পার্বত্য বাঙ্গালীর পূর্নবাসন প্রকল্পের সকল ভূমি নিরাপত্তা পাওয়ার দাবিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় সাংবাদিক ইউনিয়ন কে ইউ জে কার্যালয়ে পার্বত্য বাঙ্গালী পূর্ণবাসন প্রকল্পের নেতারা সোমবার এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মোঃ হযরত আলী, মোঃ ইউনুছ আলী লিডার, হোসেন আলী, সিদ্দিকুর রহমান, বশির মিয়া, রইছ উদ্দিন। সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন গ্রুপ লিডার রিট মামলার বাদী মোঃ ইউনুছর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি বান্দরবান খাগাড়ছড়ি যে সকল এলাকায় বাঙ্গালীদের পূর্ণবাসন করার কথা ছিল তা সরকার করেনি। অবিলম্বে বসবাসরত বাঙ্গালীদের পূর্ণবাসন করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। এবং তারা বলেছেন তিন পার্বত্য অঞ্চলে ৭৫ হাজার পরিবারকে বর্তমান সরকার পূর্ণবাসনের অপেক্ষে রাখায় হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তাদেরকে পূর্ণবাসান করা হয়নি।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সরকার প্রেসিডেন্ট সেটেলমেন্ট রুলস/অধ্যদেশ-GOD OF D.O.M-70-C ১৯৮০ ইং এর অধিনে বিগত ১৯৮০ইং সনে পার্বত্য বাঙ্গালী পূর্নবাসন প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন আইন ১/১৯০০ রেগুলেশন/সি.এইচ.টি এ্যক্ট এর ১৮(২) ঘ ও ৩৪ ধারা এবং বাংলাদেশ সংবিধান এর অনুচ্ছেদ নং-১.৬.৭.১১.১৯.২৭.৩১.৩৬. ও ৪২ মোতাবেক বৈধ এবং বাস্তবায়নের যোগ্য। বাংলাদেশ একটি একক স্বাধীন সর্বভোম প্রজাতন্ত্র, নাগরিকত্ব আইনের ধারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রীত, জাতীয় হিসাবে বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী নামে পরিচিত হইবে। বাংলাদেশ সংবিধান প্রজাতন্ত্রে সর্বচ্ছ আইনে এবং অন্যকোন আইন যদি এ সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনে যতখানি অসামঞ্জস্য পূর্ণ, তত খানি বাতিল হইবে। আঞ্চলিকতা, সম্প্রদায়ীকতা ও সুবিধা ভোগ মান্য নয় এবং এই সংবিধান সমঅধিকার মানবধীকার ও মৌলিক অধিকারের নিশ্চায়তা দিচ্ছে।
পার্বত্য বাঙ্গালী পূর্নবাসন প্রকল্প ১৯৭৯ হইতে ১৯৮৪ইং পর্যন্ত পূর্নবাসন কার্যক্রম চালু ছিল। তৎকালীন বিরাজমান প্রতিকূল অবস্থার প্রেক্ষিতে পূর্নবাসন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সরকার কর্তৃক গৃহিত পূর্নবাসন প্রকল্পে আমাদের পরিবার সংখ্যা তৎকালীন এক লক্ষ ত্রিশ হাজার, তৎমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার পরিবারকে পাঁচ একর করে জমির কবুলিয়ত সম্পাদন করা হয়। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সীমানা পরিচিহ্নিত করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় নাই। বাকী ৭৫ হাজার পরিবারকে পূর্নবাসনের অপেক্ষায় রাখা হয়। সরকারে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পূর্নবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প দুইটিতে আমাদের প্রতি পরিবারকে পাঁচ একর হারে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার একর এবং ৪০% অতিরিক্ত বরাদ্দে হারে ২লক্ষ ৬০হাজার একর। প্রকল্পটি জাতীয় জন গুরুত্বপূর্ন বিধায় পরিস্থির আলোকে অনেক লিডারের নামে প্রায় ৪০ হাজার একর জমি অতিরিক্ত বরাদ্দ দেন। মোট ভূমির পরিমান দাঁড়ায় ৯লক্ষ ৫০হাজার একর।
এদিকে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট ১০/০৩/১৩ইং তারিখে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল এবং তৎকালীন মূল্যে আগমন ভাতা ২ হাজার ৫শত টাকা। এক জোড়া হালের গরু, দুই বান ঢেউটিন, ঘর বাধার জন্য ১হাজার ৫০০ টাকা প্রতি মাসে ৩০০ টাকা ও সাপ্তহে খাগড়াছড়ি জেলায় ২৬হাজার ২২০ পরিবার, রাঙ্গামাটি জেলায় ১৪ হাজার ০৮৪ পরিববারকে ২১ কেজি খাদ্য শস্য/রেশন দেয়া হচ্ছে। অন্যান্য গুলি নীতিমালায় থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না/হয় নাই। কিছু পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে হর্টিকালচার লোনের মাধ্যমে বাগ-বাগিচা করার ব্যবস্থা করলে ও বাকীরা নিজ নিজ উদ্যেগে বাগ-বাগিচা সৃজন করে।
কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল/এমনকি পার্বত্য এলাকায় গৃহযুদ্ধে আংশকাবোধ করে সরকার নিরাপত্তার অজুহাতে আমাদের গুচ্ছগ্রামে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য করে। এ পর্যপ্ত রেশন কার্ড ও কর্মসংস্থানে অভাবে অনেক পরিবার স্থান ত্যাগ করে নিরাপদ আশ্রয় নেয়। যাহা মৌলিক অধিকার লংঘন। অরক্ষিত হয়ে পড়ে আমাদের পূর্নবাসন জোনগুলি, অরক্ষিত আবাসন ভূমি উপজাতীরা জুম চাষের নামে টংঘর নির্মান করে বেদখলের চেষ্টায় লিপ্ত। সুবিধা ভোগী কিছু পাহাড়ী আমাদের ফেলে আসা ভূমিতে ভাবনা কেন্দ্র ও বাগান সৃজন করিতেছেন। কিছু বাঙ্গালী বিভিন্ন অজুহাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়া তাদের জায়গার উপর বাড়ি খামার বনায়ন করেছে। এমনকি বন্দবস্ত মামলা ও সৃজন, ও উন্নয়ন বোর্ড কৃর্তক রাবার বাগন সৃজন করেছে। বাবুছড়া পূর্নবাসন জোনে ৫০নং বাঘাইছড়ি মৌজায় ৪হাজার ৩১৮ একর জমি বরাদ্দ আছে। সেখানে প্রায় ১০০ একর জমিতে উপজাতী এক ব্যক্তি বনায়ন সৃজন করছে। একই মৌজায় ভাবনা কেন্দ্র নির্মানে কাজ চলছে এবং এ অজুহাতে ব্যাপক হারে ভূমি দখলের পায়তারা চলছে। এসব জায়গায় আমাদের বসতভিটা ছিল। মানিকছড়ি পূর্নবাসন জোনে ২১০নং জুগ্যছলা মৌজায় ৩ হাজর ২৬২ একর ভূমি বরাদ্দ আছে। তার একাংশে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে প্রায় ১৫-১৬ একর জমিতে এ পি এম. এ আবু তাহের এর প্রজেক্ট সাপমারা ২১০ নং জুগ্যছলা মৌজা, থানা- মানিকছড়ি, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। মানিকছড়ি পূর্ণবাসন জোনের, মানিকছড়ি মৌজায় ১৫ হাজার ৬৮৩ একর জমি বরাদ্দ আছে, এ জমি আওয়তাভূক্ত। মহালছড়ি পূর্নবাসন জোনের আওতায় সম্প্রসারণ এরিয়া ভূয়াছড়ি ২৬৪ নং মৌজায় হেডম্যান কৃত্তিময় চাকমা নিজ ক্ষমতা বলে পূর্নবাসিত পরিবারদের জায়গা জমি বিক্রয় ও বেদখলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ী বাঙ্গালীর মধ্যে সম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টায় লিপ্ত। দাতকূপিয়া ও ইটছড়ি মৌজায় পূর্নবাসিত অধিকাংশ পরিবার কবুলিয়ত পাই নাই বলে অভিযোগ তুলেন এলাকবাসীরা।
এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব স্মারক নং-৮২৭/রাজস্ব তাং-২৭-৬-৯০ইং এক পত্রমূলে উল্লেখ রয়েছে। অপর দিকে গুচ্ছ গ্রামে অবস্থানরত অবস্থায় যে সকল পরিবারের খাস জায়গা জমি দখলে রয়েছে, উপজেলা ভূমি ও জরিপ সম্মন্ন কমিটির মাধ্যমে ঐ সমস্ত দখলীয় ভূমির বন্দেবস্তি দেওয়ার কথা থাকলে ও এ পর্যন্ত বন্দোবস্তি দেওয়া হয়নি। খাগড়াছড়ি জেলার ২৬,২২০ রেশন কার্ডের ১২ এপ্রিল ২০০৪ হইতে প্রতিটি রেশন কার্ড ধারিরা প্রতি মাসে পঞ্চাশ টাকা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ঐ টাকার অংক প্রায় বিশ কোটি টাকা। গুচ্ছগ্রামে যথেষ্ট গজামিল/অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। প্রথম পর্যায়ে রেশন কার্ডের তালিকা এবং বর্তমান রেশন কার্ডের তালিকায় ৩০% হইতে ৪০% বেমিল পাওয়া যাবে। রিট পিটিশন মামলা নং-৬৩২৯/২০০১ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প রিটমামলা নং-১৪২৬/২০০৭ শুনানীর অপেক্ষায় আছে। পূর্ণবাসন আইনের ২২ দারা বিধান মতে গ্রুপ লিডারগণ নিজ নিজ গ্রুপের তালিকা সংগ্রহ করবে। ভবিষ্যৎতে যাতে গুচ্ছ গ্রামের মত অনিয়ম ও দূনীতি না হইতে পারে, কারণ বর্তমানে জমির চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধি।
পূর্ণবাসন প্রকল্পের খাগড়াছড়ি জেলার সেকেন্ড ব্যাচ যথাক্রমে ১নং পানছড়ি জোন পরিবার সংখ্যা ৩ হাজার, মৌজা নং-২৪৪,২৪৫, ২৪৬ মোট জমি ৩১হাজার ৪৪০ একর, ২নং বাবুছড়া জোন পরিবার সংখ্যা ৩ হাজার, মৌজা নং-৩৩,৩২,৩৪,৪৯,৫০,৫১ মোট জমি ২৯ হাজার ৪৫৫ একর, ৩নং বড় মেরুং জোন পরিবার সংখ্যা ২,১০০+২৫০ = ২ হাজার ৩৫০, মৌজা নং-৩১,৩০, মোট জমি ১৯ হাজার ৭৩২ একর, ৪নং ছোট মেরুং জোন পরিবার সংখ্যা ২হাজার ১০০, মৌজা নং-২৯,২৬২, মোট জমি ১৯হাজার ৬১৬, ৫নং মহালছড়ি জোন পরিবার সংখ্যা ৩ হাজার, মৌজা নং-২৫২,২২৩, ২২৬,২১৫,২১৬,২১২,২২৮ মোট জমি ২৬ হাজার ৬২৮, ৬নং গৌরাঙ্গা পাড়া জোন পরিবার সংখ্যা ১৩০০, মৌজা নং-১৯১,১৮৪ মোট জমি ১১ হাজার ৬৭৪, ৭নং আলুটিলা জোন পরিবার সংখ্যা ৩ হাজার, মৌজা নং-২০৪,১৯৪,১৯০,১৭৯,১৮৬,১৮৫,১৮৯,১৮৮,১৮০ মোট জমি ২৯ হাজার ৭৪১ একর, ৮নং অব্বাহ জোন পরিবার সংখ্যা ২হাজার ২০০, মৌজা নং-২০৩,২০১,২০৭,২৯৮ মোট জমি ১৯ হাজার ১৩৫ একর, ৯নং নাভাঙ্গা জোন পরিবার সংখ্যা ১৮০০, মৌজা নং-২৩৭,২১৪,২৩৪, মোট জমি ১৬ হাজার ৪৫৮ একর, ১০নং মানিকছড়ি জোন পরিবার সংখ্যা ২৬০০, মৌজা নং-২০৮,২২১,২২২,২১০,২২০,২২৪ মোট জমি ২২হাজার ৫৪৪, ১১নং লক্ষীছড়ি জোন পরিবার সংখ্যা ১৫০০, মৌজা নং-৮৯, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৮ মোট জমির ১৩,১৬৫।
তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সরকারের আমলে পুনর্বাসিত বাঙালী পরিবারের ভূমিগুলো নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় আনতে এবং বেদখল হওয়া থেকে উদ্ধার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পুনর্বাসিত বাঙালীদের একটি সংগঠন। ভূমি পুনর্বাসন প্রকল্পের গ্রুপলিডার ও রিটকারী নামক সংগঠনটির পক্ষ থেকে সোমবার বেলা ১১টার দিকে খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের হলরুমেঅনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের গ্রুপ লিডার ও রীট মামলার বাদী মো: ইনুসুর রহমান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ১৯৮০সাল থেকে বিভিন্ন সরকারের আমলে তাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত করা হলেও পরিবার প্রতি ৫ একর ভূমি দেয়ার ও রেশন প্রদানের প্রতিশ্রুত পূরণ করা হয়নি। আর যে ক’টি পরিবার ভূমি পেয়েছিল তাদেরকে উচ্ছেদ করে এসব ভূমিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড রাবার বাগান প্রকল্প সৃজন করেছে এবং অনেক ভূমি প্রভাবশালী মহলরা বেদখল করে ফেলেছে।
তিনি আরো বলেন, পুনর্বাসিত পরিবার গুলো তাদের নিজেদের ভূমি বুঝে না পাওয়ায় এবং সরকার কর্তৃক ভূমি চিহ্নিত করে না দেয়ায় বাঙালী অনেক পরিবারকে গুচ্ছগ্রামে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। যার ফলে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর অনেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন এবং অনেকে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। অবিলম্বে রিটের নিষ্পত্তি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসিত পরিবারগুলোর প্রতি সদয় হতে লিখিত বক্তব্যে আহবান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের লিডার মো: ইউনুস আলী, মো: বশির মিয়া, হযরত আলী, মো: সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: পার্বত্য নিউজ.কম