পার্বত্য চট্টগ্রাম,বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। সমগ্র দেশের একমাত্র পাহাড় বিধৌত অঞ্চলটির আয়তন দেশের মোট আয়তনের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ। তিনটি জেলা, যথাক্রমে- রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত এই পার্বত্য চট্টগ্রাম। এর মধ্যে রাঙ্গামাটি আয়তনের দিক দিয়ে পারবত্যঞ্চল তো বটেই, গোটা দেশের মধ্যে বৃহত্তম জেলা। ধারনা করা হয়, অফুরন্ত বনজ সম্পদ সমৃদ্ধ এই অঞ্চল খনিজ সম্পদের আধার। কেবলমাত্র সে কারনেই নয়, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনেও এই অঞ্চল যথেষ্ঠ গুরুত্বের দাবি রাখে। এই এলাকার সংঘর্ষের ইতিহাস কারও অজানা নয়, আজও চলছে সেসব। সেসব নিয়েই আমাদের আয়োজন।
অত্যান্ত তথ্যবহুল এই পোস্টে বিভিন্ন নামকরা লেখক, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের বই থেকে তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তন্মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ডঃ আমেনা মোহসিনের ‘The Politics of Nationalism : The Case of The Chittagong Hill Tracts, Bangladesh’ (ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি গবেষনাকালে রচিত এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত গবেষক আমেনা মোহসিনের এই মৌলিক গবেষণার ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য অবশ্যপঠ্য ও অপরিহার্য), আহমদ ছফার ‘শান্তিচুক্তি ও নির্বাচিত নিবন্ধ’, হুমায়ুন আজাদের ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা’, মোঃ নুরুল আমিনের ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সমস্যার একটি আর্থ-সামাজিক বিশ্লেষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা’ ও ‘Secessionist Movement in the Chittagong Hill Tracts’, সুবোধ ঘোষের ‘ভারতের আদিবাসী’, সুনীতি বিকাশ চাকমার ‘প্রসঙ্গ : পার্বত্য চট্টগ্রাম, এখনো ষড়যন্ত্র’, M. R. Shelly-এর ‘The Chittagong Hill Tracts of Bangladesh : An Untold Story’, S. Kamaluddin-এর ‘A Tangled web of Insurgency (Published in ‘Far Eastern Economic Review’)’, Sayed Murtaza Ali- এর ‘The Hitch in the Hills’, মাহফুজ পারভেজের ‘বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি’, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ও প্রধান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিদের সংক্ষিপ্ত নৃতাত্ত্বিক ইতিহাসঃ নৃ-তাত্ত্বিক ভাবে এই অঞ্চল আলাদা। কারন, এটি উপজাতি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি উপদ্রুত অঞ্চল। একটি সাম্প্রতিক জরিপ হতে দেখা যায়,এখানে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৭%-৪৯% বাঙালি,বাকি ৫৩%-৫১% উপজাতি। উপজাতিদের মধ্যে ‘চাকমা’ গোষ্ঠিই সংখ্যাগরিষ্ঠ। মোট জনসংখ্যার ৩৩% (প্রায়) হচ্ছে চাকমা জনগোষ্ঠি। এছাড়া অন্যান্য উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে মারমা, ত্রিপুরা, তংচংগ্যা, পাংখো, মুরং, বোম, কুকি, গারো, খিয়াং, চাক, লুসাই, খুমি ইত্যাদি উল্ল্যেখযোগ্য। নৃ-তাত্বিকদের মতে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল অদিবাসী কুকিরা। মায়ানমারের আরাকানি চাকমাদের আগ্রাসনে বিতাড়িত হয় কুকিরা। আবার ব্রহ্মযুদ্ধের সময় চাকমাদের আরাকান থেকে বিতাড়িত করে মগরা। আসামের নৃতাত্ত্বিক তথ্যের পরিচালক মি.জে পি মিলস-এর মতে চাকমারা সেখান থেকে আশ্রয় নেয় কক্সবাজার এলাকায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে আসে ১৮ শতাব্দীতে। উপজাতীয় রাজাদের বংশক্রম থেকে দেখা যায়, চাকমাদের মধ্যে অনেক রাজাই মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। তাঁরা মুসলিম নাম ও পদবি গ্রহন করতেন। এছাড়া তাঁদের সাথে মুসলিম বিবাহ-রীতির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া গেছে অপর একটি গবেষনায়। চাকমাদের ধর্ম বৌদ্ধ হলেও, ধর্মগত আচারে বৌদ্ধত্বের বিশেষ প্রমান পাওয়া যায় না। ১৮ শতকে বহু চাকমার মুসলিম হবার প্রমান রয়েছে। পরে আবার হিন্দুত্বের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চলে। সর্বপ্রথম ব্রিটিশ আমলেই কালিন্দি রানী নামের তাঁদের এক রানী সকলকে বৌদ্ধ হবার নির্দেশ দেন। ১৮ শতাব্দীতে তাঁদের মধ্যে এতটাই বাঙালিয়ানা ভর করে যে, জে পি মিলস বলেন, 'এরা আচারে-ব্যাবহারে ও সংস্কৃতিগত বিষয়ে খুবই বাঙালি হয়ে গেছে (Most Bangalaised tribes)'। আরেকটি গবেষনায় দেখা গেছে, চাকমা ভাষা বাংলা ভাষার একটি উপভাষা। এমনকি হুমায়ুন আজাদের মতে চাকমা রাজা মোআন তসনি ব্রহ্মদেশ হতে তাড়া খেয়ে ১৪১৮ সালে কক্সবাজারের টেকনাফ ও রামুতে এসে আদিবাসী কুকিদের বিতাড়ন করে বসতি স্থাপন শুরু করে। তারপর, পালাক্রমে মারমারা আসতে শুরু করে এবং একটা সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যাপী বসতি ছড়িয়ে পড়ে (১৯৯৭ :৪৫)। জে পি মিলসের মতে, এই ‘একটা সময়’ হচ্ছে ১৮ শতাব্দী (সুবোধ ঘোষ)। সুতরাং, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা সহ অধিকাংশ উপজাতিদের বসবাসের ইতিহাস বড়জোর ২০০-৩০০ বছর। বাঙালি ও মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাব ও বসবাসের ইতিহাসের দিক থেকে বলা যায়, কুকি, খিয়াং, লুসাই, খুমিরা ব্যাতীত অন্যান্য উপজাতিরা আদিবাসী নয়। কিন্তু কেন ইদানিং আদিবাসী বনে যাবার জন্য তাঁদের এত দৌড়ঝাঁপ? কেন এখন ‘উপজাতি’ শব্দটায় তাঁদের এত এলার্জি, কেন তাঁরা এই শব্দটির দরুন 'অপমানিত' বোধ করেন, যেখানে তাঁরা এমনকি ‘৯৭ সালে করা শান্তিচুক্তিতেও নিজেদের উপজাতি হিসেবে মেনে নিতে দ্বিধা বোধ করেননি? (এ বিষয়ে বিস্তারিত আসছে পরে)
অতীতে উপজাতিদের ক্ষুদ্ধ হবার কারনঃ উপজাতিরা এমনি এমনি এত ক্ষুদ্ধ হয়নি। এর অনেক কারন রয়েছে। তাঁদের উপর অতীতে অনেক অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে। ১৮৬০ সালের দিকেই মূলত অশান্তির বীজ বোপিত হয় ইংরেজদের দ্বারা। তাঁরা সেখানে যথারীতি ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ নীতি আরোপ করে পুরো ভারতবর্ষের মত এখানেও হিংসার বীজ বুনে দেয়। ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়েল অ্যাক্ট’ করা হয় ১৯০০ সালে। এই বিধিমালা প্রণয়নের আরেকটি কারন হচ্ছে, এতে করে উপনিবেশগুলোকে শাসন করতে সুবিধা হত। সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘অনিয়ন্ত্রিত এলাকা’ (নন রেগুলেটেড এরিয়া) ঘোষনা করা হয়। এ আইনের মাধ্যমে বহিরাগতদের আগমন ও স্থায়ী বসবাস বন্ধ করে পারস্পরিক ঘৃণার বীজ ছড়িয়ে পার্বত্য এলাকাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে রাজা,হেডম্যান ও কারবারীদের সাহায্যে এক সামন্তবাদী সমাজ ব্যাবস্থা চালু করা হয়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, পাহাড়ীরা এখনও সেই হিংসার নীতিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ দাবী করেন। অথচ, এই বিধিমালা পাকিস্তান আমলেও বাতিল করা হয়েছিল একবার। পাহাড়ি নেতাদের দাবীর কথা শুনে মনে হয়, ইংরেজদের এই বিধিমালা বাতিল করার ক্ষমতা স্বাধীন সরকারেরও নেই!
একটি জাতির নেতাদের ভুল বা লোভ কীভাবে সেই জাতির দুর্দশার কারন হয়ে দাঁড়ায়,তার উদাহরন চাকমা ও মারমারা। ১৯৪৭ সালে ইংরেজরা চলে যাবার সময় অশান্তির বীজ পুরো ভারতবর্ষে রোপন করে দিয়ে যায়। তাঁরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাখে পাকিস্তানের পক্ষে। এই বিভাজনের দায়িত্বটা দেয়া হয়েছিল রেডক্লিফ কমিশনকে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের ভাগে অর্পণ করার ক্ষেত্রে কমিশনের একটি অকাট্য যুক্তিও ছিল। সেটি হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অরথনৈতিকভাবে সম্পূর্ণরূপে পূরব পাকিস্তানের উপর নিরভরশীল। কিন্তু উপজাতিরা চেয়েছিল ভারতের পক্ষে থাকতে। তৎকালীন নেতারা এমনকি ভারতীয় কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন এবং কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের কাছে তাঁদের আকাঙ্খা তুলে ধরেন। কিন্তু সেটি বিভিন্ন কারনে গৃহীত হয়নি। '৪৭-এ দেশভাগের পর চাকমারা রাঙ্গামাটিতে ভারতের পতাকা, মারমারা বান্দরবানে ব্রহ্মদেশের পতাকা উড়ায়। এই ভুলের মাসুল তাঁদের অনেক দুর্ভোগের মাধ্যমে দিতে হয়েছিল। কারন, পাকিস্তানি বেলুচ বাহিনী অনতিবিলম্বে দমন করে সেই বিদ্রোহ।
ইংরেজদের মত পাকিস্তানী সামরিক জান্তাও পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের সাথে পাহাড়ীদের বিরোধ রচনা করা শুরু করে। তাঁরা বাঙালিদের উপর জুলুম করেও ক্ষ্রান্ত হয়নি, বৃটিশদের মত একটি কাজ তারাও করেছে, যাতে পাহাড়িদের সাথে বাঙালিদের সংঘাত বজায় থাকে। সেটি হচ্ছে, তারাও অনানুষ্ঠানিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘ভাগ কর এবং শাসন কর’ নীতি গ্রহন করেছিল। যার মাধ্যমে সাম্প্রদায়ীকতা উস্কে দেয়া হয়েছিল। তার উদাহরন হচ্ছে কাপ্তাই বাঁধ ও কর্ণফুলী পেপার মিল। পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য কিছু না করলেও, এই দুইটি স্থাপনা গড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ভাব ধরেছিল যে, তাঁরা বাঙালিদের জন্য কিছু করেছে। কিন্তু নির্মম সত্য হচ্ছে, এর মাধ্যমে সহস্রাধিক চাকমা ও মারমা জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর বিলীন করে দিয়ে, সুকৌশলে তাঁদেরকে উপহার দেয় বাঙালি-বিদ্বেষ ও ক্ষোভ। এর মধ্যে কাপ্তাই বাঁধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ১৮০০ পরিবারকে বিঘা প্রতি ৫ টাকা করে প্রায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও, ছাড় দেয়া হয় মাত্র দেড় কোটি টাকা, যার অধিকাংশই আবার যায় রাজনীতিবিদ ও আমলাদের পকেটে। এসব অনেক কিছুই ক্ষুদ্ধ করেছে পাহাড়িদের। পাকিস্তানি সামরিক শাসনে এই ক্ষোভ প্রকাশিত না হলেও, তাঁরা ভুলেনি সেই দুঃসহ স্মৃতি। ১৯৭৬ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সেখানে পরিদর্শনে গেলে তাঁর কাছেও মনের ক্ষোভ প্রকাশে উচ্চকিত হয় তাঁরা। (সূত্রঃ এম কামরুজ্জামান-১৯৮৬, হুমায়ুন আজাদ-১৯৯৭, মোঃ নুরুল আমিন-১৯৯২)
এসব কারনেই পরবর্তীতে শান্তি বাহিনী গঠিত হলে পাহাড়ি জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রদান করে এবং নিজেদের সাধ্যের সব কিছু দিয়ে তাঁদের সাহায্য করে।
মুক্তিযুদ্ধে উপজাতি নেতাদের ভূমিকাঃ বর্তমান চাকমা রাজার নাম ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। তিনি চাকমাদের মধ্যে প্রথম ‘বার এট ল’ (ব্যারিস্টার) ডিগ্রি অর্জনকারী। এছাড়া তিনি ২০০৭ এর ফখরুদ্দিন আহমেদের তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টাও ছিলেন। উপজাতি নেতৃত্বের দ্বিতীয় বেদনাদায়ক ‘ভুল’ হচ্ছে ১৯৭১ এ তাঁদের অবস্থান। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় (বর্তমান রাজা দেবাশীষ রায়ের পিতা) ও মারমা রাজা অউং শু প্রু মন্ত্রীত্বের লোভে নিজেদের অনুগত প্রজাদের নিয়ে সশস্ত্রভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন। তবে, মোং রাজা মোং প্রু সাইন চৌধুরী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধাদের পক্ষে। পরবর্তীতে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের লক্ষন দৃশ্যমান হলে, তৎকালীন চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তান সরকারের সাথে পূর্বচুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি আজীবন মন্ত্রী পদমর্যাদার প্রটৌকল পেয়েছিলেন। বিভিন্ন দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। গত বছর (২০১২) পাকিস্তানেই তার মৃত্যু হয়।
এখানে একটি বিষয় উল্ল্যেখযোগ্য, মুক্তিযুদ্ধে উপজাতি রাজাদের অবস্থান সমর্থন করতে গিয়ে অনেক ‘বিশারদ’ বলেন, নিজ প্রজাদের যাতে পাকিস্তানি বাহিনী কতৃক কোনও ক্ষতি সাধিত না হয়, সে জন্যেই তারা পাকিস্তানের পক্ষে লড়তে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে চাকমা রাজা নিজ জন্মভূমি ও নিজ প্রজাদের ছেড়ে পাকিস্তানের মন্ত্রী হওয়াটাই বেছে নিলেন কেন? কেন তিনি জীবদ্দশায় নিজ প্রজাদের দেখতে একটি বারের জন্যও এই দেশে এলেন না? কেন তিনি আজীবন বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির অস্তিস্ব স্বীকার করেননি বরং পাকিস্তানের আনুগত্যশীল ছিলেন? কেন তিনি সদ্য গঠিত বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘে পাকিস্তানের হয়ে গিয়েছিলেন? এসবের কোনও জবাব ‘বিশারদ’ গণ দিতে পারেননি। মূলত, চাকমা রাজাকে রাজাকারের সজ্ঞায় ফেলা যায়। এই সম্পর্কিত আরও তথ্য পেতে পারেন বিশিষ্ঠ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, অমি রহমান পিয়ালের 'রাজা(কার) ত্রিদিব রায় : এ লাশ সইবে না বাংলার মাটি' নামের এই পোস্ট থেকে। শুধু তারাই নন, লারমা ভাইয়েরা (এম এন লারমা ও সন্তু লারমা- শান্তি বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা), যারা নিজেদের মার্ক্সবাদী বলে দাবী করেন, তাঁরাও মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন পাকিস্তানের পক্ষে লড়াই করেছিলেন (হুমায়ুন আজাদ- ১৯৯৭ ;২১/২২)। ফলে, স্বাধীনতার পর তাঁরা জাতিগতভাবে পড়েন মুক্তিবাহিনীর রোষে। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে। ‘৭১-এ সন্তু লারমার অবস্থানের কারনে, তাঁর বিচার সে ক্ষেত্রে হওয়া উচিত। রাজাকারদের যে কেবল দাড়ি-টুপি পরিহিত হতে হবে, এমন কোনও কথা নেই।
শান্তি বাহিনী গঠন ও গঠনের আপাত কারনঃ ১৯৭২ সালে 'বাঙালি জাতীয়তাবাদ'এর ভিত্তিতে সদ্য স্বাধীন দেশটির সংবিধান রচনা করার উদ্যোগ নেয়া হয়। সংবিধান প্রণেতাদের কাছে পাহাড়িদের বেশ কিছু দাবি ছিল। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হবে এবং নিজস্ব আইন পরিষদ থাকবে (বাংলাদেশ একক রাষ্ট্র- এই ধারনার সাথে সাংঘর্ষিক), ১৯০০ সালের ইংরেজদের করা ‘হিল ম্যানুয়েল অ্যাক্ট’ শাসনতন্ত্রে পুনঃস্থাপন করা (ইংরেজদের করা সেই হিংসার বীজ), রাজাদের দপ্তর সংরক্ষণ করা,পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে শাসনতান্ত্রিক সংশোধন যেন না হয় সেই সংবিধি সংবিধানে যুক্ত করা (এই ধরনের সংবিধি পরবর্তী সংসদের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করে)। স্বভাবতই, ডঃ কামাল হোসেনের কমিটিই তাদের এই দাবী গ্রহন করেনি। অথচ, সেই তিনি আবার আজকে পাহাড়িদের দাবীর পক্ষে কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও শেষ রাঙ্গামাটি সফরকালে এক জনসভায় তিনি স্বভাবসুলভ বাৎসল্যের সুরে বলেন, ‘যা বাঙালি হইয়া যা’। স্বাধীনতার স্থপতি হয়তো বুঝেননি, তার সন্তানসম লারমা তারই সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেবে। কিংবা, হয়তো তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, ‘৭১-এ লারমার ভূমিকার কথা।
এছাড়া আরও কিছু ব্যাপার পাহাড়ীদের ক্ষুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরপর পাহাড়ীরা মুক্তিযোদ্ধাদের রোষানলে পড়েন। সরকারের কাছে এসব হামলা বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার দাবী করা হলেও, সরকার এ বিষয়ে কর্ণপাত করেনি। শেখ মুজিবর রহমান পাহাড়ীদের দাবী নাকচ করে এমনও বলেছিলেন, ‘যুদ্ধের পর এমন ঘটনা খুবই স্বাভাবিক' (Amena Mohsin 1997:57)। এসব কারনে নিজেদের রক্ষার্থে পাকিস্তানীদের ফেলে দেওয়া অস্ত্র যোগাড় করে শান্তি আনয়নের জন্য ‘শান্তি বাহিনী’ গঠিত হয় বলে অনেকের ধারনা। তবে এর বিকল্প ধারনাটিই বেশি গ্রহণযোগ্য। এরপর তাঁদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দিয়ে সেনা ও পুলিশ অভিযান চালানো হয় পাহাড়ে (Mey 1984: 114)। তখনকার আইনমন্ত্রী কামাল হোসেন আজ পাহাড়িদের পক্ষে কতই না কথা বলেন। যদিও ওনার বক্তব্য অনুসারে, সেই অভিযান চালানো হয়েছিল মিজো বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে। যা-ই হোক, এই অভিযান পাহাড়ীদের কাছে একটা ভুল বার্তা পৌঁছায়। কৌশলগত কারনে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তার স্বার্থে তখন তিনটি স্থায়ী সেনানিবাস স্থাপন করা হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরও ভারতীয় সেনাবাহিনী ওই এলাকা ছেড়ে না যাওয়ায় পাহাড়ীদের মধ্যে একটি ধারনা বদ্ধমূল হয় যে, সরকার মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার কারনে তাঁদেরকে সন্দেহের চোখে দেখছে। তাঁর উপর সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের পর ঘোষিত সাধারন ক্ষমা সেখানে প্রতিপালিত হচ্ছিল না। বাজেটে পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য আলাদা বরাদ্দ না থাকাও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলোর মনে বিক্ষোভ দানা বেঁধে উঠার কারন।
সত্যিকার অর্থে, এসব ছিল ভুল বোঝাবুঝি। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানের ‘যা বাঙালি হইয়া যা’ কথাটিও। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, সদ্য স্বাধীন দেশটির পরিস্থিতি সামাল দিতে তখনকার সরকারকে এতটাই বেগ পেতে হচ্ছিল যে, পাহাড়ের দিকে নজর দেবার অবস্থা ছিল না। তাই, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে সকলকে এক সুতোয় গাঁথতে। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। হারুন-অর-রশিদের মতে, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্ন-সমর্পনের পরও কিছু সংখ্যাক পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকাররা পাহাড়ীদের একটি অংশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্ন-গোপনে থেকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাতে থাকে, যাদেরকে দমন করতে সরকারের ১৯৭২ সাল পর্যন্ত লেগে যায়।
এছাড়া তখন যে তিনটি স্থায়ী সেনানিবাস প্রতিষ্ঠিত হয়, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল কৌশলগত ভাবে স্পর্শকাতর পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা বিধান। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এসব কিছুই পাহাড়ী জনগোষ্ঠির মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি করে।
১৯৭২ সালের ১৬ মে জনসংহতি সমিতি এবং পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারী খাগড়াছড়ির ইটছড়ির জঙ্গলে গঠিত হয় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখা-শান্তি বাহিনী। শান্তি বাহিনীর নামকরনের পেছনে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য মত হচ্ছে, এটি এমএন লারমার ভাই শন্তু লারমার নামের রথম অংশ ‘শন্তু’ তথা ‘শান্তি’ থেকে করা হয়েছে (Md. Nurul Amin, হুমায়ুন আজাদ)। আহমদ সফার মতে, শান্তি বাহিনী অনেকটাই তৎকালীন চরমপন্থী বাহিনী, ‘সর্বহারা পার্টি’ প্রভাবিত। তখন চীনাপন্থি বিভিন্ন চরমপন্থী দলের নেতা-কর্মীরা সেখানে আত্নগোপনে থাকতেন। পার্বত্য জনগোষ্ঠির নেতারা তাঁদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। সর্বহারা পার্টির প্রয়াত নেতা সিরাজ সিকদার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের গেরিলা সংগ্রামে নিয়ে আসার কথা উল্লেখ করেছিলেন তাঁর ‘জনযুদ্ধের পটভূমি’ নামক কবিতার বইয়ে। ১৯৭৩ সালের দেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা ও চাথোয়াই রোয়াজা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তাঁরা সংসদে নিজেদের দাবী-দাওয়া পেশ করতে থাকেন। ১৯৭৪ সালে ‘বাকশাল’ গঠিত হলে আপাত ‘মুজিব বিরোধী’ বলে পরিচিত লারমা বাকশালে যোগ দেন। হয়তো চেয়েছিলেন, ক্ষমতার বলয়ের মধ্যে থেকে কিছু করতে। কিন্তু, ‘৭৫-এ মুজিব নিহত হবার পর সাংবিধানিক উপায়ের আপাতত অবসান ঘটে। তাই বলে লারমাকে ধোঁয়া তুলসী পাতা ভাবার কোনও কারন নেই। তিনি চেয়েছিলেন, মুজিবের আমলেই সশস্ত্র বিদ্রোহ করতে। এজন্য জনসংহতির সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনীও খুলেছিলেন ১৯৭৩ সালেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পার্বত্য অঞ্চলের তিনদিকেই ভারত। তাই সেখানে বিদ্রোহ করতে হলে, ভারতের সাহায্য সহযোগীতা ও আশ্রয় অত্যাবশকীয়। বাংলাদেশ থেকে তাড়া খেয়ে বিদ্রোহীরা যদি ভারতের মদদ না পায়, তাহলে তাঁদের সব চেষ্টা ভন্ডুল হতে বাধ্য। তাই, (শেখ মুজিবের আমলে বিদ্রোহ হয়নি; জিয়ার আমলে ভারতের আশ্রয় ও সমর্থন পাওয়ায় বিদ্রোহীরা বিপুল বিক্রমে উপস্থিত ছিল। ১৯৭৪ সালে মুজিবের আমলে শান্তি বাহিনী ভারতের কাছে সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করে। মুজিবের সাথে অত্যন্ত সুসম্পর্ক থাকায়, ভারত তো সাহায্য করেইনি বরং সে তথ্য জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ সরকারকে।- (হুমায়ুন আজাদ ১৯৯৭: ২৩)। তবে একথা অস্বিকার করার জো নেই, বিভিন্ন কারনে ক্ষুদ্ধ সাধারন পাহাড়িরা অকুন্ঠ চিত্তে শান্তি বাহিনীকে সমর্থন দিয়েছিল।
ফুটনোটঃ
. মে ২০০৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অবস্থায় জনগণের বিরুদ্ধে সরকার। সরকার, সেনাবাহিনী ও সন্তু লারমা চক্রের মিলিত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এ গ্রুপটি ইউপিডিএফের অংগ সংগঠন।
. হিল ‘উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন শান্তিবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন।
. তিন পার্বত্য জেলায় চাঁদাবাজি চলছেই, সমকাল রিপোর্ট, ৫ ডিসেম্বর ২০০৯ সংখ্যা, পৃ-৩।
. দেখুন দৈনিক সমকাল, ৩ ডিসেম্বর ২০০৯, পৃ-৯
. নিরাপত্তা বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতামত, দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৮ অগাস্ট ২০০৯, পৃ-১।
. দেখুন দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৭ অগাস্ট ২০০৯, পৃ-১৬।
. মাসুদ মজুমদার, মাসুমুর রহমান খলিলী, আলম আজাদ, সম্পাদকীয়, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ.৬।
. হুমায়ুন আজাদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা, পূর্বোক্ত, পৃ.২৪।
. ড. আমেনা মহসীন, The politics of Natinalism: The case of chittagong Hill Tracts, ইউপিএল, ঢাকা ১৯৯৭, পৃ. ৬৬।
. এস. কালাম উদ্দীন, A Tangled Web of Insurgency, ফারইস্ট ইকনমিক রিভিউ, হংকং, ২৩ মে ১৯৮০: সুবীর ভৌমিক, Insurgent Crossfire: North-East India, ল্যানসার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৯৬, নয়াদিল্লী; উদ্বৃত ড. মাহফুজ পারভেজ, পূর্বোক্ত, পৃ. ৪৫-৪৬।
. তালুকদার মনিরুজ্জামান, বিদেশী সাহায্যপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদ সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ. ২৩।
. উদ্বৃত ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী ও ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪।
. উদ্বুত ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী ও ড. মোহাম্মদ আবদুর রব, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪।
. ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তিবাহিনী ও ভারতীয় অবৈধ সংযোগ, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪-৫৫।
. মাসুদ মজুমদার ও অন্যান্য, পূর্বোক্ত, পৃ.৭।
. ড. সাঈদ-উর-রহমান, প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম : খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা দরকার, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮১।
. আবুল আসাদ, উড়ে আসাদের জুড়ে বসতে দেয়া যায় না, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৫১।
. আমির খসরু, প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ. ১৫২।
. এম. আবদুল হাফিজ, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, অন্য দিগন্ত, মার্চ ২০১০, পৃ. ৩০।
. মোহাম্মদ মাতিন উদ্দিন, এইচ. এম. এরশাদের মন্তব্য নিয়ে কিছু কথা, দৈনিক আমার দেশ, ৯ মার্চ ২০১০, পৃ.৬।
. উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও সমসাময়িক ঘটনা বিষয়ে গত ৬ মার্চ ২০১০ ‘ঢাকা পোষ্ট’ এর গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতা, দৈনিক সংগ্রাম, ৭ মার্চ ২০১০, পৃ.১।
. উদ্বৃত গৌতম মন্ডল, অশান্তির বেড়াজালে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, নিউজ নেটওয়ার্ক, জুলাই ২০০৫, পৃ. ৬২-৬৩।
. RHS Hutchinson, An Account of Chittagong Hill Tracts গ্রন্থটি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়। চাকমা জাতির পরিচয় সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবিধ বিষয়ের উপর এ গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ইংরেজ ডেপুটি কমিশনার Capt. T. H. Leara বিরচিত ‘The Hill Tracts of chittagong and the Dewllers Therein গ্রন্থটি’ ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয়। J.Jaffa, Chakmas: Victims of Colonialism and Ethro-centric Nationalism, The Main Stress, 28 Oct. 1989; অমরেন্দ্র লাল খিসা, সিফটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ১৯৯৬; এন. আহমেদ, The Evolution of Bounderies of East Pakistan, Oriental Geographer, Vol.ii, No.4, Dhaka, 1958.
. দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, ১৪ মে ২০১০, পৃ.১।
. জয়নাল আবেদীন,পার্বত্য চট্টগ্রাম, স্বরূপ সন্ধান, ২৬ মার্চ ১৯৯৭, ঢাকা, পৃ-৯।
. ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৭।
. ড. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৭।
. এবনে গেলাম সামাদ, পাহাড়িরা স্বতন্ত্র জাতি নয়, অন্য দিগন্ত, মার্চ ২০১০, পৃ.৩৩।
. ড. মাহফুজ পারভেজ, বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম ও শান্তিচুক্তি, সন্দেশ, শাহবাগ, ঢাকা ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯, পৃ.২০। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম (The Management of Ethic conflicts in South Asia: The case of Chittagong Hill Tracts) বিষয়ে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তাঁর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ড. আমেনা মহসীন।
. বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি দুর্গম ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম সাজেক। প্রায় ২০ হাজার জনবসতি নিয়ে ৬শ’ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ভারতের মিজোরাম সংলগ্ন এলাকাটি ৩৬নং সাজেক ইউনিয়ন নামে পরিচিত। এটি একটি সাধারণ জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন গহীন পার্বত্য অঞ্চল।
. সংসদীয় কমিটির পার্বত্য রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড়, দৈনিক নয়াদিগন্ত ১১ মার্চ ২০১০ পৃ.১।
. দেখুন দৈনিক ইনকিলাব এল থাঙ্গা পাঙ্খোর সাক্ষাৎকার, ৮ মার্চ, ২০১০। মি. পাঙ্খো সাক্ষাৎকারে আরো অনেক তথ্য দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন; ৪১টি বাঙালী পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে চাকমারা, বাঙালিরা কোন ত্রাণ পাচ্ছে না।
. খাগড়াছড়িতে বাঙালীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৬ জন নাগরিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে রয়েছে। দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, ২৫ মে ২০১০, পৃ.-৪।
. গত ১ মার্চ ২০১০ বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় যুব সংহতির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদ এ মন্তব্য করেন।
দেখুন মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন, এইচ এম এরশাদের মন্তব্য নিয়ে কিছু কথা, আমার দেশ ৯ মার্চ ২০১০, পৃ.৬।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক
বাঙ্গালী গণহত্যা
সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]