পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। দেশের সকল অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে পাহাড়িদের উপজাতি কোটা পদ্ধতি এখনো বহাল আছে। সেই সুবাদে পাহাড়িরা এবং তাদের সন্তানেরা সবসময়ই বাঙালিদের তুলনায় অধিক সুবিধা ভোগ করছে। সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর জনসাধারণ নির্দ্বিধায় বসবাস করছে সেখানে পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিদের বসবাস কেন সন্তু লারমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়? তবে কি এর গভীরে অন্য কোনো বক্তব্য আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সন্তু লারমা কি কোনো গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? ২ ডিসেম্বর শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি এলেই নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানোর জন্য বিভিন্ন তরফ থেকে বিচিত্র বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। কেউ কেউ পার্বত্য এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে পার্বত্য অঞ্চলে বাঙালিদের বসতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। আবার কেউ বা চুক্তি বাস্তবায়নের পথে সন্তু লারমার একগুঁয়ে আচরণকে দায়ী করেন। অন্যদিকে বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন অনেকেই।
বিগত দশ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০৫ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্যাঞ্চলের অনেক দুর্গম এলাকা এখন যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছে। এই অঞ্চলের মানুষ যেহেতু কৃষি নির্ভর তাই উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দ্রুত কৃষিজাত পণ্য পরিবহন সম্ভব হচ্ছে। ফলে মানুষের জীবনধারণ উন্নত হয়ে উঠেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ফলে নয়নাভিরাম পার্বত্যাঞ্চলে পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে। এ সকল কাজে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে যা সার্বিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতিকে বিকশিত করছে। ১৯৭১-১৯৮০ সাল পর্যন্ত যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৩টি কলেজ, ৮টি হাই স্কুল এবং ১০৯টি প্রাইমারি স্কুল ছিল এখন সেখানে ৩৫টি কলেজ এবং ২৫০০ এরও অধিক প্রাইমারি ও হাই স্কুল আছে। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে ১৯৭১-১৯৮০ সালের ৭-১০% শিক্ষার হার বর্তমানে ৫৫% এর ঊর্ধ্বে উন্নীত হয়েছে। ২০১৫ সাল হতে পার্বত্য চট্টগ্রামে মেডিক্যাল কলেজ ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দেশীয় বিভিন্ন এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহায়তায় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পার্বত্য জনগণের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত দশ বছরে ইউএনডিপি শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেটের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। যদিও তাদের এই কার্যক্রম কিছু কিছু ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট তথাপিও তা সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে। দেশের এক দশমাংশ এলাকা ও ১০% জনসাধারণের উন্নয়নে যেখানে ইউএনডিপি’র বাজেট ১৬০ মিলিয়ন ডলার সেখানে সমগ্র দেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে গত ১০ বছরে তাদের বাজেট ছিল ২৫০ মিলিয়ন ডলার। কাজেই স্বাভাবিকভাবে এটাই বোঝা যায় যে পার্বত্যাঞ্চলের সামাজিক উন্নয়নে দেশি, বিদেশি সকল সাহায্য সংস্থার হাত অনেক উদার।
পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিরা দীর্ঘদিন ধরে পারস্পরিক সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। দেশের সকল অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে পাহাড়িদের কোটা পদ্ধতি এখনো বহাল আছে। সেই সুবাদে পাহাড়িরা এবং তাদের সন্তানেরা সবসময়ই বাঙালিদের তুলনায় অধিক সুবিধা ভোগ করছে। সমগ্র বাংলাদেশে যেখানে অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর জনসাধারণ নির্দ্বিধায় বসবাস করছে সেখানে পাহাড়ে/পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিদের বসবাস কেন সন্তু লারমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়? তবে কি এর গভীরে অন্য কোনো বক্তব্য আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সন্তু লারমা কি কোনো গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত? না হলে পার্বত্যাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার জন্য স্থাপিত মেডিক্যাল কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য পর্যটন শিল্প বিকাশে তার এত বিরোধিতা কেন? সমগ্র পার্বত্যাঞ্চলে যেখানে পাহাড়ি/বাঙালি সকলেই নীরব চাঁদাবাজিসহ অন্যান্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প কমানোর ব্যাপারে সন্তু লারমা এতো উত্সাহী কেন? সন্তু লারমার সাথে একাত্ম হয়ে আরো কিছু স্বার্থান্বেষী পাহাড়ি ব্যক্তি ইন্টারনেটসহ অন্যান্য গণমাধ্যম ব্যবহার করে সর্বদাই পার্বত্য চট্টগ্রাম বিরোধী অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্যই যেন বিদেশে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি অত্যাচারিত ভাবমূর্তি তুলে ধরা। অথচ স্বার্থান্বেষী পাহাড়িদের এই অপপ্রচার সম্পূর্ণ মিথ্যা। সন্তু লারমা ও অন্যান্য পাহাড়ি নেতাদের বাঙালি বিদ্বেষের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ বাঙালিদের পার্বত্যাঞ্চল বিমুখী করে তুলছে। অনেকেই নিরাপত্তার শঙ্কায় আতঙ্কিত। আমরা এখন ভবিষ্যত্ নেতৃত্বের আগমনের দিকে তাকিয়ে আছি- যেখানে তারা পার্বত্য এলাকায় একটি সম্পূর্ণ সমপ্রীতি এবং সম্পৃক্ততার সমাজ গড়ার দিক-নির্দেশনা দিবেন। সেখানে বাঙালি ও পাহাড়ি সন্তানরা সৌহার্দ্যপূর্ণ, বিদ্বেষহীন একটি সমাজে একত্রে বড় হয়ে উঠবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে অতীতের মতো এখনও নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। সরকারের আন্তরিক প্রয়াসের কারণে তিন পার্বত্য জেলার উপজাতি-বাঙালিদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশি-বিদেশি এনজিও কাজ করে যাচ্ছে সেখানকার জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে। এতে করে বাঙালি জনগোষ্ঠীর তুলনায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেছে অনেক বেশি। এমতাবস্থায়, পাহাড়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সর্বোপরি শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে উপজাতি-বাঙালি ঐকমত্যের ভিত্তিতে সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা প্রদান করা উচিত। সেখানকার বাঙালিদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে পাহাড়ি নেতাদেরও মনোযোগী হতে হবে। তাহলেই কেবলমাত্র দ্রুত শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব।
লেখক: ড. মিল্টন বিশ্বাসস অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। e-mail : writermiltonbiswas@gmail.com
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:
·
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা
· পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস
[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস
ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত
বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও
সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও
প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায়
শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে
ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]