মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

শান্তি চুক্তির ২২ বছর: আসেনি শান্তি বেড়েছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি



বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আঞ্চলিক দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সাথে ২২ বছর আগে আজকের দিনে শান্তি চুক্তি সই করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীল তৎকালীন সরকার। কিন্তু আজও সেই কাঙ্ক্ষিত শান্তি আসেনি পাহাড়ে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এ শান্তি চুক্তি সই হবার পর গত ২২ বছরে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এ তিন পার্বত্য জেলায় নানামুখী সংঘাতে কয়েকশ’ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববারেও রাঙ্গামাটির মগবানে বিক্রম চাকমা নামে জনসংহতি সমিতির এক সদস্য প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত হয়েছেন। পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পন্ন হবার বর্ষপুর্তি উপলক্ষে প্রদত্ত এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, তার সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সর্বত্র শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।

শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা গতকাল রাজধানীতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেছেন, পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি বলেছেন, পাহাড়ের জুম্মু জনগোষ্ঠী অধিকারকামী ও মুক্তিকামী। তারা তাদের নিজেদের জাতিগত ও জন্মভূমির অস্তিত্ব সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। জুম জনগণ সমঅধিকার ও সমমার্যাদা নিয়ে বাঁচতে চায়।

তবে জেএসএস-এর সশস্ত্র কর্মীরা বলছে- তারা পাহাড়ে আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে সংগ্রাম করছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তি সই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমা

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার দাবি করছে, শান্তিচুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি পূর্ণাঙ্গ এবং ৭টি আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন।

তবে চুক্তির অপর অংশিদার জেএসএস অভিযোগ করে আসছে চুক্তির ৭২ দফার মধ্যে এখনও ৪৭টি দফাই বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকেই মূল দফা হিসেবে গণ্য করছে পাহাড়ি নেতারা।

নানামুখী জটিলতার অজুহাতে গত ২২ বছরেও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রন্ত এই গুরুত্বপূর্ণ ধারাটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শান্তি চুক্তির কার্যকারিতা নিয়েই সংশয় রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষদের মাঝে।

এ বিষয়টি নিয়ে পাহাড়ি আদিবাসীদের মধ্যে যেমন অসন্তোষ রয়ে গেছে তেমনি পার্বত্য আইন অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করা হলে বঞ্চিত হওয়ার শংকায় রয়েছেন বাঙালিরা।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম বলেন, কর্মকাণ্ডগুলো চালু না হলে ৫০ বছরেও এ চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব না।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য খগেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, ভূমি সমস্যার সমাধান হলেই অধিকাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

এছাড়া, পার্বত্য শান্তি চুক্তির আলোকে গত ২২ বছরেও স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত হয়নি এখন পর্যন্ত। বর্তমানে সরকার মনোনীত কমিটির মাধ্যমে পরিষদগুলো পরিচালিত হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, চুক্তি অনুসারে দুইটি প্রবিধান প্রণয়ন করলেই জেলা পরিষদের নির্বাচন সম্ভব।

স্থানীয় সংসদ সদস্য ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার বলেছেন, ‘২২ বছরেও পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন হলো না, এটা নিয়ে আমাদেরও অতৃপ্তি আছে। কিন্তু এর জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। চুক্তির অধিকাংশ ধারাই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে পাহাড়ে সংঘাত ও অস্থিরতার কারণে চুক্তি বাস্তবায়নে গতি নেই।’ স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর একটি অংশ চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে না বলে দীপংকর তালুকদার উল্লেখ করেন।

পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান আফসোস করে বলেছেন, চুক্তির পর ২২ বছর পেরিয়ে গেল কিন্তু এখনো পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিনটি জেলা পরিষদে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলো না। নির্বাচন না হওয়ায় আঞ্চলিক পরিষদে বছরের পর বছর জনসংহতি সমিতির লোকজন এবং জেলা পরিষদগুলোতে সরকারের পছন্দের ব্যক্তিরা আছেন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকলে জবাবদিহির সৃষ্টি হয় না এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও থাকে না।

চুক্তি অনুযায়ী ভূমি, বন ও পরিবেশ এবং আইনশৃঙ্খলা প্রভৃতি বিভাগকে জেলা পরিষদের অধীনে নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে গৌতম দেওয়ান বলেন, এখন সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এটা বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু চুক্তিতেই তো আছে প্রয়োজনে আইনের সংশোধন, সংযোজন-বিয়োজন করা হবে।

লেখক : লোকমান হোসেন

পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·    পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]