মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৭

বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতার দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত

উচ হ্লা ভান্তে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত
ধর্মীয় পৌরোহিত্যের আড়ালে ভূমি দখল ও অস্ত্র ব্যবসা করছেন পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বালাঘাটা বৌদ্ধ ধাতুজাদী স্বর্ণমন্দিরের গুরু উচ হ্লা ভান্তে। আর বিদেশীদের কাছ থেকে নেওয়া সুযোগ সুবিধা ও উপহার সামগ্রীর বিনিময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোপন তথ্য পাচার করেন মিয়ানমারের কাছে। এ ছাড়াও এই বৌদ্ধধর্মীয় নেতা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুসারে, উচ হ্লা ভান্তে প্রায়ই বিদেশে গিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী তথ্য আদান-প্রদান করেন। এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য রেখে বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এলাকার আঞ্চলিক সহিংসতা সৃষ্টি করেন। উচ হ্লা ভান্তে বান্দরবান এলাকায় ২৫-৩০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি পরিবেষ্টিত থাকেন। তারা বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবসায়ীসহ পাহাড়ী অঞ্চলের সন্ত্রাসীদের অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দর্শনার্থীদের টিকেট ফি, দানের টাকা, ভক্তদের নগদ আর্থিক সাহায্য থেকে প্রচুর অর্থ আসে কালাঘাটা রামজাদী ও বালাঘাটা বৌদ্ধ ধাতুজাদী স্বর্ণমন্দিরে। এ ছাড়া মায়ানমার ও চীনসহ কয়েকটি বৌদ্ধ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রায়ই বান্দরবানে উচ হ্লা ভান্তের কাছে আসেন এবং অর্থ সহায়তা দেন। এ সব টাকার পুরোটারই উচ হ্লা ভান্তের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এ নিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের লোকজনের সঙ্গে তার বিরোধ সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় বৌদ্ধদের উল্লেখযোগ্য একটি গ্রুপ তাকে মানেন না। তার অনুষ্ঠানে অংশ নেন না। তার বিরুদ্ধে বৌদ্ধ সমিতিসহ বৌদ্ধ, পাহাড়ী-বাঙালীদের জমি, সরকারি খাস জমি দখল করে পাহাড় কেটে কালাঘাটা রামজাদী নির্মাণ করার অভিযোগ রয়েছে। এ সব অভিযোগ নিয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি গোপন অনুসন্ধান শুরু করেছে।
২৩ নভেম্বর ২০১৪ দৈনিক সাঙ্গু পত্রিকায় প্রকাশিত
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, উচ হ্লা ভান্তে বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে দেশের প্রচলিত আইন ও প্রশাসনকে উপেক্ষা করে অবাধে মায়ানমার যাতায়াত করেন। বিভিন্ন সময় তিনি মায়ানমারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎ করে উপহার সামগ্রী ও অনুদান গ্রহণ করেন। উচ হ্লা ভান্তে মায়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছেন। ২০০৪ সালে মায়ানমারের প্রধানমন্ত্রী উচ হ্লা ভান্তের প্রতিষ্ঠিত বালাঘাটা জাদী কেয়াং (স্বর্ণমন্দির) পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী কেয়াং এর জন্য ৫০লাখ টাকা দান করেন। এ ছাড়া কেয়াং ঘরের জন্য বেশকিছু বৌদ্ধ মূর্তি প্রদান করেন। ২০০৮ সালে মায়ানমারের হাইকমিশনার ফি থান উ এক দিনের সফরে বান্দরবান আসেন। সে সময় মায়ানমার সেনাবাহিনীর একজন সিনিয়র জেনারেল মং এ রাঙ্গামাটি সফরকালে উচ হ্লা ভান্তের জন্য বেশকিছু উপহার সামগ্রী (ভান্তের পরিধানের জন্য কাপড়) নিয়ে এসেছিলেন। এ সব সুযোগ সুবিধা নিয়ে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্য মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেন। দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ভূমিদখল করায় উচ হ্লা ভান্তের চলাচল এবং মায়ানমার সফরের উপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছে।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বান্দরবান এলাকার বৌদ্ধ ধর্মীয় ভান্তের নেতা উপ ঞঞা জোত মহাথের প্রকাশের আরেক নাম উচ হ্লা ভান্তে। তিনি বান্দরবান বালাঘাটার পুল পাড়ায় বৌদ্ধ ধাতুজাদী (স্বর্ণমন্দির) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে তার প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণমন্দির বর্তমানে বান্দরবানের একটি শীর্ষ পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

ওই স্বর্ণমন্দিরে আগত দর্শনার্থীদের কাছ থেকে প্রবেশ মূল্য হিসেবে জনপ্রতি ১৫ টাকা করে আদায় করা হয়। এ আয়ের মাধ্যমে শুরু হয় উচ হ্লা ভান্তের নতুন যাত্রা। বিশাল এ আয় থেকে তিনি রামজাদী মন্দিরের অপরদিকে পাহাড়ের ঢালে হোটেল টাইপের একটি স্থাপনা তৈরি করেন। সেখানে সবসময় ৩০-৩৫ জন সশস্ত্র লোক অবস্থান করে। তাদের কাছে ১৫-২০টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলেও জানা যায়। একই সঙ্গে স্থানীয় জেএসএস ক্যাডারদের উচ হ্লা ভান্তের সঙ্গে সখ্য গড়ে থাকায় ঢাকা ও মায়ানমারকেন্দ্রিক একটি গ্রুপের সাথে নিরাপদে অস্ত্র ব্যবসা করে আসছেন। কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু হওয়ার কারণে সেখানে কোনোরকম অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে পারছে না স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বান্দরবান জেলার পুরনো রাজবাড়ী এলাকার মৃত মং শৈ প্রু এর ছেলে ইু মং প্রু জায়গা দখল করে উচ হ্লা ভান্তে টয়লেট নির্মাণ করেন। এ ঘটনায় উচ হ্লা ভান্তের বিরুদ্ধে গতবছরের ৩০ জানুয়ারি বান্দরবান কোর্টে অভিযোগ দাখিল করা হয়। চলতি বছরের গত ৭ মে জমি দখলের অভিযোগে বান্দরবান সদরের পাল পুরহিত এলাকার হামসনহা ত্রিপুরার ছেলে রমেশ ত্রিপুরার জায়গা উচ হ্লা ভান্তে জবর দখল করায় তার বিরুদ্ধে বান্দরবান কোর্টে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও বান্দরবান এলাকার আবুল হাসেম, অজিত কান্তি দাস, নুরুল আলম, সহিদুর রহমান, থোয়াইসাং প্রু ও আব্দুল মাসদের জমি দখল করার অভিযোগে উচ হ্লা ভান্তের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করা হয়।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা প্রশাসক কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, উচ হ্লা ভান্তের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ সত্য। তিনি মন্দির কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষে একাধিক ব্যক্তি মালিকানা ও সরকারি জমি দখল করছেন। কিন্তু ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

কে এই উচ হ্লা ভান্তে?
মৃত হ্লা থোয়াই প্রু-এর ছেলে উচ হ্লা ভান্তে। ১৯৫৫ সালে বান্দরবান জেলার পুরাতন রাজবাড়ী উজানী পাড়ার বোমাং রাজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অবিবাহিত এ ব্যক্তির উচ্চতা ৫ফুট ৬ ইঞ্চি। আয়ের উৎস ধর্মীয় ব্যবসা। স্থানীয় রাজনৈতিক দল জেএসএস-এর সমর্থক। ভনভস্কো উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৭৪ সালে এসএসসি ও চট্টগ্রাম থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (আইন) পাস করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, উচ হ্লা ভান্তে ১৯৮৩-৮৪ সালে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সাব জজ হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন। সাব জজের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় তিনি গোপনে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ও জেএসএস আন্দোলনে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯০ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করে বান্দরবানে ভান্তে ব্রত গ্রহণ করেন এবং উপ ঞঞা জোত থের ছদ্মনাম ধারণ করেন। আগামীতে বৌদ্ধ ধর্মের শীর্ষনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন।

উচ হ্লা ভান্তে মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জাপানসহ বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশ ভ্রমণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি কিছুদিন পরপরেই মায়ানমার সফর করে থাকেন। গত বছর ২৬ জুন ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে মায়ানমারের ইয়াংগুন গমন করেন। চলতি বছরের ২১ জুন মায়ানমারের মান্ডেনা গমন করেন। একই বছর ২৭ জুন ইয়াংগুন ডিভিশনের Chief Minister U Myint Swe-এর সাথে সাক্ষাৎ ও দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ৩ জুলাই মিয়ানমার থেকে ঢাকায় আসেন এবং ৫ জুলাই বান্দরবান গমন করেন।

এ ঘটনায় বান্দরবান জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) দেবদাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, উচ হ্লা ভান্তে একটি ধর্মীয় গুরু। তার মন্দিরে আশপাশের জনগণ ধর্মীয় প্রার্থনার জন্য আসেন। তিনিও বিভিন্ন দেশে যান। যেমন মুসলমানরা আজমীর শরীফসহ বিভিন্ন দেশের মাজারে যান। এ কারণে আমরা তাকে কিছু বলতে পারি না। তবে অস্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রাখা আছে।

এ সব অভিযোগ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানার জন্য উচ হ্লা ভান্তের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে দ্য রিপোর্টের পক্ষ থেকে উচ হ্লা ভান্তের ল্যান্ডফোনে কল করলেও তা কেউ রিসিভি করেননি।

প্রসঙ্গত, বান্দরবানের স্থানীয় একটি পত্রিকা সাঙ্গু ও ঢাকার একটি অনলাইন পত্রিকা দ্য রিপোর্ট২৪ ডটকমে বিগত ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ‘বৌদ্ধধর্মীয় নেতা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

বৌদ্ধধর্মীয় নেতা দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত (দ্য রিপোর্ট/কেজেএন/এইচএসএম/এনআই/নভেম্বর ২২, ২০১৪)


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]