মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০১৭

‘কেডা আমারে ভাত দিবো, পোলাপাইন লইয়া কই যামু’: নয়নের স্ত্রী

‘আমার স্বামী যেভাবে মরছে, আল্লাহ যাতে আমাকেও সেভাবে মরণ দেয়। আমি নারী। কার কাছে যাবো ভাত চাইতে! কেডা আমারে ভাত দিবো? পোলাপাইন লইয়া কই যামু? আমি কিছুই জানি না।’ রবিবার (৫ জুন) সকালে লংগদুতে নিহত নুরুল ইসলাম নয়নের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী জাহেরা খাতুন আহাজারি করে এসব কথা বলেন। তিনি জানান, তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছেলেটি স্কুলে পড়ে। আর ছোট মেয়ে এখনও শিশু। পরিবারে একমাত্র উপার্জন করতেন তার স্বামী। তাকে হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা।

তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর কাছে বুধবার (৩১ মে) রাতে একটা ফোন আসে। তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘কে ফোন করেছে?’ নয়ন আমাকে বলে, ‘সকালে খাগড়াছড়িতে একটা ভাড়া আছে।’ তখন তাকে আবার জিজ্ঞাসা করি, ‘কাকে নিয়ে যাবা?’ তখন সে আমাকে জানায়, ‘দুইজন চাকমা।’’

তিনি আরও জানান, ‘‘বৃহস্পতিবার (১ জুন) খুব সকালে সেই যে গেল আর দেখা হলো না। দুপুরের পর বাড়ির পাশের লোকজন আমাকে বলে, ‘ভাবি, নয়ন ভাই কই?’ আমি বলি, ভাড়া নিয়ে খাগড়াছড়ি গেছে। আমাকে বলে, ‘কি শার্ট ও প্যান্ট পরেছে?’ তখন তারা আমাকে ছবি দেখায়, আমি কিছুটা চিনতে পারি। কিন্তু নিশ্চিত ছিলাম না। তারপর আমার দেবর বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পর আমাকে ফোন করে বলে ঘটনা সত্য।’’ নয়নের বড় মেয়ে নাসরিন আক্তার বলেন, ‘আমার পিতারে কিরলগ্যা (কেন) হত্যা করছে? আজকে আমার পিতারে মারছে। কালকে অন্যের পিতারে মারবো। অন্য মায়ের সন্তানের বুক খালি করবো। আমি আমার বাপের হত্যার বিচার চাই।’
নুরুল ইসলাম নয়নের ছোট ভাই লিটন বলেন, ‘কিছু দিন আগে এখানকার জেএসএসের কালেক্টর ইমনের সঙ্গে আমার ভাইয়ের কথা কাটাকাটি হয়। কারণ, তারা আমার ভাইয়ের গাড়িতে তাদের অবৈধ অস্ত্র আনা-নেওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমার ভাই তাদের কথায় রাজি হয়নি। আর ইমনের আত্মীয় তিনটিলার বাসিন্দা দীপালু চাকমা। সে বিভিন্নভাবে আমার ভাইকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছে অনেক দিন ধরে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে আঞ্চলিক সংগঠন জেএসএস’র সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। দীপালুকে ধরে রিমান্ডে নেওয়া হলে আসল তথ্য বের হয়ে আসবে।’

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১ জুন) সকালে লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুইজন যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার দিকে রওনা হন। দুপুরের পর দীঘিনালার চার মাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে তার মৃতদেহের ছবি দেখে শনাক্ত করে পরিবার ও বন্ধুরা। শুক্রবার (২ জুন) সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। সেখান থেকে লংগদুবাসীর ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি বিশাল শোকমিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিল। পথেই একই উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলী নামে এক বাঙালির বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে এমন খবর পেয়ে ওই মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে আড়াইশ’রও বেশি বাড়ি ছাই হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]