মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তার অধিবাসী মুসলমানদের জন্য সে দেশকে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করেছে। তাদের থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে উপার্জিত সব সম্পদের মালিকানা, নাগরিক অধিকার, মানবিক অধিকার, এমনকি বেঁচে থাকার অধিকারও। তাই তারা সমূহ বিপদের কথা জানার পরও মরিয়া হয়ে ছুটছে একটুখানি নিরাপদ ঠিকানার সন্ধানে। সর্বহারা এসব আদম সন্তান মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে আছে। শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতন শেষে সরকারি লোকজনই তাদের দালালদের হাতে তুলে দিয়ে উপার্জনের শেষ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠুরতার শেষ দৃশ্যটি মঞ্চায়ন করছে। যারা সামরিক জান্তার চোখ ফাঁকি দিয়ে জীবন নিয়ে পালাতে সক্ষম হচ্ছে, তাদের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশি মালয়েশিয়া যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ছে। আর এই সুযোগে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের কিছু নরপিশাচ মানবপাচারকে উপার্জনের মোক্ষম পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছে। আসলে আজকের আরাকানের মুসলমানদের যে দুর্দশা, এটা ইংরেজদের তৈরি সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অনিবার্য পরিণতি।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলছে সীমাহীন নির্যাতন ! |
মিয়ানমার রাষ্ট্রটির মোট জনসংখ্যার দুই শতাংশ মুসলমান, বৌদ্ধরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মোট জনসংখ্যার ৮৯ শতাংশ। তাই তাদের জ্ঞানে ধরাটা সরার কাছে ঠেকে না। সংখ্যালঘুদের মধ্যে মুসলমান ছাড়াও আছে খ্রিস্টান, অ্যানিমিস্ট, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়। তবে মিয়ানমারের মুসলমানদের মোট সংখ্যার ৯০ শতাংশই বসবাস করে আরাকানে। অতীতে ২৬৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সাড়ে চার হাজার বছর আরাকান ছিল একটি সার্বভৌম ও মুসলিম প্রধান দেশ। এর নামকরণই প্রমাণ করে মুসলিম আধিপত্যের কথা। কারণ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তিকে একত্রে বলা হয় আরকান। আর এই আরকান থেকেই তার অনুসারী মুসলমানদের আবাসভূমির নামকরণ করা হয়েছে আরাকান, এমনটিই বিজ্ঞজনদের ধারণা। হিন্দু, বৌদ্ধ ও পর্তুগিজ নির্বিশেষে সবাই প্রত্যক্ষ করেছিল যে আরাকানে শুধু মুসলমানদেরই নয়; সবার ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেছিল। বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক বেড়েছিল, ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হয়েছিল; ফলে বিভিন্ন দেশের লোকজন ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য আরাকানে এসে ভিড় করেছিল। ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে আরাকান ব্রিটিশের অধীনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের প্রাধান্য বজায় ছিল, এ মর্মে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য-প্রমাণ বিদ্যমান।
ইংরেজরা স্বভাবগতভাবে বরাবরই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের প্রতিশ্রুতি পেয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরাকানের মুসলমানরা ইংরেজদের পক্ষাবলম্বন করেছিল; কিন্তু ব্রিটিশরা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। ১৯৪২ সালে জাপান বার্মা দখল করার পর স্থানীয় মগরা জাপানি সৈন্যদের সহায়তা নিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। যা ইতিহাসে ১৯৪২ সালের গণহত্যা নামে খ্যাত। তখন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমানকে হত্যা করা হয় এবং পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। ব্রিটিশরা বার্মা ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এমন এক নীতি চাপিয়ে দিয়ে যায়, যার ফলে আরাকানের মুসলমানরা উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর চলছে সীমাহীন নির্যাতন !
স্বাধীনতা-উত্তর ১৯৪৭ সালের শাসনতান্ত্রিক নির্বাচনে ইংরেজদের দেওয়া 'সন্দেহভাজন নাগরিক' অভিধার কারণে মুসলমানদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। উ ন আরাকান থেকে মুসলমানদের বিতাড়নের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালে মগ সেনাদের নিয়ে Burma Territorial Force গঠন করে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। পরিকল্পিতভাবে মুসলিম বুদ্ধিজীবী, গ্রাম প্রধান, আলেম-ওলামা, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয় এবং মুসলমান অধ্যুষিত গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয় আর সেখান মগদের জন্য বসতি নির্মাণ করা হয়। ১৯৬২ সালের ২ মার্চ উ নকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর নে উইন সংখ্যালঘুদের সব সাংবিধানিক অধিকার বাতিল করে দেয়। ১৯৬৪ সালে রোহিঙ্গাদের সব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিষিদ্ধ করা হয় এবং ১৯৬৫ সালের অক্টোবর মাস থেকে Burma Broadcasting Service থেকে প্রচারিত রোহিঙ্গা ভাষার সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বার্মা সরকার ১৯৭৩ সালে উত্তর আরাকানে Major Aung Than operation ও ১৯৭৪ সালে Sabe operation নামে রোহিঙ্গা উচ্ছেদ অভিযান চালায়। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা জীবন রক্ষার্থে যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্ভিক্ষপীড়িত বাংলাদেশে এসে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করে। সেবার তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃঢ় অবস্থান ও চরমপত্রের কারণে বার্মা সরকার বিতাড়িতদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। তারপর তিন বছর যেতে না যেতেই সামরিক জান্তা 'কিং ড্রাগন অপারেশন' নামে রোহিঙ্গা উচ্ছেদে ভয়াবহ অভিযান শুরু করে। এরপর সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪, ১৯৮৫, ১৯৯০ এবং ২০১২ সালে রোহিঙ্গা উচ্ছেদে বর্বরতম অভিযান পরিচালনা করে বার্মার সামরিক জান্তা। আরাকানের মুসলিম ঐতিহ্যের রয়েছে সুপ্রাচীন এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। সর্বপ্রথম হজরত আবু ওয়াক্কাস ইবনে ওয়াইব (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায় (৬১৭-৬২৭ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে) আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে আসেন। ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রা.)-এর শাসনামলে আরাকানের শাসকদের সঙ্গে আরবীয় মুসলমানদের যোগাযোগের বিষয়টিও প্রমাণিত। তবে দশম ও একাদশ শতাব্দীতে আরব বণিক ও সুফি-সাধকদের ব্যাপক আগমনের ফলে আরাকান অঞ্চলে দ্রুত ইসলামের প্রচার হতে থাকে। সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের ধারক একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে বার্মার সামরিক জান্তার আগ্রাসন ইতিহাসখ্যাত জালিম ফেরাউনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শতাব্দীব্যাপী নির্যাতনের ধারায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের পরীক্ষার পালা শেষে এবার খোদায়ি মদদ প্রত্যক্ষ করার পালা। মহান আল্লাহ শুধু মজলুমকে সাহায্য করেই ক্ষান্ত হন না, সঙ্গে সঙ্গে জালিমের শাস্তির এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, যা অনাগত কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতির জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। বিশ্ববিবেক আজ রুদ্ধ, পৃথিবীব্যাপী চলতে থাকা জুলুমবাজদের শেষ দেখতে তাই মহান আল্লাহর ফয়সালার দিকে তাকিয়ে বনি আদম।
- রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্তভেজা ইতিহাস
- রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস এবং মিয়ানমারের আরাকানে মুসলিম নির্যাতনের অজানা কাহিনী
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে
গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য
চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার
কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা
নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস
ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম
সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির
সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]