রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

পাহাড়ে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি

প্রশাসন নির্বিকার ** প্রত্যন্ত এলাকার খবর কেউ রাখে না ** নিরাপত্তার ভয়ে মুখ খুলছে না ভুক্তভোগীরা অপ্রতিরোধ্যভাবে চলা ব্যাপক চাদাঁবাজির কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি বাঙ্গালিসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। সরকারি বেসরকারি কোন ব্যক্তি বা গোষ্টি এই চাদাঁবাজদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি এলাকায় নিরবে যে ধরণের চাঁদাবাজির মহোত্সব চলছে তা দেখার কেউ নেই। এটি কি বাংলাদেশের একটি অংশ নাকি অন্য কোন দেশের অংশ তা ভাবিয়ে তুলছে স্থানীয়দের। নিরাপত্তার অজুহাতে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলছে না এবং প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের নিরব ভূমিকার কারণে দিন দিন বেড়েই চলেছে চাদাঁবাজি। আর যাদের বিরুদ্ধে এসব চাদাঁবাজির অভিযোগ, তারা হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি সশস্ত্র গ্রুপ। যাদের মধ্যে অন্যতম ইউপিডিএফ।

রাঙ্গামাটির কয়েকটি এলাকা ঘুরে ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে কৃষিজীবি থেকে চাকরিজীবি, শ্রমজীবি থেকে ব্যবসায়ী সবাইকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়। আর এই চাঁদা দিয়ে যেতে হচ্ছে বছরের পর বছর। চাঁদাবাজির পরিমাণ প্রতিদিন বিভিন্ন অজুহাতে বেড়েই চলেছে। মোট কথা, এটা এক প্রকার নিয়ন্ত্রনহীন। কোনভাবেই চাঁদাবাজিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না স্থানীয় প্রশাসন। তারাও অসহায়। রাঙ্গামাটিতে প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এখানে ভুমি রেজিষ্ট্রি, ভুমি ক্রয় বিক্রয় বা অধিগ্রহণ করতে গেলেও চাদা দিতে হয়।      স্থানীয় প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, অন্যদের চাঁদাবাজি দেখবো কি, আমরাও দেই নানা কায়দায় চাঁদা।

রাঙ্গামাটি সদর, ঘাগড়া, মানিকছড়ি, ও কাপ্তাইর কয়েকটি এলাকায় নানা শ্রেণি-পেশার অন্তত অর্ধশত ব্যক্তি তাদের ওপর চাঁদাবাজির চাপ সম্পর্কে ইত্তেফাককে জানান। একজন পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, চাঁদা দিতে কখনো একটু দেরি হলেই যানবাহন আটকে রাখা থেকে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। কিছুদিন আগে একই কারণে রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে দু’টি ট্রাক জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঐ ট্রাক জ্বালিয়ে দেওয়ার মামলার আসামি ছিলেন ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসী রিভেন গ্রুপের সদস্য রমেল চাকমা। যার মৃতুকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ তাদের সন্ত্রাসী তত্পরতা এবং চাদাবাজির ঘটনা আড়াল করতে গত ২৩ এপ্রিল রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর আগে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি সড়কে এবং খাগড়াছড়ির দীঘিলানা সড়কে চাঁদার দাবিতে পণ্যবাহি ট্রাক আটক করে চালক ও হেলপারকে গুলি করার মতো ঘটনাও ঘটেছে।

ফুটপাতের একাধিক মৌসুমী ফল বিক্রেতা জানান, একশ টাকার মধ্যে ত্রিশ টাকা চাদা বিভিন্ন স্তরে দিতে হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি ট্রাক বাশ (বাইজ্যা বাশ) ছয়শ থেকে সাতশ টাকা, কলা প্রতি ট্রাক সাতশ থেকে আটশ টাকা, যানবাহন যেমন বাস, ট্রাক, জিপ, অটোরিকসা থেকে প্রতিবছর হিসেবে দুই হাজার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত  ইউপিডিএফ ও জেএসএস’র সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নিয়মিতভাবে চাদাঁ আদায় করে থাকে।

ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মাঝারি ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার, পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ জনগণ জানিয়েছেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর শুধু পার্বত্য তিনটি জেলা শহরের লোকজন কিছুটা নিরাপদে বসবাস করছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলে কি ধরনের নির্যাতন, চাদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপকর্ম তিনটি সশস্ত্র গ্রুপ চালিয়ে যাচ্ছে তা দেখার কেউ নেই। তারা এ ধরনের ঘটনাকে মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানায় এ কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেন প্রকৃত ঘটনা এবং পার্বত্য এলাকার বাস্তবচিত্র সম্পর্কে অবহিত হয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করেন। পার্বত্য তিনটি জেলার প্রায় ১৬ লাখ লোকের জীবন এক প্রকার বিপন্ন হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদনের পর এ এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেছিল শান্তিতে বসবাস করা যাবে। বসবাসকারীদের মধ্যে বাঙালি ৪৯ ভাগ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫১ ভাগ বলে স্থানীয় প্রশাসন জানায়। বাস্তবে ঘটছে তার বিপরীত। তিনটি গ্রুপই লাভবান হচ্ছে। তারাই বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে। পার্বত্য তিনটি জেলায় সশস্ত্র তিনটি গ্রুপের আধিপত্য এবং চাঁদাবাজির কারণে ওষ্ঠাগত অবস্থা। তাদের মধ্যে  দৃশ্যমান কোন সংঘাত না ঘটলেও প্রত্যন্ত এলাকায় বিষয়টি দৃশ্যমান। আর এই এলাকায় সিংহভাগ জনগণের বসবাস। তবে মাঝে মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর টহলের কারণে এখনো বেঁচে আছেন বলে তারা দাবি করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনটি সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে বেশ মিল রয়েছে। এক পক্ষ চাদাবাজি করতে গেলে অপর পক্ষ সহযোগিতা করে বলে জানা গেছে। 

একাধিক সূত্র এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের সাথে আলাপ কালে তারা বলেন, কিছুদিন আগে খাগড়াছড়ি থেকে ইউপিডিএফ’র শীর্ষ নেতা প্রদীপন খীসাকে আটক করা হয়। তার দখল থেকে আদায়কৃত চাঁদার ৮০ লাখ টাকা যৌথবাহিনী উদ্ধার করে। ওই সময় তার স্বশস্ত্র গ্রুপ ঘোষণা দেয় যে, এলাকা থেকে ওই টাকার পরিবর্তে এক কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হবে।

পরবর্তীতে ঠিকই এক কোটি টাকা চাঁদা তারা এলাকা থেকে তুলে নেয়। কৃষিজীবীরা তাঁদের চাষাবাদের ফল, ফসল, সবজি, হাঁস-মুরগি বিক্রি করলেও নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়।

রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে চাঁদা বাজির অভিযোগ পাওয়া যায় এবং চাদাবাজির দায়ে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে এবং অভিযোগ আসলে আমরা তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থাও নিয়ে থাকি।
রাঙ্গামাটিতে জেএসএস ও ইউপিডিএফ প্রায় সমানতালে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। বিভিন্ন মতাদর্শে এ দু’দলের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলেও চাদাবাজি সহ তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সরকার বিরোধী যে কোন আন্দোলনে একাত্নাভাবে আন্দোলন করে থাকে। এসব সংগঠনের ছাত্র, যুব, নারী সংগঠনসহ  দলের শাখা-প্রশাখা প্রত্যন্ত এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। চাঁদা নেওয়ার অভিযোগও তাদের দিকেই সবচেয়ে বেশি। তারা সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবীদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা নেয়। কৃষিজীবীদের কাছ থেকে মৌসুম ভিত্তিতে এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় চাঁদা সংগ্রহ করে। আর ঠিকাদারদের নিকট থেকে কাজের প্রাক্কলিত মূল্যের ১০%শতাংশ হারে। মোট কথা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজের হাজার হাজার কোটি টাকা পার্বত্য এলাকার  উন্নয়নের জন্য বরাদ্ধ দিলেও এর সিংহ ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামের এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসী দলকে চাদাঁ বাবদ দিতে হয়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে চাঁদা না দিয়ে পার্বত্য এলাকায় কোন উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব নয়।

আবুল খায়ের, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]