বৃহস্পতিবার, ১৫ জুন, ২০১৭

রক্তাক্ত ছবিটা দেখে কি মনে হয় না, আমি কে? কি আমার পরিচয়?


পড়বেন কি না, আপনার ব্যাপার! তবে পড়ে দেখা উচিৎ! আরে আর্মি / নেভী / বিমান বাহিনী / বিজিবির লোক তো দেশের ১৬ আনা খায়! ফ্রি চিকিৎসা, ফ্রি রেশন, ফ্রি থাকা -খাওয়া, ১৪ তলা বিল্ডিং এ ফ্যামিলি নিয়ে থাকা, ফ্রি আর ফ্রি! শুধুই ফ্রি! সব খাইয়া শেষ করে দিলো! আবার এক বছরের জন্য ফ্রি বিদেশ গিয়ে লাখ, লাখ টাকা ইনকাম করে নিয়ে আসে। বিদেশে গিয়া কোনো কাজ নাই শুধুই টাকা ইনকাম। ইশ! খাইয়া দাইয়া কাজ নাই, শুধু সরকারের টাকা নস্ট করা আর! হায় হায় হায়, গেলো গেলো! আবার পান থেকে চুন খোশলেই বলেন অশিক্ষিত ছেলেপেলে, অল্প লেখাপড়া যানা মুর্খ, আমরা আর কিইবা পারি? লজ্জা করেনা যারা আর্মি /নেভী /বিমান বাহিনী /বিজিবি সদস্যদের নিয়ে এরকম কথা বলেন? বিবেক কোথায় থাকে তখন?
কে আছে এই দুনিয়ায় স্বার্থ ছাড়া? আপনি কি স্বার্থ ছাড়া কোনো একটাও কাজ করেছেন কখনো?একদিন যদি আপনার কাছে সাহায্য চাই! সাহায্য করার আগেইতো মুখ বাকা করে থাকেন! আর আমি চাকরির বিনিময়ে বেতন নেই এটা আমার অন্যায়? কই আপনাকে তো দেখিনা কোনো অসহায় ভাইয়ের পাশে দাড়াতে? তার জন্য নিজের জিবন বাজি রাখতে? দিয়েছেন কি কখনো? অন্যের ভালোর জন্য নিজের এক ফোঁটা রক্ত? যদি উত্তর হয়, না! তবে লজ্জা করেনা একটা পেশাদার বাহিনী নিয়ে টিটকারী, মশকরা করতে? থুতু দেই এই সকল মানুষ রুপি কুত্তাদের! থু থু থু!
নিচের রক্তাক্ত ছবিটা দেখেন, ভালো করে দেখেন
এই ছবিটা দেখে কি মনে হয় না, আমি কে? কি আমার পরিচয়? কিসের নেশায় আমি আজ লাশ? কেনো আমি বুকে আর মাথায় বুলেট নিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ি? কেনো আমি শান্তি রক্ষার নামে ঘরে ফিরে যাবো লাশ হয়ে ? কি আমার অপরাধ? অপরাধ কি দেশ রক্ষার নামে শপথ করেছি বলে? কেনো আমি নিজ সন্তান, বাবা মা, ভাই বোন, আত্নীয় স্বজনদের ছেড়ে হাজার হাজার মাইল দুরে? তুমি যখন শীতের রাতে সন্তান বুকে নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টায় ব্যাস্ত। আর আমি কেনো তখন মাইনাস ডিগ্রী শীতে শান্তি রক্ষায় ব্যাস্ত? নিশ্চিত বুলেট আর মৃত্যু , বুক পেতে নিয়ে শান্তিরক্ষা করতে ব্যাস্ত? অপরাধ আমি আর্মি /নেভী /বিমান বাহিনী /বিজিবি নামক সংস্থায় চাকরি করি বলে তোমার সন্তান তোমার বুকে ঘুমায়, আমার সন্তান কি আমার বুকে ঘুমানোর অধিকার রাখেনা? তুমি একই রাস্ট্রের নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকতে চাও? আর আমি কি এমন অপরাধ করেছি, যে কারনে তোমার বেচেঁ থাকা নিশ্চিত করবো? সৈনিকের চাকরি নিয়ে কি তোমার নিরাপত্তা দেওয়া ফরজ হয়ে গেছে?
তুমি সবার সাথে হাসিখুশি থাকবে, আর আমি কি এমন অপরাধ করেছি? যে কারণে লাশ হয়ে সবার কান্নার উপলক্ষ হবো? চাকরি করি বলে? কোরআন ছুয়ে শপথ করেছি বলে? আছে কি উত্তর কারো জানা? প্লিজ উত্তর চাই? জবাব চাই? এই সৈনিকের কি অধিকার ছিলনা আপনার আর আমার মতো বাঁচার? তবে কেনো তাকে লাশ হতে হলো? তার বাবা মা, সন্তান, স্ত্রীকে কি জবাব দেবো? পারবেন কি তাকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে?
উল্লেখ্যঃ আজকে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আমার একজন সহপাঠী, সহযোদ্ধা। আর একজন কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন কয়েক দিন আগে আল্লাহ তাদের শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য্য ধারন করার তৌফিক দান করুন!

প্রশ্ন?
আমি সৈনিক বলে, বেতন নেই এই জন্য আমার মরার অধিকার আছে। বাকি কারো মরার অধিকার নাই। আজকে রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালে ২ সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ জন সেনাসদস্য নিহত! রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ধসে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় আজ মঙ্গলবার (১৩-৬-২০১৭) ০২ জন সেনা কর্মকর্তা সহ ০৪ জন সেনা সদস্য নিহত হয়। আজ ভোরে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে একটি পাহাড় ধসে মাটি ও গাছ পড়ে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে রাঙ্গামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল উক্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। উদ্ধার কার্যক্রম চলাকালীন আনুমানিক সকাল ১১টায় উদ্ধার কার্যস্থল সংলগ্ন পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারীদলের উপর ধসে পড়লে তাঁরা মূল সড়ক হতে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। পরবর্তীতে একই ক্যাম্প থেকে আরও একটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে ০২ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ০৪ জন সেনাসদস্যকে নিহত এবং ১০ জন সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।
আহতদের মধ্যে ০৫ জনের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকা সিএমএইচ এ স্থানান্তর করা হয়। উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর সময় ভূমিধসে পতিত সেনাসদস্য সৈনিক মোঃ আজিজুর রহমান (জন্মঃ ২০ জুলাই ১৯৮৭; বাড়ী-মাদারীপুর; তিনি ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক) এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। প্রচন্ড বৃষ্টিতে উদ্ধার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ।

নিহতরা হলেন- মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক (জন্মঃ ১৬ মার্চ ১৯৮১; বাড়ী- সিংড়াইল, মানিকগঞ্জ; তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৪৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক), ক্যাপ্টেন মোঃ তানভীর সালাম শান্ত (জন্মঃ ৩০ মার্চ ১৯৯০; বাড়ী-বাউফল, পটুয়াখালী; তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৬৪ বিএমএ লং কোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি সদ্য বিবাহিত), কর্পোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক (জন্মঃ ০১ মে ১৯৭৬; বাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ; তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক) ও সৈনিক মোঃ শাহিন আলম (জন্মঃ ০১ আগস্ট ১৯৮৮; বাড়ী-আদমদিঘী, বগুড়া; তিনি ২০০৬ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক!