ভারত ঘুরে এসে : কাজের অভাব ও উপযুক্ত মজুরি না পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে অন্যান্য রাজ্যে অভিবাসী হচ্ছে শ্রমজীবী শ্রেণির অনেকে। আন্দামান, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, দিল্লিসহ দূরের ও কাছের বেশ কয়েকটি রাজ্যে কাজ নিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের শ্রমজীবী মানুষরা। পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, অন্যান্য রাজ্যে কাজ নিতে প্রতিমাসে পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে যাচ্ছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক। এসব রাজ্যে কৃষি, শিল্প ও নির্মাণ খাতে অভিবাসী শ্রমিকরা কাজ করছে। তবে তারা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়লেও বঞ্চনা তাদের পিছু ছাড়ছে না। নিজের রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র কাজে গিয়েও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন এইসব শ্রমজীবী মানুষেরা। রতন বালো, বাংলামেইল২৪ডটকম।বৃহস্পতিবার, ০৭ এপ্রিল ২০১৬
শ্রমিকদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, বিশেষ সিন্ডিকেট গ্রুপ করে তাদের কর্মস্থলে নিয়ে যাচ্ছে। বিনিময়ে তাদের যে মজুরি ধরিয়ে দিচ্ছে মালিকদের কাছ থেকে সিন্ডিকেট সদস্যরা এর চেয়ে বেশি নিচ্ছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের এ কমিশন খাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। বেকারত্বের সুযোগে এক শ্রেণির সিন্ডিকেট চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গে। ভিন প্রদেশের জায়গা চেনা ও কাজে যোগদানের কথা বলে ১৫ থেকে ২০ জনের গ্রুপ নিয়ে যাচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র। এদের থাকা-খাওয়াসহ ২শ’ থেকে ৩শ’ রুপি রোজ হিসেবে দেয়ার কথা বলে নেয়া হয়। আর সিন্ডিকেট চক্র ৫শ’ থেকে ৮শ’ রুপি রোজ হিসেবে শিল্প উদ্যোক্তাদের কাছ আদায় করছে। তবুও কাজ পাচ্ছে সেজন্য মুখ খুলছে না তারা।
গত ১৮ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ভারতের বালুরঘাট, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদা, কালিগঞ্জ, গাজোল, রায়গঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর, পশ্চিম দিনাজপুরের বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, গাজোল, মালদা, নদীয়া, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ফালাকাটা, আলিপুর, কোচবিহারসহ জেলাগুলোতে বাংলাদেশ ত্যাগী যেসব হিন্দুরা বাস করছেন তাদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমান প্রজন্মের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ছেলেরা বেকার। ৪০ ভাগ নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মক্ষম যুবক বেকার। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে যেসব সংখ্যালঘুরা ভারতে স্থায়ী আবাস গড়েছেন তাদের বিশ্বাস ছিল, ভারতে গিয়ে অন্তত খেয়ে-পরে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবেন। কিন্তু বিধিবাম। কাজ আছে শ্রম মজুরি কম। আবার অনেকে লোক লজ্জায় নিজ রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাচ্ছে। যেখানে পরিচিত কেউ দেখছে না- সে কী কাজ করছে।
কোচবিহারের কালজানি গ্রামের রাধেরশ্যাম সরকার বাংলামেইলকে বলেন, ‘কালজানি গ্রামে ২শ’ বাড়ি রয়েছে। প্রতি বাড়ি থেকে কম করে হলেও এক জন করে দিল্লিতে কনস্ট্রাকশন কাজে নিয়োজিত। ৬ মাস থেকে ১ বছরের জন্য কাজে যায়। শ্রমমূল্যে বৈষম্য থাকার পরও কালজানি একটি সমৃদ্ধশালী গ্রাম হয়েছে। লোকজন এখন খেয়ে-পরে ভালো আছে। যে বাড়িতে এক সময় টিনের ঘর ছিল না, সে বাড়িতে আজ পাকা ঘর। সব মিলে কালজানি গ্রামের মানুষের মধ্যে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এসব শ্রমিকরা যদি বেতন বৈষম্যের শিকার না হতেন তবে কালজানির গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখতে পারতেন।’
মালদা জেলার গাজোল থানার কালিতলা গ্রামের বাসিন্দা কমল রায় বাংলামেইলকে বলেন, ‘কালিতলায় আমার জন্য বা আমার বয়সের বেকার ছেলেদের কৃষিকাজ ছাড়া কোনো কাজ নেই। তাও আবার মজুরি কম। তাই কেরালায় এক বছরের জন্য কাজে যাই। ৬ মাস পর একবার বাড়ি আসি। দেখা গেছে কাজ শেষে থাকা-খাওয়া খরচ বাদে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা হাতে জমা থাকে। বাড়ি এসে মা-বাবার সঙ্গে মাস খানেক থেকে আবার পাঁচদিনের ট্রেনে চেপে কেরালায় যাই। এসময় একটু খারাপ লাগে। তবে কাজে ঢুকে গেলে আরা সমস্যা হয় না।’
কালিতলা গ্রামের কমল রায়ের মতো বেকার যুবারা কেরো ও আন্দামান গিয়ে কাজ করে। শুধু ছেলেই নয় নারী শ্রমিকও বাইরে কাজ করতে যায় বলে জানান কমল।
একই গ্রামের অপর বাসিন্দা সুদেন মন্ডল বাংলামেইলকে বলেন, ‘দিল্লিতে কাজ করে স্ত্রী ও এক ছেলেকে নিয়ে আজ আমি ভালো আছি। আরও ভালো থাকতাম যদি মজুরি বৈষম্য না থাকতো। সরাসরি কাজে যোগ দিতে পারলে সঠিক মজুরি পাওয়া যেত।’
বালুরঘাট জেলার বুনিয়াদপুর থানার কুসুমন্ডি গ্রামের সাধুচরণ সরকার বলেন, ‘২৫ বছর হয় বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রাম ছেড়ে এখানে এসেছি। এখানে কোনো কিছু করতে না পেরে অন্যের বাড়িতে জন দিয়েও (কামলা) জীবন-জীবিকার পথ স্বচ্ছল হয়নি। বর্তমানে শেষ বয়সে এসে স্ত্রী-ছেলে নিয়ে একসঙ্গে দিল্লি, কেরালা এমনকি আন্দামানের মতো দূরের প্রদেশে গিয়েও কাজ করতে হচ্ছে। তবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।’
তিনি আরো বলেন, ‘তারা আমাদের আশা-যাওয়ার খরচ দিয়ে নিয়ে যায় সুদূর প্রদেশে। সেখানে আমাদের প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা দরে বিক্রি করে দেয় সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর কাছে। আর যারা আমাদের নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের দিচ্ছে ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা রোজ হিসেবে। যাই হোক, মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়েও আমরা বর্তমানে ভালো আছি।’
এদিকে ভারতের আন্দামান প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, দিল্লিসহ আশপাশের প্রদেশগুলো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম একটি শ্রমবাজার। ফলে আন্দামান প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, দিল্লিসহ আশপাশ রাজ্যে গমনেচ্ছু পশ্চিমবঙ্গের দক্ষ শ্রমিকদের জিম্মি করে প্রকাশ্যে চলছে সীমাহীন ঘুষ বাণিজ্য। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
এসকল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে সুনাম থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় শ্রমিকদের তুলনায় তারা অবহেলিত হচ্ছেন নানাভাবে। বেশি অভিবাসন ব্যয় ও কম মজুরি প্রদানসহ নানা প্রকার বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছে উল্লিখিত এলাকাসহ সেখানকার কোম্পানিগুলো।
সিন্ডিকেটের কবল থেকে কেরালা, আন্দামান প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, দিল্লিসহ বিভিন্ন প্রদেশে শ্রমিক পাঠানো একক প্রক্রিয়ার ক্ষমতা রোধ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতেই পশ্চিমবঙ্গের শ্রমবাজার হারিয়ে যেতে পারে বলে বাংলামেইলের মুখোমুখি শঙ্কা প্রকাশ করেন বালুরঘাটের তৃণমূল নেতা ভক্ত সরকার।
দেশত্যাগী হিন্দুদের হালচাল-২ আমরা ভালো নেই, ফিরে যেতে ইচ্ছে করে প্রিয় বাংলাদেশে
বাংলামেইল২৪ডটকম , ১৯ এপ্রিল ২০১৬
বদলে গেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। গুরুজনের সম্মান নেই। প্রকাশ্যে বসে মদের হাট। যেখানে-সেখানে বসে জুয়ার আসর। মানুষ খুন, অন্যের জমি দখল, হুমকি-ধামকি আর টাউট-বাটপারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবন। বিশেষ করে ভারতের শিলিগুড়ি, জরপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ফালাকাটা, আলিপুর, কোচবিহার, রায়গঞ্জ, গাজোল, মালদা, বালুরঘাটসহ পশ্চিমবঙ্গের শহর ঘেঁষা জেলাগুলোতে এসব অত্যাচার একটু বেশি। আর এসব এলাকায় বাস বাংলাদেশ ত্যাগী হিন্দুদের।
সন্ত্রাসীদের হামলা, হুমকি-ধামকি, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ থেকে রক্ষা পেতেই তারা বাংলাদেশ ছেড়ে ভিনদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন একটু শান্তির আশায়। কিন্তু প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে এসেও শান্তিতে নেই ৯০ ভাগ দেশত্যাগী। গত ১৮ মার্চ থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত এসব এলাকা সরজমিনে ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
ভারতের রায়গঞ্জের রূপহারের ইটভাটা এলাকায় ১৬ বছর বয়সী অনিমা সরকারকে নিয়ে বিধবা রিনা রানী ১৬ বছর ধরে বসবাস করছেন। স্বামী সুভাষ সরকার, দর্জির কাজ ছিল একমাত্র পেশা। ভারতে গিয়ে ভালো থাকবেন এই আশায় ১৯৯৮ সালের শেষের দিকে দেশত্যাগ করেন তারা। বাংলাদেশের মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর ইউনিয়য়ের কৃষ্ণপুর গ্রামে ছিল সুভাষদের জন্মস্থান।
আগেই ভারতে পাড়ি জমানো শ্বশুড়ের জায়গায় ঘর তুলে মোটামুটি ভালোই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু প্রতিবাদী সুভাষ সরকারকে ভালো থাকতে দেয়নি আশপাশের লোকজন। অন্যায় কাজের জন্য মাঝে মধ্যেই প্রতিবাদ করাটাকে মেনে নেয়নি প্রতিপক্ষরা। আর তাই আজ থেকে ৩ বছর আগে রাত ৮টার দিকে কাজের কথা বলে সুভাষকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসী। এর দু’ঘণ্টা পরই খবর পাওয়া যায়, ইটভাটার কাছের একটি ডোবার মধ্যে সুভাষ পড়ে রয়েছে। এরপরই এলাকাবাসী ছুটে এসে সুভাষকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
জানা যায়, পরিকল্পতিভাবে সুভাষকে খুন করে ডোবার মধ্যে ফেলে মোটরসাইকেলে চাপা দিয়ে রাখা হয়। মোটরসাইকেলের মালিক প্রচার করতে থাকে সুভাষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিন্তু তিনি পলাতক থাকায় অনেকের সন্দেহ হয়। অবশেষে ১ বিঘা জমি ও নগদ এক লাখ টাকার বিনিময়ে ওই মোটরসাইকেল মালিকের সঙ্গে আপোষ রফা হয়। কিন্তু এ দিয়ে আর কয়দিন।
স্বামীকে হারিয়ে এখন অথৈ সাগরে ভাসছেন রিনা রানী। দু’বেলা দু’মুটো ভাত জোগানো খুব কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মনে নতুন শঙ্কা, মেয়ে এখন বিবাহযোগ্য, শত্রুদের নজর যেন না লাগে। বিবাহযোগ্য মেয়েকে নিয়ে মানসম্মানের ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে রিনা রানীকে।
অপরদিকে নব্বই দশকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন পঞ্চাশোর্ধ সাধুচরণ সরকার। তিনি বলেন, ‘মানসম্মানের ভয়ে অঢেল ধন-সম্পদ ফেলে ভারতে এসেও শেষ সম্মানটুকু ধরে রাখতে পারলাম না। দু’বেলা দু’মুটো ভাতের জন্য জন দিয়ে (কামলা খেটে) চলতে হচ্ছে। এরচেয়ে বড় অসম্মান আর কী হতে পারে? অভাবের কষাঘাতে আমাদের সংসার থেকে সুখ দূরে সরে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে আসা অনেক প্রিয়জন আমাদের সঙ্গে দেখা করেন না। ভিন্ন পথ দিয়ে চলে যান। এর চেয়ে আমাদের মরে যাওয়া অনেক ভালো।’
ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি থানার সুকান্ত পল্লীতে স্ত্রী ইতি রানী সরকার, বড় ছেলে মানিকচাঁদ সরকার ও ছোট ছেলে সুজন সরকারকে নিয়েই বাস করছেন সাধুচরণ। তাদের ঠিকানা এখন ১০ বাই ১৬ ফুটের একটি ঘর। চারজনে গাদাগাদি করে থাকেন। ওই ঘরে যাওয়া-আসার জন্য কোনো রাস্তাও নেই। অন্যের জায়গার ওপর দিয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ নিয়েও পড়শীদের গালমন্দ শুনতে হয় নিয়মিত।
বাংলাদেশের দক্ষিণ মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত কানাইলাল সরকারের ছোট ছেলে সাধুচরণ। গোলা ভরা ধান আর সব সময় গোয়ালে থাকতো দুগ্ধবতী গাভী। সবকিছু মিলে তাদের সংসার সুখেরই ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। মামলা-হামলা পর্যন্ত করা হয় তাদের বিরুদ্ধে। নানা যন্ত্রণা-গঞ্জনা সহ্য করে থাকতে হয় তাদের। পরবর্তী সেই অত্যাচারের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে নব্বই দশকের শেষ দিকে বাধ্য হয়ে তারা ভারত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, ভারতে গিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবেন।
নামমাত্র দামে পৈতৃক বাড়ি ও জমি বিক্রি করে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলা শহরঘেঁষা একটি পল্লীতে বাড়ি করেন সাধুচরণ। প্রথমদিকে ভালোই ছিলেন। কিন্তু বছর তিনেক যেতে না যেতেই স্থানীয়দের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। অবশেষে বাধ্য হয় বাড়িটি বিক্রি করে দিতে হয়। কিন্তু বাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অন্যস্থানে জায়গা-জমি কিনতে পারেননি। গচ্ছিত টাকা চলে যায় সংসারের পেছনে।
পরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুশমন্ডি থানার সুকান্ত পল্লীতে মাত্র ১৭ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। এ জায়গা কিনতেই অবশিষ্ট টাকাও শেষ হয়ে যায়। মাথা গোঁজার মত ১০ ফুট বাই ১৬ ফুট সাইজের একটি খড়ের ঘর তোলেন। এক সময়ের বিত্তশালী পরিবারটি হয়ে যায় ছিন্নমূল।
গত ২২ মার্চ বিকেল ৪টায় ছিন্নমূল এ পরিবারের সঙ্গে আলাপকালে সাধুচরণ সরকার বলেন, ‘বাংলাদেশের সোনার সংসার ফেলে এখন হয়েছি কাঙাল। ছেলে দু’টোকে ঠিকমত লেখাপড়া করাতে পারি নাই। অন্যের বাড়িতে কাজ করতে পাঠিয়েছি। আর আমরা স্বামী-স্ত্রী কেরালা, আন্দামান প্রদেশ, মধ্য প্রদেশে চলে যাই কাজের সন্ধানে। এভাবেই চলছে আমাদের সংসার।’
শুধু সাধুচরণ নয়। তার মতো যারা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের শতকরা ৯০ ভাগেরই এ অবস্থা। মূলত ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই হিন্দুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, ভারতে গিয়ে অন্তত খেয়ে পরে সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবেন। কিন্তু বিধি বাম। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর, বালুরঘাট, রায়গঞ্জ, গাজোল, মালদা, নদীয়াসহ জেলাগুলোতে দেশত্যাগী যে হিন্দুরা বাস করছেন তাদের মধ্যে এখন শুধুই হতাশা। আর তাই বর্তমান প্রজন্মের ছেলেরা নানা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
উত্তর দিনাজপুরের কুশমন্ডি থানার বুনিয়াদপুর বাসস্ট্যান্ড ঘেঁষা বুনিয়াদপুরের বাসিন্দা নব্বইঊর্ধ্ব ভাষাণ সরকার (ভাষাণ মাস্টার)। পেশার ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হামলার ভয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়ে ১৯৮৫ সালে চলে যান ভারতে। তিনি এখনও অবসর ভাতা তুলতে পারেননি। আদৌ তুলতে পারবেন কি না তাও জানেন না।
ভাষাণ সরকার বলেন, ‘মাতৃভূমির জন্য এখনও মন কাঁদে। যে দেশে আমার জন্ম হয়েছে। শিশু, শৈশব, যৌবন- বলতে গেলে জীবনের বেশির ভাগ সময় প্রিয় দেশ বাংলাদেশে কাটিয়েছি। এখনও ঘুমের ঘরে স্বপ্ন দেখি আমাদের ফেলে আসা গ্রামটিকে।’
রায়গঞ্জ শহড়ঘেঁষা রূপহারের বাসিন্দা কিরণ চন্দ্র মন্ডল জানান, উত্তরবঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ প্রকাশ্যে মদ্য পান করে। প্রকাশ্যে বসে মদের হাট। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মোড়ে বসে জুয়ার আসর। সব মিলিয়ে আমরা মানসম্মান বজায় রেখে সামনের দিনগুলো ভালোভাবে চলতে পারবো কি না এ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে আছি।
গাজোল শহরের নেতাজী সুভাষ পল্লীতে কথা হয় প্রবীণ শিক্ষক জ্ঞানরঞ্জন রায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে একজন প্রবীণ ব্যক্তির সম্মান নেই। একজন ভালো শিক্ষকের সম্মান নেই। মাতৃভূমির প্রতি যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ছিল, সেটা এখানে আর পাওয়া যাবে না। শুধু মানসম্মানের ভয়ে গত ৩০ বছর হয় বাংলাদেশের পাবনা থেকে এসেছি। পাবনায় আমাদের বেশ প্রভাব ছিল। সে প্রভাবটা এখানে এসে হারিয়েছি। সামনের দিনগুলো ভালোভাবে কাটিয়ে যেতে পারলেই শান্তি।’
গাজোলের অপর বাসিন্দা দুলাল মণ্ডল বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা অনেকেই এখানে কিছু করতে না পেরে আবার বাংলাদেশে ফিরে যাচ্ছেন। মানিকগঞ্জের খাবারপুর গ্রাম থেকে আসা ক্ষেত্র মাস্টার এখানে কিছু করতে না পেরে বর্তমানে মেয়ের বাড়িতে অবস্থান করছেন।’
গাজোলে বাড়ি করেছিলেন মানিকগঞ্জের বালিরটেক গ্রামের নিতাই চন্দ্র রায়। তিনি কোনো অবস্থান তৈরি করতে না পারায় গাজোলের বাড়ি বিক্রি করে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। তার মতো অনেকেই বিক্রি করতে চাচ্ছেন। তবে ভোটার আইডি, রেশন কার্ডসহ নানা আইনি জটিলতার কারণে ঠিকঠাকমত বাড়িও বিক্রি করতে পারছেন না।
রায়গঞ্জের রূপহার এলাকার বাসিন্দা দুলাল সরকার। অসামাজিক কার্যকলাপ থেকে ছেলেকে রক্ষা করতে পারেননি। অভাবের কারণে ডাকাতি, চুরিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে তার ছেলে। অতিসম্প্রতি রায়গঞ্জ শহরে ডাকাতি করতে গিয়ে জনতার হাতের গণপিটুনিতে সে মারা যায়।
দক্ষিণ-দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুর থানার নকশাল হাট এলাকার বাসিন্দা গৌরাঙ্গ সরকার বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি ছিল মানিকগঞ্জের কৃষ্ণপুর বারারচর গ্রামে। পাঁচটা পুকুর ছিল। সারাবছর পুকুরে মাছ খেয়েও বিক্রি করে প্রচুর আয় করা যেতো। এখানে এসে একটা পুকুরও করতে পারি নাই। মন কাঁদে জন্মভূমির জন্য।’ তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা যখন বাংলাদেশ থেকে আসি, তখন ওই দেশের ভিন্ন ধর্মের মানুষরা এদেশে আসতো। তারা সহযোগিতাও করেছে। তাদের জন্য মন এখনও কাঁদে।’
বুনিয়াদপুর এলাকার তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভক্ত সরকার বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা এখানে এসে তেমন কিছুই করতে পারেনি। শুধু খেয়ে পরে বেঁচে আছেন। এখানে দেশপ্রেম নেই কারও মনে। যার যার মত নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে সবাই।’ তবে ভারত সরকার ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সারাবছর রেশনিং ব্যবস্থা করেছে। বেকার ভাতা, অসহায়দের বাড়ি করে দেয়া, হাউস লোনসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করেছে বলে তিনি জানান।
ভারতে যাওয়া ছিটবাসীঃ বাংলাদেশেই ভালো ছিলাম
ভারতে আসা বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে তারা বলেন, ওই দেশেই আমরা ভালো ছিলাম। এখানে ভালো নেই। এখানে ভালো কিছু বন্দোবস্ত না হলে আবার বাংলাদেশের মাটিতে আগের ছিটমহলেই (বিলুপ্ত) ফিরে যেতে চাই।
ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশ থেকে আসা ছিটের বাসিন্দা সন্তরাম রায়, মায়ারানী রায়, হরি রায়, ভুপেন রায়রা তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা জানান, বাংলাদেশের ছিট থেকে ভারতে এসেছিলেন দুই বেলা দু’মুঠো খেয়ে শান্তিতে থাকবেন বলে। কিন্তু সেই স্বপ্ন সফল হয়নি। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ তারা পাচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, পর্যাপ্ত খাবার, বাসস্থান ও অন্যন্য নাগরিক সুবিধা পাচ্ছেন না তারা।কুচবিহারের হলদিবাড়ির শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া বাসিন্দারা জানান, অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে ভারতে এসেছিলাম। এখানে ভোট দেয়ার স্বপ্ন পূরণ হলেও দুর্দশা কাটেনি। পেট পুরে ভাত জুটছে না।
ছিটবাসীরা বলছেন, বাংলাদেশে তারা কিছু না কিছু করতেন। কিন্তু এখানে দিন পার করাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাদের অভিযোগ, ভারতে আসার সময় সরকার তাদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করলেও এখনও জুটছে না বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম রসদ। বয়স্কদের অনেকেই বলছেন, জীবনের শেষ বেলায় এসে বিপদে পড়লাম। কেবল খাবার-দাবারই নয়, স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত অবহেলার শিকার হতে হচ্ছে তাদের। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের ভূমিকা পালন করলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তার ভূমিকা পালন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, যা আজ আমাদের সবার কাছে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে আসা ছিটের বাসিন্দারা আজ অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে আসা অনেকেই ফিরে যেতে চাইছেন। ( আলোকিত বাংলাদেশ , ভারতে যাওয়া ছিটবাসী, মে ১১, ২০১৬)।
একই অবস্থা দেখা গেছে পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যাওয়া হিন্দুদের।
Searching for identity in India: Hindu refugees from Pakistan encounter suspicion and indifference
Facing religious persecution across the border, hundreds of Hindu migrate from Pakistan, hoping to find citizenship and acceptance – only to find their dreams shattered.
“When I lived in Pakistan, I lived as a Hindu, [but] when I migrated to India in search of safety and dignity, I have been given a cold shoulder for being a Pakistani,” lamented Amar Ram, 20, who migrated to India in April last year.
His complaint illustrates the irony of the bind in which the thousands of Hindus who leave Pakistan to escape persistent harassment find themselves. When they arrive in India, they are viewed suspiciously by many people and are treated callously by the government that has done little to help them settle in.
But Ram and others like him have one less thing to fret about. On Monday, the government announced that Bangladeshis and Pakistanis belonging to minority communities there, who had entered India legally before December 31 could stay in the country, even if their documents had lapsed. That will bring some relief to Ram and 24 other residents of Matiari district of Sindh in Pakistan, who arrived in Delhi on pilgrimage visas in April 2014. The pilgrim visas have expired, as have most of their Pakistani passports.
However, merely giving migrants the right to stay in India isn’t enough. Social and economic assistance is vital if the migrants want to give India their best shot. Said Satram, 63, “Our neighbours don’t talk to us because of my Pakistani papers. Nobody even hires me for any work.”
Religious persecution
The refugees from Pakistan mostly land up in Rajasthan as the short journey from Thar Express makes it convenient for them, but lately many of them are heading for a rural settlement called Bijwasan on the outskirts of Delhi.
For Kishan Ram, 32, the decision to migrate to India was a tough one, as he had to leave behind his newborn child because he could not get her a passport. “The authorities denied a passport to my younger child, so I had to leave her behind at my brother’s place,” he said. “My wife and my elder daughter accompanied me as soon as we got the pilgrim visa for India.”
Jamna Devi, 50, who spent almost her entire life in Pakistan, crossed the border with great expectations. “Women are also disrespected there, “ she said. “We had to face verbal jibes, sometimes they were directed at us, sometimes towards our religion and customs. We were scared, however, coming here has been no good for us until now as people don’t treat us well here either. We are being neglected both by society and the Indian government.”
Dr Ramesh Kumar Vankwani, a member of the ruling Pakistan Muslim League and also the patron of the Pakistan Hindu Council, said in Pakistan’s National Assembly last year that around 5,000 Hindus from Pakistan migrate to India every year due to religious persecution. The last census of Pakistan in 1998 recorded around 2.5 million Hindus. According to the Human Rights Commission of Pakistan data, around 1,000 Hindu families fled to India in 2013.
Shattered dreams
Since 2011, more than 900 Pakistani Hindus have been living around Delhi, most of them in Bijwasan, where they are squeezed more than 20 to a room in a former school.
It is even more difficult for younger people because their Pakistani schooling certificates are not recognised as a result of which they are not being able to work at their full capacity, forcing them to do odd jobs as street hawkers. Raja, 26, completed his schooling till the twelfth standard in Pakistan but fears for his future. “I cannot study here, nor can I find any job,” he said. “Nobody lends any help. I am educated but still I have to sell things on thestreets.”
Their custodian in Delhi is a 61-year-old former customs officer and policeman Nahar Singh, who said the cost of feeding and housing these refugees is borne by various Hindu groups such as the Vishva Hindu Parishad and the Rashtriya Swayamsevak Sangh. “I have made repeated attempts requesting the government to grant them citizenship,” he said. “But in these years I have received no confirmation from the Indian authorities”
Broken Promises
Among the campaigners for Pakistani Hindus is Singh Sodha,, who migrated to India in 1971. “There is no law in India which answers the problems faced by the Hindu migrants from Pakistan.” he said. Since India is not a signatory to the 1951 United Nations Refugee Convention that grants persecuted migrants refugee status, it refuses to recognise Pakistani Hindus as refugees, he said. For now, people have to wait for seven years before they can apply for Indian citizenship under the Indian Citizenship Act of 1955. However, there is no guarantee how long it would take to get citizenship, if at all.
The Bharatiya Janata Party had earlier claimed that they had granted Indian citizenship to 4,300 Pakistani nationals during 2014-’15. However, a response to a query filed under Right to Information by Seemant Lok Sanghthan showed that only 289 Pakistani Hindus were granted Indian citizenship in this period.
In 1978, around 55,000 Pakistani were granted Indian citizenship. In 2005, the number stood at 13,000. Over the recent years due to the cross-border tensions, the refugees have been treated with more suspicion and hostility.
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক
বাঙ্গালী গণহত্যা
সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]