বুধবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৬

পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাঃ স্বরূপ ও সমাধানের উপায় : পর্ব - ২

আগের পর্ব: পর্ব-১

ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম 
আজকের যে পার্বত্য চট্টগ্রাম এর আলাদা কোন প্রশাসনিক অস্তিত্ব বাংলাদেশের মুসলিম শাসনামলে ছিলো না। প্রকৃত প্রস্তাবে ১৮৬০ সালের পূর্বে পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্বই ছিলো না। তখন এটি ছিলো চট্টগ্রাম জিলার অন্তর্ভুক্ত। সমগ্র ইতিহাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছিল বাংলাদেশের ভেতরে, সেই প্রাচীন হরিকেল জনপদ থাকা অবস্থায়। ১৮৬০ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে চট্টগ্রাম থেকে পৃথক করে পৃথক জিলায় পরিণত করা হয়। বৃটিশরা তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ রক্ষার্থে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলকে ভিন্ন জিলা ঘোষণা করে। শাসনের জন্য নিয়োগ করা হয় একজন তত্বাবধায়ক বা জিলা প্রশাসক। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম বৃটিশ জিলা
প্রশাসক ছিলেন মি. টি. এইচ. লুইন। 

ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে আজকের বাংলাদেশে ১২০৪ সাল থেকে ১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন পলাশীর আম্রকাননে বিপর্যয় পর্যন্ত মুসলিম শাসন চালু ছিলো। অন্য কথায় বৃটিশ পূর্ব বাংলাদেশে মুসলিম শাসন ৫৫৩ বছর (১২০৪-১৭৫৭) স্থায়ী হয়েছিল। ১৩৪০ সালে বাংলার সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ (১৩৩৮-১৩৫০খ্রী.) সোনারগাঁ থেকে চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। ফলে তাঁর সময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল সর্বপ্রথম মুসলিম শাসনাধীনে আসে। সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ মেঘনার তীরবর্তী শহর নদীবন্দর চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি রাজপথ নির্মাণ করেছিলেন

এরপর দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম অঞ্চল মুসলিম শাসনাধীনে থাকে। রাজমালার বর্ণনায় জানা যায় যে, ত্রিপুরার রাজা ধনমানিক্য ১৫১৩-১৫ খ্রী. চট্টগ্রামের কিয়দংশ দখল করেন। বাংলার তদানীন্তন শাসক হোসেন শাহী বংশের পরাক্রমশালী সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) দ্রুত সেনাবাহিনী প্রেরন করে পুনরায় সমগ্র চট্টগ্রামের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। হোসেন শাহী আমলে আরাকানের মগ রাজা মং খা রী (১৪৩৪-১৪৫৯) চট্টগ্রামের রামু অঞ্চল দখল করেন। দখলদারীর বিরুদ্ধে আলাউদ্দিন হুসেন শাহের সেনাপতি পরাগল খানের নেতৃত্বে অভিযান প্রেরিত হয়। সুলতান ইলিয়াস শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪) তাঁর শাসনামলের শেষ দিকে পুরো চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনরায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সমর্থ হন। কিন্তু সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহের রাজত্বকালে আরাকান রাজা স্বল্প সময়ের জন্য অঞ্চল দখল করেন। সামরিক অভিযান পরিচালিত হয় আরাকান সম্রাট নুসরাত খানের নেতৃত্বে। জো আঁ দে বারোস এর Da Asia এবং সমসাময়িক পর্তুগীজ গ্রন্থ থেকে জানা যায় আরাকানের রাজা বাংলার সুলতানদের সামন্ত ছিলেন। চট্টগ্রাম অধিকারের যুদ্ধে পরাজয় বরণ করার ফলেই আরাকান রাজ সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহের সামন্তে পরিণত হয়েছিলেন বলে পন্ডিতগণ মনে করেন। আলাউদ্দীন হোসেন শাহ চট্টগ্রামকে দুভাগে ভাগ করে পরাগল খান খোদা বখশ খান কে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। খোদা বখশ খানের শাসনাধীন ছিলো দক্ষিণ চট্টগ্রাম

দিল্লীর শূর সম্রাট শেরশাহের আমলে পর্তুগীজ নাবিকরা চট্টগ্রাম শহরের ২০ মাইল দক্ষিণে দিয়াংগা এবং আরাকান উপকূল সিরিয়ামে উপনিবেশ গড়ে তোলে। সকল পর্তুগীজ ফিরিঙ্গিরা আরাকান কর্তৃপক্ষের নিকট বশ্যতা স্বীকার না করে প্রায়ই দ্বন্দ্ব কলহে লিপ্ত হয়। সকল পর্তুগীজ জলদস্যুরা চট্টগ্রামের স্থানীয় জনগণ যারা সাধারণভাবে মগ্ নামে পরিচিত তাদের সহযোগিতায় সমতল এলাকায় দস্যুবৃত্তি পরিচালনা করতো। সকল দস্যুর অত্যাচারে সমতল অঞ্চলের জনগণের শান্তি ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয় এবং মোগল প্রশাসন এদেরকে শায়েস্তা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বাংলার তৎকালীন সুবেদার শায়েস্তা খান পর্তুগীজ উপনিবেশকারী এবং আরাকান রাজ্যের মধ্যকার কলহের সুযোগে ১৬৬৬ খ্রীষ্টাব্দে সমগ্র চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল জয় করেন এবং ধার্মিক সম্রাট আওরঙ্গজেবের (১৬৫৮-১৭০৭) নির্দেশানুসারে অঞ্চলের নাম রাখেন ইসলামাবাদ। পরবর্তীতে ১৭৬০ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত মোগল অধিকারে চট্টগ্রাম পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বিরাজ করে। 

বাংলাদেশে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠার পর বাংলার মুঘল সুবেদারগণ চট্টগ্রাম থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে তাঁদের প্রভাব বজায় রাখার চেষ্টা করতেন এবং কোন কোন উৎপন্ন দ্রব্য পশুর (যেমন : হাতি, তুলা) উপর করারোপ করতেন। মুঘলদের পর উপনিবেশিক বৃটিশরা পার্বত্য চট্টগ্রামে তাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। ১৭৬০ খৃস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার নবাব মীর কাসেমের (১৭৬০-১৭৬৪) নিকট থেকে চট্টগ্রামের দায়িত্ব গ্রহণ করে। তার একশো বছর পরে ভারতের বৃটিশ শাসকরা তাদেরবিভক্ত করে শাসন করার’ (Divide and Rule) কৌশল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র অস্তিত্বের জন্ম দেয়। ১৮৬০ খৃস্টাব্দের ২৬ জুনের নোটিফিকেশন নাম্বার ৩৩০২ এর ভিত্তিতে এবং একই সালের অগাস্ট ১৮৬০, রেইডস এরফ্রন্টিয়ার এ্যাক্ট ২২ এফ ১৮৬০অনুসারে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী তাকিদে বৃটিশ বেনিয়া গোষ্ঠী বৃহত্তর চট্টগ্রাম জিলাকে বিভক্ত করে এর পাহাড় প্রধান অঞ্চলকে স্বতন্ত্রপার্বত্য চট্টগ্রামজিলার রূপ দেয়। ১৯০০ সালের ম্যানুয়েলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম জিলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করে প্রশাসনিক রাজস্ব সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯০০ সালের ১লা মে বৃটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী প্রভাব খর্ব করার লক্ষ্যে এবং এলাকার স্থায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যেনোটিফিকেশন ১২৩ পিডিচিটাগাং হিল ট্রাক্টস, রেগুলেশন ১৯০০ (Chittagong Hill Tracts Regulation 1900) চালু করে। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী জিলা প্রশাসক সেখানকার সবধরনের অভিগমন বা জনস্থানান্তর বন্ধ বা প্রতিরোধ করতে পারতেন। আইন প্রণয়নের দ্বারা বৃটিশ বেনিয়া সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বহিরাগত যাযাবর উপজাতীয় জনগোষ্ঠীকে একটি স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাসে বাধ্য করানোর প্রয়াস চালায় এবং দেশের মূল জনগণ তথা বাংলাভাষী বা বাঙালীর অবাধ গমনাগমন বসতি স্থাপনকে বিঘ্নিত করে ভূমিজ সন্তান (Son of the Soil) নয় এমন বহিরাগত বিদেশী এবং এদেশে অভিবাসী (immigrant) ভারত-বার্মা থেকে আগত চাকমা, টিপরা, লুসাই, মগ, মারমা উপজাতিদের ঠাঁই করে দেয়া হয়। 

১৯৩৫ সালে বৃটিশ প্রণীত ভারত শাসন আইনে পার্বত্য চট্টগ্রামকেসম্পূর্ণ বা পৃথক অঞ্চলে’ (Totally Excluded Area) হিসেবে চিহ্নিত করে। এর ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সংলগ্ন বাংলাভাষী মুসলিম অধ্যুষিত সমতল অঞ্চলের আর্থ-রাজনৈতিক সম্পর্ক সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বৃটিশ বেনিয়া উপনিবেশিকদের এই কৌশলের কারণ ছিলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী প্রভাব বসতিস্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং সেখানে খৃস্টান ধর্ম প্রচার করা। প্রায় জনশূন্য এবং সম্পদ সমৃদ্ধ পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর বার্মা, আরাকান, চীন উত্তর-পূর্ব ভারতের দূরবর্তী অঞ্চল থেকে আগত বসতি স্থাপনকারী উপজাতিদের যতটুকুই দাবী ছিলো অঞ্চলটির কাছের সংলগ্ন চট্টগ্রামের সমতলবাসী বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর অঞ্চলটির উপর অধিকার বা দাবী কোন যুক্তিতেই কম ছিলো না। কিন্তু স্বার্থান্বেষী বেনিয়া ইংরেজরা ন্যায়পরায়ণতার যুক্তিকে লঙ্ঘন করে ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করে। ১৯৫৬ সালে পৃথক অঞ্চলের বিধানের সমাপ্তি ঘটে। এই সালে প্রাদেশিক সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশেষ মর্যাদা খর্ব করে এবং এর সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটে ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের বুনিয়াদী গনতন্ত্র সংবলিত শাসনতন্ত্র প্রবর্তনের মাধ্যমে। মৌলিক গনতন্ত্রের আওতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমতলের রাজনৈতিক ধারায় মিশে যাওয়ায় সমতলের শাসন বহির্ভূত অঞ্চল (Excluded Area) এর মর্যাদারও স্বাভাবিক অবসান ঘটে। 

বছর ম্যানুয়েলের ৫১ অনুচ্ছেদ রহিত করে পাকিস্তানের সর্বত্র সকল নাগরিকের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করা হয় ঢাকা হাইকোর্টের এক রায়ে। তখন থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালী বসতি গড়ে উঠতে থাকে। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি মাত্র বৃহত্তর জিলা ছিলো। ১৯৮৩ সালে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান খাগড়াছড়ি এই তিনটি প্রশাসনিক পার্বত্য জিলায় বিভক্ত করা হয়। ১৯৮৯ সালে সংসদে তিনটি জিলার জন্য তিনটি স্থানীয় সরকার পরিষদ বিল পাশ করা হয়। এই বিলে স্থানীয় পরিষদের কাঠামোও নির্ধারণ করা হয়। এতে একজন চেয়ারম্যান (উপজাতীয়দের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবেন), ২০ জন উপজাতীয় সদস্য ১০ জন অউপজাতীয় সদস্য রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের প্রক্রিয়ায় বহিরাগত চাকমা, টিপরাদেরকে আরো মারাত্মক ইন্ধন যোগানো হয়। 

১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়। তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়ে বাংলা ভাষায় লিখিত কম্পিউটারে মুদ্রিত ১৫ পৃষ্ঠার এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন সরকারী আওয়ামী লীগ দলের চীফ হুইফ পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তুু লারমা। এই চুক্তি সংবিধান বিরোধী, দেশ বিরোধী, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী, গণতন্ত্র - মৌলিক অধিকার - সমতা-সমসুযোগ বিরোধী বলেই পার্বত্য চট্টগ্রামের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালী মুসলিমরা এর বিরোধীতা তখন থেকেই করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আরো ১২টি উপজাতিকে বাদ দিয়ে চাকমা শান্তি বাহিনীর সাথেই সরকার চুক্তি করেছে। কেবল চাকমাদের সাথে চুক্তি অন্যদের অধিকার সুযোগ হরণ মাত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মুসলিম বাঙালীদের সম্পদ লুঠ-পাট, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালানো, তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, তাদের নারীদের ধর্ষণ, তাদের শিশুদের বিভৎসভাবে হত্যা করা, তাদেরকে আহত-নিহত করা, তাদের জমি কেড়ে নেয়া, তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখা, তাদেরকে অঞ্চল থেকে বহিস্কার করা ইত্যাদি কু-কর্ম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পরও শান্তি বাহিনীর সন্ত্রাসীদের দ্বারা আজো অব্যাহত আছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে গত ৩৮ বছর ধরে যে সেনাবাহিনী নিরাপত্তা বাহিনী দেশ রক্ষা করলো, বিদ্রোহ থামালো, স্বাধীনতা বাঁচালো, জীবন দিয়ে, ঘাম রক্ত দিয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করলো সে বাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে বর্তমান সরকার স্থানীয় বাঙালী মুসলিমদের জীবন সম্পদকে ১৯৯৭ এর শান্তি চুক্তি পূর্ববর্তী সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধহীন আক্রমণের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৭১ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে সরকার সে ষড়যন্ত্রেরপাতানো ফাঁদেএদেশের এক সম্পদশালী এক-দশমাংশ এলাকাকে ঠেলে দিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার অর্থ দাঁড়াবে বর্তমান বাংলাদেশের দশ ভাগের একভাগ ভূমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। পার্বত্য চট্টগ্রামের লোকালয় থেকে সেনাক্যাম্প সরিয়ে নেয়ার ফলে সেখানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তারা বাঙালীদের কাছ থেকে যথেচ্ছ চাঁদা আদায় করছে। কৃষিপণ্য বিক্রিতে, ছাগল বিক্রিতে, কাঠ বিক্রিতে, ফল-ফসল বিক্রিতে শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। আগেও দিতে হতো। এখন তা বেপরোয়া রূপ ধারণ করেছে। শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসীরা নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে ভূমি। দখলে নিয়ে নিচ্ছে বাঙালীদের ইজারা নেয়া জমি, রাবার বাগান আম বাগান প্রভৃতি। চাকমা ভিন্ন অন্য উপজাতিরাও চাকমা সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার। চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী হামলা থেকে তারাও রেহাই পাচ্ছে না। এই মুহূর্তে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতা এটাই। অন্য কথায় ভারতে প্রশিক্ষিত মাত্র কয়েক হাজার সশস্ত্র সন্ত্রাসীর কাছে জিম্মি ওখানকার সব বাসিন্দা

লেখক-পরিচিতি : জনাব মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম- বিশিষ্ট ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ এবং প্রাবন্ধিক
লেখা-পরিচিতি : প্রবন্ধটি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ ইসলামিক সেনটার কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপিত হয়

ফুটনোটঃ

. . মোহাম্মদ আবদুর রব, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূগোল ভূ-রাজনীতি, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক স্মারক, অতন্দ্র জনতা বাংলাদেশ, ধানমন্ডি, ঢাকা, ১৯ অক্টোবর ১৯৯৭, পৃ.১১০-১১১। 
.
. এমাজউদদীন আহমদ, জুমল্যান্ডের পরিণতি, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ.১৭। 
.
. হাসানুজ্জামান চৌধুরী . মোহাম্মদ আব্দুর রব, পার্বত্য চট্টগ্রাম : ভূ-রাজনীতি বিপন্ন সার্বভৌমত্ব, লেখকদ্বয় কতৃৃক প্রকাশিত, ঢাকা, ১লা জানুয়ারী, ১৯৯৭, পৃ.-৫। 
.
জাফর আহমদ নূর, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্বমোড়লদের হেড লাইটের আলো পড়েছে (প্রবন্ধ), পৃ-১। 
.
খাগড়াছড়ি জেলার সামুতং- .১৬ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ইতোমধ্যে আবিস্কৃত হয়েছে। কাপ্তাই আলীকদমে কঠিন শিলা পাওয়া গেছে। রামুতে পাওয়া গেছে গ্যাস, সেই সাথে আলিকদমে পেট্রোলিয়াম লামায় পাওয়া গেছে কয়লা। মানিকছড়ি রাঙ্গামাটিতে রয়েছে পাথরের বিরাট মওজুদ। দেখুন . তারেক শামসুর রহমান, পার্বত্য চট্টগ্রাম কোন পথে? আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৯৩। 
.
সুগত চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সংস্কৃতি, ট্রাইবাল অফিসার্স কলোনী, রাঙ্গামাটি, ১৯৯৩, পৃ.১৫। 
.
পার্বত্য চট্টগ্রামের পার্বত্য খাগড়াছড়ি, পার্বত্য রাঙ্গামাটি, পার্বত্য বান্দরবান ১৯৮৮ সালে তিনটি জেলার মর্যাদায় বিভক্ত হয়। দ্রষ্টব্য : জাতীয় সংসদের এ্যাক্ট, বাংলাদেশ গেজেট, ২রা মার্চ, ১৯৮৯। 
.
জয়নাল আবেদিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম: স্বরূপ সন্ধান, বুক মিউজিয়াম পরিবেশিত, ২৬ মার্চ ১৯৯৭, পৃ. ১৭। 
.
জয়নাল আবেদীন, পূর্বোক্ত, পৃ. ১৭-১৮। 
.
লেবানন ৪০৩৪ বর্গমাইল (১৪৪৩২ বর্গ কি.মি.), সাইপ্রাস ৩৫৭১ বর্গমাইল (৯২৫০ বর্গ কি.মি), ব্রুনাই ২২২৫ বর্গমাইল (৫৭৭০ বর্গ কি.মি), কাতার ৪৪০২ বর্গমাইল (১১৪০০ কি.মি) সিঙ্গাপুর ২৪০ বর্গমাইল (৬২২ বর্গ কি.মি), মরিশাস ৭২০ বর্গমাইল (১৮৬৫ বর্গ কি.মি), লুক্সেমবার্গ ৯৯৮ বর্গমাইল (২৫৮৬ বর্গ কি.মি) আয়তন বিশিষ্ট
.
সার্ভে অব বাংলাদেশের তথ্য, উদ্বৃত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি প্রক্রিয়া পরিবেশ পরিস্থিতির মূল্যায়ন, মাওলা ব্রাদার্স, ফেব্রুয়ারী ২০০১, পৃ. ১৭। 
.
দৈনিক জনকন্ঠ, ৩০ জানুয়ারী ২০০০। 
.
. মাহফুজ পারভেজ, বিদ্রেহী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, সন্দেশ, শাহবাগ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯, পৃ.
. বাংলাদেশে কতটি নৃ-গোষ্ঠী বসবাস করে তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে রয়েছে মত পার্থক্য। বিষয়ে সরকারি বেসরকারি দলিলপত্র এবং বিভিন্ন গবেষণাপত্রে ভিন্ন রকম তথ্য পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ১২, কেউ বলেছেন ১৫, আবার কেউ বলেছেন ৪৬। যেমন, মাহমুদ শাহ কোরেশি সম্পাদিতট্রাইবাল কালচার ইন বাংলাদেশগ্রন্থে মার্কিন নৃ-বিজ্ঞানী Peter J. Bertocci ১৯৯১ সালের আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ১২। আবার ১৯৯৪ সালের আদম শুমারী রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক .জি.সামাদ বলেছেন, দেশে ১৫টি নৃ-গোষ্ঠী বাস করছে। মাহমুদ শাহ কোরেশি নিজেই বলেছেন বাংলাদেশে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৩১। অন্যদিকে নৃতত্ত্ববিধ সি. মেলোনি বলেছেন, বাংলাদেশে বসবাসরত নৃ-গোষ্ঠীর সংখ্যা ৪৬। তিনি অবশ্য ভাষাগত দিক থেকে নৃ-গোষ্ঠী গুলোকে ওই ৪৬ ভাগে ভাগ করেন। দেখুন, গৌতম মন্ডল, অশান্তির বেড়াজালে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, নিউজ নেটওয়ার্ক, ধানমন্ডি, ঢাকা, জুলাই ২০০৫, পৃ.৩৩
.
রাঙ্গামাটিতে বসবাসকারী উপজাতির সংখ্যা ১১টি (চাকমা, মারমা, তংচংগ্যা, ত্রিপুরা, পাংখো, লুসাই, বোম, খিয়াং, মুরং, চাক, খুমি) খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাসকারী উজাতির সংখ্যা ৪টি (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল) বান্দরবন জেলায় বসবাসকারী উপজাতির সংখ্যা ১২টি (মারমা, মুরং, ত্রিপুরা, তংচংগ্যা, বোম, চাকমা, খুমী, খিয়াং, চাক, উসাই, লুসাই, পাংখো) বিস্তারিত দেখুন অশোক কুমার দেওয়ান, চাকমাজাতির ইতিহাস বিচার, দিপীকা দেওয়ান প্রকাশিত, খবংপর্যা, খাগড়াছড়ি, নভেম্বর ১৯৯১; বিরাজ মোহন দেওয়ান, চাকমা জাতির ইতিবৃত্ত, উদয় শংকর দেওয়ান প্রকাশিত, উত্তর কালিন্দীপুর, রাঙ্গামাটি, জানুয়ারী ২০০৫; প্রভাংশু ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার ইতিহাস, এপ্রিল ২০০৬; আতিকুর রহমান, পার্বত্য তথ্য কোষ - খন্ড, পর্বত প্রকাশনী, সিলেট, নভেম্বর ২০০৭; আবদুস সাত্তার, পাকিস্তানের উপজাতি, পাকিস্তান পাবলিকেশন্স ঢাকা, ১৯৬৬
. S. Mahmood Ali, ‘The Fearful state: Power people and Internal war in South Asia’, London and new Jersy: ZED Books, 1993, উদ্বৃত . হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ.
. ৫ম খন্ড- বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের এ্যাকট, বিল ইত্যাদি, বাংলাদেশ গেজেট, মার্চ , ১৯৮৯; উদ্বৃত . হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত পৃ. ৫। 
.
জাফর আহমদ নূর, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিশ্ব মোড়লদের হেড লাইটের আলো পড়েছে (প্রবন্ধ), পৃ.১। 
.
ধর্মযাজক ফাদার টীম ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে খৃস্টানীকরণ (Christianization) প্রোগ্রাম শুরু করেন। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া তিনি এখানে বিগত ৩৭ বছর যাবত অবস্থান করে ছোট বড় সকল উপজাতি সদস্যদের খৃস্টান ধর্মে দীক্ষিত করে পার্শ্ববর্তী মিজোরাম (৯০% খৃস্টান ইহুদী), ত্রিপুরা (৩০% খৃস্টান), মনিপুর (৪০% খৃস্টান), আসাম (৪৫% খৃস্টান), মেঘালয় (৮০% খৃস্টান), অরুনাচল (৭০% খৃস্টান) রাজ্যের খৃস্টান ইহুদীদের সাথে ধর্মীয় বন্ধন গড়ার কাজটি লোকচক্ষুর অন্তরালে সাফল্যের সাথে করতে সক্ষম হয়েছেন। ধর্মযাজক বিশাল কর্মকান্ড পরিচালনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ডেমোগ্রাফিক ডিনামিকস পরিবর্তনের পাশাপাশি সকল উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে অত্যাধুনিক বিশাল খৃস্টান ডরমিটরী, গীর্জা, মিশনারী স্কুল, বাইবেল কেন্দ্র, পাঠাগার, সার্ভিস সেন্টার, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট শক্তিশালী স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। 
.
. এমাজউদদীন আহমদ, বাংলাদেশ রাজনীতি : কিছু কথা কথকথা, মৌলি প্রকাশনী, বাংলা বাজার, ঢাকা, মে ২০০২, পৃ. ১৬২-১৬৩
.
কামিনী মোহন দেওয়ান স্নেহকুমার চাকমার নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসমিতির একটি প্রতিনিধি দল এবং ভুবন মোহন রায়ের নেতৃত্বে পার্বত্য রাজাদের আরেকটি প্রতিনিধি দল দিল্লি গিয়ে পৃথক পৃথকভাবে কংগ্রেস নেতাদের সাথে সাক্ষাত করে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান
.
পার্বত্যাঞ্চলের প্রথম গনসংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতির সভাপতি ছিলেন কামিনী মোহন দেওয়ান। পিতার নাম ত্রিলোচন দেওয়ান। দেশ বিভাগের সময় ভারতের সঙ্গে একীভূত হওয়ার লক্ষ্যে তৎপরতা চালানোর দায়ে তিনি কারাবরন করেন। রাঙ্গামাটি জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান (১৯৮৯) গৌতম দেওয়ান তার নাতি। 
.
বৃটিশ আমলের অন্যমত উপজাতীয় নেতা। পিতার নাম শ্যামচন্দ্র চাকমা। জনসংহতি সমিতি তথা শান্তি বাহিনীর অন্যতম উপদেষ্টা। ভারতের পক্ষ নেয়ায় হুলিয়া জারী হওয়ায় তিনি ত্রিপুরা রাজ্যে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে ত্রিপুরা রাজ্য থেকে জনপ্রতিধি নির্বাচিত হন
.
ভারতপন্থী চাকমা নেতা, পিতার নাম কালাহুলা দেওয়ান। ঘনশ্যাম দেওয়ানের আপন ভাগ্নে শান্তিবাহিনীর অন্যতম নেতা সমীরন দেওয়ান (মেজর মলয়) 
.
এস.বি. চাকমা, উপজাতীয় নেতৃত্ব: সশস্ত্র আন্দোলনের ইতিকথা, উদ্বৃত . হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ.৩৭
.
সৈয়দ আজিজ উল আহসান ভূমিত্র চাকমা, ‘প্রব্লেমস অব ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন ইন বাংলাদেশ : দি চিটাগাং হিল ট্রাকটস’, এশিয়ান সার্ভে, ভলিউম ২৯, নং-১০, অকটোবর, ১৯৮৯, পৃ-৯৫৯-৯৭০
.
সত্তর এর নির্বাচনের সময় মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার উপদেষ্টা ছিলেন। বাড়ী মোবাছড়িতে। পার্বত্য এলাকায় বেশ কয়েকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অনন্ত বাবুর ছেলে প্রসীত বিকাশ খীসা পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালের নেতা এবং ইউপিডিএফের বর্তমান সভাপতি। 
.
সালাম আজাদ, শান্তিবাহিনী শান্তিচুক্তি, আফসার ব্রাদার্স, ঢাকা, ১৯৯৯, পৃ.২২
.
মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার পিতার নাম বিত্ত কিশোর লারমা, মায়ের নাম সুহাসিনী। তিনি অমৃতলাল দেওয়ানের ভাগ্নে। উল্লেখ্য সন্তু লারমা মামাতো বোন বিয়ে করেন। অন্যকথায় অমৃতলাল দেওয়ানের মেয়েকে বিয়ে করেন। 
.
হুমায়ুন আজাদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা, আগামী প্রকাশনী, ঢাকা, ১৯৯৭, পৃ.১৮
.
সালাম আজাদ, পূর্বোক্ত, পৃ.১২-১৩। 
.
পার্বত্য চট্টগ্রামের এককালের শক্তিশালী আওয়ামী লীগ নেতা। পিতা দিগম্বর চাকমা। দাদা লালমনি ডাক্তার স্বাস্থ্য বিভাগে চাকুরী করতেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্য নিয়ে সব সময় চিন্তা করতেন এবং সমস্যা সমাধানে নিয়মতান্ত্রিক শান্তিবাদী ভূমিকায় বিশ্বাসী ছিলেন। 
.
আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৩১-৩২
.
১৯৫১ সালের অক্টোবর চাকমা রাজা নলিনাক্ষ রায় মারা যাওয়ার পর ১৯৫৩ সালের মার্চ তদীয় পুত্র রাজা ত্রিদিব রায় রাজ সিংহাসনে আরোহন করেন। পাকিস্তান শাসনামলে রাজা ত্রিবিদ রায়ের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তান সরকারের সাথে তিনি নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। ১৯৬২ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে বিজয়ী হন
.
কলিকাতার তৎকালীন হিন্দু ব্যারিষ্টার সরল সেনের কন্যা বিনীতা রায়কে চাকমা রাজা নলিনাক্ষ রায় বিয়ে করেন। এই বিয়ের মাধ্যমে চাকমা রাজ পরিবারে হিন্দু আচার অনুষ্ঠানের বিকাশ ঘটে। 
.
সিদ্ধার্থ চাকমা, প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম, নাথ ব্রাদার্স, কলকাতা, ১৯৮৬, পৃ.৯। 
.
দলের সদস্য ছিলেন : মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা, জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, জ্ঞানেন্দ্র বিকাশ চাকমা, চারু বিকাশ চাকমা, বি.কে. রোয়াজা, স্নেহকুমার চাকমা প্রমুখ
.
১৯৭৩ সালের জানুয়ারী খাগড়াছড়ির ইটছড়ির গভীর অরণ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র শাখাশান্তিবাহিনীপ্রতিষ্ঠিত হয়। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার অনুজ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার ডাকনাম শন্তু বা শান্তি অবলম্বনে এদেরকে ডাকা হতো শান্তিবাহিনী। ১৯৭৪ সালের জানুয়ারী মাসে রিজার্ভ আর্মড পুলিশের ওপর অতর্কিতে প্রথম-হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে শান্তি বাহিনী; দেশব্যাপী শান্তিবাহিনীর নাম আলোচিত হতে থাকে
.
প্রীতিকুমার চাকমা ছিলেন ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত পাহাড়ী ছাত্র সমিতির সভাপতি। ১৯৮৫ সালের ২০ এপ্রিল রাঙ্গামাটি স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রীতি গ্রুপের ২৩৩ জন শান্তিবাহিনীর সদস্য আত্মসমর্পন করেন এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অধিনায়ক মেজর জেনারেল এম. নুরুদ্দীন খানের কাছে অস্ত্র জমা দেন। ২৯ জুন বাংলাদেশ সরকার প্রীতি গ্রুপের মধ্যে আত্মসমর্পনের পর প্রীতি কুমার চাকমা বিদ্রোহ ছেড়ে ভারতে পরম সুখে সংসার করছেন। দেখুন হুমায়ুন আজাদ, পূর্বোক্ত। উদ্বৃত . মাহফুজ পারভেজ, পূর্বোক্ত পৃ. ৪৭। 
.
উল্লেখ্য ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে পিই- ২৯৯ পার্বত্য চট্টগ্রাম- আসন থেকে মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারী মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা, অনন্ত বিহারী খিসা, চারু বিকাশ চাকমা প্রমুখ বাকশালে যোগদান করেন।বাকশাল’ (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) ছিল রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের নেতৃত্বে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত দেশের একমাত্র দল; সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান বদলে ফেলেবাকশালএর মাধ্যমে দেশে একদলীয় স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল
.
অমৃত লাল চাকমা ওরফে ক্যাপ্টেন অসাধ্য (বলি ওস্তাদ) ইপি আর এর হাবিলদার ছিলেন। তিনি শান্তি বাহিনীর প্রথম অস্ত্র প্রশিক্ষক নলিনী, রনজন চাকমা ওরফে মেজর অফুরন্ত এর অধীনে শান্তি বাহিনীর সহকারী অস্ত্র প্রশিক্ষক ছিলেন
. Life is not Ours. The Report of the Chittagong Hill Tracts Commission, May 1991, P-20.
.
সালাম আজাদ, পূর্বোক্ত, পৃ.১৬-১৭
.
উষাতন তালুকদার পাহাড়ী ছাত্র সমিতির অন্যতম নেতা ছিলেন। শান্তি বাহিনীর তিনি প্রভাবশালী সদস্য এবং মেজর উষাতন তালুকদার সমীরন নামে পরিচিত। তার অপর নাম মলয়
.
রূপায়ণ দেওয়ান ওরফে মেজর রিপ হচ্ছেন মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জামাতা, শান্তিবাহিনীর প্রভাবশালী ফিল্ড কামান্ডার। তিনি পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের প্রথম সেক্রেটারী ছিলেন
.
পাহাড়ী গন পরিষদের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রসীত বিকাশ খীসা। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘জনসংহতি সমিতি ফ্যাসিস্ট কায়দায় এগুচ্ছে... .. চুক্তিতে শান্তি আসবে না’ (সাক্ষাৎকার মানব জমিন, ১৯ অক্টোবর ১৯৯৭)
.
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ২১তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে গত ২০ মে ২০০৯ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অবস্থায় জনগণের বিরুদ্ধে সরকার। সরকার, সেনাবাহিনী সন্তু লারমা চক্রের মিলিত ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের গ্রুপটি ইউপিডিএফের অংগ সংগঠন
.
হিলউইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন নেত্রী কল্পনা চাকমা ১৯৯৬ সালের ১২ জুন শান্তিবাহিনী কর্তৃক অপহৃত হন
.
তিন পার্বত্য জেলায় চাঁদাবাজি চলছেই, সমকাল রিপোর্ট, ডিসেম্বর ২০০৯ সংখ্যা, পৃ-
.
দেখুন দৈনিক সমকাল, ডিসেম্বর ২০০৯, পৃ-
.
নিরাপত্তা বিশ্লেষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক তালুকদার মনিরুজ্জামানের মতামত, দৈনিক নয়াদিগন্ত, অগাস্ট ২০০৯, পৃ-
.
দেখুন দৈনিক নয়াদিগন্ত, ২৭ অগাস্ট ২০০৯, পৃ-১৬
.
মাসুদ মজুমদার, মাসুমুর রহমান খলিলী, আলম আজাদ, সম্পাদকীয়, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ.
.
হুমায়ুন আজাদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা, পূর্বোক্ত, পৃ.২৪
.
. আমেনা মহসীন, The politics of Natinalism: The case of chittagong Hill Tracts, ইউপিএল, ঢাকা ১৯৯৭, পৃ. ৬৬
.
এস. কালাম উদ্দীন, A Tangled Web of Insurgency, ফারইস্ট ইকনমিক রিভিউ, হংকং, ২৩ মে ১৯৮০: সুবীর ভৌমিক, Insurgent Crossfire: North-East India, ল্যানসার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, ১৯৯৬, নয়াদিল্লী; উদ্বৃত . মাহফুজ পারভেজ, পূর্বোক্ত, পৃ. ৪৫-৪৬
.
তালুকদার মনিরুজ্জামান, বিদেশী সাহায্যপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদ সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ. ২৩
.
উদ্বৃত . হাসানুজ্জামান চৌধুরী . মোহাম্মদ আবদুর রব, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪
.
উদ্বুত . হাসানুজ্জামান চৌধুরী . মোহাম্মদ আবদুর রব, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪
.
. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তিবাহিনী ভারতীয় অবৈধ সংযোগ, পূর্বোক্ত, পৃ.৫৪-৫৫
.
মাসুদ মজুমদার অন্যান্য, পূর্বোক্ত, পৃ.
.
. সাঈদ-উর-রহমান, প্রসঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম : খসড়া চুক্তি প্রকাশ করা দরকার, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮১
.
আবুল আসাদ, উড়ে আসাদের জুড়ে বসতে দেয়া যায় না, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!!, পূর্বোক্ত, পৃ. ৫১
.
আমির খসরু, প্রসঙ্গ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, আহা পর্বত! আহা চট্টগ্রাম!! পূর্বোক্ত, পৃ. ১৫২
.
এম. আবদুল হাফিজ, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব, অন্য দিগন্ত, মার্চ ২০১০, পৃ. ৩০
.
মোহাম্মদ মাতিন উদ্দিন, এইচ. এম. এরশাদের মন্তব্য নিয়ে কিছু কথা, দৈনিক আমার দেশ, মার্চ ২০১০, পৃ.
.
উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, পার্বত্য শান্তি চুক্তি সমসাময়িক ঘটনা বিষয়ে গত মার্চ ২০১০ঢাকা পোষ্টএর গোলটেবিল আলোচনায় বক্তৃতা, দৈনিক সংগ্রাম, মার্চ ২০১০, পৃ.
.
উদ্বৃত গৌতম মন্ডল, অশান্তির বেড়াজালে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী, নিউজ নেটওয়ার্ক, জুলাই ২০০৫, পৃ. ৬২-৬৩
. RHS Hutchinson, An Account of Chittagong Hill Tracts
গ্রন্থটি ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয়। চাকমা জাতির পরিচয় সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিবিধ বিষয়ের উপর গ্রন্থে আলোকপাত করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম ইংরেজ ডেপুটি কমিশনার Capt. T. H. Leara বিরচিত ‘The Hill Tracts of chittagong and the Dewllers Therein গ্রন্থটি১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয়। J.Jaffa, Chakmas: Victims of Colonialism and Ethro-centric Nationalism, The Main Stress, 28 Oct. 1989; অমরেন্দ্র লাল খিসা, সিফটিং বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয ১৯৯৬; এন. আহমেদ, The Evolution of Bounderies of East Pakistan, Oriental Geographer, Vol.ii, No.4, Dhaka, 1958.
.
দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, ১৪ মে ২০১০, পৃ.
.
জয়নাল আবেদীন,পার্বত্য চট্টগ্রাম, স্বরূপ সন্ধান, ২৬ মার্চ ১৯৯৭, ঢাকা, পৃ-
.
. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৭
.
. হাসানুজ্জামান চৌধুরী, পূর্বোক্ত, পৃ. ২৭। 
.
এবনে গেলাম সামাদ, পাহাড়িরা স্বতন্ত্র জাতি নয়, অন্য দিগন্ত, মার্চ ২০১০, পৃ.৩৩
.
. মাহফুজ পারভেজ, বিদ্রোহী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, সন্দেশ, শাহবাগ, ঢাকা ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯, পৃ.২০। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম (The Management of Ethic conflicts in South Asia: The case of Chittagong Hill Tracts) বিষয়ে পিএইচ.ডি ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তাঁর গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন . আমেনা মহসীন
.
বাঘাইছড়ি উপজেলার একটি দুর্গম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম সাজেক। প্রায় ২০ হাজার জনবসতি নিয়ে ৬শবর্গমাইল এলাকা নিয়ে ভারতের মিজোরাম সংলগ্ন এলাকাটি ৩৬নং সাজেক ইউনিয়ন নামে পরিচিত। এটি একটি সাধারণ জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন গহীন পার্বত্য অঞ্চল
.
সংসদীয় কমিটির পার্বত্য রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড়, দৈনিক নয়াদিগন্ত ১১ মার্চ ২০১০ পৃ.
.
দেখুন দৈনিক ইনকিলাব এল থাঙ্গা পাঙ্খোর সাক্ষাৎকার, মার্চ, ২০১০। মি. পাঙ্খো সাক্ষাৎকারে আরো অনেক তথ্য দিয়েছেন। নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন; ৪১টি বাঙালী পরিবারের জায়গা দখল করে নিয়েছে চাকমারা, বাঙালিরা কোন ত্রাণ পাচ্ছে না
.
খাগড়াছড়িতে বাঙালীদের বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জন নাগরিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে খাগড়াছড়ি জেল হাজতে রয়েছে। দেখুন দৈনিক সংগ্রাম, ২৫ মে ২০১০, পৃ.-৪। 
.
গত মার্চ ২০১০ বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় যুব সংহতির বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ. এম. এরশাদ মন্তব্য করেন। দেখুন মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন, এইচ এম এরশাদের মন্তব্য নিয়ে কিছু কথা, আমার দেশ মার্চ ২০১০, পৃ.

[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]

পরের পর্ব: পর্ব-৩ পর্ব-৪ পর্ব-৫ পর্ব-৬ পর্ব-৭ পর্ব-৮ পর্ব-৯