শীতকাল মানেই দুরন্তপনায় ছুটে চলা আর বন্ধু-স্বজন নিয়ে ঘোরাফেরা। এ সময়টাকে উপভোগ করতে সবাই যে যার মতো ছুটে চলে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। আবার কেউ কেউ দেশের বাইরে। টানা কর্মব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় কিছুটা প্রশান্তির জন্য আপনি যখন মুখিয়ে আছেন তখন খাগড়াছড়ি হতে পারে আপনার ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত জায়গা। খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি যেমন সম্বৃদ্ধ হবে তেমনি পরিচিত হতে পারবেন নতুন কোন আবহের সাথে। পাহাড়ের সৌন্দর্য্য আপনাকে বিমোহিত করবে।সবমিলিয়ে খাগড়াছড়ির অপরুপ সৌর্ন্দয্য আপনাকে হাতছানি দিয়ে ঢাকছে।
আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ:
খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কের পাশে অবস্থান ‘আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ’। পাহাড়ের
চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ি বেঁয়ে নীচে নামলেই সেই স্বপ্নীল সুরঙ্গমুখ। প্রায়
২৮২ ফুট দৈর্ঘ্যের আলুটিলা সুরঙ্গ যেন বিধাতার অনন্য সৃষ্টি। অনবদ্য
রহস্যের উৎস প্রাকৃতিক এ সুরঙ্গের ভেতরটা দেখলে অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে হতবাক
হতে হবে যে কাউকেই। এ গুহায় প্রবেশ করে অন্য প্রান্ত দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার
অভিজ্ঞতায় আপনিও হতে পারবেন দু:সাহসিক এক অভিযাত্রী।
রিছাং ঝর্ণা: আলুটিলা
পর্যটন কেন্দ্র ও রহস্যময় গুহা থেকে কিছুটা দুরেই রয়েছে প্রকৃতির আরেক
সৃষ্টি ‘রিছাং ঝর্ণা’। বৃষ্টি বিহীন শীতের সকালে পাহাড়ের চূড়া থেকে স্বচ্ছ
পানির অব্যাহত ঝর্ণাধারা নিসন্দেহে আপনাকে আন্দোলিত করবে। একজন ভ্রমণ
পিপাসু হিসেবে আপনিও হতে পারেন ‘রিছাং ঝর্ণা’র স্বাক্ষী।
দেবতা পুকুর: খাগড়াছড়ি
জেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি সড়কের মাইসছড়ি
এলাকার নুনছড়ি মৌজায় সমতল ভূমি হতে প্রায় সাত’শ ফুট উপরে পাহাড়ের চূড়ায়
‘দেবতা পুকুর’ রূপকথার দেবতার আর্শিবাদের মতোই সলিল বারির স্রাতহীন সঞ্চার।
যা আপনাকে মুহূর্তের মধ্যেই বিমোহিত করবে।
জেলা পরিষদ পার্ক:
খাগড়াছড়ি জেলা শহরের খুব কাছাকাছি জিরো মাইল সংলগ্ন ২২ একর ভূমির উপর গড়ে
ওঠা ‘জেলা পরিষদ পার্ক’। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মালিকানাধীন এ
পার্কের বিশেষ আকর্ষণ রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত সেতুর আদলে তৈরী ‘ঝুলন্ত সেতু’। এ
পার্কে নতুন সংযোজন শিশুদের জন্য পাহাড় থেকে পাহাড়ে ‘রেল’ সার্ভিস। যা
আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে সম্বৃদ্ধ করে তুলবে।
হেরিটেজ পার্ক:
খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীর কোলে জেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উঁচু
পাহাড়ে অবস্থিত ‘হেরিটেজ পার্ক’। পর্যটন পিপাসুদের কাছে ‘হেরিটেজ পার্ক’
হয়ে উঠেছে নতুন ঠিকানা। পর্যটন মোটেলের বিপরীতে সৌন্দর্য্য মণ্ডিত ও
নান্দনিক হেরিটেজ পার্কটি পাহাড় ঘেরা প্রকতিতে বসে চাঁদনী রাতের দৃশ্যপট
দেখার সুযোগ করে দেবে।
রামগড় চা বাগান:
খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশমুখে খাগড়াছড়ি-ফেনী আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে ঠাঁই
করে নিয়েছে ‘রামগড় চা বাগান’। খাগড়াছড়িতে আসা ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের
স্বাগত জানাতে এটি সদা প্রস্তুত। ‘রামগড় চা বাগান’ আপনার ভ্রমনের
স্বার্থকতা এনে দেবে।
রামগড় লেক: খাগড়াছড়ির
প্রবেশদ্বার রামগড় উপজেলা সদরে ইংরেজি ডব্লিউ-এর অনুরূপ প্রায় ২৫০ মিটার
লম্বা নান্দনিক হ্রদ ‘রামগড় লেক’। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক
চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভুইয়া‘র পরিকল্পনায় গড়ে তোলা রামগড় লেকের উভয় পাশে
যোগাযোগের জন্য মাঝখানে রয়েছে সুদৃশ্য ঝুলন্ত সেতু। রামগড় লেক ঘেঁষে রয়েছে
মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতি ভাস্কর্য্য। এ লেকটি হতে পারে আপনার ভ্রমণের জন্য এক
অনন্য স্থান।
বিডিআরের জন্মভূমি রামগড়:
খাগড়াছড়ির সীমান্ত শহর রামগড়। তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি)‘র জন্মভূমি
জন্মস্থান এ রামগড়। এখানে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত অনেক
স্থান, স্থাপনা। রয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভাজনকারী ফেনী নদী। যা
আপনাকে ইতিহাস জানারও সুযোগ করে দেবে।
জলপাহাড়: মাটিরাঙ্গা
উপজেলা সদরে বিনোদন মূলক পার্ক ‘জলপাহাড়’ হতে পারে আপনার বিনোদনের অন্যতম
মাধ্যম। নাগরদোলা, ময়ুরপঙ্খী নৌকা হয়ে উঠবে আপনার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।
জলপাহাড়ের সুবিশাল লেক আপনাকে বাড়তি আনন্দ দিবে নি:সন্দেহে। নিরপাত্তা
বেষ্টনীর মধ্যে এতো বড় সুযোগ শহরের পাশে আর কোথাও নেই।
ভগবান টিলা: খাগড়াছড়ির
মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে ভারতের সীমান্তবর্তী ‘ভগবান টিলা’।
জেলা সদর থেকে উত্তর পশ্চিমে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কিলোমিটার।
সবুজের বুকে এ টিলা যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্র পৃষ্ঠ
থেকে প্রায় এক হাজার ছয়’শ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলায় রয়েছে বিজিবি‘র
সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। সবুজে ঘেরা বাঁশের ঝোপ, নাম না জানা নানান ধরনের
পার্থিব ডাক আর পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার কলকল জীবন্ত শব্দ
সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য স্বপ্নপূরী ‘ভগবান টিলা’।
মানিকছড়ি রাজবাড়ী:
খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশমুখ মানিকছড়ি উপজেলা সদরে
রয়েছে খাগড়াছড়ির অন্যতম দশর্নীয় স্থান ‘মানিকছড়ি রাজবাড়ি’। রাজবাড়িতে রয়েছে
মংসার্কেল চীফ বা মংরাজার রাজত্বকালীন স্থাপত্য। রাজার সিংহাসন, মূল্যবান
অস্ত্রশস্ত্রসহ প্রত্নতাত্ত্বিক অনেক স্মৃতি বিজড়িত এ ‘মানিকছড়ি রাজবাড়ি’।
শতায়ু বর্ষী বটগাছ:
মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের খুব কাছাকাছি আলুটিলা-বটতলী এলাকায় এ প্রাচীন
শতায়ু বর্ষী বট বৃক্ষটি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয় এ যেন দর্শনীয় আশ্চর্য কোন
উপাদান। দুই একরের অধিক ভূমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকের কাছে দারুণ
আকর্ষনীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ডালপালা মাটিতে মিশে কালের
পরিক্রমায় এক একটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
তৈদুছড়া ঝর্ণা: খাগড়াছড়ি
জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সবুজ পাহাড় আর বুনো জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত
নয়নাভিরাম ‘তৈদুছড়া ঝর্ণা’। অসাধারণ সৌন্দর্য আর প্রাকৃতিক বৈচিত্রতা
তৈদুছড়াকে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। আশ্চর্য রকম আর অনিন্দ্য সুন্দর এক
জলপ্রপাত বিধাতা যেন তার মহিমান্বিত হাতে ছড়িয়ে দিয়েছেন গহীন অরণ্যে। যা
একবার দেখলে বার বার ছুটে আসতে চাইবেন। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা সদর থেকে যাওয়া
যাবে তৈদুছড়া ঝর্ণায়।
দীঘিনালা শিবছড়ি পাহাড়:
অপার সৌন্দর্য্যের আরেক নাম শিবছড়ি পাহাড়। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর
থেকে প্রায় ১৬ কি.মি. দূরে দেওয়ানপাড়া এলাকায় অবস্থিত ‘শিবছড়ি পাহাড়’।
পাহাড়ী ছড়া, নালা আর গভীর অরণ্য পেরিয়ে বোয়ালখালী নদীর পাশ ঘেঁষে সুউচ্চ
পাহাড়ি ঝর্ণা ও সৌন্দর্য্যমণ্ডিত বিভিন্ন পাথরের রূপ পর্যটকদের আকৃষ্ট
করবেই।
শান্তিপুর অরণ্য কুটির:
পার্বত্য খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় দেখতে পাবেন দৃষ্টিনন্দন ‘শান্তিপুর
অরণ্য কুটির’। পাহাড়ি গাছ-গাছড়ায় ঘেরা পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরে রয়েছে
দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বুদ্ধ মূর্তি।
‘শান্তিপুর অরণ্য কুটির’ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। ১৯৯৯ সালে
নির্মিত ৫০ ফুট উচ্চতার এ বুদ্ধ মূর্তি আপনাকে আকৃষ্ট করবে।
পানছড়ি রাবার ড্যাম:
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার আরেক চোখ জোড়ানো ও মন মাতানো স্থাপনা ‘পানছড়ি
রাবার ড্যাম’। যা পানছড়ি উপজেলায় ভ্রমন পিপাসুদের নতুন ঠিকানা। দু’পাশে
বোরো’র মাঠে সবুজের প্রানবন্ত ঢেউয়ের নাচন, বাঁশঝাড় ও সবুজ অরণ্যের মাঝে
পাখির কল-কাকলি আর শিল্পীর নিপুন হাতের কারিগরি আঁচড়ে তৈরী ‘পানছড়ি রাবার
ড্যাম’ আপনাকে বিমোহিত করবে।
কিভাবে আসবেন: ঢাকা হতে
খাগড়াছড়ির দূরত্ব ৩১৬ কিমি ও চট্টগ্রাম হতে ১০৯ কিমি। রাজধানী শহর ঢাকার
কমলাপুর, সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান থেকে সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে
খাগড়াছড়িতে। সেন্টমার্টিন (এসি বাস), এস আলম, সৌদিয়া, শান্তি পরিবহন,
ইকোনো, ঈগল, এএস ট্রাভেলস ও শ্যামলী পরিবহনের বাসযোগে খাগড়াছড়ি আসতে পারেন
আপনি। আর এতে আপনাকে জনপ্রতি ৫২০-৫৫০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে। আর এসি বাসে
ভাড়া লাগবে ৮৫০ টাকা। আর চট্টগ্রাম থেকে আসতে হলে আপনাকে অক্সিজেন অথবা
কদমতলী বিআরটিসি বাস টার্মিনাল থেকে খাগড়াছড়ি অভিমুখী গাড়ীতে উঠতে হবে।
অক্সিজেন থেকে রয়েছে শান্তি পরিবহন অথবা লোকাল বাস আর কদমতলী থেকে বিআরটিসি
বাস। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি আসতে জনপ্রতি ১৮০-২২০ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]