নিরাপত্তার অজুহাতে ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮১টি গুচ্ছগ্রামে প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি পরিবার নিয়ে আসে সরকার। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নিজ জায়গায় ফিরতে পারেনি এসব পরিবার। এদিকে দীর্ঘ ৩৪ বছরে পরিবারের সদস্য সংখ্যা লক্ষাধিক হওয়ায় গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে সরকার বা প্রশাসনের কোনও পদক্ষেপ না থাকায় হতাশা বিরাজ করছে গুচ্ছগ্রামগুলোয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০-৮১ সালে তৎকালীন সরকার খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে লক্ষাধিক ভূমিহীনকে পুনর্বাসিত করে। বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি পাহাড়ে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) সংগঠনটির সশস্ত্র শাখা শান্তিবাহিনী তখন পুনর্বাসিত এসব পরিবারের ওপর হামলা ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ফলে প্রাণ ও সম্পদহানি হওয়ার ঘটনা হয়ে পড়ে নিত্য নৈমিত্তিক। ফলে পুনর্বাসিত এসব পরিবারের নিরাপত্তার জন্য ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা এসব লোকজনকে ৮১টি গুচ্ছগ্রামে নিয়ে আসে সরকার। এরপর গুচ্ছগ্রামেই কেটেছে তাদের ৩৪ বছর। আজ ৫০ হাজার পরিবার পরিণত হয়েছে প্রায় দুই লাখ পরিবারে। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি গুচ্ছগ্রামে আবদ্ধ অসহায় এসব লোকের। মাঝে মাঝে তারা সেসব জায়গায় ফিরতে চাইলে পাহাড়ি সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে।
পার্বত্য বাঙালি ছাত্রপরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুল মজিদ বলেন, ‘নিরাপত্তার নামে ১৯৮৫-১৯৮৮ সাল পর্যন্ত খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা লোকজনকে ৮১টি গুচ্ছগ্রামে নিয়ে আসে সরকার। তারপর গুচ্ছগ্রামেই কেটেছে তাদের ৩৪টি বছর। পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভাগ্যের উন্নয়ন হয়নি গুচ্ছগ্রামে আবদ্ধ এসব অসহায় লোকজনের।’ আরেক বাঙালি নেতা আবদুল আজিজ আকন্দ বলেন, ‘হাজার হাজার বাঙালি পরিবারকে গুচ্ছগ্রাম নামক জেলখানায় রাখা হয়েছে। বাঙালিদের ভবিষ্যত কী? তারা আর কতদিন এই পরিস্থিতিতে থাকবে? সরকার ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের পুনর্বাসনের জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে, অথচ দেশের ভেতর আজ আমরা তৃতীয় শ্রেণির নাগরিকে তথা উদ্বাস্তু হয়ে থাকার পরও কোনও পরিকল্পনা নেই। গুচ্ছগ্রামবাসী আজ সরকারি পদক্ষেপের কারণে চরম অমানবিক পরিবেশে বসবাস করছে, যা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।’
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভূয়াছড়ি গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক জানান, ৩৪ বছর ধরে এখানে তারা দুর্ভোগের জীবন কাটাচ্ছেন। গবাদি পশুর সঙ্গে তাদের বসবাস করতে হচ্ছে। ফলে বর্তমানে গুচ্ছগ্রামগুলোতে বস্তি এলাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পানছড়ি গুচ্ছগ্রামের মোফাজ্জল হোসাইন বলেন, প্রবেশের সড়কগুলো যেন নালা। ঘরবাড়ির চারিদিকে গবাদি পশুর মলমূত্র। এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থেকে অনেকে অসুস্থ হচ্ছে। তিনি তাদের জায়গা পাহাড়িরা দখল করে ফেলেছে উল্লেখ করে অবিলম্বে তাদের জায়গায় ফিরতে চান। তিনি দ্রুত সরকারের পদক্ষেপ কামনা করেন।
দিঘীনালা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামগুলোতে স্যানিটেশন ও পানি নিশ্চিত সবচেয়ে জরুরি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গুচ্ছগ্রামবাসীর জন্য স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।’
জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘এটি শুধু খাগড়াছড়ি জেলার সমস্যা নয়, এই সমস্যা রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায়ও। জেলা প্রশাসন এককভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। তাছাড়া পুরো বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলসহ স্থানীয় নেতারা পরিকল্পনামাফিক এগুলো সমাধান সম্ভব।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, কবে নাগাদ বাঙালিরা তাদের রেকর্ডীয় জায়গায় ফিরবে, বা তাদের বেদখল করা জায়গাগুলো কীভাবে উদ্ধার হবে বা জায়গা উদ্ধার সম্ভব না হলে অন্য কোন পদক্ষেপ সরকার নেবে-তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’ তবে গুচ্ছগ্রামবাসীদের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক সমস্যা। সরকার ও স্থানীয় নেতারা চুক্তি করেছে, নিজেদের মধ্যে বারবার আলাপ-আলোচনা করছে। সরকার গুচ্ছগ্রামে বসবাসরত লোকজনের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। প্রত্যেক মাসে পুনর্বাসিতদের রেশন দেওয়া হচ্ছে।’ রেশনিং এ সরকারের লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারীদের নিজ জমিতে পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকার আন্তরিক।’ সবার সহযোগিতায় এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
লেখক : জসিম মজুমদার, খাগড়াছড়ি
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]