পাহাড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সুস্বাদু কমলা চাষ। জুম চাষের পরিবর্তে বান্দরবানের পাহাড়ে কমলা-মাল্টা’সহ মিশ্র ফল চাষের দিকে ঝুকঁছে জুমিয়া চাষীরা। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাহাড়ে উৎপাদিত সু-স্বাদু কমলা বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার হাট-বাজারগুলোতে। স্থানীয় হাট-বাজারে এক জোড়া বড় সাইজের কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকায়। ছোট সাইজের গুলো দু’একটা কম দামে। কমলা চাষ করে অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে রুমা’র বটতলী পাড়া’ সহ আশপাশের অনেক চাষী। জানাগেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১৯৯৯ সালে তিন পার্বত্য জেলায় ছয়শ কৃষক পরিবারকে পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে পাহাড়ে কমলা’সহ মিশ্র ফল চাষের প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রকল্পটি ছিল পার্বত্যাঞ্চলে ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষীদের কমলা ও মিশ্র ফসল চাষ। প্রকল্পে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে ছয়শ পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়। পরিবারগুলোর মাঝে ৪৫০টি কমলা, ৯০০টি কফির চারা, ৪৫০টি পেঁেপ, ১৫০০টি কলা এবং ৩ হাজার আনারস চারা দেওয়া হয়। মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বান্দরবান’সহ তিন পার্বত্য জেলায় পরিকল্পিতভাবে কমলা চাষ শুরু হয়। লাভজনক হওয়ায় স্থানীয় পাহাড়ীরা এখন জুম চাষের পরিবর্তে কমলা’সহ মিশ্র ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জেলার রুমা উপজেলার বটতলী পাড়া, ইডেন পাড়া, মুন্নম পাড়া, বেথেল পাড়া, এথেল পাড়া, বগালেক পাড়া, কৈক্ষ্যংঝিড়ি, পাইন্দু, রনিন পাড়া মুরংগ পাড়া, শঙ্খমনি পাড়া, থানচি উপজেলার এ্যাম্পু পাড়া, কুনাং পাড়া, জিনিংঅং পাড়া, মঙ্গী পাড়া, রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া, গালেঙ্গ্যা, ঘেরাও, দোলিয়াম পাড়া, পোড়া পাড়া এবং জেলা সদরের ডলুপাড়া, স্যারন পাড়া ও লাইলুনপি পাড়া এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় তিন হাজারের বেশি কমলা বাগান।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলার সাত উপজেলায় গতবছর কমলা চাষ হয়েছিল দুই হাজার ৯৩ হেক্টর জমিতে। এবছর বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে। গতবছরের তুলনায় চাষ বেড়েছে ১৭ হেক্টর। গতবছর উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ৩২ হাজার মেট্টিকটন। এবছর উৎপাদনও বাড়বে। জেলায় তিন হাজার চাষী কমলা চাষের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। প্রতিবছরই কমলা, মাল্টা’সহ মিশ্র ফল চাষের পরিমাণ বাড়ছে এই অঞ্চলে।
রুমা উপজেলার রনিন পাড়ার কমলা চাষী জায়াল বম ও গ্যালেঙ্গা পাড়ার মেনরুং ম্রো জানান, লাভজনক হওয়ায় জুম চাষ ছেড়ে পাহাড়ে কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়ীরা। জুমের পরিবর্তে কমলা চাষ করে লাভবান হয়েছে তার পরিবার। তাদের দেখাদেখি কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছে আরও অনেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বাজারে নিয়ে গিয়ে কমলা বিক্রি করতে পারছিনা। খুচরা ব্যবসায়ীদের কম দামে বাগান বিক্রি করে দেয়ায় লাভের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
আমতলী পাড়ার নিমথুই মারমা ও বটতলী পাড়ার মেলাং মারমা বলেন, ছোট্ট ছোট্ট গাছগুলোতে থোকায় থোকায় কমলা শোভা পাচ্ছে। গাঢ় সবুজ রঙের কমলার কোনো কোনোটিতে হলুদাভ এসেছে। প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৫০টি ফল ধরেছে। কোনো কোনো গাছে তারও বেশি। এক লাখ ৩৫ হাজার টাকায় দুটি কমলা বাগান বিক্রি করে দিয়েছি খুচরা ব্যবসায়ীদের। এবার আকারে বড় এবং আশানুরূপ ফলন হয়েছে কমলার।
স্থানীয় মিশ্র ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, রুমা এবং থানচি উপজেলা থেকে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কমলা কিনে এনে বাজারে বিক্রি করি। চাষীদের কাছ থেকে আকার অনুপাতে একশ কমলা ৯শ থেকে ১২শ টাকায় কিনে নেয়া হয়। পরিবহণযোগে বাজারে এনে প্রতি জোড়া কমলা ছোটগুলো ২৬ টাকায় এবং বড়গুলো ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি করি। এখানে উৎপাদিত কমলা খেতে খুবই সু-স্বাদু হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে। স্থানীয় বাজার ছেয়ে গেছে এই অঞ্চলে উৎপাদিত কমলায়। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরাও এখানে উৎপাদিত কমলা কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাড়ীতে করে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক নাজমুল হক জানান, জুম চাষের পরিবর্তে পাহাড়ে কমলা’সহ মিশ্র ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছে চাষীরা। কমলা চাষের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। মাল্টা চাষ বাড়াতে কৃষি বিভাগের অর্থায়নে ৩০টি বারী মাল্টা-১ জাতের প্রদর্শনী বাগান গড়ে দেয়া হয়েছে ৩০ জন চাষীকে। বীজ, সার, প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের পাহাড়ের মাটি কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। ফলন ভালো হওয়ার পরও অগ্রিম টাকায় বাগান কিনে নেয়া ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা রং আসার আগেই থোকায় থোকায় ছোট কমলা ছিড়ে বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। ফলে উৎপাদিত কমলার স্বাদ অনেক কমে যাচ্ছে এবং খেতে একটু টক লাগছে। কমলাগুলো পরিপক্ষ হওয়ার সুযোগ পেলে এবং সঠিক পরিচর্যায় কমলা বাগান সংরক্ষণ করা গেলে বান্দরবান একদিন কমলা চাষের জন্য বিখ্যাত হবে। কমলা চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে চাষীদের অনেকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]