মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

পার্বত্য এলাকায় নিখোঁজ তরুণরা গভীর জঙ্গলে

একটি ছোট্ট ঘটনা পাল্টে দেয় এক চাকমা যুবকের জীবন। ২০১৩ সালে কর্ণফুলী কলেজে ভর্তি হয়। ক’দিন পরই বন্ধুদের সঙ্গে মারামারি করে। তারপর রাজনৈতিক প্যাঁচে পড়ে মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। পুলিশ খোঁজা শুরু করে। কলেজ থেকে পালায় সে। ভয়ে বাড়ির কাউকে ঘটনাটি জানায়নি। আশ্রয় পায় একই গোত্রের এক বড় ভাইয়ের কাছে। তার পরামর্শে কলেজ ও এলাকা ছেড়ে পাড়ি জমায় পাহাড়ের দুর্গম জঙ্গলে। অস্ত্র তুলে নেয় হাতে। বিনিময়ে মাসে ১০ হাজার টাকা আয় শুরু হয় তার। তিন পার্বত্য জেলায় এ ঘটনা শুধু ওই যুবকেরই নয়। এরকম শত শত যুবক রয়েছে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে। গত কয়েক বছরে প্রায় ৯শ’ জন উপজাতি এলাকা ছাড়া হয়েছেন। পারিবারিক বিরোধ, আর্থিক দুর্বলতা, প্রেমঘটিত বিষয়সহ নানা কারণে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন ওইসব তরুণরা। এসব কারণে যারা বিধ্বস্ত তাদের ধরতে ওত পেতে থাকেন পার্বত্য অঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র গ্রুপের সদস্যরা।



দুর্গম পাহাড়ের পাশাপাশি অনেককে পাঠানো হচ্ছে দেশের বাইরে। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে। পড়াশোনার জন্য তাদের পাঠিয়ে সেখানে সংগঠনের জন্য গড়ে তোলা হয় কমিউনিটি। বছরে একবার বা দুইবার তারা দেশে আসে বিপুল অঙ্কের ফান্ড নিয়ে। সশস্ত্র দলকে চালাতে ব্যবহার হয় ওই ফান্ডের টাকা। তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম পাহাড়ে সম্প্রতি এ ধরনের তৎপরতা শুরু করেছে ৭ সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন। এগুলো হচ্ছে- আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এআরএসও), ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরাকান (এনইউএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি), পিপলস পার্টি অব আরাকান (পিপিএ), আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট (এআরআইএফ), ডেমোক্রেটিক পার্টি অব আরাকান (ডিপিএ)। সম্প্রতি এ তালিকায় নতুন করে যোগ হয়েছে ধর্মীয় উগ্রপন্থি সংগঠন ৯৬৯। এসব সংগঠনের ভাণ্ডারে রয়েছে হালকা থেকে ভারী অস্ত্রের বিশাল মজুত। এদিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী সেই চাকমা যুবক বর্তমানে রাঙ্গামাটিতে এক দুর্গম স্থানে নিজেকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। সম্প্রতি মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রথমে আমাকে ঘরছাড়া করা হয়। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে দলে ভেড়ানো হয়।  পরে দুর্গম পাহাড়ের জঙ্গলে নিয়ে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তার সঙ্গে ১৫১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। চলতি বছর ১১শ’ জনকে অস্ত্র প্রশিক্ষণের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। মূলত রণকৌশল, অস্ত্র চালনা, সমাজ-বিজ্ঞান ও শারীরিক চর্চা করানো হয় ট্রেনিংগুলোতে। তিনি বলেন, প্রথমে রাঙ্গামাটির মানিকছড়িতে তাকে নেয়া হয়। সেখানে পড়াশোনার সব সার্টিফিকেটসহ কাগজপত্র কেড়ে নেয়া হয়। ভবিষ্যতে যেনো কখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে না পারি সে পথ বন্ধ করতে এ কাজ করা হয়। এরপর তাকে পাঠানো হয় বান্দরবানের গভীর জঙ্গলে। সেখানে টানা সাড়ে চার মাস প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে সে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া, জি-থ্রি চালানো, রকেট লাঞ্চার ছোড়া, নাইন এমএম পিস্তল চালানোসহ মাইন পাতা ও তা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ কোর্স শেষ করে। এছাড়া মাও সেতুং-এর বই পড়ানো হতো নিয়মিত। তিনি জানান, মূলত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভিযানের জন্য তাদের প্রস্তুত করা হয়। তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে জুম্মল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টিকে উৎসাহ হিসেবে নিতে বলা হয়। একই গ্রুপের আরেক সদস্য মানবজমিনকে জানান, প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্রের কোনো ঘাটতি নেই। নতুন আর চকচকে অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। গভীর জঙ্গলে গিয়ে যদি কেউ প্রশিক্ষণ নিতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে বিচারের মাধ্যমে গুলি বা জবাই করে হত্যা করা হয়। লাশ ফেলে রাখা হয় জঙ্গলে। এরকম বহু উপজাতিকে জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু এগুলোর হিসাব কারও কাছে নেই। পরিবার থেকে তারা নিখোঁজ হলেও পার্বত্য জেলার থানাগুলোতে এ নিয়ে পরিবারের কোনো সদস্য জিডি বা মৌখিক অভিযোগ করেন না। এ ধরনের উদ্যোগ নিলে ওই পরিবারের ওপর নানা নিপীড়ন চালানো হয়। তাই নিখোঁজ মানেই ‘সশস্ত্র গ্রুপে’ যোগ দেয়া-বিষয়টি এমন স্বাভাবিকতা পেয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, দলীয় কাজে ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের দিয়ে অস্ত্র আনা-নেয়ার কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে প্রায় নিয়মিত এসব অতাধুনিক অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে। মানের দিক দিয়ে এসব অস্ত্র যেমন অত্যাধুনিক তেমনি দামের দিক দিয়েও ব্যয়বহুল। স্থানীয় গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, পাহাড়িদের হাত ঘুরে এসব অস্ত্র এখন পৌঁছে যাচ্ছে দেশে সক্রিয় বিভিন্ন জঙ্গিদের হাতে। ব্যবহার হচ্ছে দেশবিরোধী সন্ত্রাসী কাজে। আটক জঙ্গিরা পাহাড় থেকে অস্ত্র সংগ্রহের বিষয়টি এরইমধ্যে স্বীকার করেছে।
লেখক: কাজী সোহাগ, পার্বত্য অঞ্চল থেকে ফিরে, সূত্র: দৈনিক মানব জমিন

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]