদ্রা ও ভারী শিল্প ছাড়া সকল বিষয়ে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব ও ক্ষমতা প্রদান করা। পার্বত্য চট্টগ্রামের নাম পরিবর্তন করে ‘জুমল্যান্ড’ নাম প্রদান করা।
গনভোট ব্যাতীত পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনও শাসনতান্ত্রিক সংশোধন না করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্থায়ী বাসী’ নয়, এমন কোনও ব্যাক্তি যাতে বিনানুমতিতে এই এলাকায় প্রবেশ এবং বসতি স্থাপন না করতে পারে তার জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধি প্রণয়ন করা।
১৯৪৭ সালের ১৭ আগস্টের পর হতে যারা ‘বেআইনীভাবে’ পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ করেছে এবং স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করেছে, তাঁদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নেওয়া। জনসংহতির সদস্যদের বিরুদ্ধে দেওয়া ‘মিথ্যা’ মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা বিনা শর্তে প্রত্যাহার করা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য একটি ‘নিজস্ব ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা। এই এলাকার উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে অর্থ বরাদ্দ করা। সিভিল সার্ভিস ও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে জুম জনগনের জন্য নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ করা।
সাজাপ্রাপ্ত, বিচারাধীন ও আটককৃত সকল জুম নরনারীকে বিনা শর্তে মুক্তিদান।
বাংলাদেশের এককেন্দ্রিক শাসনব্যাবস্থায় জনসংহতির পাঁচ দফা দাবী মানা সম্ভব ছিল না। তার উপর দাবী গুলোর মধ্যে ছিল বিচ্ছিন্নতার সুস্পষ্ঠ লক্ষন। এই দাবিনামাকে বাংলাদেশ সরকার শাসনপন্থের পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে ‘৮৮ সালে জেলা পরিষদের ভিত্তিতে নয় দফা রূপরেখা প্রদান করে। জনসংহতি এই প্রস্তাব না মেনে ৫ দফার সাথে আরও ৩০ দফা দাবী পেশ করে (দৈনিক ইত্তেফাক ১৯৮৮)। সিদ্ধান্তহীন আলোচনার মাঝে সরকার পাহাড়ি একাংশের সমর্থন নিয়ে পাশ করে ‘পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ’ বিল। ফলে তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠিত হয়। প্রতিটি পরিষদের চেয়ারম্যান হবেন একজন উপজাতি এবং এতে আনুপাতিক হারে বিভিন্ন উপজাতি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহন রাখা হয়। ৩০ সদস্যের ২০ জন উপজাতি এবং ১০ জন বাঙ্গালি অউপজাতি হবেন। জেলা প্রশাসকগণ হবেন সদস্য সচিব এবং চেয়ারম্যান হবেন উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন। এই পরিষদকে আইন-শৃঙ্খলা, উন্নয়ন সমন্বয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজ কল্যান, সরকারি উন্নয়ন বাস্তবায়ন, যোগাযোগ, ভূমির উপর স্থানীয় কতৃত্ব-সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করা হয়। কিন্তু এতে তো আর ‘জুমল্যান্ড’- এর স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি, তাই জনসংহতি এর বিরোধীতা করে। তবুও সরকার একটি নির্বাচনের মাধ্যমে একে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন নির্বাচনটি বয়কটের ডাক দেয় শান্তিবাহিনী। তবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ও ভোটারপ্রতি ৫০ টাকা বরাদ্দ করে নির্বাচন সম্পন্ন করে সরকার (Amena Mohsin 1997 ; 203)।
এরশাদের পতনের পর ক্ষমতায় আসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির সরকার। খালেদা জিয়ার আমলে শান্তি স্থাপনের জন্য গঠন করা হয় ৯ সদস্য বিশিষ্ঠ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক রাজনৈতিক কমিটি, যার প্রধান ছিলেন যোগাযোগ মন্ত্রী অলি আহমদ। এই কমিটি ’৯৪ সালে শান্তি বাহিনীর সাথে ৭ টি বৈঠকে বসে। তৈরি হয় একটি উপকমিটি, যার প্রধান ছিলেন সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন। এই উপ-কমিটি দুদকছড়ায় একটি বৈঠকে বসে, শেষ বৈঠকটি হয় ২৫ অক্টোবর ১৯৯৫ (দৈনিক জনকণ্ঠ ১৯৯২-১৯৯৫)। এদিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেওয়া উপজাতিদের ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষীয় উদ্যোগে ‘৯৩ সালের ৯ মে হওয়া সমঝোতা চুক্তির আওতায় প্রত্যাবর্তন শুরু হয় ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে। ক্ষমতায় এসেই খালেদা জিয়া হংসধ্বজ চাকমার নেতৃত্বে একটি লিয়াজো কমিটি গঠন করেন, যারা শান্তি বাহিনীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালান। ’৯১ এর ৬ জুন ‘Hill District Local Government Parishad Act 1989’ কে পরিবর্তন করে ‘Hill District Zilla Local Government Councils’ করা হয়। পরিষদের ক্ষমতাসমূহ কাউন্সিলকে দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে প্রধান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ঠ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রীপরিষদ কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এরশাদের আমলে দেওয়া ২২ টি বিষয়ের সাথে আরও ৮ টি বিষয় কাউন্সিলকে (সাবেক পরিষদ) দেওয়া হয় (Sayed Murtaza Ali 1996)।
এদিকে ভারতে অবস্থান নেওয়া উপজাতি শরণার্থীদের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে বিরোধী মনোভাব জন্মাতে শুরু করে। কোথাও কোথাও ‘চাকমা খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। ভারত পড়ে চাপে (Sayed Murtaza Ali 1996; 147)। ফলে ভারত সরকার পড়ে চাপে এবং শান্তি বাহিনী নমনীয় হতে বাধ্য হয়। ১৯৯২ সালের ৫ মে শান্তি আলোচনা চলাকালে জনসংহতি সমিতি তাঁদের পুরোনো ৫ দফাকে সংশোধিত ও নমনীয় আকারে পেশ করে। সরকারও আলোচনাকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য অস্ত্র-বিরতির মেয়াদ বাড়াতে থাকে। বেগম জিয়ার আমলে পার্বত্য সংকট রাজনৈতিক ভাবে সমাধানের একটি নতুন দরজা খুলে দেয়।
’৯৬ এ শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসে। ৬ মাসেরও কম সময়ের মাঝে চিফ হুইফ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক ‘জাতীয় কমিটি’ করা হয়। জনসংহতির সাথে ষষ্ঠ বৈঠকের পর উভয়পক্ষ ১৭ সেপ্টেম্বর স্থায়ী শান্তিচুক্তিতে উপনীত হতে সম্মত হয়। পরিশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জাতীয় কমিটির পক্ষে চিফ হুইফ আবুল হাসনাত ও জনসংহতির পক্ষে শন্তু লারমা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক
বাঙ্গালী গণহত্যা
সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]