বাংলাদেশের একদশমাংশের পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও থেমে নেই বাঙালি বিদ্বেষী ভয়াবহ সব অপতৎপরতা। পাহাড়ি এই জনপদে সেখানে বসবাসরত উপজাতিদের উপর যে কোনো ধরনের অপরাধ হলেই তার দায়ভার সরাসরি বাঙালিদের উপর চাপিয়ে দেয় একটি গোষ্ঠী। শুরু হয় ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার যত সব অপপ্রয়াস। পার্বত্য চট্টগ্রামের সচেতন জনগোষ্ঠী মনে করে, তাদের মূল লক্ষ্য পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে উপজাতি-বাঙালি সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং বাঙালিদের দায়ী করে পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি বিতাড়ন আন্দোলন গড়ে তোলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতিগত বিভেদ ভুলে সাধারণ বাঙালি এবং উপজাতিদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান থাকলেও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহলের এরূপ নানান নোঙরা রাজনীতির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের মূল লক্ষ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদেরকে উৎখাত করা। এজন্য তারা বিভিন্ন ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে। এমনকি নিজেরাই কোন একটি অপরাধ সংঘটিত করে সেটাতে নানান রঙ চড়িয়ে বাঙালিদেরকে সরাসরি দোষারোপ করছে।
অতঃপর কুচক্রী এই মহলটি তাদের পরিকল্পিত ইস্যুতে মিডিয়া, জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলের নজর কাড়ার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে মিছিল, মিটিং ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে গোষ্ঠীটি। একইসাথে তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বিশেষতঃ ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ, পেইজ বা আইডি ব্যবহার করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদেরকে উৎখাত করার লক্ষ্যে নানান মিথ্যাচার, গুজব এবং বিভ্রান্তিকর পোস্ট প্রদান করে আসছে, যা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে চরম উদ্বেগ তৈরি করছে।
যেসব অপকৌশলে চলছে বাঙালি উৎখাতের চেষ্টা:
সম্প্রতি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর এ ধরনের কিছু অপতৎপরতা জনসম্মুখে এসেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটি জেলা সদরে আপন ভগ্নিপতির ভাড়া বাসায় বোন ও ভগ্নিপতির অনুপস্থিতিতে গলা কেটে হত্যা করা হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমাকে। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে। এ হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে নানা রঙ ছড়ানোর অপচেষ্টা চালায় তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে নানা অপপ্রচার চালায়।
এমনকি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের ফেসবুকের চাকমা পেইজগুলোতেও আলোচনায় স্থান পায় ইতি চাকমা। তারা সকলেই এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি বাঙালিদের দায়ী করে পোস্ট প্রকাশ করে। তারা ইতি চাকমার হত্যাকাণ্ডের পর হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ঢাকা ও চট্টগ্রামে মিছিল, সমাবেশ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন, কালো ব্যাজ ধারণসহ নানান কর্মসূচি পালন করে। যেখানে বারবার তারা বাঙালিদেরকে দোষারোপ করে।
কিন্তু সকল রহস্যের উন্মোচন করে এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া তুষার চাকমা। আদালতে সে (তুষার চাকমা) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে যে, ৫ জন চাকমা যুবকই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
ইতি চাকমার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো তারা একই কৌশল অবলম্বন করে আরেকটি ঘটনায় বাঙালিদেরকে সরাসরি দোষারোপ করে। এবার দৃশ্যপটে বালাতি ত্রিপুরা নামের এক উপজাতি মহিলা। গত ১২ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়িতে খুন হয় বালাতি ত্রিপুরা। এবারও আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে বিভিন্ন উপজাতি সংগঠনগুলো। শুরু হয় ‘হৈ হৈ কাণ্ড রৈ রৈ ব্যাপার’। এবার তারা সমস্ত পার্বত্য বাঙালিকে দোষারোপ না করে সুনির্দিষ্ট ভাবে করিম, নুরু আর মানিক নামে তিন বাঙালিকে দোষারোপ করে। কিন্তু বিধি বাম। এবারও তাদের কূটকৌশল ধরা পড়ে যায়। ঘটনার মাত্র ছয়দিনের মাথায় বালাতি ত্রিপুরার খুনের মূল নায়ক কার্বারী সাধন ত্রিপুরা নামক এক উপজাতি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট রাঙামাটির টেক্সটাইল শো রুমের বিক্রয়কর্মী বিশাখা চাকমা কর্মস্থল থেকে বাসায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয় এবং ২০ আগস্ট রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার পরপরই নড়েচড়ে বসে উপজাতি সংগঠনগুলো। বাঙালিদের দোষারোপ করে শুরু হয় সমাবেশ-মানববন্ধন। কিন্তু পরবর্তীতে পুলিশের তদন্তে দেখা যায় যে, বিশাখার স্বামী লক্ষীরাম চাকমার উপস্থিতিতে বখাটে সঞ্জয় চাকমা, তার সহযোগী তত্তারাম ও বিনোদ চাকমা মিলে বিশাখা চাকমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
উপজাতিরা শুধু বাঙালিদেরকে দোষারোপ করেই ক্ষান্ত হয় না। সুযোগ পেলে তারা বাঙালিদেরকে হত্যা করতেও কুণ্ঠিত হয় না। এমনই একটি ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের ৬ জুন। এদিন বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ব্র্যাক এনজিওর আনন্দ স্কুলের শিক্ষিকা উ প্রু মারমাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে স্থানীয় পাহাড়ীরা বাঙালি কাঠুরিয়া মুসলিম উদ্দিনকে ধরে গণপিটুনি দিলে তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তদন্তে দেখা যায়, এ ঘটনায় জড়িত উপজাতি রশদ তঞ্চঙ্গ্যার ছেলে বিজয়
তঞ্চঙ্গ্যা।
এছাড়া বাঙালিদেরকে একঘরে করে রাখতে উপজাতি সংগঠনগুলো তাদের নিজ জাতিগোষ্ঠীকে নির্যাতন করতেও পিছপা হয় না। তার জ্বলন্ত উদাহরণ রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার আয়না চাকমা নামের এক কিশোরী। গত বছরের ২৯ মে ‘মা মোবাইল সেন্টার’ নামক এক বাঙালি ছেলের দোকানে কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে যায় আয়না চাকমা। বাঙালির দোকানে গিয়েছে শুধুমাত্র এ অপরাধে এই চাকমা কিশোরীকে সেখান থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে মারধর করে পাহাড়ের একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। শুধু এখানেই শেষ নয়। পরে এ কিশোরীকে গহীন জঙ্গলে নিয়ে যৌন নির্যাতন করে তারা এবং এ বর্বর মুহূর্তের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করে।
অনেক সময় এ ধরনের অপরাধে বাঙালিদের দায়ী করা হলেও আসল অপরাধীরা ধরা না পড়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা তার দায়ভার বাঙালিদের উপর চাপিয়ে রেখেছে। আসল অপরাধীরা ধরা পড়লে বাঙালিরা এ অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারতো। যেমনটা ঘটেছিলো ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। এদিন সবিতা চাকমার লাশ তার নিজ বাড়ির পাশের ক্ষেতে পাওয়া যায়। তার মৃত্যুর পর বিভিন্ন পাহাড়ী সংগঠনগুলো সবিতা চাকমা বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপারের গণধর্ষণে মারা গেছে বালে দাবি করে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রতিবাদ মিছিল বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পরবর্তীতে, সবিতা চাকমার লাশের ময়না তদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্টে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ঘটনার দিন সবিতা চাকমার পিরিয়ড চলছিল এবং পিরিয়ডের অতিরিক্ত পোশাকগুলো ঠিকঠাক ছিল। পাহাড়ী একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী এই ঘটনাকে নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে যে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল বলে অনুমেয়।
সূত্র মতে, ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পরাজয় ঘটে। এর পরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসীল ঘোষণা করা হয়। এ নির্বাচনে খাগড়াছড়ির তিন উপজেলায় নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করে তাদের বিজয়ের লক্ষ্যে স্থানীয় অধিবাসীদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন ছাড়াও নানা ধরনের কূট-কৌশলের আশ্রয় নিতে থাকে বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে।
কোন কৌশলই যখন কাজে আসছিলো না ঠিক তখনই নির্বাচনের চার দিন আগে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ঘাটপাড় এলাকায় উপজাতীয় নারী সবিতা চাকমাকে বাঙালি ট্রাক ড্রাইভার ও হেলপার কর্তৃক ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ এনে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি চেষ্টা চালানো হয়। বিশেষ করে সবিতা যে স্থানে নিহত হয়েছে তার বহুদুর পর্যন্ত বাঙালিদের কোনো বসতি না থাকায় অভিযোগটি কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা পায়নি। তবুও প্রতিবাদ সমাবেশ ও প্রচার মাধ্যমের সহায়তায় কিছুটা রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সক্ষম হয় তারা।
সবিতা চাকমাকে বাঙালি যুবক কর্তৃক ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ তুলে বাঙালি বিরোধী সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার যে অপচেষ্টা করা হয়েছিলো সে চেষ্টার ফসল তারা ঘরে তুললেও ধীরে ধীরে আসল সত্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, তারা এ জাতীয় অপপ্রচারের মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজেদের বিজয় নিশ্চিতই নয় বিভিন্ন দেশি-বিদেশি দাতা গোষ্ঠীর সহমর্মিতাও আদায়ের চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে সিএইচটি কমিশনকে দিয়ে এই ঘটনায় একটি বিবৃতিও দিয়েছিলো তারা।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সব বাঙালি এবং উপজাতি এদেশেরই গর্বিত নাগরিক। পার্বত্য চট্টগ্রাম তথা বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে তাদের সকলের অবদান অপরিসীম। তাই উপজাতি-বাঙালি ভেদাভেদ আর অতীতের হানাহানি ও বিবাদ ভুলে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অগ্রসর হতে হবে। তবেই পার্বত্য এলাকায় শান্তির পরিবেশ আরও সুসংহত হবে এবং সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে। অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য অঞ্চলে মুষ্টিমেয় কিছু সন্ত্রাসী কর্তৃক সৃষ্ট অশান্তি সমূলে উৎপাটন করে সবাই মিলে শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারলেই উন্নয়ন এবং উন্নত জীবনযাপন নিশ্চিত হতে বাধ্য বলে মনে করেন তারা।
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]