বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০

সাজেকে উপজাতিদের অবহেলায় সংক্রামিত হাম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর পাশে সেনাবাহিনী

মুমূর্ষু পাঁচ উপজাতি শিশুকে সাজেক থেকে হেলিকপ্টারে তুলে চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে নামিয়ে সেখান থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানোর সব আয়োজন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।ইতোমধ্যে আট শিশু মারা গেছে; আরও পাঁচ জনের অবস্থা মুমূর্ষু। তাদের বাঁচাতে হলে এখনই উন্নত চিকিৎসা দিতে হবে, অন্যথায় কিছুক্ষণ পর তারা মারা যাবে বলে ধারণা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মঙ্গলবার (২৪ মার্চ ২০২০) আনুমানিক ১টার দিকে খাগড়াছড়ি ব্রিগেডের ৫ ফিল্ড এ্যাম্বুলেন্স হইতে ক্যাপ্টেন মোঃ শফিউল আলম (পাভেল) এর নেতৃত্বে দিঘিনালা সেনানিবাস থেকে হেলিকপ্টারে চড়ে রওনা হয় সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ ডাক্তারি দল এবং ৪ জন বেসামরিক ডাক্তার, ৫৪ বিজিবি আওতাধীন শিয়ালদা বিওপি ক্যাস্প থেকে ১৫ কিঃমি পৃর্বে লুনথিয়া পাড়া এবং অরুন কারবারী পাড়া অস্হায়ী মেডিকেল ক্যাম্প বসিয়ে হাম রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে হেলিকপ্টারযোগে শেয়ালদাহপাড়ায় গমন করে।
 
জানা যায়, সাজেকের শিয়ালদহ লোকালয় থেকে অত্যন্ত দূরবর্তী এবং দুর্গমতার কারণে সামাজিক সুযোগ-সুবিধার অনেক কিছুই অনুপস্থিত। সেখানে এই অসুস্থ উপজাতিদের উন্নত চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য দুর্গম পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে দেবদূতের মত সেনাবাহিনীর এমন ছুটে আসা ছিল সকলের কাছে অকল্পনীয়। এসময় সমন্বিত চিকিৎসক দল সেই এলাকায় একটি পরিবারের ৫ জন অবহেলার কারনে সংক্রামিত হাম ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সন্ধান পান এবং চিকিৎসকগণ শিশুদের জীবন বাঁচাতে জরুরী ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রামে পাঠানো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বিষয়টি জানার পর সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মহোদয় মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমান অতি দ্রুত এই শিশুদের হেলিকপ্টারযোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে নিয়ে আসার নির্দেশনা প্রদান দিলে ২৫ মার্চ বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারযোগে আক্রান্ত শিশুদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

উদ্ধারকৃত শিশুরা হলো প্রতিল ত্রিপুরা (৫), রোকেন্দ্র ত্রিপুরা (৬), রোকেদ্র ত্রিপুরা (৮), নহেন্দ্র ত্রিপুরা (১০), দিপায়ন ত্রিপুরা (১৩)। সূত্র মতে বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

রাঙামাটি সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, দুর্গম এলাকা, জনবল সঙ্কট ছাড়াও হাম টিকা গ্রহণের ভীতি, কুসংস্কারের কারণে এসব এলাকায় শিশুদের টিকা আওতায় আনা যায়নি। ফলে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সেনা, বিজিবি আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি।

স্থানীয় কারবারির সূত্রে জানা যায়, সংক্রামিত হাম ছোঁয়াচে রোগ ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগগের মোকাবেলায় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। এতে স্থানীয়রা অনেক সন্তুষ্ট এবং কৃতজ্ঞ। সেনাবাহিনীর এমন জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম আমরা ভবিষ্যতে আরো দেখবো বলে আশাবাদী। সেনা বাহিনীর এমন মহানুভবতায় উক্ত এলাকায় মানুষের মাঝে নেমে এসেছে প্রশান্তির ছায়া। হেলিকপ্টারযোগে দুঃস্থ রোগীদের স্থানান্তরের পাশাপাশি অন্যান্য আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতেও যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে সেনা ও বেসামরিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত চিকিৎসক দল।

এখানে উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রামের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জনগণের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়িয়েছে। দূর্গমতার কারণে শিয়ালদহ এলাকায় প্রায়শই অভাব অনটনসহ বিভিন্ন মহামারির প্রকোপ দেখা দেয়। এখানে সুপেয় পানি সংগ্রহ করা অত্যন্ত দুঃসাধ্য। তাই ঐ এলাকার নিরীহ জনগণকে নিজেদের শারীরিক ঝুঁকি নিয়ে দিনযাপন করতে হয়। ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে ব্যাপকভাবে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে শিয়ালদহে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিবর্গ মৃত্যুবরণ করে। ঐ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল হেলিকপ্টারে করে সেখানে গিয়ে একটি অস্থায়ী চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করে চিকিৎসা তৎপরতা পরিচালনা ও স্থানীয় জনগণকে প্রতিকুলতার মধ্যেও সুপেয় পানি সংগ্রহ করার বিভিন্ন পদ্ধতিমূলক প্রেষণা প্রদান করার ফলে বিপদজনক হয়ে উঠা মহামারি রোধ করা সম্ভব হয়েছিলো। সেসময়কার মতো বর্তমানেও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের এই দূর্যোগ মুহূর্তে পাশে দাঁড়িয়েছে।