সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯

গুচ্ছগ্রামে ৮১২ বাঙালি পরিবার, নিজ ভূমিতে ফিরতে পারেনি ৩৩ বছরেও

খাগড়াছড়ির গুচ্ছগ্রামে ৮১২ বাঙালি পরিবার, নিজ ভূমিতে ফিরতে পারেনি ৩৩ বছরেও পুনর্বাসনে মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিলেও প্রশাসন। খাগড়াছড়ির দীঘিনালার ৫নং বাবুছড়া ইউনিয়নের একটি টিলায় ১৯৮১ সালে ৮১২ ভূমিহীন বাঙালি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছিল সরকার। মুন্সীগঞ্জের নদীভাঙনে ভিটে-মাটি হারানো সোনা মিয়ার নামে ওই টিলার নাম হয় সোনা মিয়ার টিলা। বসতি স্থাপনের পাঁচ বছর পর ১৯৮৬ সালে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কারণে পরিস্থিতির অবনতি হলে ওই টিলা থেকে বাঙালি পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেয় প্রশাসন। তাদের স্থান হয় বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে। তখন তাদের বলা হয়েছিল, তিন মাস পর পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার সেই টিলায় ফিরিয়ে নেয়া হবে। এরপর ৩৩ বছর কেটে গেলেও তারা সেই টিলায় ফিরতে পারেননি।

বছরের পর বছর গুচ্ছগ্রামগুলোয় এসব বাঙালি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। সোনা মিয়া টিলায় তাদের পুনর্বাসনে এক বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন এবং জেলা পরিষদকে নির্দেশনা দেয়া হয়। সেটি বাস্তবায়িত হয়নি। উল্টো রাতের আঁধারে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করে ওই টিলার জমি দখল করছে একটি চক্র।

একটি গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, বাঙালিদের জন্য বরাদ্দ সোনা মিয়ার টিলায় ২০১৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলের সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ’র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে কৌশলে বসতি স্থাপন করছে পাহাড়িরা। ২৫ নভেম্বর সোনা মিয়ার টিলায় গিয়ে দেখা যায়, টিলাজুড়ে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাতের আঁধারে ধর্মীয় স্থাপনা তৈরি করে পুরো টিলা দখল করা হচ্ছে।

সোনা মিয়ার টিলার অনেক পরিবার দীঘিনালার বাবুছড়া গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গুচ্ছগ্রামে প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ১২ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের একেকটি ঘর। ওই ঘরেই বাবা-মা, ছেলে ও ছেলের বউ, মেয়ে ও মেয়ের স্বামীসহ তিন প্রজন্মকে বসবাস করতে হচ্ছে। এখানে নেই বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাও খুবই নাজুক। অথচ সোনা মিয়া টিলায় প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৫ একর জমি। ষাটোর্ধ্ব নারী জরিনা খাতুন স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন, ৩৮ বছর আগে স্বামী আলী হোসেনের হাত ধরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে সোনা মিয়া টিলায় এসে বসতি গড়ি। সেখানে জঙ্গল পরিষ্কার করে তৈরি করেছিলাম কৃষিজমি। করেছিলাম ফলের বাগান। তখন ভেবেছিলাম দুঃখের দিন ঘুচল। কিন্তু পাঁচ বছর পরই হঠাৎ সব তছনছ হয়ে গেল। ওই টিলা ছাড়তে হল। তখন তিন সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিই এই গুচ্ছগ্রামে। ৩৩ বছর এখানেই আছি।

জরিনা জানান, ২০ বছর আগে তার স্বামী আলী হোসেন মারা যান। এখন তার তিন ছেলের বিয়ে হয়েছে। তাদের সন্তানরাও বড় হয়েছে। এক নাতি কয়েকদিন আগে বিয়ে করেছে। এখন সবাইকে নিয়ে ছোট্ট ঘরে একসঙ্গে গাদাগাদি করে বসবাস করছেন।

মুন্সিগঞ্জের বাসিন্দা আবদুস সামাদ ও নাছিমা বেগম তখন সদ্যবিবাহিত দম্পতি। ভূমিহীন এই দম্পতিও সোনা মিয়ার টিলায় আসে ১৯৮১ সালে। নাছিমা বেগম বলেন, এই টিলায় আমার মা-বাবাও বসতি স্থাপন করেছিল। ওই টিলায় থাকাকালে বাবা মারা যান। সেখানে বাবাকে সমাহিত করা হয়েছে। এখন ওই টিলায় আমরা যেতে পারি না। বাবার কবরের নাকি এখন অস্তিত্ব নেই। আমার একটাই চাওয়া- ওই টিলায় ফিরে বাবার কবরটি যেন সংরক্ষণ করতে পারি।

দীঘিনালা উপজেলা ভূমিরক্ষা কমিটির সভাপতি আবদুল মালেক যুগান্তরকে বলেন, দীর্ঘ লড়াইয়ের পর সোনা মিয়া টিলার আইনি অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। কিন্তু জমির দখল বুঝে পাইনি। ওই টিলার ৮১২ পরিবার বাবুছড়া ছাড়াও মধ্য বোয়ালখালী গুচ্ছগ্রাম, আশ্রম গুচ্ছগ্রাম, কবাখালী গুচ্ছগ্রাম, দীঘিনালা গুচ্ছগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে জমি বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। এ কারণে আমাদের উদ্বেগও কাটছে না।

জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস যুগান্তরকে বলেন, আমি কয়েক মাস আগে এখানে এসেছি। ওই চিঠির বিষয়ে জানি না। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ওই চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব

লেখক : আহমদুল হাসান আসিক, পার্বত্য অঞ্চল থেকে ফিরে

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·    পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস

[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]