রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২০

উপজাতি কুখ্যাত সন্ত্রাসীর জন্য বাজার বয়কট ও সড়ক অবরোধ কতটা সঙ্গত?



শান্তিচুক্তির বিরোধীতা করে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে প্রতিষ্ঠার লগ্ন থেকেই প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ নিজেদেরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচয় দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে একের পর এক খুন, গুম, হত্যা, লুটতরাজ, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগসহ নানান ধরনের অরাজকতা চালিয়ে আসছে প্রসীত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ। তার এই সমস্ত অরাজকতার শিকার সাধারণ পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনসাধারণ। নিজে আত্মগোপনে থেকে হাজার হাজার কর্মীকে দিয়ে পাহাড়ে অরাজকতা চালাচ্ছে প্রসীত খীসা। সম্প্রতি (১০ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার) খাগড়াছড়ির পানছড়িতে নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে পরেশ ত্রিপুরা ওরফে মহেন্দ্র ত্রিপুরা নামে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের এক সন্ত্রাসী নিহত হয়। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে নিহত সন্ত্রাসী পরেশ ত্রিপুরা ওরফে মহেন্দ্র ত্রিপুরার স্বরুপ জেনে নেয়া যাক।

১০ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টায় খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার মরাটিলা নামক গ্রামে একজন সঙ্গীসহ মোটরসাইকেলযোগে অস্ত্রপাতি নিয়ে চাঁদা তুলতে যায় পরেশ ত্রিপুরা ওরফে মহেন্দ ত্রিপুরা। মহেন্দ্র ত্রিপুরা ছিলো ঐ এলাকার চাঁদাবাজির মূল হোতা। মহেন্দ্র’র অত্যাচার, নির্যাতন আর চাঁদাবাজিতে পানছড়ি এলাকার মানুষ এতটাই অতিষ্ঠ ছিলো যে তারা ঐদিন নিরাপত্তাবাহিনীকে মহেনের চাঁদাবাজির খবর জানিয়ে দেয়।

২০১৪ সালে ভারী অস্ত্রসহ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক মাহেন ত্রিপুরা
চাঁদাবাজির খবর পেয়ে নিরাপত্তাবাহিনীর টহল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সশস্ত্র মহেন্দ্র আর তার সঙ্গী মোটরসাইকেল নিয়ে পালাবার চেষ্টা করে। মহেন্দ্র মোটরসাইকেলের পিছনে বসা ছিলো। সে তখন নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এই পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষার্থে নিরাপত্তাবাহিনীও পাল্টা গুলি করলে মহেন্দ্র গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। মহেন্দ্র’র সঙ্গী অপর চাঁদাবাজ মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। মহেন্দ্র’র কাছে একটি ইটালিয়ান পিস্তল এবং চাঁদাবাজি করে আদায়কৃত নগদ ৪৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, নিহত ইউপিডিএফ চাঁদাবাজ পরেশ ত্রিপুরা ওরফে মহেন্দ্র ত্রিপুরা ২০১৪ সালের ১৭ মে তিনটি ভারী অস্ত্রসহ নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সংবাদটি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছিলো। সে সময় তার সাথে আরো দুই চাঁদাবাজ আটক হয়েছিল। তারা হলো- মরাটিলা গ্রামের নব কুমার ত্রিপুরার ছেলে সুরেন ত্রিপুরা এবং সুরেন্দ্র হেডম্যান পাড়া এলাকার সুরেন্দ্র ত্রিপুরার ছেলে কাঠাং ত্রিপুরা।

ওই সময় তাদের কাছ থেকে একটি AK-২২ রাইফেল, একটি পয়েন্ট-২২ রাইফেল, একটি দেশীয় পিস্তল, ৪২ রাউন্ড পয়েন্ট-২২ রাইফেলের গুলি, ৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৪ রাউন্ড SLR এর গুলি, ২টি এলজি কার্টিজ উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে তাদের নামে পানছড়ি থানায় অস্ত্র আইনে মামলা হলেও পরে জামিন নিয়ে বেরিয়ে এসে তারা আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। মহেন্দ্র’র বিরুদ্ধে ইতিপূর্বেও দুইটি হত্যা মামলা, একটি অস্ত্র আইনে মামলা এবং একটি অগ্নিসংযোগের মামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে।

এহেন একজন সশস্ত্র সন্ত্রাসীকে নিজেদের কর্মী দাবি করে ইউপিডিএফ পানছড়ি থানা ইউনিটের সংগঠক রূপায়ন চাকমা ১১ জানুয়ারি (শনিবার) সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে পরেশ ত্রিপুরা ওরফে মহেন্দ্রকে ‘হত্যা’র অভিযোগ এনে ১২ জানুয়ারি (রবিবার) পানছড়ি বাজার বয়কট ও পরদিন ১৩ জানুয়ারি (সোমবার) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আধা বেলা সড়ক অবরোধের কর্মসূচি দিয়েছে। একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীর জন্য ইউপিডিএফ এর পানছড়ি বাজার বয়কট ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচীর ঘোষণা দেখে পার্বত্যবাসী বিস্ময়ে হতবাক।

তাদের প্রশ্ন- এমন একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসীর জন্য বাজার বয়কট ও সড়ক অবরোধ কতটা সঙ্গত? যারা মানুষের অধিকার ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে থাকেন জোর গলায় মহেন্দ্র ত্রিপুরার মত একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী কি করে তাদের কর্মী হতে পারে? আবার, এহেন সন্ত্রাসীর মৃত্যুতে প্রতিবাদ জানিয়ে জনদূর্ভোগ সৃষ্টিকারী বাজার বর্জন ও সড়ক অবরোধের মত কর্মসূচীর যারা ডাক দেন তারা কতটা জনঘনিষ্ঠ, জনগনের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও পার্বত্য দরদী সে বিচার পার্বত্যবাসীই করবেন। পাহাড়ের সব মানুষ আজ ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ। তাই একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজের জন্য বাজার বয়কট ও সড়ক অবরোধের মত কোন কর্মসূচি পানছড়ির জনগণ তথা পার্বত্যবাসী মেনে নিবে না। পার্বত্যবাসী চায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত পাহাড়।

লেখকঃ কৃষ্ণ রতন বড়ুয়া, খাগড়াছড়ি

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]