“কোন দেশে রাষ্ট্র তার সংখ্যালঘুদের প্রতি কি রকম পক্ষপাতহীন আচরন করে এবং তাদের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন করে, সেটা তার ন্যায়পরায়নতার একটা আসিড (Acid) মাত্র” (ফরিদ আলম, স্বাধীন ভারতে কেমন আছে মুসলিমরা, সদালাপ ব্লগ, ২৮ জানুয়ারী ২০১৩ )। শুধু তাই নয় আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কেবল আভ্যন্তরীন বিষয়ই নয় বরং একটি আন্তর্জাতিক বিষয়। এই বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের জানার চেষ্টা কেমন আছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা।
শুরুতে দেখে নেই ধর্মভিত্তিক বাংলাদেশের জনসংখ্যার চিত্র।সর্বশেষ জাতীয় সেনসাস ২০১১ অনুসারে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর সংখ্যা হচ্ছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০%, এর মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠী রয়েছে ৯.0% (চিত্র-১)।
এই প্রবন্ধের গণ্ডিকে আমরা বৃহৎ সংখ্যালঘুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছি এই জন্য যে,তাদের ভাল-খারাপ ভিত্তিতে আশাকরা যাচ্ছে বাংলাদেশের সামগ্রিক সংখ্যালঘুর চিত্র পাওয়া যাবে।তবে স্বীকার করতে দোষ নেই এটি এই পর্যালোচনার একটি সীমাবদ্ধতাও।এই পর্যালোচনাকে আমরা তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করেছি; (১) আর্থ-সামাজিক ও চাকুরীতে হিন্দুদের অবস্থান (২)জনসংখ্যার প্রবণতা পর্যালোচনা এবং (৩)নিরাপত্তা। এই পর্বে আমরা কেবল ‘আর্থ-সামাজিক ও চাকুরীতে হিন্দুদের অবস্থান’ নিয়ে আলোচনা রাখছি।
শুরু করছি একটি মজার গল্প দিয়ে।স্কুলের এক শিক্ষক ও তাঁর ছাত্রের মধ্যে আলাপ চলছে।
শিক্ষকঃ এক বান্ডিল বই দেখিয়ে ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন-আচ্ছা বলতো; তোকে যদি ১০০০ টাকা এবং এই বইয়ের বান্ডিল এর মধ্যে কোন একটাকে বেঁছে নিতে বলা হয়,তাহলে তুই কোনটা নিবি?
ছাত্রঃ স্যার, আমি ১০০০ টাকাই নেব।
শিক্ষকঃ আমি হলে কিন্তু বইগুলোই নিতাম।কারণ বই হচ্ছে জ্ঞানের ভান্ডার।আর টাকা -সেতো আজ আছে কাল নাই।
ছাত্রঃ হু, ঠিক বলছেন স্যার।যার যেটার অভাব সেতো সেটাই চাইবে,তাইনা? এই বলে ভোঁ দৌড়!
আসলেই তাই, যার যেটার অভাব সে সেটাই বেশী প্রত্যাশা করে।বাংলাদেশের সংখ্যালঘুর সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে গিয়ে আমার কেবল এই গল্পের কথা মনে হয়েছে।যদিও কোন দেশেরই অন্যদেশের সংখ্যালঘুর সাথে তুলনা করে তৃপ্তি পাওয়া উচিত নয় কেননা প্রত্যেকটি মানুষ একেকজন নিজস্ব ব্যক্তি হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার অধিকার রাখেন।একইভাবে যেকোন স্বাধীন দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ সমতা,সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার রাখেন।তবে, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের অংশ আমরা-বাংলাদেশ।গত ৬০-৭০ বছরে এই উপমহাদেশে যে পরিবর্তন ঘটে গেছে সেটা মাথায় রাখলে পাশ্ববর্তী দেশের সাথে তুলনা চলে আসা অবধারিত।সে জন্য ভারতের সংখ্যালঘুদের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা থাকা অতীব জরুরী।
এক্ষেত্রে দুটি পোষ্ট আমাদের সাহায্য করতে পারে; স্বাধীন ভারতে কেমন আছে সংখ্যালঘু মুসলিমরা এবং কেমন আছে ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশের হিন্দুরা?। ভারতের সংখ্যালঘু ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশী নাগরিকদের অবস্থা পর্যালোচনা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু এবং বাংলাদেশে অবস্থান করা ভারতীয়দের অবস্থা পর্যালোচনা করলে পরে, আমার মতে চাহিদার দিক দিয়ে উপরে উল্লেখিত ছাত্র-শিক্ষকের কৌতুকের বইয়ের বান্ডিল পরবে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ভাগে আর টাকার ভাগ পরবে ভারতীয় অংশের সংখ্যালঘুদের ভাগে।কারন? যার যেটার অভাব!
বাংলাদেশের সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ করে হিন্দুদের জন্য আলাদা কোন কোটা নেই।তবে পাহাড়িদের জন্য রয়েছে ৫% কোটা। সংবিধান সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে।চাকুরীর ক্ষেত্রে মেধাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা কাগজে কলমে থাকলেও পুরোপুরি পালন করা হয়না।তবে সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে পাবলিক সার্ভিস কমিশন(পিএসসি) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়য়ের অতি গোপনীয়তার কারণে সঠিক ডাটা পাওয়া বেশ কষ্টকর।তবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একটি গবেষণায় এটা নিশ্চিত বলা যায় যে স্বাধীনতার পর থেকে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুর উপস্থিতি প্রায় সবসময় গড়ে ১০% এর বেশী ছিল (Bangladesh Public Service Commission: A Diagnostic Study, Transparency International Bangladesh March 2007, Available at http://www.ti-bangladesh.org/research/Full_BPSC_eng.pdf )।
উপরোক্ত গবেষণার আলোকে ডেইলি স্টারে একটি আর্টিকেল লিখেন টিআইবি’র গবেষক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি লিখেন;
“A total of 29,667 persons got BCS job through 20 BCS examinations. Among them, a total of 3,164 persons (10.67%) represented the minority population. The highest and lowest ever percentage of representation from minorities were observed in the 19th (16.09%) and 12th BCS (2.63%) examinations, respectively” (Point-Counterpoint, Minorities in the civil service, Md. Rezaul Karim, Daily star, July 03, 2007, http://archive.thedailystar.net/2007/07/03/d707031501144.htm)
অর্থাৎ, বিভিন্ন সরকারের সময় পারসেন্টেজ উঠা-নামা করলেও গড়ে ১০.৬৭% উপস্থিতি ছিল সংখ্যালঘুদের।নিন্মের চিত্রকে পাশে রেখে যদি আমরা সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি দেখি তাহলে বলা যায় মোটামুটি সরকারী চাকুরীর দিক দিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুরা কোনভাবেই বঞ্চিত নয় যেমনটা আমরা দেখি ভারতে। এজন্যই হয়ত বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে, চাকুরীতে সংখ্যালঘুর উপস্থিতি নিয়ে ভারতের মত হৈ চৈ নেই।এটা বাংলাদেশের একটা জাতীয় অর্জন এবং ইতিবাচক দিক।
মজার ব্যাপার হচ্ছে যেই এরশাদ সরকারের সমালোচনা বাংলাদেশে বেশী হয়েছে স্বৈরাচারীর কারণে সেই আমলে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘু চাকুরী পেয়েছে সবচেয়ে বেশী।তবে মনে রাখতে হবে এই চিত্র ২০০৬ পর্যন্ত।টিআইবি’র গবেষক মোহাম্মদ রেজাউল করিম লিখেন; “The outstanding finding is that the representation of the minority communities in the general cadre of BCS job was noticeably higher in the Ershad regime (13.22%) than that of BNP (5.05%), and Awami League (6.34%) regimes. In case of professional cadres, no remarkable difference was observed” (Point-Counterpoint, Minorities in the civil service, Md. Rezaul Karim, Daily star, July 03, 2007, http://archive.thedailystar.net/2007/07/03/d707031501144.htm). অর্থাৎ, প্রফেশনাল ক্যাডারের চাকুরীর ক্ষেত্রেও কোনরুপ পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায়নি।
এবার আমরা দেখি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা (২০০৬ সালের হিসেবে অনুসারে)
রাজ্য | মুসলিম জনসংখ্যা | চাকরির হার |
পশ্চিমবঙ্গ | ২৫.২% | ২.১% |
কেরালা | ২৪.৭% | ১০.৪% |
উত্তর প্রদেশ | ১৮.৫% | ৫.১% |
বিহার | ১৬.৫% | ৭.৬% |
আসাম | ৩০.৯% | ১১.২% |
ঝাড়খন্ড | ১৩.৮% | ৬.৭% |
কর্ণাটক | ১২.২% | ৮.৫% |
দিল্লী | ১১.৭% | ৩.২% |
মহারাষ্ট্র | ১০.৬% | ৪.৪% |
অন্ধ্রপ্রদেশ | ৯.২% | ৮.৮% |
গুজরাট | ৯.১% | ৫.৪% |
তামিলনাড়ু | ৫.৬% | ৩.২% |
টেবিল-১ঃ ভারতে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘু মুসলমানের উপস্থিতি (স্বাধীন ভারতে কেমন আছে সংখ্যালঘু মুসলিমরা)
তবে?
একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয় বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বিষয়ক আলোচনায় অনুপস্থিত। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রায় ৬৫ লক্ষ হচ্ছে দলিত বা নিন্ম বর্ণের হিন্দু ( Syed Tashfin Chowdhury, Dhaka Dalits push for anti-discrimination law. Aljazeera, 18 Jan 2014)। পরিসংখ্যানে তাঁদেরকে আলাদা করে দেখানো হয়না।অর্থাৎ, বাংলাদেশের মোট হিন্দুসংখ্যার ৫০% এরও বেশী হচ্ছেন নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু সামাজিকভাবে দলিত হিন্দুদের অবস্থা ভাল নয়।এমনকি উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের কাছ থেকে তারা এখনো প্রতি নিয়ত নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়।দলিত বা হারিজন গোত্রের কেউ মারা গেলে উচ্চ বর্নের ব্রাহ্মণ হিন্দুগন তাঁদেরকে একই চিতায় লাশ পোড়াতেও দেন না এবং এ নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে। (দেখুন; কেশবপুরে শ্মশান থেকে দলিত শ্রেণীর মৃতদেহ বিতাড়িত; দোষীদের শাস্তির দাবিতে দলিতদের বিক্ষোভ প্রদর্শন)।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে দলিত হিন্দুদের যে করুণ অবস্থা উঠে এসেছে সেটা ভাষায় বর্ণনা করার মত নয়।কিন্তু চাকুরীর ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা ভারতের দলিতদের মত হলে নিশ্চয়ই আন্দোলন হত।কিন্তু বাংলাদেশে এরকম কোন আন্দোলন চোখে পরেনা।এ থেকে ধারণা করা যায় চাকুরীতে তাদের স্ব স্ব পেশায় তারা ভাল করছেন অথবা খারাপ নেই। তথাপি আমি মনে করি সামাজিকভাবে তাদের সম্মান রক্ষার্থে বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী ও সরকার দায়িত্বমুক্ত হতে পারেন না।আমাদের সবার উচিত এই বিষয়ে নজর দেয়া।
বর্তমান চিত্রঃ
বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের সরকারের আমলে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি কত সে বিষয়ে কোন ডাটা আমার পক্ষে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি।তবে ধারণা করা হচ্ছে এই সরকারের আমলে সংখ্যালঘুর উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে একটু বেশী।এক্ষেত্রে আমরা নিচে কিছু উদাহরণ পেশ করছি। আওয়ামীলীগের আন-অফিসিয়াল অঙ্গ সংগঠন ওলামা লীগ ২০১৫ সালের অক্টোবরে কোন ধরণের রাখঢাক না রেখেই পাবলিকলি সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘু নিয়োগের একটি চিত্র পেশ করেন।
দলটি নেতাদের দাবি ৯০ভাগ জনগোষ্ঠীর মুসলমানদের দেশে চাকরির নিয়োগ আনুপাতিকহারে করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনে হিন্দুতোষণ হচ্ছে। তা বন্ধ করতে হবে। তারা দাবি করেন, ‘গত ২০১৩ সালের অক্টোবরে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগে ১৫২০ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৩৪ জন যা মোটের ২১.৯৭ শতাংশ। গত ২০১১ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে নিয়োগের ৯৩ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ করা হয়েছে ২৩ জন যা মোটের ২৪.৭৩ শতাংশ। সম্প্রতি ষষ্ঠ ব্যাচে সহকারী জজ পদে নিয়োগ দেয়া ১২৪ জনের মধ্যে ২২ জনই হিন্দু যা শতকরা হিসেবে ১৭ শতাংশ (বিতর্কিত ও সমালোচনামূলক কাজ করেই চলছে ওলাম লীগ, আমাদের সময়.কম, ১৭ অক্টোবর ২০১৫, প্রশাসনে হিন্দুতোষণ বন্ধ করতে হবে: ওলামা লীগ, RTNN, ০৮ আগস্ট,২০১৫)
এই প্রতিবেদন তৈরির সময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন ক্যাবিনেট সচিবের সাথে আলাপে জানা যায় ভিন্ন চিত্র। তিনি খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলেন ২০০৬ সালের হিসাব অনুসারে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি ছিল ১৯% এর অধিক।তিনি আরো জানান বর্তমানে সেটা প্রায় ২৯%। তাকে যখন টিআইবির গবেষনার কথা বলা হল তিনি বলেন এটা আন্ডারস্কোর করা হয়েছে।তাঁর বক্তব্য অনুসারে টিআইবির গবেষণার দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় টিআইবি তথ্যের অভাবে সবগুলো বিসিএস পরীক্ষার ডাটা ক্যালকুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেনি।নিম্নের চিত্রটি সে কথাই বলে।
টেবিল ২ থেকে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বিসিএস নিয়োগের ডাটা অনুপস্থিত।সেই হিসেবে সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের আসল হার ১০% এর বেশী হওয়া নিশ্চিত।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলিগ নেতা নুরে আলম সিদ্দিকী চ্যানেল আই টিভির তৃতীয় মাত্রা প্রোগ্রামে বলেন;
“সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব হিসেবে যে কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে তাদের ৬৭ জনের মধ্যে ৪৬ জনেই অমুসলিম । অথচ সাতটি পদও খালি ছিল না ৯১ ভাগ মুসলমানদের দেশে এভাবে অমুসলিম কর্মকতার সংখ্যাধিক্য কোন ভাবেই স্বাভাবিক বিষয় নয়।আমাদের কিছু বুদ্ধিজীবী বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গ রাজ্য করতে চায়।আমরা কি অন্যের দ্বারা শাসিত হতে দেশ স্বাধীন করেছি? (M Nurunnabi , সংখ্যালঘুর অধিকার ও প্রাপ্তিঃ ভারসাম্য রক্ষার জরুরত, মূলধারা বাংলাদেশ, ১৫ জানুয়ারী ২০১৬)
সর্বশেষ, বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে বিজেপির নেতার বক্তব্য সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, বিবিসিকে বলেন;
“দলীয়ভাবে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ যেমন, কিংবা সরকারের দিকে যদি তাকান দেখবেন সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। চাকরী বলুন কিংবা অন্যান্য জায়গাতেই বলুন, সব জায়গাতেই” ( আকবর হোসেন, ‘বাংলাদেশে হিন্দুদের মনে চিড় ধরেছে’-বিজেপি নেতা, বিবিসি বাংলা, ৩১ মে ২০১৬)
উপরোক্ত, মন্তব্যগুলোর আলোকে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি জনসংখ্যার আনুপাতিক হারের চেয়ে অনেক বেশী।সেজন্যই হয়ত বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেই বিভিন্ন বৈধ-অবৈধ উপায়ে বাংলাদেশে চাকুরী করছেন।এই সংখ্যাটা ১২ লাখের চেয়েও বেশী বলে জানিয়েছে দৈনিক ইনকিলাব। ইনকিলাব জানায়;
বৈধ বিদেশী সাড়ে ১৬ হাজার, আর অবৈধ ১২ লাখের বেশী। অবৈধ বিদেশীদের অধিকাংশই আবার ভারতীয়। বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে- ভারতের বৈদেশিক রেমিটেন্স আয়ের পঞ্চম উৎস উন্নয়নশীল এই বাংলাদেশ। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় পাঁচ লাখ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন। তারা তাদের দেশে এক বছরে ৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার সমান। বাংলাদেশ ভারতে পঞ্চম রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়।( অপরাধ ও অর্থ পাচারে বিদেশীরা, দৈনিক ইনকিলাব, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬)। তবে ইনকিলাবের এই পরিসংখ্যান আসলে ২০১৩ সালের।বর্তমানে সেই সংখ্যা বাড়বে বৈ কমার কথা নয়।
২০১৩ সালে ভারতের বিখ্যাত সিলিকন ম্যাগাজিন প্রকাশ করে যে, there are Indians who are staying in Bangladesh and there are about 500,000 Indians presently residing. People who are migrating to Bangladesh illegally are from West Bengal, Meghalaya, Assam, Tripura and Mizoram. According to the government authorities of the country, most of them come in search of job opportunities and mostly work in NGOs, garments and textile industries. These Indians remit $3,716 million to their home country and the number is expected to increase in next few years (Bangladesh is the 5th Highest Nations Sending Remittances to India, Silicon India, 21/05/2013)
বাংলাদেশে চাকুরীর ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্নের ভিত্তিতে বৈষম্য না থাকাই এর কারন।শুধু সরকারী চাকুরীতেই সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক উপস্থিতি ভাল তা নয়, বেসরকারি ক্ষেত্রেও সেটা ভাল।২০১১ সালে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের উপর প্রকাশ করা এক রিপোর্টে মন্তব্য করে; “Religious minorities were not underrepresented in the private sector” অর্থাৎ, প্রাইভেট সেক্টরেও সংখ্যালঘুর উপস্থিতি আনুপাতিক। (http://www.state.gov/documents/organization/171752.pdf , 2011)
পরিশেষে, একটা প্রশ্ন থেকেই যায়, সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর মেজরিটি (৬৫ লক্ষ) যদি দলিত বা নিন্ম শ্রেণীরই হয়, তাহলে বাকী অল্প সংখ্যক (৫৫ লক্ষ) উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সরকারী চাকুরিতে উপস্থিতি আসলে শতকরা কত?
কেমন আছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু?
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]