বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

জাতিসংঘের সেভ জোন রোহিঙ্গাদের জন্য কতটুকু সেভ?

গত কয়েকদিন ধরে শুনছি, মুসলিম শাসকরা বলছে- আরাকানে রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘের বাহিনীর আন্ডারে সেভ জোনের দাবি তোলা হবে। কিন্তু, আমার কথা হলো- ইহুদীসংঘ তথা জাতিসংঘের সেভ জোন মুসলমানদের জন্য কতটুকু সেভ? ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়, ১৯৯৫ সালের সেব্রেনিচা শহরের কথা। যেখানে জাতিসংঘ বাহিনীর আন্ডারে সেভ জোন ঘোষণা করে হাজার হাজার বসনীয় মুসলমানকে নিরাপদ আশ্রয় দেবার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু সার্ব খ্রিষ্টানরা যখন হামলা চালায় তখন জাতিসংঘের কথিত শান্তিরক্ষীরা সরে যায়, মুসলমানদের উপর হামলার করার রাস্তা সহজ করে। উইকিপিডিয়ার বলছে- “সার্বরা জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের কোনো বাধা ছাড়াই শহরটি দখল করে সেখানে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। ডাচ শান্তিরক্ষীদের নিস্ক্রিয়তার মুখে ও গ্রিক সেচ্ছাসেবী বাহিনীর সহায়তায় সার্বরা এই গণহত্যা চালায়। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর খ্রিস্টান জঙ্গিদের হাতে এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হন ৮,৩৭২ জন মুসলিম পুরুষ এবং বালক।” (http://bit.ly/2xXqNSX)

সুতরাং আজকে জাতিসংঘের বাহিনীর নাম দিয়ে সেভ জোন বানিয়ে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন, কিন্তু কালকে দেখা যাবে, জাতিসংঘ বাহিনী সরে গিয়ে মগ আর বার্মিজ সেনাদের প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে, আর তারা বিনা বাধায় ব্যারিকেডের মধ্যে মনের সুখে রোহিঙ্গা মারছে। একবার মাইরা ফেললে আপনি কাকে ধরবেন ? কাকে বিচার দিবেন ?

তাই সেভ জোন না বানিয়ে স্বাধীন জোন বানান। আরাকান বহু আগে থেকে রোহিঙ্গা ভূমি ছিলো, সেই ভূমি রোহিঙ্গাদেরই ফিরিয়ে দেন। এজন্য রোহিঙ্গাদের অস্ত্র সরবরাহ করে ট্রেনিং দিয়ে স্বাধীনতার জন্য পাঠানো যেতে পারে, কিন্তু সেটা যেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সরকারী উদ্যোগে হয়। এবং এক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এক হয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে নিজেদের সেনাসদস্যও পাঠাতে পারে। তুরষ্ক, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, চেচনিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্র কিছু কিছু সেনাবাহিনী দিয়ে সেনাজোট গঠন করে সৈন্য পাঠালে আরো ভালো হয়। স্মরণীয়, মুসলিম রাষ্ট্র কসোভো স্বাধীনতা লাভ করেছিলো এভাবেই। বিদেশী সেনারা দীর্ঘদিন কসোভোর জন্য লড়ে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটতে পারে আরাকানেও।

মুসলিম রাষ্ট্রগুলো এক হয়ে সরকারিভাবে বিষয়টি তদারকি করলে এবং নিজ নিজ সেনাবাহিনী দিলে মাঝখান দিয়ে আমেরিকা আর ঢুকতে পারবে না। আমেরিকা ঢুকতে না পারলে কথিত জঙ্গীবাদ আর আইএস’র গন্ধও থাকবে না। ফলে রোহিঙ্গা নিয়ে যে চালটি আমেরিকা চালতে চেয়েছিলো সেটাও ব্যর্থ হবে।