গত কয়েকদিন যাবৎ ফেসবুকে লক্ষ্য করলাম পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ নিয়ে আবারো একটু উতাল-পাতাল হচ্ছে সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটিতে। শুনেছি (অসমর্থিত সূতে) খাগড়াছড়ির নতুন জেলা প্রশাসক মহোদয় নাকি স্থায়ী বাসিন্দা সনদ দিচ্ছেন না লোকজনকে। হেডম্যানদের কাছ থেকে নাকি স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নিতে হবে বাঙ্গালীদের! বিষয়টা কতটুকু সত্য তাও জানি না। তবে এ বিষয়ে আমি বলতে চাই, আমরা যারা পাহাড়ী-বাঙ্গালী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের কয়েক লক্ষ মানুষ পাহাড়ে বসবাস করছি তাদেরকেতো সরকার জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েছে, আইডি কার্ড দিয়েছে। যার মাধমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম সম্পাদন করছি এমনকি আমাদের মূল্যবান ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত নির্বাচনের ক্ষমতা রাখি। আমাদের এই আইডি কার্ড কি শুধু জেলা পরিষদ নির্বাচন আর জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময় অকেজো? নাকি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের লগো দেওয়া এই এনআইডি উক্ত ২টি ক্ষেত্র অবৈধ?
পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দা সনদ কেন বাঙালীদের নিতে হবে? আমরা পাহাড়ে জন্ম গ্রহণ করেছি, পাহাড়ের আলো-বাতাস ভোগ করেছি, পাহাড় আমাদের সব। সুতরাং স্থায়ী বাসিন্দা সনদের জন্য হেডম্যান, সার্কেল চীয় কিংবা ডিসির মুখাপেক্ষী না হয়ে বরং এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তোলা দরকার। একই দেশে ২ আইন চলতে পারে না। পাহাড়ে হয়তো দেশের প্রচলিত সংবিধান চলবে নয়তো ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের আইন চলবে। একসাথে ২ টি আইন কোন ভাবেই চলতে পারে না।
জেলা প্রশাসক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে জনগনের সেবক হয়ে জনগণকে সেবা দিবেন? যাকে নির্বাচন কমিশন পাহাড়ের ঠিকানায় এনআইডি দিয়েছে সে অবশ্যই পাহাড়ের স্থায়ী বাসিন্দা। এ বিষয়টি ডিসি মহোদয়রা সরকারের কাছে তুলে ধরে স্থায়ী বাসিন্দা প্রথা বাতিল করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দিবেন বলে আমরা আশা রাখি। কারণ সংবিধান মতে আমরা বাংলাদেশী। আর যদি স্থায়ী বাসিন্দার সনদ চালু রাখতেই হয় তাহলে সমতলেও উপজাতিদের ক্ষেত্রে উপজাতি স্থায়ী বাসিন্দা সনদ চালু করতে হবে।
বাঙালি জাতি পরিচয়ের ঐতিহাসিক যুগ শুরু হয় গুপ্তযুগ (৩২০ খ্রি.- ৬৫০ খ্রি.) থেকে এবং এ যুগেই প্রথম ক্ষুদ্র রাজ্যপুঞ্জগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় বিশাল রাজ্য। যেমন গুপ্তদের সাম্রাজ্যিক ছত্রছায়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় ক্ষুদ্র রাজ্যের বদলে বৃহৎ রাজ্য যেমন পূর্ব ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গরাজ্য ও উত্তরাঞ্চলের গৌড় রাজ্য। বৃহৎ বঙ্গের প্রথম এবং ঐতিহাসিকভাবে সুনির্দিষ্ট এবং শক্তিশালী শাসক। শশাঙ্ক (খ্রিস্টপূর্ব আনু ৬০০ খ্রি.-৬২৫ খ্রি.) তাঁর দক্ষ শাসনের মাধ্যমে বাংলা ও বাঙালিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন থেকেই বাঙালি জাতিসত্ত্বার যাত্রা শুরু এবং পাল ও সেন আমলে এসে সে সত্ত্বা আরো বিকশিত হয়ে বাঙালি জাতির শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করে। সে ভিত্তির ওপরই স্থাপিত বাংলায় সুলতানি রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্রের নাম দেয়া হয় বাঙ্গালাহ বা বাংলা এবং বাংলা রাষ্ট্রের অধিবাসীরা পরিচিত হয় বাঙালিয়া বা বাঙালি নামে। সুলতানি আমলেই আবার সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য তৈরি হয় একটি সাধারণ ভাষা। নাম বাংলা ভাষা। শতকের পর শতক ব্যাপী বিকশিত হয়ে সুলতানি আমলে এসে আমরা পাই বাংলাদেশ, বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষা। এ পর্বে বাঙালি জাতি ও সংস্কৃতিতে যুক্ত হয় নতুন নৃগোষ্ঠী তুর্কি-আফগান-মধ্যএশীয় উপাদান। সরকারি পর্যায়ে বাংলা ভাষার পাশাপাশি প্রবর্তিত হয় ফার্সি ভাষা। এ উপাদান আরো সমৃদ্ধি লাভ করে মুগল আমলে (১৫৭৫-১৭১৭)। অথচ পাহাড়ে এই স্থায়ী বাসিন্দার সনদের মাধ্যমে বাঙালীদেরকে বলা হয়েছে অ-উপজাতি হিসেবে।
বাংলাদেশের ৬১ জেলাতে যদি স্থায়ী বাসিন্দার সনদ এর প্রয়োজন না হয় তাহলে তিন পার্বত্য জেলায় কেন স্থায়ী বাসিন্দার সনদের প্রয়োজন হবে? আমরা পার্বত্য অঞ্চলের বাসিন্দারা যদি বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলে বসবাস করার সুযোগ পাই, তাহলে বাংলাদেশের ৬১ জেলার বাসিন্দারা কেন পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করার সুযোগ পাবেনা? সে ক্ষেত্রে কেন স্থায়ী বাসিন্দার সনদের প্রয়োজন হবে? পাহাড়ে স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নেওয়ার শর্ত হচ্ছে তাদের নিজ নামে অথবা পিতা-মাতার নামে বন্দোবস্তী জমি থাকতে হবে। যাদের নামে বন্দোবস্তী জায়গা-জমি নেই তারা স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নিতে পারবেন না। তার মানে হচ্ছে তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও পার্বত্য অঞ্চলের নাগরিক নয়!
স্থায়ী বাসিন্দার সনদ নেওয়ার সিস্টেম আর বাঙালিদের হয়রানি শিকারঃ-
- প্রথমেঃ- হেডম্যানের রিপোর্ট (সনদ) সংগ্রহ করতে হবে,
- দ্বিতীয়তঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করতে হবে।
- তারপর উপজেলা কর্মকর্তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তদন্ত করে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট প্রতিবেদন পাঠাবেন।
- তারপর জেলা প্রশাসক মহোদয় যদি মনে করেন আপনি পার্বত্য অঞ্চলের যোগ্য নাগরিক তবেই আপনি পেতে পারেন স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র।
স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র পাওয়ার আবেদনটির নমুনা উল্লেখ করা হলোঃ-
বরাবর জেলা প্রশাসক মহোদয়,
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।
মাধ্যমঃ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,
খাগড়াছড়ি সদর।
বিষয়ঃ স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র পাওয়ার আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি ......, পিতা........মাতা.......গ্রাম.........ডাকঘরঃ খাগড়াছড়ি, উপজেলা -খাগড়াছড়ি, জেলা-খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা। আমি উক্ত ঠিকানার একজন স্থায়ী বাসিন্দা হই। মহোদয় আমার শিক্ষা জীবনে এবং বিভিন্ন কর্মজীবনের ক্ষেত্রে স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র অতি প্রয়োজন। এমতাবস্থায় আমার একটি স্থায়ী বাসিন্দা সনদপত্র অতিব জরুরী হয়ে পড়েছে।
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন যে, আমাকে যদি আপনি উপরোক্ত বিষয়াদি সু-বিবেচনা করে আমাকে একটি স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদান করেন তাহলে আমি আপনার নিকট চির কৃতজ্ঞ থাকিব।
বিনীত নিবেদক
সংযুক্ত কপিসমূহঃ
- পৌর মেয়র/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিকত্ব সনদপত্র।
- জন্ম-নিবন্ধন সনদ।
- মৌজা প্রধান কর্তৃক স্থায়ী বাসিন্দার সনদ।
- বন্দোবস্তী জমির জমাবন্দি নকল।
- হালসনের খাজনার দাখিলা।
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
এখানে উল্লেখ্য যে, সকল হেডম্যান (মৌজা প্রধান) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জাতির হওয়ায়, হেডম্যান'র সনদ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাঙালিদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
লেখক : সাইফুল ই সলাম
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]