আজ যারা সিএইচটি কমিশনের জন্য মায়াকান্না করছেন তাদের জন্য একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি: খুব সম্ভবতঃ ২০০৮ সালের শেষের বা ২০০৯ সালের একদম প্রথম দিকের কথা। আমি তখন রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব)। সিএইচটি কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল Lord Avebury (কো-চেয়ারপার্সন) এর নের্তৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে। দলে আরো ছিলেন ড.স্বপন আদনান, ড.জাফর ইকবাল, ব্যারিষ্টার সারা হোসেন, ড.মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির ২ জন সহ আরো কয়েকজন। সফরের অংশ হিসেবে প্রতিনিধি দলটি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সাথে সার্কিট হাউজে মত বিনিময়ে আসেন। আমার ধারনা ছিল শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে তারা আমাদের মতামত গ্রহন করবেন। প্রথমেই একটি ধাক্কা খেলাম সারা হোসেনের বক্তব্যে। তিনি বললেন আমরা বাংলায় কথা বলতে পারি, তিনি তার ল্যাপটপে Lord Avebury কে অনুবাদ করে দিবেন। আমি প্রতিবাদ করে জানালাম যে আমরা ইংরেজিতে আলোচনা করতে পারি Lord Avebury এর বোঝার সুবিধার্থে। মনে হল তিনি হতাশ হলেন।
আমদের কাছ থেকে কিছু জানতে চাওয়ার পরিবর্তে ড.স্বপন আদনান বক্তব্য দেয়া শুরু করে জানান যে তিনি দীর্ঘ এক যুগের (তখন পর্যন্ত) বেশী সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী (তার ভাষায় আদিবাসী) দের নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। তিনি আরো জানান তার গবেষনায় তিনি দেখেছেন পাহাড়ে পাহাড়ী (তার ভাষায় আদিবাসী) জনগোষ্ঠীর ভূমির উপর মালিকানা "শুন্যের" কাছাকাছি এসে পড়েছে এবং নিয়মিত পাহাড়ী (তার ভাষায় আদিবাসী) জনগোষ্ঠীকে তাদের মালিকানাধীন ভুমি থেকে বাঙ্গালী সম্প্রদায় উৎখাত করে চলছে।
আমি এর প্রতিবাদ করতে চাইলে ব্যারিষ্টার সারা হোসেন আমাকে বাঁধা দিয়ে ড. স্বপন কে বক্তব্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য বললে আমি বলি " যদি এখানেই ড. স্বপন এর বক্তব্যের প্রতিবাদ না করি তবে মিথ্যার পাহাড় জমে যাবে।" তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব নুরুল আমিন আমাকে বক্তব্য দেয়া সুযোগ করে দিলে আমি আমার বক্তব্যে জানাই "আমরা (সরকার) পাহাড়ের সকল জনগোষ্ঠীকে পৃথক না ভেবে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেখি। আমি কখনো হিসেব করে দেখিনি ভুমির উপর মালিনকানা কোন সম্প্রদায়ের কতটুকু? তবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসেবে ভুমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল আমার হেফাজতে আছে। সেহেতু সিএইচটি কমিশন আমার অফিস পরিদর্শণ করে কার নামে কতটুকু জমি আছে তা দেখে কোন সম্প্রদায়ের শতকরা কত ভাগ ভূমির মালিক - তা বের করতে পারে - এর জন্য এক যুগের প্রয়োজন হবে না কয়েক ঘন্টাই যথেষ্ট।
আমি আরো বলি যে আমি প্রায় দেড় বছর ধরে (তখন পর্যন্ত) রাঙ্গামাটিতে চাকরী করছি কিন্তু কোন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর কাউকে কোন বাঙ্গালী উৎখাত করেছে এমন কোন ঘটনা আমার জানা নেই। তখন ব্যারিষ্টার সারা হোসেন আমাকে বললেন যে আমার জানা না থাকলে কি কোন ঘটনা ঘটতে পারে না? তখন আমি বলি, অবশ্যই পারে। কিন্তু আপনি একজন আইনজীবি। আপনি জানেন "ভুমি থেকে কাউকে উৎখাত করা" একটি ফৌজদারী অপরাধ। যদি এধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকে তবে তা সংশ্লিষ্ট থানায় বা আদালতে রেকর্ড হবে, মামলা হবে। চলুন আমরা থানা এবং আদালত থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করি এবং তারপর এ বিষয়ে মন্তব্য করি।" আমি তাদের আরো অনুরোধ করে বলি যে কেবল মাত্র শোনা কথায় কিংবা কোন গোষ্টীর দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে কোন মন্তব্য করলে তা আমাদের দেশের ভাবমূর্তির জন্য ইতিবাচক প্রভাব না ফেলে বরং বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশীদের কাছে ভুল ধারনা দেবে এবং পাহাড়ী- বাঙ্গালী সম্প্রীতি বিনষ্ট হবে।"