বৃহস্পতিবার, ২৫ জুন, ২০১৫

হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল বা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালার গোমর!

CHT Timur
১৯০০ সালের ৬ জানুয়ারী ‘হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল’ বা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালা প্রণয়ন করে ইংরেজরা। যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম দেশের একটি অনিয়মিত জেলা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই বিধিমালা সাধারণ মানুষকে কোন সুবিধা না দিলেও, সামন্ত প্রভুদের ব্যাপক সুবিধা দিয়েছিল। ১৯০০ সালের হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল বা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিধিমালাকে একটা অন্যতম দলিল হিসেবে পাহাড়িরা গণ্য করে থাকে, যদিও ওই বিধিমালার বেশিরভাগ ধারা ছিল উপজাতীয়দের জন্য অবমাননাকর। বাহ্যত এটিকে দেখে মনে হবে এর মাধ্যমে পাহাড়িদের ভূমিপুত্র হিসেবে সেখানে ‘স্বীকৃতি’ দিয়েছে বৃটিশরা। কিন্তু আদতে তা ছিল না। কারন সেখানে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যাতীত বাইরের কারো পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু কেন নিষিদ্ধ ছিল, তা উপজাতি ‘অ্যাক্টিভিস্ট’ কিংবা সুশীল ‘দরদীরা’ উল্ল্যেখ করেন না! বিধি অনুসারে গোটা পার্বত্য জেলার বিধাতা বনে যান জেলা প্রশাসক বা ডেপুটি কমিশনার, যিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে থেকে ইংরেজ কতৃক নিযুক্ত হবেন! এই বাক্যটি উপজাতি নেতারা খুব সচেতনভাবে এড়িয়ে যান। এই বিধিমালার উল্ল্যেখযোগ্য কয়েকটি বিধান হচ্ছে,

  • পার্বত্য এলাকা ‘নন-রেগুলেটেড এরিয়া’ বা ‘অনিয়ন্ত্রিত’ এলাকা হিসেবে ঘোষিত হয়, যেখানে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ব্যাতিত কেউ প্রবেশ করতে কিংবা বসতি স্থাপন করতে পারবে না।
  • উপজাতীয়রা পঁচিশ বিঘা জমি ব্যাবহার করতে পারবে, কিন্তু মালিক হতে পারবে না।
  • বিচারালয়ে কোন উকিল থাকবে না।
  • রাজা, হ্যাডম্যান ও কারবারিরা থাকবে।
  • দরকার হলে উপজাতীয়রা বিনা পারিশ্রমিকে সরকারি কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক কাজ করে দিতে বাধ্য থাকবে।
  • রাজা, হ্যাডম্যান এমনকি কারবারিরাও তাঁর অধীনস্থ উপজাতীয়দের খাটাতে পারবে কোন পারিশ্রমিক না দিয়েই!
যদিও এই বিধিতে বৃহত্তর পার্বত্য উপজাতীয় জনগোষ্ঠী পরিনত হয় দাস আর ইংরেজ-সামন্ত চক্র বনে যায় প্রভু, তথাপি এই বিধিকে বলা হয় স্বায়ত্বশাসনের অধিকার! অথচ, সেখানে অধিকার বলতে কিছুই ছিল না পার্বত্যঞ্চলের অধিবাসীদের। অর্থনীতি ও শাসন প্রায় পুরোটাই থাকে ইংরেজ ডেপুটি কমিশনার তথা জেলা প্রশাসকের হাতে, বাকী কিছুটা থাকে তাদের আজ্ঞাবহ সামন্ত-রাজন্যবর্গের হাতে! পার্বত্যঞ্চলের বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানোর জন্য ইংরেজরা হাতির জন্য উপযুক্ত সরু পথ ও নয় মেইল পরপর নির্মান করে বিশ্রামাগার। কারন, হাতি একদিনে নয় মাইলই হাটতে পারে। এই বিধিতে উচ্চবিত্ত চাকমা পরিবার ইংরেজদের কাছে নানা সুবিধা লাভ করে।

কিন্তু একটি মাত্র ধারা যার জন্য এটাকে উপজাতি নেতারা আঁকড়ে ধরতে চায় তা হলো, পার্বত্য অঞ্চলে জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া বাইরের কেউ সেখানে যেতে বা বসতি স্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু এই বিধি যুক্ত করার মূল কারন হচ্ছে, উনিশ শতকের শেষের দিকে ব্রিটিশের সাথে যুদ্ধরত কুকিদের ঠেকানো। পার্বত্য চট্টগ্রামে কুকিদের জঙ্গি হামলার উপদ্রব ঠেকাতে তৎকালীন ব্রিটিশরাজ ১৯০০ সালের হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল জারি করতে বাধ্য হয়। এটার সাথে পাহাড়িদের ভূমিপুত্র হিসেবে ‘স্বীকৃতি’ দেয়া বা ‘সম্মানিত’ করার কিছু ছিল না। একই সাথে ছিল না বাঙালিদের নিয়ে সমস্যাও। ওই সময়কার ব্রিটিশ হিসেবেই দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার শতকরা তিন ভাগ বাঙালি মুসলমান। এছাড়া তৎকালীন সময়ে সেখানে বাঙালি কিংবা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির মানুষ হরহামেশাই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারতো। সুতরাং বর্তমানে বাঙালিদের আগমন বন্ধ করতে এই বিধিমালার দোহাই যে দেওয়া হচ্ছে, তার নৈতিক ভিত্তি কতটুকু? এসব বরং সন্দেহ জাগানিয়া!

এছাড়া আরও অনেক কিছু দেখেই আমার বক্তব্য পরিস্কার হবে। এই বিধিমালায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা করে ওই এলাকার বাসিন্দাদের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত আশ্রিত জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া তাদের ভূমিধিকার ছিল না। উপজাতীয় কারবারিদের শুধু যাযাবর জুম চাষের পাঁচসালা বিলিব্যবস্থা ও বন্য প্রাণী রক্ষণাবেক্ষণের ভার দেয়া হয়। বাঙালিদের দেখাদেখি খুবই সামান্যসংখ্যক উপজাতীয় হালচাষ রপ্ত করে। বিধিমালায় স্পষ্ট করে লেখা ছিল উপজাতীয়রা পঁচিশ বিঘা জমি ব্যাবহার করতে পারবে, কিন্তু মালিক হতে পারবে না। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়া সত্ত্বেও তিন উপজাতীয় প্রধানকে জমিদারি স্বত্ব দেয়া হয়নি। শুধু রাজা খেতাব দিয়ে খুশি রাখা হয়েছিল। এই ‘রাজা’দের ক্ষমতা ছিল কেবল খাজনা আদায় করার! তখনকার সময় এর আর্থিক মূল্য থাকলেও এখন সেই মূল্য নামেমাত্র! নামেমাত্র মূল্যের সেই খাজনা এখনও রাজপরিবার আদায় করে।

আর আইনী দিক যদি বিবেচনা করি, তাহলে বলতে হয় ১৯২০ সালে স্বয়ং ইংরেজরাই পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘এক্সক্লুসিভ এরিয়া’ ঘোষণা দিয়ে সেখানে বহিরাগতদের আগমন প্রক্রিয়া সহজ করেছিল। এমনকি পাকিস্তান সরকার এই গোটা বিধিমালাই একবার বাতিল করেছিল, সাধারন পাহাড়িদের স্বার্থে। পরে আবার বিভক্তি আনয়নের জন্য এটি আবার চালু করে। যেহেতু এই বিধিমালা সৃষ্টি যারা করেছিল, সেই বৃটিশরাও এই বিধিমালার মধ্যে যেই বিশেষ বিধিটির প্রতি বর্তমানে পাহাড়ি নেতাদের প্রচন্ড আগ্রহ তা বাতিল করেছিল এবং বৃটিশদের পরের শাসকও একবার গোটা বিধিমালাটিই বাতিল করা হয়েছিল, সেহেতু এর কার্যকারীতাকে আদর্শ বলে বিবেচনা করা যায় না। দোষ দেয়া যায় না বর্তমান বাংলাদেশী শাসকদেরও।

তবুও যারা অবুঝ, তাদেরকে প্রশ্ন করি কিছু। যদি হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল আইন পরিপূর্ণভাবে প্রযোজিত করা হয়, তাহলে কি সেটা সাধারন পাহাড়িদের অধিকার সংরক্ষিত হবে? “২) উপজাতীয়রা পঁচিশ বিঘা জমি ব্যাবহার করতে পারবে, কিন্তু মালিক হতে পারবে না। ৩) বিচারালয়ে কোন উকিল থাকবে না। ৫) দরকার হলে উপজাতীয়রা বিনা পারিশ্রমিকে সরকারি কর্মকর্তাদের চাহিদা মোতাবেক কাজ করে দিতে বাধ্য থাকবে। ৬) রাজা, হ্যাডম্যান এমনকি কারবারিরাও তাঁর অধীনস্থ উপজাতীয়দের খাটাতে পারবে কোন পারিশ্রমিক না দিয়েই!” – এই বিধিগুলো সাধারন পাহাড়িদের উপকার করবে, নাকি এলিটদের? লেখক: নাজমুল আহসান


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]