বৃহস্পতিবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৭

রোহিঙ্গা ও চাকমা জনগোষ্ঠীর মিল অমিল

১৯৭৮ থেকে বার্মিজ মগদের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে রোহিঙ্গারা। যে সংখ্যা এখন ন্যুনতম ১১-লাখ ছাড়িয়েছে বলে মনে করা হয়। বিতাড়িত রোহিঙ্গারা অধিকাংশ খালি হাতে এসেছে বিধায় খুবই খারাপ অবস্থা তাদের। ১৬/১৭-কোটি মানুষের ভারে ভারাক্রান্ত দরিদ্র বাংলাদেশ এতো সমৃদ্ধশালী নয় যে, ১১-লাখ অতিরিক্ত মানুষকে তারা সুন্দর বাসস্থান, ভাল খাবার আর স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবে। ১১-লাখ মানুষকে রান্নার চুলা দিলেও ১১-লাখ নতুন চুলা দরকার। ১১-লাখ হাড়ি-পাতিল, দা-কুড়োল কত কিছুইনা দরকার এসব মানুষের জন্যে। তাই অনেক রোহিঙ্গা অভুক্ত কিংবা গাছতলাতে, বৃষ্টিতে ভিজে জীবন কাটাচ্ছে। একখন্ড পথিলিন মাথায় দিয়ে কেউ অপেক্ষা করছে গাছতলাতে। তারপরো তাদের চোখে মুখে কৃতজ্ঞতা শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ সরকার, বাঙালি জাতি আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনির প্রতি। রোহিঙ্গারা অসন্তুষ্ট নয় বাঙালি আর বাংলাদেশের প্রতি। মনে করা হয়, অনেক রোহিঙ্গার সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদের সাথে সম্পর্ক থাকতে পারে, তারপরো বর্তমান আলীগ সরকার সম্পূর্ণ মানবিক কারণে "রিস্ক" থাকার পরও এদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিপন্ন মানুষ হিসেবে।

১৯৪৭ সনে ভারতের বিহার থেকে আগত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী এবং ১৯৭১ এ আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারী প্রায় ১০-লাখ বিহারীকেও গ্রহণ করেনি বিশ্বের কোন দেশ, না পাকিস্তান না ভারত। তারাও বাংলাাদেশের বেশ কটি ক্যাম্পে ১৯৭২ থেকেই অবস্থান করছে এরা। বাংলাদেশ তাদের নাগরিকত্ব না দিলেও, তাদের বার্মার মত তাড়িয়েও দেয়নি। তারা মূল ধারার বাঙালির মত সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি নয় বাংলাদেশে। তারপরো তারা বাংলাদেশ সরকার, বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে কখনো কোন কটুক্তি করছে না। তারা অনুতপ্ত তাদের একাত্তরের বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকার জন্যে। এবং কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাদের হত্যা না করে এ দেশে থাকতে দিয়েছে এ কারণে, যদিও তারা বাংলাদেশি বা বাঙালি নন।

সাঁওতাল, কোচ, মনিপুরী, রাখাইন, মুরং, খাসিয়া, গারো, হাজং, মারমা, মগ, পাংখো, রাজবংশী, খুমি, ত্রিপুরা, কুকি, চক, হাদুই, লুসাই, হদি, বাওয়ালী, ওঁরাও, তনচংগা, বনযোগী, মৌয়ালী, খিয়াং, মাহাতো, ডালু, রাজবংশী, তুরি, কন্দ, পাত্র, গণ্ড, মুন্ডা প্রভৃতি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মত চাকমারাও বাংলাদেশের একটা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তথা উপজাতি। বাংলাদেশ সংবিধানের ২৩(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই, কারণ আদিবাসি ধরা হলে, এদেশে কে আদিবাসি হবে তা নিয়ে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হবে। কারণ বাঙালি নৃগোষ্ঠী এ রাঢ় ভূভাগে হাজার বছর থেকে বসবাসরত। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডের "মাউরি" দেশ যেমন বহিরাগত বৃটিশ দখল করেছিল, আমেরিকার "রেড ইন্ডিয়ান"দের দেশ যেমন বহিরাগত ইউরোপিয়ানরা দখল করেছিল, মেক্সিকোর "মায়ান"দের দেশ যেমন বহিরাগত স্পানিশরা দখল করেছিল, সেখানে বাঙালিরা কোন "চাকমাদেশ" কখনো দখল করেনি। বরং চাকমা ও অনেক মঙ্গোলীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নানাবিধ কারণে এ ভূভাগে বসতি গড়তে ২০০-৩০০ বছরের মধ্যে এখানে এসেছিল। যেমন বার্মা থেকে রাখাইনরা জীবন বাঁচাতে পটুয়ালাখিতে বসতি গড়তে এসেছিল দেড়শ বছর বা কাছাকাছি সময়ে। এখন রাখাইনরা যদি তাদের "আদিবাসি" দাবী করলে তা কি হাস্যকর হবেনা?

চাকমাদের বর্তমান মিয়ানমারের আরাকানে বসবাসকারী ডাইংনেট জাতিগোষ্ঠীর একটি শাখা হিসেবে গণ্য করা হয়। বর্তমানে বার্মার রাখাইন রাজ্যে প্রায় ৮০,০০০ চাকমা বসবাস করছেন। বার্মায় চাকমারা মূলত ডাইংনেট জনগোষ্ঠী নামে পরিচিত। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তাত্ত্বিক অভিমত অনুযায়ী, চাকমারা মূলত ছিল মধ্য মায়ানমার ও আরাকান এলাকার অধিবাসী (সূত্র : বাংলাপিডিয়া)। অন্য এক অভিমতে বলা হয়, চাকমারা উত্তর ভারতের চম্পকনগর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অভিবাসী হিসেবে আসে। আঠারো শতকের শেষের দিকে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলই নয় বরং আজকের চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকাগুলিতে চাকমাদের বিক্ষিপ্ত অবস্থান লক্ষ্য করা যায়। কারো মতে, চাকমারা চন্দ্র বংশের খত্রীয়দের উত্তরসূরী কিন্তু তাদের চেহারার বা মুখমন্ডলের বৈশিষ্ট্য আর্যদের চেয়ে মঙ্গোলীয়দের সঙ্গে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ।

১৮৮১ সালের দিকে বৃটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি সার্কেলে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং এই সার্কেলের নামমাত্র শাসকদের "সার্কেল চীফ" হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই সার্কেল গুলো হল - চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল এবং মং সার্কেল। চাকমা সার্কেল চাকমাদের নিয়ে, আরাকানী বংশোদ্ভূত বোমাং প্রধানের দায়িত্বে বোমাং সার্কেল এবং আরাকানী ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী ও ত্রিপুরা অঞ্চলের অভিবাসীদের নিয়ে গঠিত হয় মং সার্কেল। ১৭৭৬ সালেও চাকমারা রাজা দেওয়ান রানু খানের নেতৃত্বে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা ‘আঘাত কর এবং পালিয়ে যাও’ ছিল তাদের যুদ্ধের কৌশল। ১৬৫০ সালের তৃতীয় চাকমা রাজা চমন খান থেকে শুরু করে পরবর্তী ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত ১৮তম চাকমা রাজা কালিন্দী রানী পর্যন্ত অধিকাংশ চাকমা রাজাই মুসলমান ছিল। অর্থাৎ চাকমারা মূলত মুঘল বংশ থেকে উদ্ভূত, সে কারণেই হয়তো মুসলিম জাতির মতই চাকমারা উগ্র প্রকৃতির। সাধারণ বাঙালির মত শান্তিপ্রিয় নয়। 
চাকমাদের বেশভুষা, ভাষা ও আলাপ পদ্ধতি ও বাচনভঙ্গি তিব্বতী- বার্মিজ গ্রুপের ভাষার একটা মিশ্রণরূপ। এর ওপর ভিত্তি করে অন্য ধরনের একটা মতবাদও চালু রয়েছে যে, চাকমারা বার্মার আরাকান এবং থান থেকে আগত অভিবাসী। তাদের মতে, ১৮শ শতাব্দিতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বিতারিত হয়ে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয় চাকমারা। 

চাকমা লিপি আগরতারা নামেও পরিচিত। পূর্ব ইন্দো-আরিয়ান ভাষা বংশের এটা একটি ভাষা, যার সাথে বার্মিজ ভাষার বেশ সাদৃশ্য বিদ্যমান। চাকমারা পূর্বে হরি ধর্মের অনুসারী হলেও, পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। তবে বর্তমানে অনেকে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষাও নিচ্ছে। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে রোহিঙ্গারও হরি ধর্মের অনুসারি ছিল বলে জানা যায়। সে হিসেবে রোহিঙ্গা ও চাকমাদের মূল একই হতে পারে। 

কৃষি চাকমাদের প্রধান পেশা হলেও, উইকির মতে অনেক চাকমা "চাঁদাবাজী করে জীবিকা নির্বাহ করে"। মূলত চাকমারা বাংলাদেশে নানাবিধ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এমন কথা বলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি গঠন করে ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সরকারের সাথে ঐ সমিতির চুক্তি হলেও, চাকমাদের অন্তত ৩-টা গ্রুপ ঐ চুক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ায় ও চুক্তি বাস্তবায়নে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি করে। যে কারণে সরকারের মনোভাব অনেক ইতিবাচক হলেও, উগ্রবাদি চাকমাদের কারণে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও বাংলাদেশে চাকমাদের সংখ্যা মাত্র ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪১৭ জন। ১৬/১৭ কোটি মানুষের দেশে তা কত শতাংশ তা ভাল ক্যালকুলেটর দিয়ে বের করতে হবে। 

১৬ কোটি মানুষের ঠাসাঠাসি অবস্থানের কারণে নদীভাঙা ভূমিহীন নি:স্ব দরিদ্র সমতলের বাঙালিদেরকে সরকারী ব্যবস্থায় অভিবাসের পরিকল্পনা শুরু করে সরকার পার্বত্য জেলাতে। কিন্তু চাকমারা (এবং তাদের সাথে আরো কেউ কেউ) পার্বত্য জেলাতে বাঙালিদের পুর্নবাসনের বিরোধিতা শুরু করে তাদের পাহাড়ি জীবন ধ্বংসের আশংকায়। যদিও তারা কোটার মাধ্যামে আধুনিক বাঙালি শহুরে জীবন বেছে নিতে অস্বীকার করেনা। পার্রত্য জেলাগুলোতে বসতি গড়া দরিদ্র বাঙালিরা যেন নিজ দেশে পরবাসী ঐসব উগ্র সন্ত্রাসি চাঁদাবাজ চাকমাদের কারণে। আবারো বলি, কিছু চাকমা মানবিক, যারা একত্রে মিলে মিশে থাকতে চায় পাহাড়ি বাঙালি এক হয়ে, যদিও তাদের সংখ্যা ১-২% এর বেশি নয়। উগ্র চাকমাদের চাপে তারা কোনঠাসা! 

সুতরাং রোহিঙ্গা, বিহারীরা বাংলাদেশে বসবাস করেও, এদেশের তেমন কোন সুবিধা না পেয়েও, তারা কৃতজ্ঞ বাঙালিদের প্রতি। বিহারীরা অনুতপ্ত তাদের ১৯৭১ এর কৃতকর্মের জন্যে। কিন্তু ১৯৭১ এ চাকমা রাজাসহ ৯৯% চাকমা বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী থাকলেও, তারা কখনো অনুতপ্ত হয়নি তাদের একাত্তরের ভূমিকার জন্যে। যেমন অনুতপ্ত নয় বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামি। এবার নিজ বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, মাত্র আড়াই লাখ ক্ষুত্র নৃগোষ্ঠীর একটা গোত্রের উগ্র দেশ ও রাষ্ট্রবিরোধিী কথাবর্তা কি আপনি মেনে নেবেন, নাকি জাগ্রত করবেন নিজের বিবেক, বোধ আর প্রজ্ঞাকে?

লেখক : জাহাঙ্গীর আলম


পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা সমূহ:

·      পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক বাঙ্গালী গণহত্যা

·     পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি সন্ত্রাসী কর্তৃক সেনাহত্যার ইতিহাস


[লেখাটি আপনার ভাল লেগেছে? তাহলে দয়াকরে গবেষণামূলক ও ইতিহাস ভিত্তিক এই সাইটটি চালিয়ে যেতে সাহায্য করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালী জনগোষ্ঠী সাইটটি পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার কতৃক চরমভাবে অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত, পশ্চিমা সমর্থনপুষ্ঠ এনজিও সমূহের একচোখা নীতি, সন্তু লারমা ও প্রসীত খীসাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) 'এর নিপিড়িত, নির্যাতিত ও বর্বরতম সন্ত্রাসের নির্মম ও অসহায় শিকার - পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ক্ষুদ্রতম এক প্রয়াস]