পাহাড়ি সমাজে পারিবারিক কলহ বাড়ছে : স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং ছেলের হাতে পিতা খুন, আটক-৩। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষকে সহজ-সরল এবং নির্বিবাদী হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়। তারা অনেক কষ্ট সহিষ্ণু এবং অল্পে তুষ্ট। কিন্তু এই সারল্যতা যেন কমেই হ্রাস পাচ্ছে। সম্প্রতি পহাড়ি সম্প্রদায়ের মধ্যে পারিবারিক কলহ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। ভাতৃঘাতি সংঘাত ও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সশস্ত্র কার্যক্রমের মাধ্যমে চলে আসা পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে পারিবারিক কলহের মতো ঘটনা। সম্প্রতি রাঙামাটির সদর উপজেলা ও সাজেকে ঘটে যাওয়া দু’টি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় রীতিমত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে সচেতন সমাজ।মঙ্গলবার স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যার দায়ে সঞ্চয় কান্তি চাকমা ওরফে রসিক মোহন চাকমা(৫৫) নামে একজনকে আটক করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে নিহতের স্বজন কনিকা চাকমা ও প্রিয়দর্শী চাকমা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তাদের বড়বোন পদ্ম রেনু চাকমা (৪৯) কোতয়ালী থানাধীন বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের বোয়ালছড়িমুখ এলাকার বাসিন্দা তরুনী কার্বারীর ছেলে রসিক মোহনের সাথে সংসার জীবন অতিবাহিত করে আসছিলো।
এই সময়ের মধ্যে মদ খেয়ে প্রায় সময় স্ত্রীকে মারধর করতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০/০৭/২০১৭ ইং তারিখে কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয় পদ্ম রেনু চাকমাকে। তার অবস্থার অবনতি হতে থাকলে সেদিনই রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে ঘাতক স্বামী। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক পদ্ম রেনুকে মৃত ঘোষনা করলে তাকে বাড়িতে নিয়ে লাশ সৎকার করে ফেলে স্বামী। পরে খবরপেয়ে নিহতের স্বজনরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত জেনে তারা নিশ্চিত হয় যে, পদ্মরানী তার স্বামীর আঘাতেই নিহত হয়েছে।
এই ঘটনার পর নিহতের পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার দুপুরে কোতয়ালী হাজির হয়ে ঘাতক স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ছিলো এবং মৃত্যুর পর তার মুখ ও নাক দিয়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে বলেও মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে থানার সদ্য যোগদান করা অফিসার ইনচার্জ সত্যজিৎ বড়ুয়া জানান, আমরা অভিযোগ পাওয়ার সাথেই সাথেই ঘটনাস্থলেই পুলিশ পাঠিয়েছি। এছাড়া মূল অভিযুক্তকেও আটক করতে সক্ষম হয়েছি। আটককৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। থানা সূত্র জানায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখান থেকে নিহতের পুড়ে যাওয়া লাশের কিছু নমুনা সংগ্রহ করেছে। এবং সেগুলো মামলার আলামত হিসেবে দেখানো হবে।
থানা পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, মামলা দায়েরের পরপরই খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে যে, ঘাতক স্বামী তার স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়ে এসে ধর্মীয়ভাবে নিজেকে নিয়োজিত করবে। এইলক্ষ্যে সে শহরের আনন্দ বিহার এলাকায় অবস্থান নেয়। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়েই পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার বিকেলে তাকে উক্ত এলাকা থেকে আটক করে। বুধবার তাকে আদালতে উপস্থাপন করে রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ। এদিকে জেলার দূর্গম সাজেকেও পারিবারিক সহিংসতায় পাষন্ড পুত্রের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছে হতভাগ্য পিতা শান্তি লাল চাকমা। রোববার দিবাগত গভীর রাতে এই নির্মম ঘটনা ঘটনায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
নিহতের ঘনিষ্ট বন্ধু বিনয় শংকর চাকমা(৬০) কর্তৃক মাচালং থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, রাতের অন্ধকারে নিহতের সন্তান সোহেল চাকমা ও তার বন্ধু আলোময় চাকমা মিলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে শান্তি লাল চাকমাকে গলায় ও মুখে গামছা পেছিয়ে বাড়ির অদূরে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। এরপর নিহতের লাশ কাঠের সঙ্গে বেধে খড়স্রোতা নদীর পানিতে ফেলে দেয়। মামলার সূত্রে জানাগেছে, আলোময় চাকমা ইউপিডিএফ এর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত এবং উগ্র স্বভাবের। ঘটনার পর থেকেই সে রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে মামলা দায়ের না করতে এবং এই ব্যাপারে কথা না বলতে স্থানীয়দের হুমকি দিয়ে আসছিলো।
সাজেক থানার অফিসার ইনচার্জ মো: নুরুল আনোয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আসামীদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সোমমার ৭/৮/২০১৭ ইং তারিখে সাজেক থানায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলা নাম্বার-১। বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহতের ছেলে পিতৃঘাতক সোহেল চাকমা।
আলমগীর মানিক
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]