মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৭

পাহাড়ে ছাত্রলীগের কমিটিতে নেই উপজাতি

১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি সরকারি কলেজ। এখনো পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচে গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শুরু থেকেই এই কলেজে কার্যক্রম শুরু করে দেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বরাবরই সব জাতি ও ধর্মের অংশগ্রহণে পার্বত্য চট্টগ্রামে সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অসাম্প্রদায়িক এই ছাত্র সংগঠনটির নানা নাটকীয়তার পর পুনর্গঠিত ৭১ সদস্যের কলেজ কমিটিতে নেই একজন পাহাড়ী তরুন। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির উল্লেকযোগ্যসংখ্যক তরুণ এই সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটে সক্রিয় থাকলেও সবচে গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে বা কমিটিতে কেনো একজনও পাহাড়ী তরুণ-তরুনী নেই,সেটাই বেশ বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেকের মাঝে। যদিও রাঙামাটি ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করেছেন, আঞ্চলিক দলগুলোর প্রবল চাপ,ছাত্রলীগ করতে আসা পাহাড়ী তরুণদের মারধর এবং দিনে দিনে ‘অস্বস্তিকর’ হয়ে উঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণেই কমিটিতে পাহাড়ী তরুণরা নেই বা রাখা সম্ভব হয়নি। রাঙামাটি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন অন্তত: ৬ জন নেতার সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, বর্তমান অনুমোদিত কলেজ কমিটিই একমাত্র কমিটি যেখানে ঠাঁই মেলেনি কোন পাহাড়ী তরুণ বা তরুণীর। তারাও বর্তমান পরিস্থিতির জন্য পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর সহযোগি সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদকে দায়ি করেছেন এবং একই সাথে ছাত্রলীগ নেতৃত্বে দুর্বলতাকেও দুষছেন।


১৯৯১ সালে রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মো: শাওয়ালউদ্দিন বলেন, আমাদের সময়ে অনেক পাহাড়ী ছাত্রই ছাত্রলীগের রাজনীতি করতো,এদের কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে কেনো নেই আমি জানিনা। তবে এটা ঠিক যে,এখন যে পাহাড়ী ছেলেরা ছাত্রলীগ করতে আসে,তাদের উপর আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নানাভাবে নিপিড়ন চালায়,পিসিপি ছাড়া অন্য কোন সংগঠন করতে দেয়না। এই কারণেই হয়তো পাহাড়ী তরুণরা নেই। তবে অবশ্যই থাকা উচিত,খুঁজে বের করে যোগ্য, মেধাবী ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার পাহাড়ী তরুণদের ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে,তবেই অসাম্প্রদায়িক পার্বত্য  চট্টগ্রাম বিনির্মাণ সহজ হবে।
রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ রিয়াদ বলেন, কিছু পাহাড়ী ছেলে ছাত্রলীগ করে,কিন্তু নানা কারণেই আমরা তাদের কমিটিতে রাখিনি। কমিটিতে রাখলেই তারা পিসিপির টার্গেট হবে এবং হামলার শিকার হবে,তাই আমরা অতীত অভিজ্ঞতায় তাদের রাখিনি। বিগত কয়েকবছরে বাবলু ত্রিপুরা,সৌরভ ত্রিপুরা সহ বেশ কয়েকজন পাহাড়ী ছাত্রলীগকর্মী পিসিপির হামলার স্বীকার হয়েছেন বলে জানান তিনি। রিয়াদ দাবি করেন, পার্বত্য রাঙামাটির বেশিরভাগ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাই কলেজ থেকে উৎপত্তি হয়,তাই পিসিপি যেনো কোন সুযোগ না পায়,সেই জন্যই আমরা পাহাড়ী ছেলেদের কমিটিতে রাখিনি। তবে আমাদের কিছু পাহাড়ী কর্মী আছে।
কলেজ ছাত্রলীগ সম্পাদক রিয়াদ এই দাবি করলেও,বর্তমানে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা,সদর থানা কমিটির সাধারন সম্পাদক সুপায়ন চাকমাসহ রাজস্থলী,কাউখালিসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ছাত্রলীগের মূল পদেই দায়িত্ব পালন করছে পাহাড়ী তরুণরা। তবুও কলেজের বেলায় কেনো এই ব্যতিক্রম,সে প্রশ্নের জবাবে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক প্রকাশ চাকমা বলেন, একদিকে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রবল চাপ আর অন্যদিকে পারস্পরিক আস্থাহীনতা, এই দুয়ের কারণেই পাহাড়ী তরুণরা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে কম ছিলো,তবে আমি দায়িত্ব নেয়ার পর পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা করছি। বিভিন্ন উপজেলায় অনেক পাহাড়ী তরুণ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় আছে কিন্তু রাঙামাটি কলেজে এখনো এটা সফলভাবে করা সম্ভব হয়নি। কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের পক্ষে আন্দোলনের সময় পিসিপির রোষানলে পড়ে অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী,তার জের এখনো আছে। ওই সময় রাঙামাটি কলেজে ছাত্রলীগের মিছিলে পাহাড়ী ছেলেমেয়েদের অংশগ্রহণের উপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পিসিপি। এর জেরেই হয়তো এখন পাহাড়ী ছেলেমেয়েরা প্রকাশ্যে কেউ ছাত্রলীগ করতে আসছেনা। এটা অবশ্যই দু:খজনক। আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি উত্তরণের।

ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন এমন দুইজন আওয়ামীলীগ ও সহযোগি সংগঠনের পাহাড়ী নেতা বলেছেন, আঞ্চলিক দলগুলোর প্রভাব ও চাপ আগেও ছিলো, এখন হয়তো মাত্রাটা বেড়েছে। কিন্তু তাই বলে একজন পাহাড়ী তরুণও নেই ঐতিহ্যবাহি এই কলেজে ছাত্রলীগ করার মতো কিংবা কমিটিতে থাকার মতো এটা অবিশ্বাস্য। আমাদের দল টানা দশবছর ক্ষমতায় থাকার পরও যদি এই কথা বলি আমরা,সেটা লজ্জার। নিজেরা ক্ষমতায় থেকে যদি বলি, অন্যদের ভয়ে আমাদের দলে পাহাড়ী তরুণরা আসছে না,বিষয়টি হাস্যকরও । তবে আঞ্চলিক দলগুলোর এই ‘গুন্ডামি’র বিরুদ্ধে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানান এই দুই প্রভাবশালী ও পরিচিত নেতা।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২২ মে কাউন্সিলে সরাসরি ভোটাভুটির মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার ২৮ মাস পর ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করেছে,রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর কলেজ ছাত্রলীগের ‘সমঝোতার কমিটি’ হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন নেতাকর্মীরাও। কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নতুনরা খুশি,অন্যদিকে বাদ পড়ারা জানিয়েছেন ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া। তবে সবমিলিয়ে সমঝোতা হওয়ায় খুশি সংগঠনটির নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]