শনিবার, ১০ জুন, ২০১৭

নয়ন হত্যা মোটর সাইকেলের জন্য: পুলিশ

মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের জন্যই রাঙামাটির লংগদুর যুবলীগ নেতা নূরুল ইসলাম নয়নকে হত্যা করা হয় বলে গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা বলেন, “ব্যক্তিগত বিরোধ বা পূর্ব শত্রূতার জেরে নয়, মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের জন্যই নয়নকে হত্যা করা হয়।” গত ১ জুন খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল এলাকা থেকে নয়নের লাশ উদ্ধারের নয় দিন পর শনিবার দুজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় পুলিশ। তাদের মধ্যে জুনেল চাকমার (১৭) বাড়ি লংগদুর রাঙ্গিপাড়ায়; আর রুনেল চাকমা (৩২) খাগড়াছড়ির বাবুছড়ার বাসিন্দা। হত্যাকাণ্ডের সময় তাদের সঙ্গে লংগদুর রাঙ্গিপাড়ার বাবুরাজ চাকমা নামে আরও একজন ছিলেন বলে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআই কর্মকর্তারা জানান।

রাঙামাটির লংগদু সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালানোর কাজ করতেন। তার লাশ উদ্ধারের পরদিন প্রতিবাদ মিছিল থেকে লংগদু উপজেলা সদরে পাহাড়িদের কয়েকটি গ্রামে হামলা ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লংগদু উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন।

নয়ন হত্যার জন্য স্থানীয় বাঙালীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করে। পরিদর্শক সন্তোষ চাকমা জানান, জেলা পুলিশের অনুরোধে নয়ন হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে ৪ জুন কাজ শুরু করেন তারা। শুক্রবার চট্টগ্রাম থেকে প্রথমে জুনেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দীঘিনালা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে গ্রেপ্তার করা হয় রুনেলকে। দীঘিনালা থানায় নিয়ে তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার পূর্বাপর তথ্য জানতে পারেন পিবিআই কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তারদের বরাত দিয়ে পরিদর্শক সন্তোষ বলেন, গত ৩১ মে লংগদু বাজারে বাজাজ প্লাটিনাম মডেলের একটি মোটর সাইকেল পছন্দ হলে জুনেল ও বাবুরাজ সেটি ছিনতাই করার সিদ্ধান্ত নেয়।

“ওই মোটর সাইকেলটি ছিল নয়নের। লংগদু থেকে খাগড়াছড়ি সদরে যাওয়ার কথা বলে সাতশ টাকায় তারা মোটর সাইকেলটি ভাড়া নেয়। ১ জুন সকালে লংগদু বাজার থেকে রওনা হওয়ার পর দীঘিনালা বাস স্টেশন থেকে রুনেল তাদের সঙ্গে ওঠে।” সন্তোষ চাকমা বলেন, মোটরসাইকেলে নয়নসহ চারজন খাগড়াছড়ির খাগড়াপোল পর্যন্ত যায়। সেখানে একটি দোকানে তারা চা পান করে।

“খাগড়াপোলে সেতুর সংস্কার কাজ চলছিল। সেতুর কাজে ব্যবহৃত একটি লোহার রড ‘প্রয়োজন’ আছে জানিয়ে চেয়ে নেয় রুনেল। তারপর তারা ফিরতি পথে দীঘিনালার উদ্দেশে রওনা হয়।” খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়কের চার মাইল এলাকায় পৌঁছালে ‘প্রস্রাব’ করার কথা বলে মোটরসাইকেল থামায় তারা। “মোটরসাইকেল থেকে নেমে নয়নকে রড দিয়ে আঘাত করে রুনেল। এ সময় নয়ন উঠে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আরও কয়েকবার ওই রড দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়।”

নয়নকে ঘটনাস্থলে ফেলে রেখে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় হত্যাকারীরা একবার দুর্ঘটনায়ও পড়ে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা সন্তোষ। “মোটরসাইকেলটি পরে উন্দাল বাগান এলাকায় রুনেলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে তারা চলে যায়। কিন্তু বিক্রির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গত ৪ জুন মোটর সাইকেলটি তারা দীঘিনালার মাইনী নদীতে ফেলে দেয়।” রুনেল ও জুনেল গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মোটরসাইকেল কোথায় ফেলা হয়েছে সে তথ্যও জানতে পারেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সে অনুযায়ী নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদের খবর দেওয়া হলে শনিবার সকালে তারা তল্লাশি শুরু করেন এবং বিকাল সোয়া ৪টার পর স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় দড়ি বেঁধে সেটি টেনে তীরে তোলা হয় বলে দীঘিনালার থানার ওসি মো. শামসুদ্দিন জানান।
সূত্র: বিড়ি নিউজ