১৭ই আগষ্ট প্রথম আলো পত্রিকা ৩য় বর্ষ পোড়ানো দিবস পালন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী সংগঠন গুলো। পার্বত্য অনলাইন এক্টিভিস্টিদের তোপের মুখে প্রথম আলো পত্রিকার দেশদ্রোহী শিরোনামে জলে উঠলো আরেকবার : পরদিন ব্যাখা দিল প্রথম আলো। গত ১৫ই আগষ্ট ২০১৫ রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারি ইউনিয়নের বড়আদম গ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে উপজাতী সন্ত্রাসীদের গোলাগোলিতে ৫ সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ই আগষ্ট দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত শিরোনামটি ছিল গত কালের “টপ অব দ্যা CHT”উল্লেখিত উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের নিহত হওয়ার ঘটনায় ১৬ই আগষ্ট ২০১৫ প্রথম আলোতে প্রথম পৃষ্ঠায় প্রধান শিরোনাম করা হয়। প্রথম আলোর শিরোনাম ছিল “সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে পাঁচ আদিবাসী নিহত” মূলত সন্ত্রাসীদের আড়াল করতে উদ্দেশ্য প্রণীত ভাবে সংবিধান বহির্ভূত আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গতকাল সকাল থেকে অনলাইনে প্রতিবাদের ঝড় তুলে পার্বত্য অনলাইন এক্টিভিটিসরা। প্রথম আলো এমন শিরোনাম কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি পার্বত্য অনলাইন এক্টিভিটিসরা। জেলার সাধারন মানুষের মুখেও ছিল এ নিয়ে নানা কানাঘোষা।
১৬ই আগষ্ট সকাল থেকেই পার্বত্য অনলাইন এক্টিভিটিসদের প্রতিবাদ স্বরূপ লেখাগুলো ছাড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রন্তে। তাদের অভিযোগ গুলোর মধ্যে ছিল প্রথম আলো প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতেই তাদের শিরোনামে বিতর্কিত আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করেছে। তাছাড়া সামরিক বাহিনীর পোশাক পরিহিত চিহ্নতরা সন্ত্রাসী হওয়ার পরেও এক সন্ত্রসীর স্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে মানুষের সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সব থেকে বেশি অভিযোগ ছিল আদিবাসী শব্দের ব্যবহার নিয়ে। বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই এবং সরকার বিভিন্ন সময়ে পরিপত্র জারি করে আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে বললেও প্রথম আলোসহ বেশ কিছু মিডিয়া সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে বিতর্কিত আদীবাসি শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। এদিকে ১৭ই আগষ্ট প্রথম আলো পত্রিকায় একই ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামে অস্বাভাবিক পরিবর্তন ও পূর্বে প্রকাশিত সংবাদের ব্যাখ্যা দেওয়াকে পার্বত্য অনলাইন যোদ্ধারা তাদের সফলতা হিসাবে দেখছে। ১৭ই আগষ্ট প্রকাশিত প্রথম আলোর শিরোনাম করেছে “রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে গোলাগোলি।স্বজনদের কাছে ৫ জনের লাশ হস্তান্তার। একই সংবাদের নিচে গত ১৬ই আগষ্ট প্রকাশিত সংবাদের আংশিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।প্রকাশিত ব্যাখ্যায় প্রথম আলো দাবি করেছে তারা গতকালের প্রতিবেদনে একাধিক বার সন্ত্রাসী শব্দটি উল্লেখ করেছে। এছাড়া আদিবাসী শব্দের ব্যবহার মানে এই নয় যে, তারা নিরীহ যুবক। আমরা গতকাল ও খোজ নিয়ে জেনেছি,নিহতরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সদস্য। উল্লেখ্য সংবিধানের পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠিকে উপজাতী, ক্ষুদ্র জাতীসত্তা, নৃগোষ্টি ও সম্প্রদায় হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে। উল্লেখ্য প্রথম আলো তার ব্যাখ্যায় সংবিধানকে উপেক্ষা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের কেন আদিবাসী বলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
এদিকে পার্বত্য অনলাইনের এক্টিভিসরা প্রথম আলোর সংবাদের এমন পরিবর্তনকে অনলাইনে তাদের প্রতিবাদের সফলতা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে তাদের বিজয় হিসাবে দেখছে। আজকে সারাদিন পার্বত্য অনলাইন এক্টিভিটিসদের অনলাইনে তাদের পোষ্টগুলো ছিলো চোখে পড়ার মত। তাজুল ইসলাম নাজিম নামে একজন লিখেছেন: এমন খুশির খবর সচারচর পাওয়া যায় না। দেশের স্বার্বভৌমত্ব রক্ষায় পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অনলাইনে দীর্ঘদিন ধরে যেসকল অনলাইন যোদ্ধারা নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে তাদের জন্য এরচেয়ে খুশির সংবাদ আর কি হতে পারে? আমরা কয়েকজন যখন প্রথম প্রথম পার্বত্য বিষয়ে লেখালেখি শুরু করি তখন অনেকেই বলেছে কি লাভ এসব লিখে? অনেক বন্ধুদের তিরস্কারও শুনতে হয়েছে! আবার অনেককে পাশে পেয়েছি ছায়ার মতো। যারা সবসময় অনুপেরণা দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে পাশে পেয়েছি দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় ব্লগারদের। যারা আমাদেরকে সঙ্গী হয়ে আগলে রেখেছিলো। আজ বলতেই পারি আমরা ব্যার্থই হইনি। আমরা সফল। এ কথাও প্রমানিত ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা কখনো ব্যার্থ হয়নি অদূর ভবিষ্যতেও হবে না।
“স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন।” তাই এবারের সফলতাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের আরও বেশী উদ্যেমী হতে হবে। প্রথম আলো সম্পর্কে আমাদের আরও বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা এবারের অপমানের প্রতিশোধ তারা নিতে চাইবেই। সবশেষে বলতে চাই দেশপ্রেমিক জনতা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি তবে ষড়যন্ত্রকারীরা কখনোই সফল হবে না। জয় আমাদের হবেই। Obaydullah Al Mahadi নামে একজন লিখেছেন: আপনাদের জোড়ালো আন্দোলনের ফলে ওরা উপজাতীয় বিচ্ছীন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের আদিবাসী বলা থেকে পিছু হটেছে ! রহমান বিপ্লব নামে একজন লিখেছেন: মাত্র দুদিন আগেই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লেখালেখির কারন বর্নণা করে পোস্ট দিতে হয়েছে! একটি বিভোর জাতির কাছে এভাবে কৈফিয়ত দেয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো, পার্বত্য যোদ্ধাদের কাছে! আর আজ মাত্র একটি ঘটনাই গোটা দেশকে ঐক্যবদ্ধ সচেতন করে দিয়েছে। পার্বত্য বিষয়ে লেখালেখি করেন এমন কয়েকজন এক্টিভিটিসদের সাথে যোগাযোগ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী। তাদের সাথে যোগাযোগ করলে জানান, প্রথম আলো সব সময়ই বাংলাদেশের সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়কে আদিবাসী বলে প্রচার করে, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। তারা আশা প্রকাশ করেন প্রথম আলো তাদের অবস্থান থেকে ফিরে আসবে এবং রাষ্ট্রের সংবিধানকে সম্মান দেখিয়ে আদিবাসী বলা থেকে বিরত থাকবে।
॥ অনন্যা জাফরান ॥ (প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব)
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]