বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭

জেএসএস সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির নতুন কৌশল, চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নীরিহ পাহাড়ীদের থেকে লক্ষ টাকা আদায়।

রুপম দেওয়ান। জেএসএস সন্ত্রাসীদের নতুন একটি চক্র সাধারন পাহাড়ীদের থেকে টাকা আত্বসাধের জন্য নতুন কৌশল অবল্মবন শুরু করছে।চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ি তরুনদের কাছ থেকে জেএসএস এর সহ প্রচার সম্পাদক সুমন চাকমা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। “লাইফ ওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড”মাল্টি মিডিয়া মার্কেটিং বা এমএলএম ব্যবসার নামে রাজধানী উত্তরা ও গাজীপুরে গড়ে তুলেছে ট্রেডিং সেন্টার। চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষিত তরুনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হটিয়ে নেওয়ার অভিযোগ বহুদিন ধরে কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই তথাকথিত “লাইফ ওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড”এর টার্গেট গ্রামের শিক্ষিত তরুনদের। একবার তাদের ফাঁদে পা দিলে বের হওয়া কষ্টকর বলে জানান অনেক ভুক্তভোগী। প্রতারনার কৌশল হিসেবে “লাইফ অয়ে” সরকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্টানের নাম ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার তরুনদের কোটি কোটি হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে হটিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। প্রত্যেক জেলায় জেলায় নিয়োগ করা হয়েছে এজেন্ট। এসব এজেন্টের টার্গেট কিভাবে গ্রামের শিক্ষিত তরুনদের চাকরির লোভ দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে এসে এই কোম্পানিতে ভর্তি করে দেওয়া যায়। কিন্তু এসব এজেন্টরা এই কাজগুলো করতে নানা কৌশল অবলম্বন করে যাচ্ছে। কেউ কেউ সঠিক পরিচয় দিতে চায়না। যুবকদের বিভিন্ন কৌশলে ফাঁদে পা ফেলে লাখপতি হওয়ার প্রয়াস চালাচ্ছে তারা। কিভাবে তাদের ফাঁদে পা পড়েছে এ নিয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি থেকে কিছু পাহাড়ী ভুক্তভোগী জানান, প্রথমে তাদের চাকরি লোভ দেখায় যে ঢাকায় একটা বড় কোম্পানিতে চাকরির নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কোন অভিজ্ঞতা ছাড়ায়।শুধু অফিসে বিভিন্ন ফাইল চেক করা হল তাদের দায়িত্ব। প্রতিদিন ৪-৫ ঘন্টা ডিউটি আর মাসশেষে প্রথম মাসে তাদের বেতন সর্বনিম্ন ১০-১৫ হাজার দেওয়া হবে। এরপর আস্তে আস্তে তাদের বেতন প্রতিমাসে বাড়তে থাকবে।কিন্তু তার জন্য ঘুষ হিসেবে প্রতিজনের কাছ থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা নিবে বলেও জানান এসব এজেন্টরা ।

শুধু তাই নয় এসব এজেন্টরা ভুক্তভোগীদের কোম্পানিতে যোগ দেওয়ার আগে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটি হাফ-সরকারী হিসেবে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত বলেও তারা জানিয়েছে। যা তাদের কোম্পানিতে যোগ দিলে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা তরুনরা ভোগ করবে ইত্যাদি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে শিক্ষিত বেকার যুবকদের এই কোম্পানিতে ভর্তি করিয়ে হটিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। রাঙামাটি থেকে অনেক ভুক্তভোগী জানান , সুমন চাকমা নামে এক পাহাড়ী যুবক বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গ্রামের শিক্ষিত যুবকদের চাকরি প্রলোপন দেখিয়ে ঢাকায় এই “লাইফ ওয়ে বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেড”কোম্পানিতে নানা কৌশলে ভর্তি করাচ্ছে। তিনি প্রায় ২বছর যাবত এই কোম্পানিতে সহকারী এজেন্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তার বেতন মাসে ৫০ হাজার টাকা । ঢাকায় উত্তরা এক বিলাসবহুল ফ্লাটে তিনি থাকেন। গত ২ বছরে প্রায় ৭০০ অধিক পাহাড়ী যুবককে রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থেকে চাকরি লোভ দেখিয়ে হটিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। বিনিময়ে সে পাচ্ছে কোম্পানি থেকে লাখ লাখ টাকা এবং সব ধরণের সুযোগ সুবিধাসহ অফিসের পদমর্যাদা। একবার তার ফাঁদে পা ফেলাতে পারলে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে এই অবৈ্ধ কোম্পানিতে। অনেক শিক্ষিত যুবক তার ফাঁদে পড়ে প্রতারণার স্বীকার হয়ে আসছে।

এই “সুমন চাকমা” পাহাড়ী শত শত যুবকদের ঢাকায় নিয়ে এসে বিভিন্ন বিলাসবহুল ফ্লাটে রাখতেন । তারপর কোম্পানি নিয়ম অনুযায়ী ভর্তিকৃত যুকদের অফিসে কিছুদিনের জন্য ট্রেনিং দেওয়া হত। ট্রেনিং এ বিভিন্ন অবৈ্ধ মার্কেটিং সম্পর্কে বুজিয়ে দেওয়া হত। কিভাবে জীবনকে রিস্কি হিসেবে নিয়ে এসব কাজ করতে হয় ইত্যাদি সম্বন্ধে আলোকপাত করা হত। অনেক শিক্ষিত পাহাড়ী যুবক এইসব অবৈধ মার্কেটিং কাজগুলো করতে ইচ্ছুক না হওয়ায় এক মাস শেষে না হতে হতে বাড়িতে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ এক সপ্তাহ ভালো মতন ঠিকে থাকতে পারেনি। অফিস থেকে “সুপন চাকমা” বিভিন্ন হুমকি সহিত এসব ভর্তিকৃত পাহাড়ী যুবকদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, “সুপন চাকমা” যে চাকরি দেওয়া নাম নিয়ে তাদের কোম্পানিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে কিন্তু সেই কাজগুলো বুজিয়ে না পেয়ে অবৈধ মার্কেটিং কাজগুলো এখানে এসে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে, যা তাদের কাছে বোধগম্য মনে হয়নি।

এদিকে গতকাল ৩১জুলাই ২০১৭ সোমবার উত্তরা লাইফ অয়ে অফিসে তল্লাসী চালিয়েছে পুলিশ ও র্যাব। অফিসে কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তাদের ধরে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে গেছে। আর অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তা সুমন চাকমাসহ তাদের মুহর্তের মধ্যে ধরতে সক্ষম হয়নি। অনেকে পালিয়েছে। পুলিশ র্যাব খুঁজছে তাদের। এছাড়া রাঙামাটি থেকে অনেক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন,কোন রকম কোম্পানিতে ভর্তি করিয়ে দিতে পারলে পাল্টে যায় সিনিয়র মার্কেটিং অফিস্যারদের কথাবার্তার ধরণ। ঠিক তেমনি কোন রকম ভর্তি করিয়ে দিয়ে এই সুমন চাকমা পাহাড়ি যুবকদের বর্তমানে সেখান থেকে হুমকি দামকি দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। কিছু ভুক্তভোগী পাহাড়ি তরুণ জানান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি সংঘঠনগুলোকে সুমন চাকমার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে খুব শিগ্রি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এই পাহাড়ি সংঘঠনগুলো। সুমন চাকমা এ যাবত ৭০০ অধিক পাহাড়ি তরুণদের তাদের কোম্পানিতে চাকরির লোভ দেখিয়ে ভর্তি করিয়ে দিয়ে হটিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। বর্তমানে তিনি সিনিয়র পদে কর্মরত রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে মিন্টু চাকমা। রুপম দেওয়ান