পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এখন পর্যন্ত যত সংগঠন কাজ করছে, তাদের মধ্যে অন্যতম সক্রিয় ও পরিচিত একটি সংগঠন হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন। সংক্ষেপে সংগঠনটি সিএইচটি কমিশন নামে পরিচিত। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালী বিতাড়নে সিএইচটি কমিশন ষড়যন্ত্রের নতুনমাত্রা যোগ করেছে। সিএইচটি কমিশন সরকারের নিকট বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। সরকারের নিকট প্রেরিত এইসব সুপারিশমালায় উল্লেখ করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালীরা অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে। এই দূর্ভোগ লাঘবে বাঙ্গালীদের পার্বত্যাঞ্চলের বাইরে পুনর্বাসন করা গেলে তাদের এই অসহনীয় দুঃখ কষ্টের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপর লোকসংখ্যার চাপ হ্রাস পাবে। অবশ্য এই ক্ষেত্রে বাঙ্গালীরা স্বেচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রাম না ছাড়লে রেশনসহ তাদের সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিতে হবে (সূত্র দৈনিক নয়াদিগন্ত)। কমিশনের ধারণা, এতে বাঙ্গালীরা স্বেচ্ছায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে চলে যাবে। সমস্যা আমাদের, মাথা ব্যাথা তাদের। আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে বিদেশী এ সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালীদেরকে বহিস্কার করতে সরকারের কাছে এই ফর্মূলা উপস্থাপন করেছে।
সিএইচটি কমিশনের উদ্দেশ্য কী? অন্তত তাদের ওয়েবসাইটে ঘেঁটে যা পাওয়া গেছে, তার সারমর্ম হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, অংশগ্রহণমূলক উন্নয়ন ও ভূমি অধিকারের বিষয়গুলো উৎসাহিত করা তাদের কাজ। একই সাথে শান্তিচুক্তি কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে – সেটি নিরীক্ষাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। আলোচনা শুরুর আগে আলোচিত ও সমালোচিত সিএইচটি কমিশনের পেছনটাও একটু দেখে নেয়া দরকার। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনে প্রথমে ৫ জন বিদেশীই ছিলেন। এরপর নিজেদের ‘তদন্ত’ শেষ করে তারা তৈরী করে আলোচিত প্রতিবেদন – ‘লাইফ ইজ নট আওয়ার্স’; যার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে ব্যাপক নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশের জন্য নেতিবাচক বা ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কারণ দিনের শেষে বাংলাদেশ আমি-আপনি আর সবাইকে মিলেই। আর আমরা জঙ্গি বা পাকিস্তানি নই। আমি আর দশজনের মতো একজন বাঙালি, ভেতো বাঙালি। আমি হুমায়ুন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর’ গল্প পড়ে চোখ ভাসাই, আমি ‘আগুণের পরশমণি’ দেখে কাঁদি। আমার আর দশটা বাঙালি ছেলের মতো ‘আমার সোনার বাংলা…’ গাইতে গাইতে গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়। আমি পাড়ার দোকানে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে তর্ক করি, চা দোকানের জাকির মামার সাথে আমার খাতির। বাংলাদেশ ক্রিকেটে হেরে গেলে মন খারাপ করে বাংলাদেশের খেলা আর দেখবো না বলে ধনুকভাঙ্গা পণ করে, পরের খেলায় আবার সেই খেলা দেখতে বসে যাই। যখন দলটা আবার জয়-পরাজয়ের দোলাচলে চলে যায়, তখন নিজেকে ‘অলক্ষুণে’ ভেবে টিভি পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে রাখি, মুঠো একবার বন্ধ করি, আরেকবার খুলি, চোখের পলক ফেলি না, এই বুঝি সাকিবের উইকেটটা গেল! হ্যাঁ, আমি বাঙালি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি, সারাদেশের আর দশটা বাঙালি যুবকের মতো আমারও লাল-সবুজ পতাকাটা দেখলে শিহরণ বইয়ে যায়। যেমন কোথাও ধর্ষন হলে, সংখ্যালঘুর উপর নির্যাতন হলে, তাদের উপাসনালয় বা বসতভিটায় হামলা হলে লজ্জায় ম্রিয়মাণ হয়ে যান, আমিও হই। কারণ আমি জানি, কালপ্রিট আছেই। শতভাগ বাঙালিই স্বর্গদূত নয়, আবার রামুর সব বাঙালি রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার নয়। তাই মানবাধিকার যেমন আপনার-আমার লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনি অপরজনেরও হচ্ছে। তবুও আমি নিজের দেশ ভেবে গা সইয়ে যাই। সমস্যা হচ্ছে, আপনি নিজেকে অনেক প্রগতিশীল ভাবেন। অথচ আপনার মতো পার্বত্য চট্টগ্রামের এক বাঙালিকে ভাবেন ভূমিদস্যু আর ধর্ষক! আমি পুনর্বাসিত নই। বাবা চাকুরীসূত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকতেন, বাবার হঠাত চাকুরী চলে গেল। সাথে শুরু হলো সেই টিপিক্যাল বাঙালি একান্নবর্তী পারিবারিক সমস্যা। পরে বাবার উপার্জিত অর্থ ব্যায়ে জমি কিনে বসবাস শুরু করতে হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে। কিন্তু আমি যদি পুনর্বাসিত পরিবারের সন্তানও হতাম, তাহলেও নিজেকে এতটুকু হীনমন্য ভাবতাম না। আমি আসলে গাছে কাঁঠাল রেখে গোঁপে তেল দিচ্ছি। পুনর্বাসিত পরিবারের সন্তান হলে, হয়তো এতদিন অভাবের তাড়নায় ক্ষেতে-খামারে কাজ করে জীবন নির্বাহ করতে হতো। দু’কলম লেখার যোগ্যতাও হয়তো হতো না। তাই পাহাড়২৪.কম-এ আমার লেখাটাও ফজলে এলাহী ভাই ছাপতেন না। আর আপনি ‘সেটেলার’ মানেই ভাবেন এক নৃশংসতম প্রজাতির মানব! ঐদিন ‘একুশের রাত’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপক সেসব পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিদের ‘তথাকথিত’ বলে সম্বোধন করলেন। এখন আপনারা আমাদের বাঙালি বলেই মেনে নিতে চান না। আমরা আমাদের ‘জাতিসত্তার অধিকার’ কার কাছ থেকে চাইবো? চেহারা বাঙালি হয়ে, সংখ্যাগুরুর অংশ হয়েই বিপদে পড়ে গেছি। অথচ আপনি ঢাকায় বসবাস করে যেই আধুনিক, মুক্তমনা বাঙালি সেজেছেন, আপনারও একটি গ্রামের বাড়ি আছে। সেটি হতে পারে, মৈমনসিং, নোয়াখালী, রংপুর, বরিশাল, খুলনা, কিংবা অন্য কোথাও। পুনর্বাসিত বাঙালিরা ভিনগ্রহ থেকে আসেননি। তারা আপনাদের সেই ‘দ্যাশের বাড়ি’ থেকেই এই জঙ্গলে পাড়ি জমিয়েছেন। নিজের বসতভিটা হারিয়ে ম্যালেরিয়া আর শান্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে টিকে ছিলেন। তারা একই এলাকার মানুষ নন। তারা ভিন্ন ভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন। অথচ আপনাদের ধারনা ‘সেটেলার’ মানেই হিংস্র কোন এক পশু! কি অদ্ভুদ তাই না? আপনারাও কিন্তু বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাগ্যের সন্ধানে ঢাকা-চট্টগ্রামে পাড়ি দেয়া এক বাঙালি। আপনি আজ প্রগতিমনা, আর তারা আজ ‘ধর্ষক’। কতই না পার্থক্য!
ধান ভাণতে শিবের গীত গাওয়া হয়ে গেল। যা বলছিলাম। ‘লাইফ ইজ নট আওয়ার্স’ নামক প্রতিবেদনের চারটি সংস্করণ আমরা দেখলাম। প্রতিটিই তীব্র বিতর্কিত। আমি আগেই বলেছি এর ফলে বাংলাদেশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হলো কিনা আমি সেটি নিয়ে চিন্তিত নই। আমি চিন্তিত, কারণ, সেখানে একটি মানবাধিকার সংগঠন হিসেবে সিএইচটি কমিশন অত্যন্ত গর্হিত একটি অপরাধ করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে একজন উপজাতি যদি ‘গণহত্যা’র শিকার হয়ে থাকে, তাহলে সেখানকার বাঙালিও কি হয়নি? সেনাবাহিনী যদি এতটাই বর্বর হয়ে থাকে, শান্তিবাহিনী কি কোন অংশে কম ছিল? প্রশ্নটা এখানে বস্! আপনি মানবাধিকার সংগঠন খুলে বসলেন, আপনি দরদমাখা কণ্ঠে প্রতিবেদনও দিলেন – জীবন আমাদের নয়! কিন্তু অপরপক্ষের জীবন আছে কি না, সেটা নিয়ে মাথাও ঘামালেন না। তখনই মূলত প্রশ্নটা জন্মায় যে, সিএইচটি কমিশন কেবল উপজাতি বিশেষ করে চাকমাদের জন্য সৃষ্ট কমিশন কিনা? কেননা, পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের প্রতি যদি এগারোটি ‘গণহত্যা’ হয়ে থাকে, তাহলে শান্তিবাহিনী কতৃক কোন অংশে বাঙালিদের প্রতি কম গণহত্যা সংঘটিত হয়নি। শান্তিবাহিনী সীমান্তের ওপার থেকে এপাড়ে এসে নিজেদের গেরিলা কার্যক্রম চালাতো। তাদেরকে প্রতিরোধ করা আসলেই কঠিন ছিল। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, শান্তিবাহিনী দাঙ্গা সৃষ্টি করে উপজাতিদের ভারতে শরণার্থীরূপে যেতে বাধ্য করতো। সেই অবস্থায় বেসামরিক উপজাতিদের উপর যতটুকু মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলা হয়, তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন তোলাই যায়। তবুও উপজাতিদের উপর ‘গণহত্যা’ হয়েছে কিনা, সেটি নিয়ে আমি যুক্তি প্রদর্শন করতে রাজি নই। কারণ, গণহত্যা প্রমানের জন্য যুক্তি নয়, প্রমাণ দরকার। তবুও আমি তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, চাকমাদের উপর ১১ টি গণহত্যা হয়েছে। সেটির বিপরীতে, বাঙালিদের প্রতি অন্তত দুইটি গণহত্যা চালিয়েছে শান্তিবাহিনী পাকুয়াখালি আর ভূষনছড়া গণহত্যা তো অবশ্যধর্তব্য। কেন না সেটার নিরেট প্রমান রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে লিখেছেন, এমন কোন লেখক নেই, যিনি বলেননি যে, শান্তিবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি বা গণহত্যা চালায়নি। যদি শান্তিবাহিনীও গণহত্যা সংঘটন ও বেসামরিক লোকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে থাকে, তাহলে সেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কি সিএইচটি কমিশন তুলে ধরেছিল? বাঙালিদের উপর সংগঠিত ২টি গণহত্যার কথা বলেছিল কিনা সিএইচটি কমিশন? গণহত্যা দূরে থাক, নিত্যনৈমিত্তিক হত্যার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ছিল কিনা? উত্তর হচ্ছে – না। সুতরাং এই ‘কমিশন’ – এর কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ হবে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের। সিএইচটি বা পার্বত্য চট্টগ্রামে তো শুধুমাত্র চাকমা বা মারমা বা বাঙালি থাকে না – বরং সবাই থাকে। সুতরাং আপনি যখন ‘সিএইচটি’ কমিশন নাম ধারণ করবেন, তখন আপনাকে গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘঠিত ছোট-বড় সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পুঙ্খানুরূপে তুলে ধরতে হবে। অন্যথায়, আপনি সিএইচটি কমিশনের বদলে ‘চাকমা কমিশন’ অথবা ‘মারমা কমিশন’ কিংবা ‘বাঙালি কমিশন’ নাম গ্রহণ করলেই মানানসই হতো।
উপরের যুক্তিটি হচ্ছে ছোট্ট একটি উদাহরণ। শান্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিতেই মূলত সিএইচটি কমিশন কাজ করে গেছে। শান্তিচুক্তি হবার পর, হঠাত বেকার হয়ে পড়ে এই কমিশন। ফান্ডিং-এর অভাব ছিল বলে জানা গেছে। এরপর শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে না – এই মর্মে আবার গঠিত হয় এই কমিশন। এবার সুলতানা কামাল, ইফতিখারুজ্জামান, জাফর ইকবাল, কামাল হোসেন সহ অনেক বাংলাদেশী এই কমিশনে অন্তর্ভুক্ত হন। এর প্রধান হিসেবে অবশ্য একজন বৃটিশ সংসদ সদস্য দায়িত্ব লাভ করেন, তিনি খৃষ্টান পাদ্রি লর্ড এরিক অ্যামভুরি। তবুও সবাই আশাবাদী ছিলো, এবার হয়তো ন্যাক্কারজনকভাবে একপেশে প্রতিবেদন দেবে না সিএইচটি কমিশন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দেখা গেলো, পার্বত্য চট্টগ্রামে উগ্র উপজাতি সাম্প্রদায়িক তিন সশস্ত্র সংগঠনের অব্যাহত খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ইত্যাদির মতো মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে সিএইচটি কমিশন মোটেই সোচ্চার নয়। বরং সেসকল দলের নেতাদের সাথে বসেই তাদের ‘তদন্ত প্রতিবেদন’ সাজান তারা।
সুলতানা কামাল অত্যন্ত ‘নির্দোষ’ একটি প্রশ্ন করেছেন। সিএইচটি কমিশনকে কেন একপেশে কমিশন বলা হয়, তা তিনি বুঝতে ‘অক্ষম’। বিবিসি বাংলায় দেখলাম, পার্বত্য গণপরিষদের নেতা জালালউদ্দিন আহমেদ আলমগীর বলেছেন, “২০০৯ সালে এই আন্তর্জাতিক কমিশন পার্বত্য এলাকা সফরের পর এই এলাকা থেকে সাড়ে চার লক্ষ বাঙালিকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল। সে খবর পত্রিকায় এসেছে।” কিন্তু বাঙালিদের উচ্ছেদের সুপারিশ করে কোন ধরনের কোন চিঠি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন সুলতানা কামাল। এ ধরনের অভিযোগকে তিনি ‘হাস্যকর এবং মিথ্যা’ বলেও বর্ণনা করেন। সুলতানা কামাল জানান,“আমাদের সুপারিশমালায় রেখেছিলাম – যাদের সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বা পুনর্বাসন করা হয়েছে তারা যদি স্বেচ্ছায় কেউ সেখান থেকে চলে আসতে চায় তাহলে তাদের সেই সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে।” সুলতানা কামাল বলছেন তাদের গঠিত কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ‘বাস্তবসম্মত এবং যুক্তিসংগত’ বাস্তবায়নের উপর জোর দিচ্ছে। আমি জানি না,কেন সুলতানা কামালদের মনে হলো, কোন বাঙালি ‘স্বেচ্ছায়’ পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করবে?! তার কাছে কি এমন কোন বাঙালি অভিযোগ করেছেন যে, তাকে জোর করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধরে রাখা হয়েছে?! আমি জানি না, এমন অভিযোগ কেউ করেছেন কিনা। তাই বুঝতে পারছি না, ‘স্বেচ্ছায়’ চলে যাওয়ার প্রশ্ন উঠলো কেন! কিন্তু একই সাথে আশ্চর্য হয়েছি, কারণ সুলতানা কামালরা ২০০৯ সালের সেই প্রতিবেদনে বাঙালিরা স্বেচ্ছায় চলে যেতে না চাইলে, ‘কিছু একটা’ করার সুপারিশও রেখেছিলেন। কিন্তু বিবিসি বাংলাকে সেই কথা তিনি এড়িয়ে গেছেন, অথবা বিবিসি বাংলা সেই অংশ ছাপেনি। সেটি হলো, বাঙালিরা স্বেচ্ছায় চলে যেতে না চাইলে তাদের ‘সকল সুযোগ-সুবিধা’ বন্ধ করে দেয়া! আমি এখন আরও একবার আশ্চর্যনিত হয়েছি! তিন মাস পরপর ৯০ কেজি মোটা চাউল দেয় সরকার সেসব পুনর্বাসিত পরিবারকে। এর বাইরে কোন সুবিধা দেয় বলে আমার জানা নেই। তাই ‘সকল সুযোগ-সুবিধা’ বলতে কমিশন কী বুঝিয়েছেন, সেটি আমার বোধগম্য নয়! তারা কি বুঝিয়েছেন যে, ৩০ বছর আগে সরকার যে, ৫ একর জমিতে ৫০ পরিবারের থাকার ব্যাবস্থা করেছে, সেই ‘সুবিধা’ তুলে দিতে অর্থাৎ উচ্ছেদ করতে?! কিন্তু সুলতানা কামাল বলছেন, তারা উচ্ছেদের সুপারিশ করেননি। তাহলে নিশ্চয়ই তিন মাসে ৯০ কেজি চাউল না দিতে সুপারিশ করেছেন তারা! আমার গা রি রি করে উঠছে এই ভেবে যে, একটি ‘মানবাধিকার সংগঠন’ ভূমিহীন মানুষদের জন্য সরকারের দেয়া সামান্য চাউল বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে! আমি বুঝতে অক্ষম, কী করে সিএইচটি কমিশন নিজেদের একটি মানবাধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংগঠন বলে পরিচয় দেয়! যেখানে এসব ছিন্নমূল, দরিদ্র মানুষের জন্য কীভাবে সরকারের কাছ থেকে আরও সুবিধা আদায় করা যায়, কীভাবে তাদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া যায়, কীভাবে তাদের স্যানিটেশন-স্বাস্থ্যগত উন্নয়ন করা যায়, সেই চিন্তা করা উচিৎ ছিল একটি মানবাধিকার সংগঠনের! আর কমিশন ব্যাস্ত আছে কীভাবে সুবিধা বন্ধ করা যায়! সেলুকাস!
পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি জাতিগত সমস্যা। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে পিএইচডি করা আমেনা মোহসিন তার গবেষনামূলক বইটির নামই দিয়েছিলেন, ‘দ্যা পলিটিকস অব ন্যাশনালিজম’। পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র জাতীয়তার লড়াই চলছে। ধর্ম এখানে গৌণ। হিন্দু-বড়ূয়া-মুসলমানরা বাঙালি, উল্টো দিকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিভিন্ন উপজাতি। অবশ্য অনেক ত্রিপুরা বা মারমাও অনেক সময় বাঙালিদের পক্ষে ছিলেন। এখানে কোন ব্যাক্তিই অসাম্প্রদায়িক নন। সে চাকমা হোক আর বাঙালি হোক। তাই সেখানে অনেক আগ থেকে সরকারি ব্যাকআপ পেয়ে শিক্ষিত উপজাতিদের জোটকে ‘সুশীল সমাজ’ বানিয়ে নিরপেক্ষ একটা অঙ্গ বানিয়ে লাভ নেই। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে কেউই নিরপেক্ষ নয়। সবাই একটা পক্ষের আসামী। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারক বনার সামর্থ্য কারও নেই। এখানে সবাই একেকটা পক্ষ। এই নির্মম সত্য যেদিন বুঝতে সক্ষম হবেন, সেদিন আপনি পার্বত্য চট্টগ্রামকে নতুন করে আবিষ্কার করবেন।
কয়েকমাস আগে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘তালাশ’-এ প্রিয় মুনজুরুল করিম দেখিয়েছিলেন, সীমান্ত প্রহরার অভাবে কীভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে মাদকের বিস্তার লাভ করছে, হুমায়ুন আজাদ মৃত্যুর আগে বলে গিয়েছিলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের কয়েকশ কিলোমিটার সীমান্ত আজও অরক্ষিত।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার অরক্ষিত সীমান্ত প্রহরার উদ্দেশ্য বিডিআর-এর ব্যাটেলিয়ন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণ করেছিল। তার একটি হচ্ছে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বাবুছড়ায়। পরবর্তিতে ভারত থেকে আগত শরণার্থী উপজাতিরা সেখানে অস্থায়ীভাবে বসতি নির্মান করে। দীঘিনালার বাবুছড়ার সেই এলাকায় ইউপিডিএফ বেশ শক্ত ঘাঁটি গেঁড়ে বসেছে। এটি আমার কথা নয়, ইউপিডিএফ-এরই প্রতিপক্ষ পিসিজেএসএস-এর প্রধান ও সাবেক শান্তিবাহিনীর প্রধান শন্তু লারমা বেশ কয়েকবার এসব বলেছেন। তাই সেই পুরোনো জায়গায় বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীতা করতে শুরু করে ইউপিডিএফ। এমনকি সেই জায়গা নিয়ে হাইকোর্টে রিট পর্যন্ত হয়। পরে যেই জায়গা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে, সেই জায়গা বাদ দিয়েই জেলা প্রশাসন বিজিবি’কে জায়গা বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু বিজিবি জায়গা বুঝে নেবার বেশ কিছুদিন আগে পাশ্ববর্তি গ্রামের কিছু উপজাতি নিয়ে এসে এখানে পুরোনো টিন দিয়ে বসতি নির্মান করে দেয়া হয়। এমনকি বহু বছর আগের একটি পরিত্যাক্ত বিদ্যালয় নতুন করে সংস্কার করে চালু করে দেয়া হয়! সব কিছু মূল উদ্দেশ্য বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন বন্ধ করা।
এরপর হঠাত করে একদিন বিজিবি’র জায়গায় কলাগাছ লাগাতে আসেন কিছু মহিলা। মনে রাখুন, কিছু মহিলা। স্বভাবতই বিজিবি সেখানে বাঁধা দেয় ও কলাগাছ না লাগাতে বলে। কিন্তু ধীরে ধীরে সমস্যাটা বাড়তে থাকে। উস্কানিটা কোথায়, বুঝতে পেরেছেন? এক পর্যায়ে স্থানীয় যুবকেরা সহ মহিলাদেরকে সামনে রেখে বিজিবি ক্যাম্পে হামলা হয়। স্থানীয় সাংবাদিকেরা সব কিছুর স্বাক্ষী। পুলিশ এসে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে। এবার ইউপিডিএফ খেলল নতুন চাল। তারা সেই নতুন সংস্কার করা বিদ্যালয়ে, পাশ্ববর্তি গ্রাম থেকে আসা পরিবারদের এনে বসায়। বসিয়ে তাদের নাম-তালিকা করা শুরু করে ইউপিডিএফ-এর সংগঠক কিশোর চাকমা। এরপর সাংবাদিক আনিয়ে তো এক এলাহী কর্মকান্ড। পরেরদিন প্রথম আলোতে সৈকত দেওয়ান প্রতিবেদন পাঠালেন, বিজিবি’র হামলায় ‘উচ্ছেদকৃত আদিবাসী’রা স্কুল ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ সৈকত দেওয়ান নিজেই দীঘিনালায় যাননি, কিন্তু একটা আন্দাজে নিউজ করতে তার বাঁধেনি! ঐ যে বললাম, এখানে কেউই নিরপেক্ষ বা অসাম্প্রদায়িক নয়। কি পাহাড়ি, কি বাঙালি, সবাই সাম্প্রদায়িক।
এরপর এলেন সিএইচটি কমিশন। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী কমিশনের নিরাপত্তা নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা ১৪৪ ধারা শিথিল তো করলেনই, পুলিশ পাহারায় সব কিছুর ব্যাবস্থা করলেন। বিজিবি’র অধিনায়ক সব কিছু খুলে বললেন। ইফতেখারুজ্জামান বললেন, ‘প্লট তো ভালোই সাজিয়েছেন। কিন্তু পার পাবেন না’। সুলতানা কামাল বললেন, নারীরা এসে হামলা চালিয়েছে, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়। অথচ, তার জানার কথা বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মিছিলে পর্যন্ত নারীদের সামনে রাখা হয়। পাছে পুলিশ এসে হুট করে যাতে পিটুনি না দেয়। কারণ নারীর গায়ে হাত দেয়ার আগে উগ্র পুলিশ কর্মকর্তাও কয়েকবার ভাবে! কোন কিছুই অবিশ্বাসযোগ্য নয়। ঢাকা থেকে হুট করে আসলেন, আর নিজেরা যেমন-তেমন একটা মন্তব্য করে দিয়ে গেলেন, তাতেই হয় না। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বুঝতে হবে। এখানে কাউকেই বিশ্বাস না করে, পর্যালোচনা করতে হবে। আমি বলছি না, যেসব উপজাতি নারীদের সাথে আপনি কথা বলেছেন, তারা অস্কার পাওয়ার মতো অভিনয় করে আপনাদের বোকা বানিয়েছে। বরং আপনার মস্তিষ্কে আপনি প্রোগ্রাম করে নিয়েছেন, তারা যা বলবে, সেটাই সত্যি। সুতরাং আপনার সচেতন মন খুতটা কোথায় তা ধরতে পারবে না। সেসব মহিলারা হয়তো অতিরিক্ত অভিনয় করেননি, নিজেদের স্বভাবসুলভ ভাষায় বলে গেছেন সবকিছু। কিন্তু আপনার কাছে মনে হয়েছে, কতটা কষ্টে না জানি তারা কথাগুলো বলেছে! সাইকোলজিক্যাল ম্যাটার, ভালো একজন মনোবিশেষজ্ঞ আরও ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
সিএইচটি কমিশন জানে কিনা জানি না, কয়েকদিন আগে ব্র্যাকের একজন কর্মীকে ধর্ষনের পর খুন করা হয়েছে বান্দরবানে। ধর্ষক বিজয় তনচঙ্গ্যাকে পুলিশ সাথে সাথে আটকও করেছে। ঘটনার দুইদিন পর কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে নিজের সেগুন বাগানে গিয়েছিলেন বাঙালি ব্যাবসায়ী মোসলেম উদ্দিন। কিন্তু কোন এক অদ্ভুদ কারণে তাকে পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপজাতি কিছু মহিলা। সেখানে যুবকেরা অনেকে ছিল, কিন্তু তারা মারতে গেলে মহিলারা মারতে বাঁধা দেয়! যুবকদের হাতের বাঁশ নিয়ে ফেলে, সতর্ক করে দেয়। কিন্তু উল্টো নিজেরা মারে। অর্থাৎ, এটি সুপরিকল্পিত। যুবকেরা মারলে পুলিশ সহজেই আসামী হিসেবে ধরতে পারবে। কিন্তু নারীদের ধরার সাহস আইনশৃংখলা বাহিনীরও নেই। শত হোক ‘আদিবাসী’ নারী বলে কথা! হয়েছেও তাই, সেসব নারীকে থানায় উপস্থিত হতে বললে, তারা কেউই আসেননি! সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোচনার ঝড় তোলে। সিএইচটি কমিশন কি এসব নিয়ে সচেতন নয়? নাকি কোথাকার কোন ‘সেটেলার’ মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি তারা? তারা মানবাধিকার সংগঠন হয়েও কি, উগ্র উপজাতিদের মতো বলবে, ‘ধর্ষক’কে (যদিও সম্পূর্ন অপ্রমানিত) গনপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলাই সঠিক কাজ হয়েছে?! আমি ধরে নিলাম, কোন বিবৃতি না দিয়ে তারা ‘গণপিটুনি’কে নিরবে সার্টিফাই করেছে। তবে এই ঘটনাই আবারও প্রমাণ করে, ‘আদিবাসী নারী’ ইস্যুটি বেশ ভালোভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ভিডিওটি দেখুন, আরও ভালোভাবে বুঝবেন।
কিন্তু আমি জানি না, ইউপিডিএফ-এর হাতে অপহৃত কয়েকবছর বয়সী বাঙালি শিশু শহীদুলের অপহরনের জন্য কোন অজুহাত নিয়ে বসে আছেন তারা! আজ কয়েকমাস হয়ে গেল, সেই ছোট্ট বাচ্চার কোন খোঁজ খবর নেই, কিন্তু অতীতের সমস্ত ঘটনার মতো, বাঙালি হওয়ার অপরাধে শহীদুলকে নিয়েও কোন বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি সিএইচটি কমিশন।
সিএইচটি কমিশন ইউপিডিএফ নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক করে, চলে যাবার ২ দিন পর, ইউপিডিএফ এবার মাটিরাঙ্গার ব্যাঙমারা থেকে ৪ বাঙালি শ্রমিককে অপহরন করেছে! ইস্টার্নব্রীজ ইম্প্রুবমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মানাধীন সেতুটির কেয়ারটেকার সুনতি বিকাশ ত্রিপুরা জানান, ওই ৪ বাঙ্গালী শ্রমিককে সেতুর কাছে রেখে রাত ১০টার দিকে তিনি রাতের খাবার খেতে বাড়ি যান। এর আধা ঘণ্টা পরই তিনি সেতুর কাছে কয়েক রাউন্ড গুলির আওয়াজ শুনতে পান। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ব্রীজের কাছে ফিরে এসে এসে দেখেন তার সহকর্মী ৪ বাঙ্গালী শ্রমিক নেই। তার ধারণা আঞ্চলিক পাহাড়ী সংগঠন ইউপিডিএফ তাদেরকে অপহরণ করে থাকতে পারে। কারণ গত কয়েকদিন ধরেই ইউপিডিএফ মোটা অঙ্কেও চাঁদা দাবী করে আসছিল। কিন্তু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চাঁদা না দেয়ায় শ্রমিকদের অস্ত্রের মুখে অপহরণ করা হয়েছে। অপহৃত চার শ্রমিকের দুজনের নাম রাজু ও ফারুক। বাকি দুই শ্রমিকের নাম জানা যায়নি। আমি বলবো না, এই অপহরণের সাথে সিএইচটি কমিশনের ইন্ধন আছে। কিন্তু বলতে হবে, তাদের আশকারা পেয়েই ইউপিডিএফ-জেএসএস’এর মতো দল এমন হয়েছে। কই একটা বিবৃতিও তো দেখতে পেলাম না!
খাগড়াছড়ি থেকে রাঙ্গামাটি আসার পথে তারা শুনলেন, তাদের আগমনের প্রতিবাদে অবরোধ ডেকেছে ছয়টি বাঙালি সংগঠন। তারা এটাকে স্বাগত জানালেন, কারন অবরোধ বা প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। এরপর তারা অবরোধের মুখে তাদের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান সফর বাতিল করে চট্টগ্রামে গিয়েছেন। রাঙ্গামাটিতে শান্তিবাহিনীর সাবেক প্রধান ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা ও শান্তিবাহিনীর আরেক সাবেক প্রধান, সন্তু লারমার দলের সহ-সভাপতি ও একই সাথে সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদারের সাথে দেখা করার কথা ছিল তাদের। অনেকে হয়তো ভ্রু কুঁচকে বলছেন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের সাথেই দেখা করতে গেছেন তারা, এখানে শান্তিবাহিনী মূল বিষয় নয়। কিন্তু দূর্ভাগ্য হচ্ছে, খাগড়াছড়িতে যখন তারা গেলেন, তখন খাগড়াছড়ির ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন উপজাতি উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে মিলেই তারা গোপনে বৈঠক করলেন। তারা যদি জনপ্রতিনিধি হিসেবেই তাদের সাথে বৈঠকে বসে থাকেন, তাহলে মানিকছড়ি, রামগড় ও মাটিরাঙ্গার বাঙালি উপজেলা চেয়ারম্যানেরা কী দোষ করেছেন? তাছাড়া তারা সফর করবেন দীঘিনালা। খাগড়াছড়ি আর পানছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য কী? জানি না, আমার উত্তরগুলো কে দেবেন!
এরপর তাদের যাওয়ার কথা বান্দরবানে। সেখানে উচহ্লা ভান্তে নামক একজন বনভান্তে স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বড়ুয়া ও মারমাদের ৫০টি পরিবারের ১০০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করেছেন। তার পেছনে আছে সেই ইউপিডিএফ। একই সাথে সেখানেও বিজিবি সদর দপ্তর স্থাপনে অধিক ক্ষতিপুরন লাভের আশায় ‘আদিবাসীদের ভূমি বেদখল’এর ধুয়া তুলে সেই ভান্তে দর কষাকষি করছেন। এই জমির পরিমান প্রায় একশ একর জমি। তাই উচহ্লা ভান্তের প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রয়াত বোমাং রাজার পুত্র নুমংপ্রু চৌধুরী ও স্থানীয় বড়ুয়া সমিতির জমির মালিকেরা বান্দরবানে সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। এসব নিয়ে বহু প্রগতিশীল গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আর সুলতানা কামাল যাবেন, সেই উচহ্লা ভান্তের ভুয়া অভিযোগের প্রেক্ষিতে! সেখানে অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অভিযোগও বিবেচ্য বিষয় নয় সিএইচটি কমিশনের। কারণ সেখানে আছে উপজাতিদের একটি সংগঠন ইউপিডিএফ ও বিজিবি ক্যাম্পের মতো ইস্যু। তাই তারা ধরেই নিলেন ইউপিডিএফ’ সঠিক, অন্যান্য সংখ্যালঘুরা বেঠিক!
যাইহোক, তারা তাদের সফর বাতিল করলেন। জনগণের কথা চিন্তা করে বাঙালি সংগঠনগুলো তাৎক্ষণিক অবরোধ বাতিল করলো। কিন্তু সিএইচটি কমিশন প্রশাসনকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি এসে চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের দ্বিতীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবুও বিয়ে শেষ করে তাদের শান্তিপূর্নভাবে রাঙ্গামাটি ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা শোনেননি। তাদের বিতর্কিত কার্যক্রম তারা চালিয়ে যেতে চাইলে ক্ষেপে উঠে স্থানীয় জনতা। তাদেরকে স্থানীয়রা সহিংস কায়দায় রুখে দেয়। সম-অধিকার, বাঙালি ছাত্র পরিষদ বা গণপরিষদের মতো দল কখনই এতোটা জনপ্রিয় ছিল না। সুলতানা কামালও অবাক হয়ে পরে প্রশ্ন করেছেন, তারা তো এত শক্তিশালী ছিল না, তারা এত শক্তি পেল কোথায়? সুতরাং বুঝে নিন, মানুষ কতটুকু আপনাদের উপর ক্ষিপ্ত হলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।
আপনাদের উপর হামলা হয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই ন্যাক্কারজনক ও অগ্রহণযোগ্য। আফটার অল, ‘গণধোলাই’ নামের কোন কর্মকাণ্ড দেশের আইন অনুমোদন করে না। সুপ্রিম কোর্টও এই ব্যাপারে একটি রায় দিয়েছে। কিন্তু এই ‘গণধোলাই’ নিশ্চয়ই বান্দরবানে বিনা কারণে নিহত মোসলেম উদ্দিনের বেলায়ও অগ্রহনযোগ্য? তার মৃত্যুর ঘটনায় যেমন সিএইচটি কমিশন কোন বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন বোধ না করে ‘ধর্ষক’কে এভাবে ‘গণপিটুনি দিয়ে মারা উচিৎ’ –এরকম একটি নীতিই নিরবে অনুমোদন করেছিল সেদিন, আজ তাই আমারও সাধারন মানুষ হিসেবে সিএইচটি কমিশনের উপর হামলার ঘটনায় লজ্জাবোধ হচ্ছে না। কারণ সুলতানা কামাল, ইফতিখারুজ্জামানেরা যতই ‘গুরুত্বপূর্ন’ ব্যাক্তি হোন না কেন, শেষ পর্যন্ত তারা একজন মানুষ, মোসলেম উদ্দিনের মতো রক্তে মাংসে গড়া একজন মানুষ, এর বেশি কিছু নন।
শুনেছিলাম, চাকমা রাজার দ্বিতীয় বিয়েতে অংশ নিয়েছেন সিএইচটি কমিশনের সদস্যবৃন্দ। সেখানে আমার পরিচিত এক ব্যাক্তিও অংশ নিয়েছেন। উপস্থিত অতিথীদের উদ্দেশ্যে চাকমাদের ‘ঐতিহ্যবাহী’ মদ পরিবেশন করা হয়েছিল, সেটি তাদের রীতিনীতিরও অংশ। অনেক অতিথী সেই মদ পান করেছেন, কেউ করেননি। আমি জানি না, সিএইচটি কমিশনের সদস্যরা সেই মদ পান করেছিলেন কিনা। তবে তাদের অদ্ভুদ, একপেশে আর অর্থব কর্মকাণ্ড দেখে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, ‘সিএইচটি কমিশন, গো হোম, ইউ আর ড্রাংক’।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]