কাপ্তাই বাধ নির্মান শুরু হয় ১৯৫২ সালে এবং সম্পুর্নভাবে শেষ হয় ১৯৬১ সালে। এতে প্রায় ২৫০ বর্গমাইল এলাকা পানিতে ডুবে যায়। যার মধ্যে ছিলো অনেকের নিজস্ব বাগান, ঘরবাড়ি এবং সরকারের সংরক্ষিত বন। এছাড়াও ছিলো ৫৪ হাজার একর কৃষি জমি। ক্ষতিগ্রস্থ হয় প্রায় ১ লাখ লোক। ১ লাখ লোকের মধ্যে পরিবারের সংখ্যা ছিলো ১৮ হাজার। তাদের মধ্যে ১০ হাজার পরিবার ছিলো কৃষি জমির মালিক এবং বাকি ৮ হাজার ছিলো জুম চাষি। এবার আসুন ক্ষতিপূরন কিরুপ ছিলো তা জেনে নিই।
ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসনের জন্য কাচালং সংরক্ষিত বনের এলাকা Deserved করা হয় এবং সেখানে ১০ হাজার একর কৃষি জমিতে ৩৭৩৪ পরিবারকে পূনর্বাসিত করা হয়। রামগর এবং বান্দরবান মহকুমায় ১১,৩২২ একর সরকারি জমি পাওয়া যায়। সেখানেও ক্ষতিগ্রস্থদের পূনর্বাসন করা হয়। এভাবে সরকার তিন পার্বত্য জেলায় একে একে ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরন সহ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে।
উপযুক্ত জমিতে বাসস্থান ছাড়াও সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের নিম্নহারে ক্ষতিপূরন দেনঃ —
(ক) প্রথম শ্রেনী জমি একর প্রতি ৬০০ টাকা।
(খ) দ্বিতীয় শ্রেনীর জমি একর প্রতি ৪০০ টাকা।
(গ) তৃতীয় শ্রেনীর জমি একর প্রতি ২০০ টাকা।
(ঘ) বসতবাড়ির জন্য গড়ে ৫০০ টাকা।
এছাড়াও প্রতি ফলবান, অফলবান বৃক্ষের মূল্যও পরিশোধ করা হয়। এভাবেই উপযুক্ত যায়গা সহ উপজাতীয়দের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিলো ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এবার আসুন বাস্তবতায়:
যখন কাপ্তাই বাধ নির্মান করা হয় তখন তিন পার্বত্য জেলায় মোট জনসংখ্যা ছিলো প্রায় তিন লাখ। তাহলে রাঙ্গামাটি জেলায় কতো ছিলো?? ধরে নিলাম গড়ে এক লাখ। এদিকে উপজাতীয় নেতাদের তথ্যমতে কাপ্তাই বাধ নির্মানের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এক লাখ লোক। অর্থাৎ তাদের ভাষ্য অনুযায়ী রাঙ্গামাটি জেলার এক লাখ লোক বর্তমান কাপ্তাই লেকে বসবাস করতো এবং যারা ভূমিহীন হয়েছিলো। তাহলে দাড়ায় কাপ্তাই বাধের ফলে সমগ্র রাঙ্গামাটি জেলার মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। এই ক্ষেত্রে তাদের ভাষ্যমতে রাঙ্গামাটি জেলার অন্যান্য এলাকা বিশেষ করে রাজস্থলী, কাউখালী, বাঘাইছড়ি, লংগদুর অধিকাংশ এবং অন্যান্য উপজেলার উচু ভূমি যেখানে কাপ্তাই লেকের পানি কখনো স্পর্ষ করতে পারেনা সেই সমস্ত জমি পরিত্যাক্ত ছিলো। অর্থাৎ সরকারের খাস জমি ছিলো। এটা যদি না হয় তবে কাপ্তাই বাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থের পরিমান এক লাখ ছিলো না এবং এটাই সত্য।
.
উপজাতীয় নেতাদের ও আমাদের দেশের সুশিল লেখক যারা বিদেশী প্রভুদের পা চাটতে এখনো মিথ্যাচার করেছেন, যাদের বিশ্বাস করে আমরা এখনো বসে আছি তাদের একটু চিন্তা করা উচিত। পাহাড়ে কি পরিমান মানুষ কাপ্তাই বাধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো! আর এতো এতো ক্ষতিপূরণ এবং পূনর্বাসন কাদের করা হয়েছিলো? আমি বলবো,,, সবকিছুই সঠিক হয়েছে তা কিন্তু নয়। তারপরেও কাপ্তাই বাধের ফলে প্রায় সকল ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিলো।
তাহলে অপ্রচার কেন? নিশ্চই এর পেছনে কারণ রয়েছে। সেই বিষয়ে অন্য একদিন লিখবো। তবে আজ আরেকটি তথ্য আপনাদের দিয়ে রাখি তা হলো
আমাদের পার্বত্য এলাকার নিরীহ উপজাতী তাদের সসস্ত্র নেতাদের কাছে সত্যিই আজ যেমন অসহায়, সেদিনও ছিলো অসহায়। সেদিন কাপ্তাই বাধের ফলে সাধারন যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো তারা ছিলো মূর্খ, অক্ষর জ্ঞানহীন। সুকৌশলে তাদের ক্ষতিপূরনের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদেরই হ্যাডমেন, কার্বারীরা। কেননা, ক্ষতিপূরনের টাকা নগদে সমস্ত দেওয়া হয়নি। বড় অংকের টাকা আনতে হতো চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে এবং সাধারন উপজাতীরা এই টাকা আনার ভার দিয়েছিলেন হ্যাডমেন, কার্বারীদের। সেই টাকা হাতিয়ে আজ আলিশান জীবন যাপন করছেন সেই প্রতারকরা। যার ফলে ক্ষতিপূরনে সমস্যা ও সমালোচনার সুযোগ আজ উপজাতীয়রা পাচ্ছে। তার দায় কিন্তু সরকারের নয়, দায় উপজাতীয় নেতাদের।
সুতরাং বাস্তবতা বিচার করে যদি দেখি এবং কথা বলি তবে পাহাড়ের সমস্যা অল্পতেই সমাধান হবে। পাহাড়ে কি ঘটছে এবং বাস্তবে তার সঠিক রেফারেন্স আমরা না জেনে বরবরই পার্বত্য সমস্যা ঘনিভূত করছি।
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]