সিরাজ আলি |
যেদিন লোকসভা নির্বাচনে জিতে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হলেন, তার কয়েকদিন আগেই আসামের বরপেটা জেলায় মানস অভয়ারণ্যের ধারে নঙ্কাই খাগরাবাড়ী গ্রামে বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে আক্রমণ ঘটেছিল। সিরাজ আলির স্ত্রীকে গুলি করে মারা হয়, দুবছরের মেয়েকে আগুনে ফেলে দেওয়া হয় – আর সাত বছরের বড় মেয়ের দেহ পাঁচ দিন পরে পাওয়া গিয়েছিল। আরেক বাসিন্দা রমজান আলি তাঁর পরিবারের পাঁচজনকে হারিয়েছেন। সন্দেহভাজন বোড়ো জঙ্গীদের আক্রমনে ডিসেম্বরের শেষে মারা গেছেন প্রায় সত্তর জন আদিবাসী নারী, পুরুষ আর শিশু। ওই আক্রমণের পর থেকে বাংলাভাষী মুসলমানদের আতঙ্ক আরও বেড়েছে। আসামের বাংলাভাষী মুসলমানেরা সেই ১৯৫০ সাল থেকেই বারে বারে আক্রমনের মুখে পড়েছেন। সেই ভয়াবহ চরুয়া খেদা দাঙ্গায় একটি মুসলমান গ্রামেই আটশো মানুষকে কুপিয়ে হত্যা করার ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন গবেষক ভাস্কর নন্দী। তাঁর কথায়,
“দাঙ্গার আতঙ্কে হাজার হাজার মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে পালিয়ে গিয়েছিলেন। নেহরু-লিয়াকত চুক্তি অনুযায়ী তাঁদের ভারত ফেরত নেয় ঠিকই কিন্তু সীমান্ত পেরনোর সময়ে সঠিক নথিপত্র দেওয়া হয় নি। আর ওই শরণার্থীরা ফেরত আসার আগেই ১৯৫১ সালে আসামে জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা National Register of Citizenship (NRC) তৈরী হয়ে যায়। তাই বহু বাংলাভাষী মুসলমানেরই আর সেই NRC তে নাম ওঠে নি।“ আর সেই সুবাদে নয়ের দশক থেকে বহু বাংলাভাষী মুসলমানকেই সন্দেহজনক ভোটার বা D Voter, অর্থাৎ সন্দেহজনক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়ে গেছে।
আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যাঁরা আসামে এসেছেন, তাঁদেরই বিদেশী বলে চিহ্নিত হওয়ার কথা। কিন্তু বরপেটার নারায়নগুড়ি গ্রামের এক প্রধান শিক্ষক আমজাদ আলি বলছিলেন, “বাবার ১৯৩৭ সালে আসামে ম্যাট্রিক পাশ করার সার্টিফিকেট থাকা স্বত্ত্বেও তাঁকে সন্দেহজনক ভোটার অর্থাৎ সন্দেহজনক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।“ সন্দেহজনক ভোটার বলে চিহ্নিত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ- বেশীরভাগই বাংলাভাষী মুসলমান।
এই কথিত বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী বা বিদেশীদের ভারত ছাড়া করার কথা সবসময়েই বলে এসেছে উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো। সেই দাবীকেই সামনে নিয়ে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদী বারে বারেই আসামে এসে বিদেশী চিহ্নিতকরণ আর বিতারণের হুমকি দিয়ে গেছেন। কিন্তু কে যে আসলে ভারতীয় বাংলাভাষী মুসলমান আর কে কথিত অনুপ্রবেশকারী তা জানার একমাত্র উপায় NRC যেটা হালনাগাদ করার কাজটাই গত ৬৫ বছরে করা হয় নি। রাজনৈতিক দলগুলো এ জন্য একে অপরকে দোষ দেয়। মুসলিম ছাত্র নেতা রফিকুল ইসলামের কথায়;
এনআরসি হালনাগাদ হয়ে গেলে বিদেশী ইস্যুও থাকবে না, তখন বিভিন্ন দলের রাজনীতি চলবে কী করে!
অক্টোবরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে ঘটা একটা বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা যে কথিত জঙ্গী চক্রের সন্ধান পেয়েছেন, তারসঙ্গে এই বরপেটার কয়েকজন বাঙালী মুসলমানের যোগসূত্র পাওয়া গেছে বলে দাবী তদন্তকারীদের। গ্রেপ্তারও হয়েছেন কয়েকজন, আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে সন্দেহ আর হেনস্থা।মুসলিম ছাত্র সংগঠন এ বি এম এস ইউ-র সভাপতি রফিকুল ইসলামের কথায়, আসামে বাংলাভাষী মুসলমান দেখলেই এখন জেহাদী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের আতঙ্কের আর অনিশ্চয়তা শেষের আশা তাই কেউই খুব একটা দেখতে পাচ্ছেন না, অন্তত অদূর ভবিষ্যতে।আর বিশ্লেষেকরা মনে করছেন, এই আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা আরও বেশীদিন চলতে থাকলে তার সুযোগ নিতেই পারে উগ্র ধর্মীয় চিন্তার রাজনীতি। আসামের বাংলাভাষী মুসলমানদের একটা বড় অংশেরও সেটাই ভয়। (অমিতাভ ভট্টশালী, কেমন আছেন আসামের বাংলাভাষী মুসলমানেরা?, বিবিসি বাংলা, ২৩ জানুয়ারি ২০১৫)
বরাক আর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নামোনি আসাম অঞ্চলে বাংলাভাষী মুসলমানরা জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ। নির্বাচন এলেই এই বাংলাভাষী মুসলমান, এবং তার সঙ্গে বাঙালী হিন্দুদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো বেড়ে যায়। বারে বারেই এই বিপুল বাংলাভাষী মানুষ ব্যবহৃত হতে থাকেন রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসাবে।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার যে অঞ্চলটা নামোনি অসম, সেখানে প্রায় ৫৫% মানুষ মুসলমান, আর তাঁরা মূলত বাংলাভাষী। যদিও অসমীয়া সমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে খাতায় কলতে মাতৃভাষা বদল করে অসমীয়াকে নিজেদের ভাষা বলে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন একটা সময়ে।
আগেও যখনই নামোনি অসমের গ্রাম বা ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকাগুলোতে এসেছি, তখনই দেখেছি বাংলাভাষী মুসলমান এবং বাংলাভাষী হিন্দুদেরও একটা অংশের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকে – যদি ‘ডি’ ভোটার, অর্থাৎ – ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ভোটার করে দেয় বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলে!অথবা যদি বিদেশী চিহ্নিতকরণের ট্রাইব্যুনাল জেলে পাঠিয়ে দেয়! অথবা যদি কোনও সন্ত্রাসী হামলা হয় তাদের গ্রামে!
ধুবরী কলেজের অধ্যাপক ত্রিপথ চক্রবর্তীর কথায়, ”আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের যে কাট অফ ডেট, সেটা মেনে তো কোনও দলই বিদেশী বিতারণ করে নি। কংগ্রেস মুসলমান ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখার জন্য করেছে সেটা সবসময়ে। অসম গণ পরিষদও তাই। আর এখন বি জে পি সেটার পাল্টা হিন্দু ভোট ব্যাঙ্ক কাছে টানার জন্য এক্সপ্লয়েট করছে।”
আসামের বাংলা সাহিত্যিক ইমাদুদ্দিন বুলবুল অবশ্য দৃষ্টান্ত দিয়ে মনে করাচ্ছিলেন যে শুধু বাঙালী মুসলমানদের ওপরে নয়, আসামে বারে বারে হিন্দু বাঙালীদের ওপরেও আক্রমণ হয়েছে। আতঙ্কে থাকতে হয় তাঁদেরও।ধর্মীয় বিভাজন যদি ভোট প্রচারের একটা অঙ্গ হয়ে থাকে, তাহলে আরেকটা দিক হয়ে ওঠে বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যু।লোকসভা নির্বাচনের আগে আসামে এসে নরেন্দ্র মোদী বারে বারেই এই বিষয়টার উল্লেখ করেছেন। আসামের বাংলাভাষী মুসলমান আর হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে চলা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছিলেন,
”সাধারণ অসমীয়াদের মাথায় একটা আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যে বাঙালীদের না তাড়ালে নিজভূমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন অসমীয়ারা। শুধু বাংলাভাষী মুসলমান নয়, বাংলাভাষী হিন্দুরাও একই রকমভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান আসামে।”
কংগ্রেসের সংসদ সদস্য আর দলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেবের কথায়, অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টা তো শুধু আসামের সমস্যা নয়, অন্য রাজ্যেও এই সমস্যা আছে। কিন্তু বি জে পি এটা নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে।”
হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ আরও বলছিলেন যে হিন্দু আর মুসলমান মিলে মিশে তাঁরা খুব শান্তিতেই থাকেন। করিমগঞ্জ জেলার দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গের সম্পাদক হবিবুর রহমান চৌধুরী অবশ্য বলছিলেন, যে বরাকে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, লড়াই করেছে, সেখানেও ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে ইদানীং।
তবে বি জে পি-র আসাম রাজ্য নেতৃত্বে একমাত্র মুসলমান মুখ আমিনুল ইসলাম লস্কর বলছিলেন যে তাঁরা ধর্মীয় ভেদাভেদ করেন না, তাঁদের লড়াই বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। তাঁরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন, তাহলে ভারতীয় হিন্দু – মুসলমানরা নিরাপদেই থাকবেন। (অমিতাভ ভট্টশালী, ভোটের মুখে কেমন আছেন আসামের বাঙালী মুসলমান-হিন্দুরা? বিবিসি বাংলা, কলকাতা।৩১ মার্চ ২০১৬)
বাংলাদেশী বিরোধী প্রোপাগান্ডা
বাংলাদেশী বিরোধী প্রোপাগান্ডা আসামের রাজনীতিতে একটি নিত্যদিনের ঘটনা।গোহাটী হাইকোর্টের এডভোকেট আমান ওয়াদুদ সাধারন আসামী মুসলমানদের অবস্থা বর্ণনা করে লিখেন;
Mostly Assamese Muslims of Bengal origin face this humiliation; they are suspected citizens in their own motherland. These people who venture out to urban areas are being abused as “Bangladeshis” on a daily basis. The term “Bangladeshi” has become an excuse to deny even basic rights to Muslims and to commit worst atrocities against them. Every time Muslims become victims of targeted mass violence, the murderers get away without punishment just by accusing the victims as “Bangladeshis”. অর্থাৎ, আসামী মুসলমানেরা দৈনন্দিন অপমান নির্যাতনের শিকার হন ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে।‘বাংলাদেশী’ পরিভাষা একধরনের অজুহাত হয়ে দাড়িয়েছে।প্রত্যেকবার মুসলমানেরা বড় ধরনের আক্রমণ, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হলে, অপরাধীরা তাদেরকে ‘বাংলাদেশী’ লেবেল দিয়ে পার পেয়ে যায়।(আরো দেখুনঃ AMAN WADUD, Indian Muslims are being abused as ‘Bangladeshi’ in Assam, dailyo.in, 17 August 2016)
এ দিকে ভারতের আভ্যন্তরীন রাজনীতির অংশ হিসেবে শাসক দল বিজেপি বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, খ্রিষ্টান, শিখ, বৌদ্ধ ও জৈন, পার্সি সম্প্রদায়ের যারা ভারতে গিয়েছেন,তাদের জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল পেশ করেছে। এই আইন সংশোধিত হলে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চলে আসা সংখ্যালঘুরা সাত বছর ভারতে থাকলেই নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হবে। গত লোকসভার নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি এই দেশত্যাগীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেই ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী বিল পেশ করা হয়েছে। (প্রথম আলো, অন্য দেশের সংখ্যালঘুদের নিয়ে লোকসভায় সংশোধনী বিল, জুলাই ২১, ২০১৬)
এই বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে হৈ চৈ হচ্ছে।এসবের জবাবে আসাম থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল কোন ধরেনের রাখ ডাক না রেখেই বলেন; ‘হিন্দু উদ্বাস্তু নয়, মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরাই অসমের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে’।গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত হিন্দুস্থান সমাচার মন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে এভাবে;
হিন্দু-বাঙালি উদ্বাস্তু নয়, মুসলমান অনুপ্রবেশকারীরাই অসম এবং অসমিয়াদের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে উদ্যত হয়েছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে তারা রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে ব্লুপ্রিন্ট রচনা করেছে। এই মন্তব্য আইএমডিটি বাতিল করে জাতীয় নায়কের আসনে অধিষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের। তিনি বলেন, হিন্দুরা কখনওই অনুপ্রবেশকারী নন। দেশের প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং পূর্ব-পাকিস্তান (বর্তমানের বাংলাদেশ)-এ ধর্মীয় মৌলবাদীদের অত্যাচারে নিপীড়িত হিন্দুরা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের সুরক্ষার জন্য ১৯৫০ সালে গৃহীত আইন অনুযায়ী তাঁদের এদেশে বা এই রাজ্যে থাকতে কোনও আপত্তি নেই। এ-নিয়ে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের আন্দোলন নিছক রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। বলেন, অসমে হিন্দুরা যদি অনুপ্রবেশকারী হতেন তাহলে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত আদমশুমারিতে তার উল্লেখ থাকত। আদমশুমারির এই প্রতিবেদনে হিন্দু নয়, মুসলমানদের জনসংখ্যা বেড়েছে বলে লেখা হয়েছে। তথ্য তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হিন্দুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৮০.৯ শতাংশ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১৯৭.৩৯ শতাংশ। ওখানে হিন্দু-বাঙালির উপস্থিতি অতি নগণ্য। বলেন, তাঁদের সরকার বিষয়টির ব্যাপারে সদা জাগ্রত। এক্ষেত্রে অবৈধ বাংলাদেশীদের হাতে রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা যাতে যেতে না-পারে সে-ব্যাপারে বিজেপি-র লড়াই চলছে এবং চলবেও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আরও বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ধর্মের বলি হয়ে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, খ্রিষ্টান এবং শিখ ধর্মাবলম্বীদের দায় কেবল অসমই নয়, তাঁদের ভার গোটা দেশ বহন করবে। (হিন্দুস্থান সমাচার, হিন্দু উদ্বাস্তু নয়, মুসলিম অনুপ্রবেশকারীরাই অসমের অস্তিত্ব বিপন্ন করছে : কেন্দ্রীয় মন্ত্রী,গুয়াহাটি, ২১.০৯.২০১৫)
এর আগে এই বছর এপ্রিলে নির্বাচনের আগে অনলাইন ইন্ডিয়া টুডে’র এক প্রতিবেদনে দেখা যায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বাংলাদেশী অভিবাসী ইস্যুর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন,
বর্তমানে স্থানীয় নাগরিকের সংখ্যা কমে আসামে তারা ‘আণুবীক্ষণিক সংখ্যালঘু’তে পরিণত হয়েছে। এসব মানুষ (অভিবাসী) আসামের মানুষের শত্রু। তিনি বলেন, এখনও বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে। যদি তার দল ক্ষমতায় যায় তাহলে এ ইস্যুতে টেকসই একটি সমাধান বের করবেন তারা। কারণ, এ ইস্যুটি আসামের মূল সমাজ ব্যবস্থার জন্য হুমকি।(মানবজমিন, ‘আসামে বড় হুমকি বাংলাদেশীরা’, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)
বাংলাদেশ বিরোধী প্রোপাগান্ডা ও মুসলিম নির্যাতনের কারন
আসামে বাংলা ভাষী অধিবাসীদের,বিশেষ করে মুসলমানদের ‘বাংলাদেশী’ হিসেবে নির্যাতনের যে কয়েকটি কারন রয়েছে তার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে ক্রমান্বয়ে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি। firstpost.com নামক এক্টি ভারতীয় অনলাইন পত্রিকা লিখে;
The districts of Kokrajhar, Baksa, Chirang and Udalguri (the latter three were recently created districts) are home to Bodos but also to Muslims, OBCs (other backward casts) and other groups. In fact, much of the violence is centred around the perceived rapid growth of the Muslim population in the region. While Scheduled Tribes (mainly Bodos) constitute about a third of the population in these four districts, the STs (Scheduled Tribes) have actually become a minority in the region, contributing to deep insecurities among the ethnic Bodos with regard to the Muslims.
The history is that the Bodos, Assam’s biggest tribal group, have had bitter clashes with other Adivasis and the Muslim “settlers” (called thus because parts of Assam have seen years of migration from Bangladesh right since the 1950s). The 1990s saw an active insurgency and a Bodo movement, a simultaneous sense of persecution among the non-Bodos who continued to get pushed to the fringe of politics in Kokrajhar and the region surrounding it. অর্থাৎ, আসামে উপজাতিয় গোত্রগুলোর মধ্যে বুডু উপজাতি সবচেয়ে বড়।যেই জেলাগুলোতে ঐতিহাসিকভাবে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন হয় সবচেয়ে বেশি সেসব জেলায় উপজাতিরা সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ায় একধরনের নিরাপত্তাহীনতা ও আশংকায় রয়েছে। (firstpost.com, Assam violence: 5 key facts about the Bodo-Muslim conflict, May 4, 2014)
ভৌগলিক ও জনসংখ্যার হিসেব নিকেশ নিয়ে বিজেপি সরকার ও ভারতীয় প্রশাসনের পেরেশানির অন্য আরেকটি প্রধান কারন হচ্ছে ভারতের পূর্বাঞ্চলে জনসংখ্যা বিশেষ পরিবর্তন।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য থেকে ভারতীয় মানচিত্রের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে হিন্দু ধর্মালম্বীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে।
মেঘালয়,নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম এবং অরুনাচল প্রদেশের খৃষ্টান ধর্মালম্বী ইতোমধ্যে সংখ্যাগুরুতে পরিণত হয়েছে।এসব রাজ্যের কয়েকটি স্বাধীনতার আন্দোলনও বেশ প্রবল।আসামে হিন্দু জনসংখ্যা পরিসংখ্যানে সংখ্যাগুরু হলেও বাস্তবে তারা বিভিন্ন উপজাতিতে বিভক্ত।
বাস্তবতা হচ্ছে, আসামে ৩৩ জেলার মধ্যে ৯টিতে মুসলিম সংখ্যাগুরু।আরো কয়েকটিতে দ্বিতীয় সংখ্যাগুরু।ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী আসামের দুটি জেলায়ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ।আর এসব কারনেই ক্ষণে ক্ষণে আসামের উগ্র জাতীয়তাবাদী দলগুলো আসামের মুসলমানদের বাংলাদেশী হিসেবে চিত্রিত করে, অবৈধ অভিবাসী হিসেবে প্রচারনা চালায়, নির্যাতন, জুলুম করে চলেছে।আঞ্চলিক এই রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছে এখন বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক নীতি।
উগ্র অসমীয়া জাতীয়বাদী শক্তিগুলি বলে থাকে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী আসামে ঢুকে পড়েছে। সেটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? বিবিসি’র সাংবাদিক অমিতাভ ভট্টশালী জানতে চেয়েছিলেন ধুবরীর প্রাক্তন বি জে পি বিধায়ক ধ্রুব কুমার সেনের কাছে। তিনি বলছেন,
কেমন আছেন আসামের বাংলাভাষী মুসলমানেরা?”লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে চলে আসছে, এটা একেবারেই ভুল কথা। চোখের সামনেই তো দেখি যে সীমান্ত পেরিয়ে মানুষ আসে ঠিকই, আবার ফিরেও যায় কাজ করে। খুব কম সংখ্যক মানুষই ওদেশ থেকে এসে স্থায়ী ভাবে থেকে যায়, তবে সেই সংখ্যাটা কখনই লাখ বা হাজার নয়। এগুলো সব ভোটের সময় বলা হয়, কিন্তু সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান কেউ করতে চায় না”। (অমিতাভ ভট্টশালী, ভোটের মুখে কেমন আছেন আসামের বাঙালী মুসলমান-হিন্দুরা? বিবিসি বাংলা, কলকাতা।৩১ মার্চ ২০১৬)
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক
বাঙ্গালী গণহত্যা
সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]