শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০২০

১৭২০ প্লেগ, ১৮২০ কলেরা, ১৯২০ স্প্যানিশ ফ্লু, ২০২০ করোনভাইরাস, ১শ বছর পরপর মহামারী।

প্রতি শত বছর পরে মনে হয় একটি করে মহামারীর পুনরাবৃত্তি। ১৭২০ সালে প্লেগ, ১৮২০ সালে কলেরা, ১৯২০ সালে স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী হয়েছে।চীনের বর্তমান ভাইরাল মহামারী উল্লিখিত মহামারী গুলোর মতো একই ধাঁচ অনুসরণ করেছে। কিন্তু ইতিহাস সত্যিই নিজেকে পুনরাবৃত্তি করেছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসেটি কি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে ছড়িয়ে দিয়েছিল? নাকি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?করোনভাইরাস : চীন হওয়া এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসেটি ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারস ডট ইনফো’র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ক’রোনায় আক্রান্ত দুই লাখ ছাড়াল। মোট আ ক্রান্ত ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬৭, মৃ ত্যু ৮১৬০, সুস্থ ৮২ হাজার ৮১৩। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাই রাসের কা রণে থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘরের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১৪৫টি দেশের মানুষকে।

মহামারীগুলির ইতিহাস কি বলে:

১৭২০ সাল:
১৭২০ সালে বুবোনিক প্লেগ
১৭২০ সালে বুবোনিক প্লেগ বৃহত আকারের মহামারী ছিল, এটি মার্সেইয়ের দুর্দান্ত প্লেগও বলে। রেকর্ডগুলি দেখায় যে ব্যাক্টেরিয়া মার্সেইলে প্রায় ১লাখ মানুষ মারা গেছিলো । ধারণা করা হয় যে এই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রামিত মাছি দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে।

১৮২০ সাল:

১৮২০ কলেরা
থাইল্যান্ডে কলেরা মহামারী প্রথম ধরা পড়েছিল ১৮২০ সালে , ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনে সহ এশিয়ার দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৮২০ সালে এই জীবাণুটির কারণে এশিয়ায় ১লাখ এরও বেশি মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছিল। ১৮২০ সালের মহামারী দূষিত নদীর পানি খাওয়ার কারণে শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়।

১৯২০ সাল:
১৯২০ স্প্যানিশ ফ্লু
১০০ বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু দেখা দিয়েছিল, সেই সময় লোকেরা এইচ 1 এন 1 ফ্লু ভাইরাসের সাথে লড়াই করছিল। ক্রমাগত স্প্যানিশ ফ্লু জিনগত ভাবে পরিবর্তন হতো যার ফলে ভাইরাসটি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছিল। প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল এবং বিশ্বের ১০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলো , ১৯২০ সালের মহামারীটি ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা ছিল।

২০২০ সাল:
২০২০ করোনভাইরাস
দেখে মনে হয় ইতিহাস প্রতি ১০০ বছর পরে নিজেকে পুনরাবৃত্তি করছে , এটি কি কেবল কাকতালীয় ঘটনা? আজ, চীন সহ সারা বিশ্বজুড়ে একটি বড় মহামারীর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে, চীন পুরো পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।

চীন হওয়া এই প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসেটি ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব ছড়িয়ে পড়েছে। দুনিয়াজুড়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারস ডট ইনফো’র হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ক’রোনায় আক্রান্ত দুই লাখ ছাড়াল। মোট আ ক্রান্ত ২ লাখ ৩ হাজার ৫৬৭, মৃ ত্যু ৮১৬০, সুস্থ ৮২ হাজার ৮১৩। চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাই রাসের কা রণে থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘরের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১৪৫টি দেশের মানুষকে।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ঘরের ভেতরেই থাকতে হচ্ছে বিশ্বের প্রায় ১৪৫টি দেশের মানুষকে। সবাই এক রকম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। ইতালিতে এখন ঘরে ঘরে কারাগারের মতো অবস্থা।

সরকারি নির্দেশে দেশটির সবাই এখন স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি। অবরুদ্ধ ইতালিতে বন্দিজীবনে অলস সময় পার করছেন সেখানকার বাসিন্দারা। জীবন যেন থমকে গেছে। সুস্থ থাকলেও ঘরের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

উৎপত্তিস্থল চীনে সরকারি হিসাবেই এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৮২৪। এর মধ্যে তিন হাজার ১৯৯ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে ৬৬ হাজার ৯১১ জন।


ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২১ হাজার ১৫৭। এর মধ্যে এক হাজার ৪৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছে এক হাজার ৯৬৬ জন।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় ওপরের সারিতে থাকা অন্য দেশগুলোর মধ্যে ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের নাম উল্লেখযোগ্য।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইতালির সরকার। বন্ধ রয়েছে স্কুল। স্থগিত করা হয়েছে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। খেলাধুলার অনুষ্ঠান বাতিল বা স্থগিত করা হয়েছে।

জনসমাগম স্থল এখন পুরো ফাঁকা। ওষুধ ও খাবারের দোকান বাদে সব কিছু বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ভ্রমণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অবরুদ্ধ হওয়ার কারণে বাবা-মাকে কাছে পাচ্ছে তাদের সন্তানরা। ইউরোপের দেশগুলোতে যে চিত্র খুবই কম চোখে পড়ে। বন্দি অবস্থায় কেমন আছে সেখানকার মানুষগুলো।

ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় সান ফিয়োরানো শহরে বসবাসরত স্কুলশিক্ষক মারজিও টনিওলো বলেন, মৌলিক প্রয়োজন ও জরুরি কাজ ছাড়া বর্তমানে বাড়ি থেকে কেউ বের হতে পারছেন না। যে কোনো ক্ষেত্রে, জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ দিয়ে তবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়ার অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে।

মারজিওর ছোট্ট মেয়ে বিয়ানকা টানিওলো বাড়িতে বসে কখনও করোনাভাইরাসের ছবি আঁকছে, আবার কখনও পুতুল নিয়ে খেলছে। বাড়ির বাইরের লনে পুতুলের সঙ্গে চড়ূইভাতি করেও সময় কাটছে শিশুটির। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে সান ফিয়োরানো শহরটিই প্রথম নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে।