বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭

কলকাতা দাঙ্গার প্রতিক্রিয়া : নোয়াখালী দাঙ্গা ও কলকাতার প্রোপ্যাগান্ডা মিশন

''কলকাতার হত্যাকান্ড পূর্ববাংলায় ব্যপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।কামরুদ্দিন আহমেদ লিখেছেন,‘২৯ আগস্ট নোয়াখালীতে এক হিন্দু-বিরোধী দাঙ্গায় একজন স্থানীয় হিন্দু জমিদারের পরিবারসহ ছিয়াশি জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। এটি ছিল কলকাতা দাঙ্গার সময় পশ্চিমবঙ্গের খিদিরপুরে নোয়াখালীর ডক শ্রমিকদের গণহত্যার দুর্ভাগ্যজনক প্রতিক্রিয়া’। এক্ষেত্রে, সোহরাওয়ার্দী লিখেছেন যে,‘হিন্দুরা মুসলিমদের মসজিদে আক্রমণ করে এবং নামাজরত অবস্থায় ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ (যারা নোয়াখালী জেলা থেকে এসেছিলেন) মুসল্লিদের হত্যা করে, এবং এর ফলে, ‘নোয়াখালীর মুসলমানরা হিন্দুদের গ্রাম আগুনে পুড়িয়ে দেয়, ২৮২ জনকে হত্যা এবং ৪ জন নারীকে অপহরণ করে যার মধ্যে ৩ জনকে পরবর্তীতে উদ্ধার করা হয়েছিল’। কলকাতা দাঙ্গাকে জাষ্টিফাই করতে সাপ্রেস করার সুযোগ খুঁজছিল কেউ কেউ। কলকাতা কেন্দ্রিক প্রোপ্যাগান্ডা মেশিন একটিভ হয়ে উঠল। সোহরাওয়ার্দী তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেন: ‘অমৃত বাজার পত্রিকা এবং কংগ্রেসের অন্যান্য পত্রিকাগুলো বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদের সম্পাদকের নামে অকস্মাত একটি বিবৃতি ছাপে যে, ৫০,০০০ হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে এবং অগণিত নারীকে অপহরণ করা হয়েছে। (১)

নোয়াখালী'র এই প্রতিক্রিয়াশীল দাঙ্গা নিয়ে এখনো প্রোপ্যাগান্ডা চালায় এপার-ওপার দু'পার বাংলার উগ্র হিন্দুত্ববাদী, নরম হিন্দুত্ববাদী এমনকি স্যাকুলার হিন্দুত্ববাদীরাও। সেজন্য আরো বিস্তারিত রেফারেন্স প্রয়োজন। নোয়াখালীতে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে মহাত্মা গান্ধী পুরো ভারতের দৃষ্টিকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নোয়াখালী ভ্রমণ করেন।তাঁর এই ভ্রমণের তারিখ, সময়, কোথায় কি করেছেন, প্রার্থনা করেছেন, কোথায় হেটেছেন, বক্তৃতা করেছেন ইত্যাদি নিয়ে ১৫ ই আগষ্ট ১৯৪৭ সালে সুকুমার রয় কর্তৃক 'নোয়াখালিতে মহাত্মা' শিরোনামে একটি দীর্ঘ বই প্রকাশিত হয়। বইটি ঘটনার ১০ মাসের মাথায় প্রকাশ পায়।(২) সেই বই থেকে মৌলিক কিছু বক্তব্য তুলে ধরা যাক, এতে করে প্রোপ্যাগান্ডা মেশিনের মিথ্যাচার ধরা পরবে।
(ক) ঘটনার সূত্রপাত ১৯৪৬ সালের ১০ ই অক্টোবর।

(খ) পরিষদের প্রশ্নোত্তর- ১৯৪৭ সালের পয়লা মে, বঙ্গীয় ব্যবস্থা পরিষদে কংগ্রেসের ডেপুটি লিডার শ্রীযুক্ত ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র সচিবের পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী মিঃ কে নসরুল্লা জানান, নোয়াখালী ও ত্রিপুরা জেলায় সর্বমোট ২৮৫ জন মারা যায়। নোয়াখালীতে ১৭৮ জন ও ত্রিপুরায় ৪০ জন। তাঁর মধ্যে মিলিটারি ও পুলিশের গুলীতে ৬৭ জন মারা যায়। (পৃঃ১৪)

(গ) রাষ্ট্রপতি কৃপালনী নোয়াখালী উপদ্রুত অঞ্চল পরিদর্শন করে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে বিবৃতি দেন। তাকে একজন সরকারী কর্মচারী বলেছেন ১০০ জন মারা গিয়েছে, আরেক উচ্চপদস্থ কর্মচারী বলেন ৫ শতের কাছাকাছি হইবে। (পৃ.২৫)

(ঘ) শ্রীযুক্ত শরৎচন্দ্র বসু, নোয়াখালী ও ত্রিপুরা পরিদর্শন করে এসে ৪ঠা ডিসেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন; গবর্ণর আশা করেন যে, নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা শতকের কোঠায় একটি নিম্নতন অঙ্কের মধ্যে আছে। তিনি কি সূত্রে এই হিসাব পাইয়াছেন, তাহা প্রকাশ করা হয় নাই। কিন্তু আমি যে সাক্ষ্য প্রমাণ ও সংবাদ পাইয়াছি, ''স্টেটসম্যান ও অন্যান্য সংবাদপত্রে প্রকাশিত বিবরণের সহিত মিলাইয়া দেখিলে দেখা যায় যে, নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিশ্চিতরূপে সহস্রের কোঠায় হইবে।

(ঙ) শ্রীযুক্তা সুচেতা কৃপালনী বলেন; ''ধর্ষিতা ও অপহৃতা নারীর সঠিক সংখ্যা নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। তবে অনুসন্ধানের ফলে আমি জানিতে পারিয়াছি যে, তাঁহাদের সংখ্যা বহু। সুদূর পল্লী অঞ্চলে এখনও অনুরূপ ঘটনা ঘটিতেছে, কতক সংবাদপত্রে এই মর্মে এক সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছে যে, আমি বহু অপহৃতা নারীকে উদ্ধার করিয়াছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, আমি একটি অপহৃতা বালিকাকে মাত্র উদ্ধার করিয়াছি।

অর্থাৎ, শরৎচন্দ্র বসুর আনুমানিক মন্তব্যেও নিহতের সংখ্যা 'সহস্রের কোঠা' অতিক্রম করেনি। কৃপালনীর 'বহু নারী উদ্ধারের গল্প' বাস্তবে পাওয়া গেছে একজন।

অথচ এই প্রোপ্যাগান্ডার খবরে উত্তেজিত হয়ে, যুক্ত প্রদেশের গারমুখতেশ্বারে হিন্দুরা মুসলিমদের লাঞ্ছিত করে এবং গণহত্যা চালায় এবং বিহার প্রদেশের সর্বত্র ১০০,০০০ মুসলমান নারী, পুরুষ ও শিশুকে অবিশ্বাস্য বর্বরতার সঙ্গে হত্যা করা হয়েছে বলে বিশ্বাস করা হয়। চারদিন ধরে বিহারের পল্লী অঞ্চলে হিন্দু দাঙ্গাকারীরা হত্যা, অগ্নি সংযোগ, লুটপাট, ধর্ষণ, মানুষের অঙ্গহানি করার মাধ্যমে ত্রাসের সঞ্চার করেছিল এবং স্পষ্টতই বেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, এর পেছনে বিহার সরকার ও হিন্দু পুলিশ সদস্যদের মদদ ছিল’।(৩)

নোটঃ
(১) আরো দেখুন; প্রোপ্যাগান্ডার সেকালঃ ১৯৪৬ সালের কলকাতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, https://www.facebook.com/muldharabd/posts/1573485922714725
(২) সুকুমার রয়, নোয়াখালিতে মহাত্মা, ওরিয়েন্ট বুক কোম্পানী, ১৫ ই আগষ্ট, ১৯৪৭
(৩) নুরুল কবির, উপনিবেশবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও বাংলা ভাগ (পর্ব-৯),http://www.muldharabd.com/?p=422


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]