ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় পাহাড়ের প্রভাবশালী ব্যক্তি। পার্বত্য তিন সার্কেল হতে তিনিই পার্বত্য ইস্যুতে সর্বোচ্চ আলোচিত সার্কেল চীফ। পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলায় ১০ এপ্রিল ১৯৫৯ সালে দেবাশীষ রায় জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম রাজাকার ত্রিদিব রায়। ত্রিদিব রায় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে পাকিস্তানীদের পক্ষ নেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বসবাস ও পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পুরস্কৃত হন। ত্রিদিব রায় আমৃত্যু পাকিস্তানের রাষ্ট্রদ্রুত হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাজা দেবাসীষ রায় তাদের পরিবারকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে দাবী করলেও তার বাবা পাকিস্তানে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। অর্থাৎ দেবাসীষ পরিবার বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রকে মেনে নিতে পারেনি এবং তারা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পাকিস্তানে চলে যান। দেবাশীষ রায় ছাত্র জীবনে উপজাতীয় ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ২৫ ডিসেম্ভর ১৮ বছর বয়সে ৪৯ তম চাকমা রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হন।
তিনি ১৯৯১ সালে ঢাকা জেলা আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন এবং ১৯৯৮ সাল হতে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি হিসেবে কর্মরত আছেন। যদিও দেবাশীষের বাবা একজন রাজাকার তারপরেও বাংলাদেশী চাকমা সম্প্রদায় তাকে রাজা হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। সম্ভবতঃ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাহাড়ের বাংলাদেশী চাকমা সম্প্রদায়ের এটি ছিলো তৃতীয় ঐতিহাসিক ভুল। অনেকে তাকে ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর মধ্যে একজন বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচনা করলেও আদতে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব্য নিয়ে জাতীর স্বার্থের পরিপন্থী কাজ করে থাকেন। বর্তমানে তিনি কথিত আদিবাসী ইস্যু নিয়ে পুরো জাতীকে বিভ্রান্ত করছেন। শান্তিচুক্তির খসড়া প্রনয়নকালে রাজা নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি পার্বত্য ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীদের উপজাতি পরিচয়ে পরিচিত করার প্রস্তাব করেন। সেদিন শন্তু লারমা এবং দেবাসীষ রায়ের মতামতের ভিত্তিতে শান্তি চুক্তিতে "উপজাতি" শব্দটি পার্বত্য ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীদের পরিচয়ে মৌলিক পরিচিত হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু বর্তমানে তিনি নিজের স্বার্থে বিদেশী চক্রান্তকারীদের প্রলোভনে তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। ইতিহাস পর্যালোচনায় যদিও বাংলাদেশে আদিবাসী নাই, তবুও তিনি পার্বত্য উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র করছেন। দেবাশীষ রায় ভালো করেই জানেন যে, পার্বত্য উপজাতিরা যদি রাষ্ট্রীয় ভাবে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পায় তবে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব্য পাহাড়ে খর্ব হয়ে তিনিই হবেন পাহাড়ের সর্বময় কর্তা এবং বৈদেশিক প্রভুরা হবেন তার ছায়া বৃক্ষ। অতপর পার্বত্য চট্টগ্রাম হবে বাংলাদেশ হতে আলাদা বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র কথিত "জুম্মল্যান্ড"।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘ সমস্যায় জর্জরিত। দেবাশীষ রায়কে যদি চাকমা রাজা হিসেবে বিবেচনা করি তবে পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান কি? দেবাশীষ পরিবারের ৭১এ রাজাকার চরিত্র সম্পর্কে যুক্তি তর্কে অনেক প্রগতিশীল গবেষক বলে থাকেন "ত্রিদিব রায় তার প্রজাদের রক্ষা করতেই নাকি পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়ে ছিলো"। অর্থাৎ চাকমা সম্প্রদায়কে রক্ষা করার যুক্তিতে তার রাজাকারি বৈধ। তবে দেবাশীষ রায় কোন স্বার্থে পার্বত্য উপজাতীয় সসস্ত্র সংগঠনগুলোকে সমর্থন করছেন? তার পিতা যদি প্রজাদের রক্ষার্থে রাজাকার হতে পারেন তবে তিনি সেই বংশের রাজা হয়ে কেন প্রজাদের জেএসএস, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মুখে তুলে দিয়েছেন?
সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, চাকমা রাজা পরিচিত রায় পরিবারে এখনো বহমান ৭১এ রাজাকারি রক্ত ও চরিত্র। সেদিন ত্রিদিব রায় ভেবেছিলেন বাংলাদেশ কখনোই স্বৈরাচার পাকিস্তান হতে স্বাধীন হবেনা। সেই চিন্তাতেই তিনি সুকৌশলে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন। যাতে তার কল্পিত পরাজিত বর্তমান বাংলাদেশে পাকিস্তান সরকার খুশি হয়ে অতিরিক্ত কর্তৃত্ব্য, সুবিধা প্রদান করেন। সেদিন ত্রিদিব রায় প্রজাদের কথা চিন্তা করেনি, চিন্তা করেছেন তার নিজের স্বার্থকে। অবশেষে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি তার রাজত্ব্য ছেড়ে লজ্জায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। তদ্রুপ রাজাকার পুত্র দেবাশীষ রায় তার প্রজাদের কথা চিন্তা না করে বরাবরই নিজের স্বার্থের পিছনে ছুটছেন।
দেবাশীষ রায় ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। আঞ্চলিক সন্ত্রাসী দল পরিবেষ্টিত সাধারণ পাহাড়িদের অধিকার রক্ষায় তিনি ঐ সময়ে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারতেন, কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটেনি। তখন রাজা বাবুকে সাধারণ প্রজাদের স্বার্থজনিত বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে দেশে-বিদেশে রাষ্ট্র বিরোধী বিভিন্ন প্রচারণায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। এমনকি পাহাড়ে ভূমি সমস্যা সমাধানে ঐ সময়ে তিনি কোন কার্যকরী ভূমিকা পালন করেননি। তিনি চাকমা রাজা, সার্কেল চীফ হয়ে সার্কেলের উন্নয়নে তার অবদান শূন্য। প্রতি বছর তিনি প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করেন। সেই খাজনা হতে নামেমাত্র অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিলেও বাকীটা লুটেপুটে খাচ্ছেন।
সার্কেলের প্রাচীন রীতি অনুযায়ী গ্রাম্য যে কোন সমস্যায় বিচারক হলেন রাজা কর্তৃক নিয়োজিত হেডম্যান, কার্বারী। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে গ্রাম্য বিচারক হলেন জেএসএস, ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী। কোন হেডম্যান, কার্বারী বিচার কার্যে এখন মূল্যহীন। কিন্তু, রাজা বাবু এই বিষয়ে নীরব! কারনটা কি? বরংচ জেএসএস, ইউপিডিএফ এর বিভিন্ন সন্ত্রাসীমূলক কর্মকান্ডে সুর মেলাতে প্রায়ই রাজা বাবুকে দেখা যায়। এর কারনই বা কি?
পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় বিশিষ্ট লেখক শরদিন্দু শেখর চাকমা (অঃ প্রাঃ অতিরিক্ত সচিব) তার প্রকাশিত "পার্বত্য চট্টগ্রামের একাল সেকাল" বইয়ে ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর অবস্থান তুলে ধরে অস্বাধারণ কিছু সত্য তুলে এনেছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে আজকের পার্বত্য উপজাতীয় সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ এর সামরিক সিনিয়র নেতারা অর্থাৎ শান্তিবাহিনীর সদস্যরা তৎকালীন পাক হানাদার বাহিনীদের সহায়তার লক্ষ্যে রাজাকার ত্রিদিব রায়ের দেওয়া সসস্ত্র "সিভিল আমর্ড ফোর্সেস" অর্থাৎ রাজাকার বাহিনীর সদস্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিশেষ অভিযান শেষে বঙ্গবন্ধু সকলকে সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করলেও দেশ বিরোধী এই সন্ত্রাসীরা সেদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলো সসস্ত্র অবস্থায়। সেই দেশ বিরোধী উপজাতীয় সসস্ত্র গোষ্ঠী অর্থাৎ রাজাকার ত্রিদিব রায়ের মতাদর্শের ব্যক্তিরা আজ উপজাতীয় সসস্ত্র সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ এর বড় বড় নেতা। স্বাভাবিক কারনেই তাই রাজাকার পুত্রের সাথে পার্বত্য উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের সখ্যতা বিদ্যমান। সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস, ইউপিডিএফ পাহাড়ে সাধারন উপজাতি তথা তার প্রজাদের নির্যাতন, হত্যা করলে সেটা দোষের কিছু নই। বরংচ তার পিতার আদর্শ এখানে আনন্দিত হয়।
রাজা দেবাশীষ রায় বর্তমান পার্বত্য অঞ্চলে জাতিগত সংঘাত রচনার অন্যতম রুপকার। উপজাতিয় সন্ত্রাসীদের অপকর্মে পার্বত্য জনজীবন আজ চরম হুমকির সম্মুখীন। আর এই সন্ত্রাসীদের অন্যতম প্রধান উপদেষ্টা রাজা দেবাশীষ রায় নিজেই। চাঁদাবাজি করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা যে মোটা অংকের টাকা আয় করছে তার বেশীরভাগ দেবাশীষ এবং সন্তু লারমার একাউন্টে জমা হচ্ছে। তাই পাহাড়ে চাঁদাবাজি নিয়ে তার প্রজাদের স্বার্থে রাজা বাবু কখনো বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ বাক্য উচ্চারণ করেননি। এছাড়াও তথ্যমতে, ১৯৯২ সালে তাইওয়ান যাওয়ার প্রাক্কালে হযরত শাহজালাল (রহঃ) আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে তার নিকট হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি,র লোগাং এ ১০ এপ্রিল ১৯৯২ তারিখে সংঘটিত হত্যাকান্ডের ভিডিও ক্যাসেট, ছবি, ও মূল্যবান কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি বিদেশে বিভিন্ন সভা সেমিনারে পার্বত্য বিষয়ে বাঙ্গালি জাতিসত্তা নিয়ে নিয়িমিত ভ্রান্ত ধারনা দিয়ে বিদেশীদের হাত করে থাকেন।
পরিশেষে বলবো, পার্বত্য দেশপ্রেমিক শিক্ষিত সমাজ আজ অন্তর হতে পার্বত্য সমস্যা উবলব্দি করতে শুরু করেছে। হয়তো সেই ৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধের দেশপ্রেমিক চেতনায় পাহাড়ের প্রকাশ্য রাষ্ট্রদ্রোহীদের পতন অতি সন্নিকটে। ইতোমধ্যেই পার্বত্যবাসী পাহাড় হতে রাজাকার ত্রিদিব রায়ের স্মৃতি ফলক মুছে ফেলার আন্দোলনে সফলতা অর্জন করেছে। এবার পালা এসেছে রাষ্ট্র দ্রোহীদের। বাংলাদেশে থেকে সমস্ত রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগের পরেও যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সড়যন্ত্র করছে তাদেরকে এই প্রজন্ম কখনোই ক্ষমা করবে না। পরিশেষে বলবো, চাকমা রাজা দেবশীষ রায় পাহাড়ে নীরব রাষ্ট্র বিরোধী ঘাতক এটা এখন সুস্পষ্ট।
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
আবু উবাইদা
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]