মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০১৫

‘তাইন্দং সহিংসতা: কি আছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে।’

গত ৩ আগস্ট ২০১৩ খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং পাহাড়ী- বাঙালী সংঘর্ষের এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৩৫টি উপজাতীয় বাড়ি, ৩টি বাঙালী বাড়ি ও ২টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। ঘটনা তদন্তে খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ করিম অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের (উপসচিব) নেতৃত্বে এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ৩ সেপ্টেম্বর তার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়। গোপনীয় মার্কিং করা এই তদন্ত প্রতিবেদনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী হাতে এসেছে। প্রতিবেদনে শুধু তাইন্দং এর ঘটনার অন্তর্নিহিত কারণই শুধু নয় পার্বত্য রাজনীতির নানা দিকে উঠে এসেছে। ফলে তা জানার আগ্রহ পার্বত্যবাসী তথা দেশের বিপুল সংখ্যক নাগরিকের। এ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক স্পেশাল রিপোর্ট- ‘তাইন্দং সহিংসতা: কি আছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টে।’

তাইন্দং সহিংসতার পেছনে রয়েছে বিজিবি, পুলিশ ও গোয়েন্দাসংস্থার ব্যর্থতা

৩ আগস্টের তাইন্দং সহিংসতায় বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)-পুলিশসহ গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। তাইন্দং সহিংসতার শিকার পাহাড়ী জনগোষ্ঠির অভিযোগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের তদন্তেও বিজিবি ও পুলিশের ব্যর্থতার কথা বলা হয়েছে। সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এনএসআই, ডিজিএফআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সেখানে সক্রিয় থাকলেও তারা ঘটনার আগাম তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কাছ থেকে আগাম তথ্য পেলে, পুলিশ ও বিজিবি কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তাইন্দঙের ঘটনা এড়ানো যেত।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন কথিত অপহরণ স্থান ক্রসিং এলাকায় বিজিবির দুটি ক্যাম্পের প্রায় ২০জন সদস্য এবং তবলছড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ৫ পুলিশ সদস্য উপস্থিত থাকলেও তারা উত্তেজিত বাংগালীদের নিবৃত্ত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিজিবি এবং পুলিশের আরো সক্রিয় ভূমিকা থাকলে পরবর্তী পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তদন্তকালে তাইন্দং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফনিভুষণ চাকমা তদন্তকারী টিমকে বলেছেন, ১ আগষ্ট সকালে বটতলী ও তাইন্দং বাজারে বাঙ্গালীরা মিছিল করে। বিকালে বিজিবির সিও, ইউএনও, ওসি ও ভাইস চেয়ারম্যান তাইন্দং আসেন। ইউএনও এবং ভাইস চেয়ারম্যান সাহেব বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। ২ আগস্ট বিজিবি আমাদের সাথে বৈঠক করে নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে আমাদের ভারতে না যাওয়ার ওয়াদা করান। তিনি নিজেও ওয়াদা করেন যে, তার পোশাক থাকতে আমাদের গায়ে কেউ টোকাও দিতে পারবেনা। ঘটনার দিন ৩ আগস্ট কামালকে খোঁজার জন্য আমাদেরকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বিজিবি ও পুলিশের উপস্থিতিতেই বাঙ্গালীরা আমাদের বান্দরশিং ক্রসিংয়ে মারধর করে।

তাইন্দং সহিংসতার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে পরিচালিত নির্বাহী তদন্তকালে বান্দরশিংয়ের মহেন্দ্র চাকমার ছেলে অমৃত রঞ্জন চাকমা বলেন, কামাল অপহরণ হয়েছে জানিয়ে বিজিবির বান্দরশিং পাড়ার ক্যাম্প কমান্ডার আমাকে ফোন করে। তিনি আমাকে যেতে বললে ১০/১৫ জনকে নিয়ে সেখানে যাই। এক পর্যায়ে কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে হাজার খানেক বাঙ্গালী উপস্থিত হয়। অপহৃত কামালকে কিছুক্ষণ খোঁজাখুজির পর না পেয়ে তারা বিজিবি ও পুলিশের সামনেই আমাদের মারধর করে। আমরা এক পর্যায়ে বিজিবি সদস্যদের ধরে বাঁচার চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আমাদের মারধর করে বাঙালীরা।

তদন্তকালে বগাপাড়ার মৃত-বীরেন্দ্র চাকমার ছেলে বিনয় চাকমা বলেন, ঘটনার দিন ক্রসিংয়ের ঘটনায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করলে বাঙ্গালীরা আমাদের মারতে পারতো না। তিনি বলেন, বিজিবি চেষ্টা করেও উত্তেজিত জনতাকে রুখতে পারেনি। বিজিবির ভুমিকা আরো বেশী থাকা উচিত ছিল দাবী করে তিনি বলেন, বিজিবির সংখ্যা কম থাকলেও তারা যথাযথ ভুমিকা রাখেনি। বিজিবির অধিনায়ক ঘোষণা দিয়েও তার বাস্তবায়ন করেন নি।

২৯ জুলাই ওসমানের বাড়ীতে হামলা, ৩১ জুলাই রাতে এবং ১ আগস্ট তাইন্দং বাজারে বাঙালীদের নিরাপত্তার দাবীতে সভা-সমাবেশ করা, একই দিন তাইন্দং বাজারে বিজিবি যামিনীপাড়া ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, ইউএনও এবং মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক বিক্ষুব্ধ জনতাকে নিরাপত্তার আশ্বাসে শান্ত করা এবং সর্বশেষ ২ আগস্ট ফেনীছড়া ক্যাম্পে পাহাড়ী-বাংগালীদের নিয়ে বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের সভা করে পাহাড়ীদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিলেও এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির পক্ষ থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তামূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

তবলছড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফোর্সের স্বল্পতার অজুহাত দিলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স মোতায়েন প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে এটাকে পুলিশের ব্যর্থতা বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে বিজিবির ব্যাটালিয়ন অধিনায়কের নিরাপত্তার আশ্বাসের সাথে মোতায়েনকৃত বিজিবির সংখ্যা সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না উল্লেখ করা তদন্ত প্রতিবেদনে। ঘটনার পর তানাক্কাপাড়া বিজিবি ক্যাম্পের জনবল দ্বিগুণ করা হয় উল্লেখ করে ঘটনার পূর্বে জনবল বাড়ানো হলে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ সহজ হতো বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

খাগড়াছড়িতে পুলিশ, বিজিবি, এনএসআই এবং ডিজিএফআই‘র অনেক গোয়েন্দা তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও তাইন্দং সহিংসতা সম্পর্কে আগাম তথ্য/সতর্কতা দিতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাইন্দং সহিংসতায় তদন্ত কমিটির কাছে জামায়াতের সম্পৃক্ততা দাবী করেছে পাহাড়ীরা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে গত ৩ আগস্ট সৃষ্ট সহিংসতায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতের প্রভাব রয়েছে বলে মনে করে এক সময়ের জেএসএস নেতা দেবব্রত চাকমা। এ ঘটনায় ঢাকায় বসে জামায়াত নেতা এয়াকুব আলী চৌধুরী ও আলকাছ আল মামুন নেতৃত্ব দিয়েছে বলেও সরকারী তদন্তকালে দাবী করেছেন তিনি।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো. মোজাম্মেল হক এর নেতৃত্বে গঠিত এক সদস্য বিশিষ্ট নির্বাহী তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এমন চমকপ্রদ তথ্য।

তদন্তকালে ঘটনা নিয়ে দেয়া বক্তব্যে দেবব্রত চাকমা ২০০৯ সালের ১৫ অগস্ট সৃষ্ট ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, সেসময় মাটিরাঙ্গার ২৪টি পাহাড়ী পাড়া নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তদন্তকালে তিনি বলেন, ৩ আগষ্টের ঘটনার সাথে কেউ কেউ বিএনপি-আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার কথা বললেও এ ঘটনায় জামায়াতের প্রভাব ছিল। জামায়াত নেতা এয়াকুব আলী চৌধুরী ও আলকাছ আল মামুন ঢাকা বসে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাইন্দংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ ঘটনার পরিকল্পনা করেছিল দাবী করে তিনি বলেন, জেলা বিএনপির নেতারা ঘটনা সম্পর্কে জানত না।

তাইন্দং সহিংসতায় তদন্তকালে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক মো. তাজুল ইসলাম সহিংসতার সাথে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিরাজসহ তার অনুগত কর্মীদের জড়িত থাকার কথা বললেও তাইন্দং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক মেম্বার মো: হানিফ মিয়া রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোন অভিযোগ করেননি তার দেয়া লিখিত বক্তব্যে।

এদিকে দীর্ঘ ১৭ দিন ধরে চলা তদন্তকালে তাইন্দংয়ের বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে, ঘটনার সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ইংগিত রয়েছে বলেও মনে করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি মনে করেন সরকারের মেয়াদের শুরুতে এবং শেষ দিকে এক শ্রেণীর রাজনৈতিক সুবিধাভোগী লোক পাহাড়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। ৩ আগস্টে তাইন্দং সহিংসতায় সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ছিল বলেও মনে করেন তিনি।

তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৭ দিন ধরে চলা নির্বাহী তদন্তে ২৭ জনের লিখিত স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয় এর মধ্যে ১২ জন পাহাড়ী এবং ১৫জন বাঙ্গালী। বাঙ্গালী ১৫জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১১জন সরাসরি আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, ৩জন বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত আছে এবং দুইজন স্বাক্ষী সরাসরি কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নয় বলে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে। অন্যদিকে ১২জন পাহাড়ী স্বাক্ষীর মধ্যে ৫জন সরাসরি স্থানীয় আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত রয়েছে।

৩ আগষ্টের তাইন্দং সহিংসতায় কেউ কেউ জামায়াতের প্রভাব আবার কেউ কেউ স্থানীয় বিএনপির সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের অভিযুক্ত করা হলেও জামায়াতের কোন নেতাকর্মীকে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়নি। আবার সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজ মুল পরিকল্পনাকারী হলে সেখানে কেন স্থানীয় আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের মামলায় অভিযুক্ত করা হলো তাও পরিস্কার করা হয়নি স্থানীয় কারো বক্তব্যে। তাহলে কি আওয়ামীলীগ সমর্থকরা কারো প্রতিহিংসার শিকার এমন প্রশ্ন স্থানীয় অনেকেরই।

সার্বিকভাবে রিপোর্টের মন্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা সরকারদলীয় লোকদের একপেশে বক্তব্যকেই আমলে নিয়েছেন। জেলে বন্দী অভিযুক্ত মূল আসামীদের কোনো বক্তব্য তার এই তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসেনি।

তাইন্দং সহিংসতার নেপথ্যে ছিল পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দংয়ে সৃষ্ট সহিংসতার নেপথ্যে ছিল এখানকার পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা। তাইন্দং সহিংসতার পর ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে এমনই চিত্র বেরিয়ে এসছে। গুটি কয়েক পাহাড়ী নেতা এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও তদন্তকালে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের বেশিরভাগই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার কথা স্বীকার করেছেন। তদন্তকারী কর্তকর্তাও তার প্রতিবেদনে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় অতিষ্ঠ হয়েই গত ৩ আগষ্টের সহিসংতার ঘটনা ঘটে বলে তদন্তকালে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নোয়াপাড়ার মো: আলাউদ্দিন। তাইন্দংয়ের মুসলিমপাড়ার আবদুস সালাম তদন্তকালে জানান, তাইন্দং সহিংসতার ২০ দিন পরে আমি অপর একজনকে নিয়ে আমার কলাবাগান থেকে আসার পথে চার জন উপজাতীয় সন্ত্রাসী আমাদের কাছ থেকে কানি প্রতি ১২০০ টাকা চাঁদা দাবী করে। না দিলে জমির ফসল নষ্ট করে ফেলার হুমকি দেয়।

ঘটনার আগে ২৯ জুলাই সোমবার রাতে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও দক্ষিণ আছালংয়ের মো: ওসমান গনির বাড়িতে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদার জন্য হামলা ও গুলি বর্ষনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে ওসমান বলেন, রাত ১টার দিকে সন্ত্রাসীরা ঘরে ঢুকে চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দিলে জীবনে মেরে ফেলার হুমকি দেয় তারা। তারা আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমার ফেটে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়। এসময় সন্ত্রাসীরা আমার স্ত্রীকেও মারধর করে। পরে তারা ফাঁকা গুলি করে চলে যায়। তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা মো: ওসমান গনির মাথায় আঘাতের চিহ্ন প্রত্যক্ষ করেন বলে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

তদন্তকালীন তাইন্দং ইউনিয়নের ৩নং সংরক্ষিত (১, ২ ও ৩) ওয়ার্ডের মেম্বার ও সরকারদলীয় সমর্থক আমেনা বেগম ঘটনার দুই মাস পুর্বে ইউপিডিএফের সন্ত্রাসীরা তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবীর কথা জানান তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। তাইন্দংয়ে পাহাড়ীদের নিরাপদে থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত ৩০ জুলাই রাত সাড়ে বারটার দিকে তাইন্দং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের বাড়ির দিকে ফায়ারের/গুলির আওয়াজ শোনা গেছে। আধঘন্টার ব্যবধানে তার বাড়ির উঠানেও ফায়ার /গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বাঙ্গালীরা পরদিন সকালে নিরাপত্তার দাবীতে তাইন্দং বাজারে মিছিল করে।

১৯৬২ সাল থেকে তাইন্দংয়ে বসবাসের কথা উল্লেখ করে, আওয়ামীলীগ নেতা ও তাইন্দং বটতলী বাজার এলাকার মো: আবদুস সামাদ নির্বাহী তদন্তকালে জানায় ১৯৯৪ সালেও তাইন্দংয়ের তিনজন বাঙ্গালীকে অপহরণ করা হয়েছিল। তাদেরকে এখনও পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তদন্তকালে তিনি বলেন, এখানকার বাঙ্গালীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। স্থানীয় প্রভাবশালী পাহাড়ী নেতা এবং তাইন্দং ইউনিয়নের মেম্বার ফনিভুষন চাকমা নিজেও তাইন্দং-পানছড়ি সড়কের মরাটিলা ও পোড়াবাড়ি এলাকায় পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করেছেন তদন্তকালে।

দীর্ঘ ১৭ দিনের তদন্ত শেষে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে, তদন্ত কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ী জনপদে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে চাঁদাবাজী করে আসছে। ইউপিডিএফ, জেএসএস, জেএসএস (সংস্কারপন্থী) তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি করে আসছে। আর নিরীহ বাঙ্গালীরা প্রতিটি সন্ত্রাসী গ্রুপকেই চাঁদা দেয়। সাধারণ কৃষক হতে শুরু করে ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, ঠিকাদার এমনকি সরকারী চাকুরীজীবি সবাইকে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় অপহরণ কিংবা খুন আর গুমের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

গুইমারার আওয়ামীলীগ নেতা মো: জাহাঙ্গীর আলমের অপহরণ এবং পরে মুক্তি লাভ আর সাম্প্রতিক সময়ে তাইন্দংয়ের আবদুল মজিদ অপহরণ এবং ১৮ দিন পর মুক্ত হওয়া ছাড়াও সংশ্লিষ্ট নানা ঘটনায় বাঙ্গালীদের মধ্যে ক্ষোভ কাজ করছিল। এসব কারনেও ৩ আগষ্টের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মাটিরাঙ্গায় একসময় চাঁদাবাজির দৌরাত্ব না থাকলেও সম্প্রতি মাটিরাঙ্গার তাইন্দং-পানছড়ি সড়কের মরাটিলা এলাকায় যানবাহন, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় এবং ঝর্ণা টিলা ও বাংকার টিলা এলাকায় সাধারন কৃষকদের কাছ থেকে চাদা দাবী পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বাঙ্গালীদের ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয় বলেও তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন তিনি।

সাধারন পাহাড়ীরাও সন্ত্রাসীদের চাঁদা দিতে বাধ্য হয় বলে তদন্তকালে উল্লেখ করেছে অনেকে। তবে সাধারণ পাহাড়ীরা সন্ত্রাসীদের চাঁদা দেয়ার বিষয়টি কখনোই স্বীকার করে না বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি। পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বরাবরই সাধারন পাহাড়ীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে পাহাড়ী পাড়াগুলোতে অবস্থান করে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায় বলে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক তাইন্দং সহিংসতা ১৯৮৬ সালের রোপিত ফসল

৩ আগস্টের তাইন্দং সহিংসতাকে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র বলে পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে দাবী করা হলেও তাইন্দং সহিংসতার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও দোষীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো: মোজাম্মেল হক এর নেতৃত্বে গঠিত এক সদস্যের নির্বাহী তদন্তকালে বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন চিত্র। তদন্তকালে অনেকেই ৩ আগস্টের ঘটনার জন্য পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির পাশাপাশি সন্ত্রাসী কার্যক্রম, হত্যা, গুম, অপহরণকে দায়ী করে বলেছেন, ৩ আগস্টের সহিংসতা ১৯৮৬ সালে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত তাইন্দং ধ্বংসযজ্ঞের রোপিত ফসল।

তদন্তকালে দেয়া লিখিত বক্তব্যে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মো: তাজুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল তৎকালীন সময়ের শান্তিবাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত তান্ডব ঘটিয়েছিল তাইন্দংয়ে। এখনো পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের নাম শুনলে ভয়ে আঁতকে ওঠে সাধারণ মানুষ। ৩ আগস্টের ঘটনার পুর্ববর্তী সময়গুলো ছিল আতঙ্কে ভরা।

তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: হানিফ মিয়া বলেন, ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিল পাহাড়ী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাইন্দং বাজার ও বহু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। সেসময় সন্ত্রাসীদের তান্ডবে একদিনে ৪৯ নিরীহ বাঙ্গালী নারী, শিশু গুলিবিদ্ধ ও অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। সেদিনের সেই ক্ষত চিহ্ন এখনো শুকায়নি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে তাইন্দংয়ে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র নতুন নয়। এর শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। সে সময় শান্তিবাহিনীর সদস্যরা তাইন্দং, আছালং ও তবলছড়িতে এক যোগে হামলা করে। সেসময় তারা বাঙ্গালীদের ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় বলে জানান স্থানীয়রা।

এর দুই বছরের মাথায় ১৯৮১ সালে গভীর রাতে তাইন্দংয়ের পাহাড়ী গ্রাম বগাপাড়া দিয়ে তানাক্কাপাড়া বিডিআর ক্যাম্পে হামলা করে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। সেসময় শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তানাক্কাপাড়া ক্যাম্পকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। শান্তিবাহিনীর সে হামলায় ঘটনাস্থলেই ১১জন বিডিআর সদস্য নিহত হয়। সে হামলায় ক্যাম্পের অন্যান্য বিডিআর সদস্যরা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়।

জানা গেছে, ১৯৮৬ সালের ২৯ এপ্রিলের আগেও দুই দফা হামলা করে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। ১৯৮৬ সালের ৬ মে দ্বিতীয় দফায় রাত দুইটার দিকে আছালং আলী আজ্জম সর্দার পাড়ায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে শান্তিবাহিনী। সে সময় একই পরিবারের তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এসময় তারা টহলরত বিডিআর সদস্যদের কাছ থেকে তাদের ব্যবহৃত ওয়ারল্যাস সেট ছিনিয়ে নেয়। ১৯৮৬ সালের ২০ মে তৃতীয় দফায় তারা হামলা করে তাইন্দংয়ের সিংহপাড়ায়। তারা সেখানে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করে একই পরিবারের সাত জনকে। হত্যার পর তাদেরকে ঘরে রেখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় শান্তিবাহিনীর সদস্যরা। তাদের সেই নারকীয় তান্ডব এখনো ভুলতে পারেনি তাইন্দংয়ের স্বজন হারা মানুষেরা। এখনো সেই ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে সেই সব মানুষেরা। এসকল ঘটনার ফলে তাইন্দঙেযর বাঙালীদের মাঝে পাহাড়ী সন্ত্রাসী ভীতি, আতঙ্ক, বিদ্বেষ কাজ করে। ফলে সন্ত্রাসী হামলার সামান্য গুজবে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যায়। আত্মরক্ষার্থে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেয়। ফলে তাইন্দং সহিংসতা ১৯৮৬ সালের নারকীয় তান্ডবেরই রোপিত ফসল বলে মনে করছেন অনেকে।

ঘটনার তদন্তকালে বটতলী বাজার এলাকার মৃত-ক্বারী আবদুল জব্বারের ছেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো: আবদুস সামাদ বলেন, ১৯৯৪ সালে তাইন্দং থেকে তিন বাঙ্গালীকে অপহরণ করে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা। এখনও তাদের পাওয়া যায়নি। অপহৃতরা বেঁচে আছে না তাদের হত্যা করা হয়েছে তাও জানে না তার স্বজনসহ তাইন্দংয়ের মানুষ।

খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো: মোজাম্মেল হক তার প্রতিবেদনে বলেন, অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৯৮৬ সালে মাটিরাঙ্গা এলাকায় শান্তিবাহিনী কর্তৃক ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনা করা হয়। তখন থেকে পাহাড়ীদের প্রতি বাঙ্গালীদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকে এবং বাঙ্গালীদের মধ্যে সবসময় পাহাড়ীদের প্রতি প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করে। বাঙ্গালীদের এ প্রতিশোধ স্পৃহাকে কাজে লাগিয়ে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীরা সাধারণ বাঙ্গালীদের উত্তেজিত করে ৩ আগস্টের ঘটনা ঘটায়।

অন্যদিকে মাটিরাঙ্গা উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪/৫টি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয়। এসব ঘটনায় অনেক পাহাড়ী অধ্যুষিত গ্রাম হতে তারা বিতাড়িত হয় এবং কালক্রমে মাটিরাঙ্গায় পাহাড়ীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়। তাই পাহাড়ীদের ধারণা তাদের বাড়ীঘর থেকে উচ্ছেদ করে তা দখল করতেই বাঙালীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটায়। পাহাড়ীদের এ ধারণা একেবারে অমূলক নয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তিনি।

এছাড়াও সম্প্রতি তাইন্দং গ্রামের কলেজ ছাত্র মো: আবদুল মজিদ অপহরণ এবং ১৮ দিন পর মুক্ত হওয়া, গুইমারার জাহাঙ্গীর আলম অপহরণ এবং পরে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা সাধারণ বাংগালীদের ক্ষুব্ধ করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা কাজী মো: মোজাম্মেল হক।

পাহাড়ী–বাঙালী ভূমি বিরোধকে পূঁজি করে চক্রান্তকারীরা তাইন্দং সহিংসতা সৃষ্টি করে

পাহাড়ী- বাঙালী ভূমি বিরোধ এবং তা থেকে সৃষ্ট অবিশ্বাস, দ্বন্দ্ব, ক্ষোভকে পূঁজি করে সুবিধাবাদী ও চক্রান্তকারীরা তাইন্দং সহিংসতার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনাকে পূঁজি করে অপপ্রচারকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

তাইন্দং সহিংসতাকে পুঁজি করে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে চলছে পাহাড়ীদের ভুমি দখল ও উচ্ছেদের মতো কাল্পনিক অভিযোগ। বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে পাহাড়ে ভুমি দখল ও পাহাড়ীদেরকে তাদের ভুমি থেকে উচ্ছেদের কাল্পনিক অভিযোগ তুলে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে কিছু পাহাড়ী। আর এ কাজে তাদেরকে অব্যাহতভাবে মদদ দিয়ে যাচ্ছে কিছু তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী ও মানবাধিকার কর্মী।

গত ৩ আগষ্ট তাইন্দংয়ে মোটর সাইকের চালক মো: কামাল হোসেনকে অপহরনের জের ধরে সৃষ্ট সহিংসতার পর বিশেষ একটি মহলের প্ররোচণায় স্থানীয় পাহাড়ীরা বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে কাল্পনিক সব অভিযোগ তুলে প্রকারান্তরে বাঙ্গালীদেরকে বাংলাদেশের এক-দশমাংশ ভু-খন্ড পার্বত্যাঞ্চল থেকে বিতাড়নের চেষ্টা করেছে।

গত ১৯ আগষ্ট থেকে খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো: মোজাম্মেল হক এর নেতৃত্বে গঠিত এক সদস্যের নির্বাহী তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্তকালীন সময়ে তাইন্দং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফনিভুষণ চাকমা বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে ভুমি দখলের অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ীদেরকে নিজ নিজ ভুমি থেকে উচ্ছেদ করতেই ৩ আগষ্টের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। অন্যদিকে বগাপাড়ার বাসিন্দা মৃত-ধনঞ্জয় চাকমার ছেলে স্থানীয় সরকারদলীয় নেতা গোপাল বিকাশ চাকমা পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে জমি-জমা নিয়ে কোন বিরোধ নেই বলে দাবী করেন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে। এসময় তিনি বলেন, তাইন্দংয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।

এদিকে ভুমি বিরোধ নিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে দ্বিমুখী বক্তব্য থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো: মোজাম্মেল হক তার প্রতিবেদনে পাহাড়ী-বাঙ্গালীদের মধ্যে ভুমি বিরোধ রয়েছে উল্লেখ করে বলেছেন, অনেক পুনর্বাসিত বাঙ্গালীর বন্দোবস্তপ্রাপ্ত জমি দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ীরা ভোগ দখল করছে, অন্যদিকে একইভাবে পাহাড়ীদের মালিকানাধীন অনেক জমিও বাঙ্গালীরা ভোগ দখল করছে। জমি নিয়ে পাহাড়ী-বাঙ্গালী বিরোধকে ব্যবহার করেই পরিকল্পনাকারীরা ৩ আগষ্টের সহিংস ঘটনা ঘটায় বলে তিনি তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।

তদন্তকালে বটতলী বাজার এলাকার মৃত-ক্বারী আবদুল জব্বারের ছেলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: আবদুস সামাদ তাইন্দংয়ে অনেক বাঙ্গালীদের জায়গা-জমি পাহাড়ীরা দখল করে আছে বলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান। ফলে এখানে বাঙ্গালীরা আতঙ্কিত। অন্যদিকে পাহাড়ী নেতা দেবব্রত চাকমা পাহাড়ীদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে বাঙ্গালীরা দখল করেছে উল্লেখ করে বলেন, আমরা ৭১, ৭৯, ৮১ ও ৮৬ সনেও উদ্বাস্তু হয়েছি।

তদন্ত কর্মকর্তা খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মো: মোজাম্মেল হক তার প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করেন যে, বর্ণিত এলাকায় অনেক জমির রেকর্ডীয় মালিক এবং দখলদার ভিন্ন। কারো মালিকানার রেকর্ড আছে, দখল নাই বা দখল আছে কিন্তু মালিকানা নাই। এতে প্রায়ই বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তিনি ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে জরীপ কার্যক্রমের মাধ্যমে ভূমির দখল ও মালিকানা নিষ্কন্টক করার সুপারিশ করেন প্রতিবেদনে। ভূমি জরীপ সম্পন্ন করা সম্ভব হলে পাহাড়ী-বাঙ্গালী বিরোধ কমবে বলে মনে করেন এ সরকারী কর্মকর্তা।

এদিকে ৩ আগষ্টের সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে যে সকল পরিবারের জমির রেকর্ডপত্র পুড়ে গেছে কিংবা হারানো গেছে তাদেরকে জরুরি ভিত্তিতে ভূমি অফিসে রক্ষিত রেকর্ডপত্রের সাথে যাচাইক্রমে ক্ষতিগ্রস্তদের জমির রেকর্ডপত্রের সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করার সুপারিশ করে তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, অন্যথায় ভূমি বিরোধ আরো বাড়বে। সূত্র: পার্বত্য নিউজ.কম

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]