সোমবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৮

মিঠুন চাকমা খুনের অজানা কথা ও আরও সংঘাতের শঙ্কা

অরণ্য আর সবুজ বনভূমির পার্বত্য অঞ্চল। দীর্ঘ দুই দশক ধরে পাহাড়ের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিভক্তির কারণে দিন দিন বাড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘাত। সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতি–জেএসএস’র উদ্যোগে করা শান্তি চুক্তিকে আপোষের চুক্তি আখ্যা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর ঢাকায় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) আত্মপ্রকাশ করে। ফলে সন্তু লারমা ও প্রসীতের নেতৃত্বে দুই সংগঠনের আধিপত্য বিস্তারের লড়াই শুরু হয়। সেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘর্ষে যোগ দিল আরো দুইটি আঞ্চলিক দল জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে দুইটি সংগঠন। চারটি দলের বিবাদে প্রায় প্রতিমাসে পাহাড়ি জনপদে ঝরছে তাজা প্রাণ। সেই মৃত্যুর মিছিলে যোগ হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র, পিসিপির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বর্তমানে ইউপিডিএফ কেন্দ্রীয় সংগঠক মিঠুন চাকমা। প্রকাশ্যে দিবালোকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। মিঠুন চাকমা দলের সাধারণ কোন কর্মী ছিল না। মিঠুন চাকমা জুম্ম নামে দক্ষিণ এশিয়ার জাতিসত্ত্বার সংগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস, সংগ্রামসহ নানা বিষয়ে ব্লগে লিখতেন। ৩০ নভেম্বর নিজের লেখা ‘প্যালেস্টাইনের জনগণের সংগ্রাম ’ নামক ৮ পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা বের করেন। পুস্তিকাটি নেতাকর্মীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এছাড়া তিনি ভালো বক্তাও ছিলেন।

বৃহস্পতিবার সকালে মিঠুন চাকমার বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িজুড়ে শোকের ছায়া। স্বামীকে হারিয়ে শোকে মুর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী রিনা দেওয়ান। বাড়িতে একে একে দেখতে আসছে মিঠুনের স্বজন ও রাজনৈতি সহকর্মীরা। মিঠুনের দুই বছরের অবুঝ শিশু অর্তিক জানে বাবা এখনও ঘুমে। সে কি জানে কোনদিন তার বাবা আর ফিরবে না!

মিঠুন চাকমার কাকা নিরুপন চাকমা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে মিঠুন যুক্ত হয় ইউপিডিএফ’র রাজনীতির সাথে। মিঠুনের মত প্রায় ছয় শত প্রাণ ঝরল গত দুই দশকে। প্রায় কাছাকাছি দাবিতে বিভক্ত এসব দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে বলি হয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সমর্থকসহ সাধারণ মানুষ।

২০১৩ সালের ১২ মার্চ খুন জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) এর সাংগঠনিক সম্পাদক সুদীর্ঘ চাকমা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা সুদীর্ঘ চাকমা দলটির অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিল। তার মৃত্যুতে দলটি বড় ধাক্কা খায়। এর আগে অনিমেষ ও রূপক চাকমা নামে আরো দুই মেধাবী নেতা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের বলি হয়।বিভিন্ন সময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে মেধাবীদের টার্গেট করা হয়। মূলত দলের সাংগঠনিক শক্তিকে দুর্বল করতেই এই হীন পন্থা বেছে নেয়া হয়। নেতাকর্মী খুনের পাশাপাশি চলতে থাকে অপহরণ, গুম।

জেএসএস এবং ইউপিডিএফ দুই দলের সংঘাতে দুই দলের বহু কর্মীকে হত্যা করা হয়। পাহাড়ে চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৬ শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক। তবে দীর্ঘদিন পর হলেও গত দুই বছর ধরে অলিখিত সমঝোতায় সেই সংঘাত অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন দলটি প্রথমবারের মত দ্বিবিভক্ত হল। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ’র একাংশ সাংবাদিক সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে তপন জ্যোতি চাকমাকে আহ্বায়ক ও জলেয়া চাকমাকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের বিভক্তির পর থেকেই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের শঙ্কা করা হচ্ছিল।

ইউপিডিএফ এর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রবি শংকর চাকমা অভিযোগ করে বলেন, ‘১৫ নভেম্বর শন্তু লারমার মদদে ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরো একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। তিনি এক বিবৃতিতে নব্য মুখোশ বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডএফ সংগঠক মিঠুন চাকমাকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে ‘বর্বরোচিত ও মার অযোগ্য অপরাধ’ বলে উল্লেখ করেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার খাগড়াছড়িতে আদালতে হাজিরা শেষে শহরের অপর্ণা চৌধুরী পাড়াস্থ নিজ বাড়িতে গেলে আনুমানিক দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তাকে অপহরণ করে স্লুইস গেইট এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে সন্ত্রাসীরা তাকে মাথায় ও পেটে গুলি করে রেখে যায়। পরে লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]