রবিবার, ১ জানুয়ারি, ২০১৭

পাহাড়ে সেনা ক্যাম্পই নির্যাতিতদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল

ািুডডপ
২৯ মে ২০১৬। রোজ বুধবার। বিকেল আনুমানিক ৫টা। গাছকাটা ছড়া আর্মি ক্যাম্পের ঘাটে একটি নৌকা এসে থামলো। নৌকা থেকে “বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার করে লাফ দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো ১৭ বছর বয়সী এক চাকমা কিশোরী। সেই সাথে নৌকা থেকে নেমে এলো তার মা। পাবর্ত্য ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে নিরাপদ আশ্রয় নিতে সেনা ক্যাম্পে এসে উঠলো এই কিশোরী। সেনা সদস্যরা ঘটনা শুনে তাকে আইনী সহায়তা নিতে সার্বিক সহযোগিতা করলেন। পরে এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে বিলাইছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।


পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকায় থানা কিংবা পুলিশের চেয়ে সেনা ক্যাম্পগুলোই নির্যাতিতদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। পাহাড়ী কিংবা বাঙালি যে কোন নির্যাতিত মানুষেরা সেনা ক্যাম্পকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রই মনে করে। যে কোন সমস্যায় সেনা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে থাকে তারা। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে এ তথ্য জানা যায়।

গত ২৯ মে ২০১৬ এক পাহাড়ী মেয়ে এক বাঙালি ছেলের দোকানে মার্কশিট প্রিন্ট করতে গেলে পার্বত্য ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) সন্ত্রাসীরা তাকে ঘেরাও করে ধরে এনে মারধর করে। পরে তাকে একটি জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দলবেঁধে লাঞ্ছিত করে। তার জামাকাপড় খুলে নিয়ে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। এ ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলায়। এ ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে নিরাপত্তার জন্য নির্যাতিত মেয়েটি ছুটে এসেছে পার্শ¦বর্তী  গাছকাটা ছড়া সেনা ক্যাম্পে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাকে সার্বিক সহায়তা করেছে বলে স্থানীয়রা উল্লেখ করেছে।

পরবর্তীতে বিলাইছড়ি থানায় এ বিষয়ে নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নাম্বারটি হলো ১ (৫) ১৬। মামলায় আসামী করা হয়, সুনীতিময় চাকমা, কৃষ্ণসূর চাকমা, পুলক চাকমা, সুজয় চাকমা, মানিক চাকমা, বীর উত্তম চাকমা ও নেনসন চাকমাসহ অজ্ঞাত ১৫/২০জনকে। কিন্তু পুলিশ এ মামলায় মাত্র একজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। বাকীদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

এ বিষয়ে বিলাইছড়ি থানার ওসি মো: মঞ্জুরুল আলম মোল্লা বলেন, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ভিকটিমই বাদী হয়েছে। একজন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের এখনো গ্রেফতারা করা সম্ভব হয়নি।

পাহাড়ী বাসিন্দাগণ এখনো থানা-পুলিশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল ভাবতে পারছে না। আর এর ইঙ্গিত দিলেন স্বয়ং এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পাহাড়ী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের খবর আসে। কিন্তু প্রশাসনের কাছে অতি গোপনেও মুখ খুলতে চায় না কেউ। চলতি বছরে পুরো থানায় মাত্র তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অপরাধ ঘটা সত্ত্বেও মামলা না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন, এখানকার বাস্তবতাটা ভিন্ন।

ঠিক একই ধরনের কথা বলেছেন স্থানীয় পাহাড়ীদের কার্বাড়ী অংচাখই বলেন,
এলাকার মানুষকে সব সময় প্রাণের ভয় নিয়ে দিন কাটাতে হয়। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে মানুষ খুন করছে। আর প্রতিটি বাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করছে। সাধারণ মানুষ এসব সন্ত্রাসীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ। তবু মুখ খুলতে পারছে না। ভয়ে থানায় অভিযোগও করতে পারছে না। কারণ থানায় অভিযোগ করলে সন্ত্রাসীরা হামলা করবে। তখন পুলিশও নিরাপত্তা পারবে না। পাহাড়ে সেনা ক্যাম্প থাকায় আমরা অনেকটা নিরাপদে আছি।
পার্বত্য অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উপজাতিদের জীবনমান উন্নয়ন ও পার্বত্য এলাকায় বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে অসম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্যবোধ সৃষ্টিতে সেনাবাহিনীর অবদান অতুলনীয়। অন্যদিকে স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে বিভিন্ন সময়ে উপজাতি সন্ত্রসীদের দ্বারা হত্যা, খুন, গুম, অপহরণ, নারী ধষর্ণের হাত থেকে বর্তমান সময়ে সেনাবাহিনীর কল্যাণে অত্র অঞ্চলের সাধারণ মানুষ অনেকটাই নিরাপদ।
স্থানীয় লোকজন আরো জানায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের দুর্গম এলাকাতে রাস্তা ঘাট, সেতু, কালভার্ট নির্মাণ করে যোগাগোগ ব্যবস্থা সহজ করেছে। পশ্চাপদ উপজাতিদের জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষা, বাসস্থানসহ আধুনিক চাষাবাদের বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটার পেছনে অন্যতম অবদান এই সেনাবাহিনীর।
সাজেক ইউনিয়নের বাসিন্দা সিয়াতা লুসাই বলেন,
সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাঙ্গামাটির সাজেক এলাকায় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। এ পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলায় এখানকার লোকজনের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। অনেকে এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবন চালাচ্ছে। কিন্তু সন্ত্রাসীরা মাঝে মধ্যে এসে চাঁদা দাবি করে। সেনাবাহিনীকেই কেবলমাত্র সন্ত্রাসীরা ভয় পায়। সেনাবাহিনী না থাকলে এখানে আমাদের বাস করাটা কঠিন হয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
মিয়া হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে, পার্বত্য নিউজ


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]