মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০২০

করোনাভাইরাসে এখন একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে: ইতালি প্রধানমন্ত্রী এবং ইতালির অতীতের কাহিনী

ইতালিতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর মহামারি লেগেছে। বাতাসে শুধু লাশের গন্ধ। উত্সবপ্রিয় ইতালিয়ানরা প্রাণ বাঁচাতে নিজেদের অবরুদ্ধ রেখেছেন যার যার ঘরে। সরকারের আদেশ মেনে সবাই নিজ ঘরে কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছেন। প্রতিদিন লাশের সারি এতোই দীর্ঘ হচ্ছে যে লাশ সমাহিত করার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়েও এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ইতালি। আজ পর্যন্ত সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজারের কাছাকাছি। মারা গেছে ৬ হাজার ৭৭ জন। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের কণ্ঠে তাই হতাশা ও ভেঙে পড়ার সুর। টুইটারে তিনি বলেছেন, আমরা সমস্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছি। আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে মারা গেছি। আর কী করতে হবে তা আমরা জানি না। পৃথিবীর সমস্ত সমাধান শেষ হয়ে গেছে। এখন একমাত্র সমাধান আকাশের কাছে। তার এ বক্তব্য বিশ্ববাসীকে নাড়া দিয়েছে। করোনা ভাইরাসে ইতালির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে লোম্বারদিয়া অঞ্চল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক বাহিনী নামানো হয়েছে। লকডাউন কার্যকর করতে সেখানে কাজ করছে সামরিক বাহিনী।

আজ আপনারা ইতালি সরকারের কান্না দেখে নিজেরা কান্না করছেন, আপনাদের মনে আছে এই মানুষটির কথা। একটা কথা মনে রাখবেন আল্লাহ সোবহানতালা মানুষকে ছাড় দেয় কিন্তু ছেরে দেয় না! আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাহির। সুতরাং বুঝতেই পারছেন তার খেলার সে কখন দেখাবে সেটা কেউ বলতে পারবে না। আল্লাহ তুমি আমাদের সকল মুসলিমদের হেফাজত করুন (আমিন)।

“ইতালির গির্জা থেকে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র সরাও, নয়ত ‘করোনা মহাপ্রলয়’ থামবে না”

ইতালির গির্জার ভেতর থেকে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র না সরালে করোনা মহাপ্রলয় থামবে না বলে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন অনেকে। এ সম্পর্কে আমার এক ফেসবুক পোস্টে অনেকেই তাদের মতামত জ্ঞাপন করেছেন। পাঠকদের মতামত হলো-
১. মহানবীর নিঃকৃষ্ট ব্যঙ্গচিত্র কারণেই আজকে ইতালির উপর এ ধরনের ভয়াবহ গজব নেমে এসেছে। উক্ত ব্যঙ্গচিত্রে দেখানো হয়েছে, একজন দাড়ি সম্বলিত নগ্ন ব্যক্তিকে নরকের ফেরেশতারা পেটাচ্ছে, ছবির নিচে মহানবীর নাম লিখিত।
২. বিশেষ করে ইতালির উত্তরাঞ্চলে যেখানে করোনায় মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি সেখানের এক গির্জায় এই ছবিটি রাখা আছে।
৩. কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন- কোরআনে সূরা লাহাব ও সূরা কাউসারে মহানবীর প্রতি বিদ্বেষকারীকে সম্পদ ও পরিবার নিয়ে সমূলে ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে, ইতালিতে সেটাই ঘটছে।
৪. আবার অনেকে মন্তব্য করেছে, আমরা (মুসলমানরা) যদি এই ব্যঙ্গচিত্রের প্রতিবাদ না করি, তবে ইতালির গজব আমাদের উপরও পড়বে।

উল্লেখ্য ইতালির বোলগোনায় ‘San Petronio Basilica নামক গির্জায় Giovanni da Modena এর আঁকা ব্যঙ্গচিত্রটি ১৪১০ সাল থেকে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু মুসলমানরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছিলো না। ২০০১ সালে ইতালির স্থানীয় মুসলমানরা প্রথম এই ব্যঙ্গচিত্রটি সরাতে ইতালি সরকারের কাছে দাবী উত্থাপন করে, কিন্তু ইতালি সরকার তাদের উপেক্ষা করে মুসলমানদের গ্রেফতার করে প্রতিবাদ দমনের চেষ্টা করে।

ইতালি কি তার গির্জা থেকে ৬১১ বছর পুরাতন মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র সরাবে ?

ইতালির বোলোগনায় একটি ক্যাথলিক গির্জার ভেতর মহানবীর ৬১১ বছর পুরাতন একটি ব্যঙ্গচিত্র সংরক্ষিত আছে। যে ব্যঙ্গচিত্রে দেখানো হয়েছে মহানবীকে নরকের রক্ষীরা নির্যাতন করছে। গির্জাটির নাম ‘San Petronio Basilica’ এবং এবং ব্যঙ্গচিত্রটির শিল্পির নাম Giovanni da Modena। (সূত্র: https://bit.ly/395rxru, https://bit.ly/39bLXPs)

২০০১ সালে প্রথম ইতালির মুসলমানরা ঐ ব্যঙ্গচিত্রটি ধ্বংস করার দাবী তোলে। (https://bit.ly/2QxL9hx)। কিন্তু ইতালি সরকার মুসলমানদের দাবী পাত্তা না দিয়ে উল্টো মুসলমানদের দমানোর জন্য ২০০২ সালে ৫ জন মুসলমানকে গ্রেফতার করে দাবি করে মুসলমানরা নাকি ঐ গির্জা নিয়ে খারাপ কোন প্ল্যান করেছিলো। (https://nyti.ms/2U8YsHp)

এই ঘটনার পরই মুলতঃ ইউরোপে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র নির্মাণের একটি জোয়ার উঠে। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে ৩০শে সেপ্টেম্বর ইউরোপীয়ান রাষ্ট্র ডেনমার্কের জিল্যান পোস্টেনে মহানবীর ১২টি ব্যঙ্গকার্টুন প্রকাশ করে(https://bit.ly/2J1rFxu)। এরপর ২০০৬ সালে নরওয়ে ঐ কার্টুনগুলো তাদের দেশে পুনঃপ্রচার করে। এরপর ১লা ফেব্রুয়ারী একযোগে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং স্পেন জিল্যান পোস্টেনের কাটুর্নগুলো রিপ্রিন্ট করা শুরু করে। ৮ই ফেব্রুয়ারী ফ্রান্সের পত্রিকা শার্লি হেবদো মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র প্রথম পাতায় বড় করে প্রিন্ট করে। ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি এসে ইতালি সরকারের এক মন্ত্রী ঘোষণা দেয়, মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র সম্বলিত টি-শ্যার্ট সে সবার মাঝে বিলি করবে (https://bbc.in/2whHYUl)। এপ্রিলে এসে ইতালির ক্যাথলিক সট্যাডি (Studi Cattolici) নামক একটি মাসিক খ্রিষ্টিয় পত্রিকা ‘San Petronio Basilica’ চার্চে সংরক্ষিত Giovanni da Modena ব্যঙ্গচিত্রকে অনুকরণ করে নতুন কার্টুন প্রকাশ করে (https://bit.ly/33xQCdq)। এরপর খুব দ্রুত এই ব্যঙ্গ কার্টুনের বিষয়টি সারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৭ থেকে ইসলাম ও মহানবীর ব্যঙ্গ নিয়ে ব্যাপক কাজ শুরু করে নেদারল্যান্ডের এমপি গ্রিট উইল্ডার্স। পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশে এই ব্যঙ্গচিত্রে প্রদর্শনীসহ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয় এবং কয়েকটি ব্যঙ্গাত্মক মুভিও নির্মিত হয়, যা নিয়ে সারা বিশ্বেজুড়ে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী করেছিলো। পুরো বিষয়টি তখন ইউরোপীয়ান দেশগুলোতে রাজনীতিবিদ ও খ্রিষ্টীয় জনগণের মাঝে ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা পায় এবং এ বিষয়টি কাজে লাগিয়ে এন্টি ইমিগ্র্যান্ট ইস্যু বড় হতে থাকে, যা পুরো ইউরোপের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশেও এক পর্যায়ে সেই ইউরোপী ইসলামবিদ্বেষী গ্রুপের কার্যক্রম চলে আসে। বাংলাদেশে নাস্তিক ব্লগার নামে আমরা যাদের চিনি, যারা বিভিন্ন সময় ইসলাম বা মহানবী নিয়ে কুৎসিত রচনা করে আলোচনায় আসে তাদেরকেও পেছন থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে ইউরোপ ভিত্তিক সংস্থা ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’ ((হেডকোয়ার্টার ব্রিটেন)। এই ‘পেন ইন্টারন্যাশনাল’ বাংলাদেশের কিছু ছেলেকে ইউরোপে থাকা খাওয়ার লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশেও সেই ব্যঙ্গচিত্র ও ব্যঙ্গ রচনার প্রকাশ করা শুরু করে। এবং পর্যায়েক্রমে ঐ সব কথিত ব্লগারকে ভিসা দিয়ে ইউরোপে নিয়ে যায়।

অর্থাৎ গত দুই দশকে সারা বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের শেষ নবী, কোরআন বা ইসলাম নিয়ে যে ব্যঙ্গচিত্রের কার্যক্রম তা কিন্তু শুরু হয়েছিলো ইতালির চার্চের ভেতর সংরক্ষিত ৬১১ বছর পুরাতন সেই বঙ্গচিত্রকে কেন্দ্র করেই। অতি সম্প্রতি সারা বিশ্বের মানুষ অবলোকন করছে ইতালি নামক রাষ্ট্রটি কি করে করোনা ভাইরাস দ্বারা পর্যুদস্ত অবস্থায় আছে। অতি উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং বহুমুখী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েও তারা ব্যাপক মৃত্যুর হার ঠেকাতে পারছে না ইতালি, যা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এ অবস্থায় দুর্যোগ থেকে বাচতে ইতালি তার গির্জার ভেতর সংরক্ষিত সেই ৬১১ বছরের পুরাতন মহানবীর বঙ্গচিত্রটি সরিয়ে ফেলে কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

লিবিয়ার ওমর আল মুখতার যাকে বলা হতো মরুর সিংহ এখন থেকে ৮৭ বছর আগে ১৯৩১ সালে তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করে ইতালীয়রা।

১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে উসমানীয় সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইতালির যুদ্ধের সময় ইতালির নৌবাহিনী হানা দেয় লিবিয়ার উপকূলে। সে সময় লিবিয়া ছিল উসমানীয় সাম্রাজ্যের অংশ। ইতালিয়রা লিবিয়াকে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু তুর্কি সেনারা ও তাদের লিবিয় সহযোগীরা আত্মসমর্পণের পরিবর্তে উপকূল ছেড়ে পেছনের দিকে সরে আসেন।

ইতালিয় হানাদার বাহিনী তিন দিন ধরে ত্রিপলি ও বেনগাজিতে বোমা বর্ষণ করে। এরপর লিবিয়া দখলে নিয়ে নেয়।

লিবিয়ার সাইরেনাইকা অঞ্চলের জনগণ ওমর মুখতারের নেতৃত্বে একের পর এক প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। মরুভূমির লড়াইয়ে অভিজ্ঞ ওমর মুখতার হয়ে ওঠেন ইতালিয় সেনাদের জন্য চক্ষুশূল। অবশেষে ২০ বছর পর ১৯৩১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এক অতর্কিত হামলায় আহত ও বন্দি হন মুখতার। ৫ দিন পর আতঙ্কগ্রস্ত ইতালিয় দখলদাররা তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে।

ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায় মরুর সিংহ নামে খ্যাত ওমর মুখতারকে মুসোলিনির ইটালিয়ান সেনা অফিসার জিজ্ঞেস করেছিল: তুমি কি জান তোমার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড?

জবাবে ওমর মুখতার বলেছিলেন, হ্যাঁ। ওই অফিসার বললেন, তুমি যা করেছ তার জন্য তুমি কী অনুতপ্ত? ওমর মুখতার বললেন, প্রশ্নই হয় না, আমি আমার ধর্ম, দেশ আর মানুষের জন্য লড়েছি।

সেনা আদালতের বিচারক তার দিকে তাকিয়ে বলে, তোমার মত লোকের এমন পরিণতি দেখে আমি দুঃখিত।

ওমর মুখতার বললেন, "কিন্তু এটাই তো জীবন শেষ করার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ তিনি আমাকে এভাবে বীরের মত শহীদ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।”

এরপর বিচারক প্রস্তাব দিল তাকে মুক্ত করে দেয়া হবে যদি তিনি মুজাহিদদের কাছে চিঠি লেখেন যাতে মুজাহিদরা ইটালিয়ানদের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে।

ওমর মুখতার বিচারকের দিকে তাকিয়ে বলেছিলেন: "যেই শাহাদত অঙ্গুলি দিয়ে আমি প্রতিদিন সাক্ষ্য দেই যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। সেই আঙ্গুল দিয়ে অসত্য কোনো কথা লিখতে পারবো না। আমরা এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে আত্মসমর্পণ করি না। আমরা হয় জিতি, না হয় মরি।" মহান আল্লাহ তায়ালা বীরশহীদ ওমর আল মুখতারকে জান্নাতে স্থান করে দিন। (কপি সংগৃহীত) আমীন।